বাল্য-বিবাহ?
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ১২ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:১৫:২৫ রাত
কতো সচেতন আমরা! দেখলাম একটা লিখিত সংবাদের ভিত্তিতে আমাদের দেশবাসী তথাকথিত-বাল্য-বিবাহ বন্ধ করছে এবং তাতে সফল হয়ে তাদের আত্মতুষ্টি উপচে উঠায় ফলাও করে তা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে! সচেতন(!) এলাকাবাসী তথা দেশ পরিচালকেরা কতো সচেষ্ট একটি সুন্দর সমাজ গঠনে, যেখানে থাকবেনা কোন কিশোর-কিশোরীর সাথে কারও বৈধ-যৌনাচার!
বয়স কমিয়ে রাখা আমাদের দেশের একটা স্বাভাবিক রীতি এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এ রীতি-তে অভ্যস্ত এ দেশের স্কুলে যাওয়া ৯০-৯৫ ভাগ জনগন। গ্রামাঞ্চলে প্রকৃত বয়সের সাথে সার্টিফিকেটের বয়সের পার্থক্য খানিক বেশী হয় আর শহরাঞ্চলে একটু কম। ধারণা করা যায় যে মেয়েটির বয়স ১২ বলে বলা হয়, গ্রামাঞ্চলের হলে অবশ্যই তার প্রকৃত বয়স ১৪-১৬।
আমার দেখা এ দেশের সমাজে এরকম ১৪-১৬ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া অনেক মেয়েই আজ – ম্যাজিষ্ট্রেট, শিক্ষিকা এবং সফল-গৃহবধূ; অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বেশ সুখেই রয়েছে তারা স্বামী-সংসার বা কর্মজীবনে, এবং সে বয়সে বিয়ের কারণে, নেই তাদের কোন শারিরীক সমস্যাও। এ থেকে স্পষ্টতই বুঝে নেয়া যায় যে – এরকম একটা বয়সের মেয়ে অবশ্যই যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং অবশ্যই সেটা সে বয়সের সবারই কাম্য।
বর্তমানের এ সমাজে স্বচক্ষে আমি এবং অনেকেই দেখি ১৪-১৬ বয়সের অনেক অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীরা একে অপরের গলায় হাত রেখে জড়াজড়ি করে পথে-ঘাটে অবাধে চলা ফেরা করে, পার্ক-রেষ্টুরেন্টে গিয়ে প্রকাশ্য প্রেমে মজে, বাবা-মা-বিহীন ঘরের কোনে কিংবা রেসিডেন্সিয়াল হোটেল কক্ষ ভাড়া করে মেতে উঠে অবাধ যৌনাচারেও; আর ইউটিউব-এর বদৌলতে তাদের অনেকের অবাধ-অবৈধ-যৌনাচারের সচিত্র প্রদর্শনী এখন দেশবাসীর পাশাপাশি প্রবাসী এবং বিদেশীরাও অবাক চোখে নির্বাক হয়ে অবলোকন করে।
দেশ পরিচালকেরা আজ দেশের সব সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান পারলে স্বায়ত্ত্বশাসন এবং প্রাইভেটাইজেশন এর নামে ব্যক্তিমালিকানায়ও দিয়ে দিচ্ছে – যাতে করে সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত জনগণ তাদের নিজেদের কল্যাণে নিজেদের পর্যবেক্ষনের আলোকে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধন করতে পারে। পরিবারও তেমনি সমাজ তথা দেশের সবচাইতে ক্ষুদ্রতম প্রতিষ্ঠান যা বরাবর-ই স্বায়ত্ত্বশাসিত হয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠান বা বাড়ীর কর্তা ও কর্ত্রীর মাধ্যমে – সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল পরিবার নামক সে প্রতিষ্ঠানের জামাই-বউ নামক কর্মকর্তা-কর্মকর্ত্রী, তাদের পর্যবেক্ষনের আলোকে এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে। কিন্তু এখন তাদের পরিবার নামক স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিবারের বাইরের সমাজের লোক এবং রাষ্ট্র-পরিচালকেরাও বা-হাত ঠেলে দিচ্ছে – আইনের দোহাই দিয়ে!
অনেক সময়-ই মেয়েদের উশৃঙ্খলতার কারনে অথবা বয়সের দোষে পাড়ার বাজে মানুষদের হস্তগত হওয়া থেকে কণ্যাকে বাচানোর লক্ষ্যে বা অন্য কোন ভালো উদ্দেশ্যে পিতা-মাতা তার সাবালিকা-কণ্যাকে ভালো কোন পাত্রস্থ করে দিতে চায়, কেননা সে কণ্যা-সম্পর্কিত সেসব দৃশ্যের, অবস্থার এবং অবস্থানের প্রত্যক্ষ্যদর্শী তারাই। এতে করে পিতা-মাতা তার কণ্যার যৌনাচারের ইচ্ছার সম্মতি হিসেবে অথবা এসব নিয়ে বাজে-চিন্তা না করে অন্য কোন ভালোদিকে মনঃসংযোগের লক্ষ্যে অথবা অন্য যে-কোন ভালো উদ্দেশ্যেই এটা করে থাকে। কোন সুস্থ-পিতা-মাতাই জেনেশুনে তার কণ্যাকে কষ্টে ছুড়ে ফেলে দেয় না!
যখন দেখি, একদিকে একই বয়সের একটি মেয়ের বৈধ-যৌনাচার বন্ধের উদ্দেশ্যে সমাজ এবং রাষ্ট-পরিচালকরা একজোট হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তথাকথিত বাল্য-বিবাহ বন্ধের নামে সাবালিকা-কণ্যার যৌনাচারের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে তথা পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বা-হাত ঠেলে দিয়ে নাক-গলাচ্ছে; আরেকদিকে একই বয়সের কিশোর-কিশোরীরা অবৈধ- যৌনাচার করে ইউটিউব-মোবাইলে সচিত্র-প্রদর্শনী করলেও, সেই তারাই নির্বিকার চিত্তে বসে সমাজ-অর্থনীতি-পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাবছেঃ তখন মনের এক কোন থেকে আস্তে করে কেউ যেন জিজ্ঞেস করে –
উন্মাদ কি সে সমাজ আর রাষ্ট্রপরিচালকেরা না-কি বুড়া মিয়া?
এ-কথা হয়তো আমি বলতাম না কখনোই যদি দেখতাম এ বয়সে বৈধের পাশাপাশি অবৈধ যৌনাচার রোধেও তারা দৃষ্টান্ত রাখছে। কিন্তু তারা তা না করে, শালীন উপায়ে ঘরের ভেতরকার বৈধ-যৌনাচারকে বাল্য-বিবাহের নামে রুখে দিয়ে রাস্তায়-হোটেলে অবৈধ যৌনাচারের পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে! তাই জানতে ইচ্ছে হলো – একই বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপারে সমাজ এবং রাষ্ট্রপরিচালকদের কেন এ দ্বিমূখী নীতি?
বিষয়: বিবিধ
১২৬৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর একটি ব্লগ। পুরোটা পড়লাম ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপনাকে
যেহেতু ডিভাইন ইস্যুকে সামনে আনলে স্যেকুলারদের জন্য এক ধরনের পীড়ন তৈরী হয়। সে বিবেচনায় আপনার এ লিখাটির (যেহেতু কোন ধর্ম আনা হয়নি) উত্তর যদি আমাদের শাসক, প্রশাসক, মিডিয়া কিংবা থিংক ট্যাংক রা জাতিকে বুঝিয়ে দিতেন - তাহলে গণমানুষের উপকার হত।
মূলতঃ দিনকে দিন অথর্ব সরকার ও প্রশাসন ও শয়তান পূজারী ইন্টেলেকচুয়ালস্রা - ইভিলকে আমাদের মধ্যে প্রচন্ড জোরেশোরে স্টাবলিশ করতে উঠে পড়ে লেগেছে - আর আমরা স্বভাবতঃই সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করতে পারছি না।
কিছু দিন আগে পাঠ্য বইতে যে ভাবে এডাল্ট ইস্যু সমূহের বিস্তার দেখলাম - আগামী পাঁচ বছর পর এ জাতীয় লিখা লিখার ও হয়তো সুযোগ পাবেন না।
মূলতঃ সবই বিমূর্ত সত্য হয়ে ধরা পড়ছে - কিন্তু আমরা সাধারন মানুষরা সত্য খুজছি না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন