আমার দৃষ্টিতে পণ্য-বর্জনের ফলাফল

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ০১ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:২৮:৪৫ সকাল

বাংলাদেশের বানিজ্যিক-বন্ধু এবং আশ্রয়দাতা এলাকা হিসেবে ইউরোপ এবং আমেরিকার অবদান অস্বীকার করার কোন জো আমাদের নেই। এ দুই এলাকায় আমাদের বাণিজ্য এবং আমাদের দেশের আশ্রিত লোকদের কর্মকান্ড দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রেখে আসছে অনেক দিন থেকেই। যেহেতু আমাদের দেশের সরকার, ব্যবসায়ী মহল এবং নতুন উদ্যোক্তারা দেশের সক্ষমতার সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করার জন্য নিজেদের অর্থ-প্রতিপত্তি-জ্ঞান বিনিয়োগ এবং ব্যবহারের বদলে সেগুলোর সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে দুই-আনা/চার-আনা উপার্জনকেই শ্রেয় মনে করে থাকেঃ তাই আমাদের মতো হতভাগা জাতি-র পেটের ক্ষুধা এবং বাকীদের বিলাসিতা মেটানোর জন্য এভাবে-ই উপার্জনের কোন বিকল্প আপাতত নেই। সক্ষমতা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের স্বপ্ন আপাতত সবাই ভুলে গেছে এবং ভুল বিষয়-কে অনেকেই সক্ষমতা হিসেবে বিবেচনা করে ইউজলেস-রাবিশ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে! তারা উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের জন্য মেধা-শ্রম-অর্থ-প্রতিপত্তি বিনিয়োগের বদলে নির্বোধের মতো খেটে দুই-আনা/চার-আনা উপার্জন করে অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে ঢালাওভাবে সক্ষমতা বলে যাচ্ছে! আমাদের মতো এহেন অক্ষম জাতির জন্য এ ধরনের অর্থনৈতিক সক্ষমতা তেমন কোন সুফল বয়ে আনে নাঃ খেয়ে-পড়ে-হেগে-ঘুমিয়ে অথর্বের মতো অসম্মানজনক কর্মসম্পাদন করে জীবন-যাপন ছাড়া; তার বাস্তবিক উদাহরন - দেশে ঘটিত বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের ভিক্ষার আহ্বান এবং ভিক্ষা-সংগ্রহের বিশাল মনের মানবিক কর্মকান্ড!

এভাবে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ না করে নির্বোধের মতো খেটে আমাদের লজ্জাবোধ-তো দূরের কথা –গর্বে বুক ফুলে যায় যখন সরকার-ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মুখে বক্তব্য শুনিঃ আমাদের রেমিট্যান্স এতো, এবং গার্মেন্টস রপ্তানী এতো, আমরা হয়ে গেছি অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম, হয়ে গেছি মধ্য আয়ের দেশ! এমতবস্থায় বানিজ্যিক-বন্ধু-দেশ এবং আশ্রয়দাতা-দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ কোনভাবেই কারো কাম্য হতে পারে না! কেননা এতে করে মনুষ্য-সৃষ্ট-সম্পর্ক-নষ্টের দুর্যোগে আবারও স্রেফ ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় আমাদের থাকবে না, কেননা – সম্মানজনক কর্মকান্ড তথা উৎপাদনে অনিচ্ছুক আমরা নিজেদের অনেক প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনে অক্ষম, এমনকি বেশীরভাগ খাদ্য-দ্রব্যও!

আমাদের দেশের মোট রপ্তানী-আয়ের আনুমানিক পচাত্তর ভাগ এসে থাকে দিন-রাত এমনকি ঈদের দিনেও কলুর-বলদের মতো দর্জি হিসেবে খেটে বিদেশী (ইউরোপ-আমেরিকা) ভদ্রলোকদের জামা-কাপড় যে বানিয়ে থাকি - তা থেকে এবং এর সবই রপ্তানী করি সেই ইউরোপ এবং আমেরিকায়। এছাড়াও আমাদেরকে যেসব দেশ আশ্রয় দিয়ে তাদের ওখানে আমাদেরকে কাজ করে খাওয়ার এবং দেশে কিছু পাঠাবার সুযোগ দিয়েছে – তাদের ওখান থেকে আমাদের সেসব আশ্রিত ভাইয়েরা দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠায় তার প্রায় পঞ্চান্ন ভাগ এসে থাকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এবং প্রায় পচিশ ভাগ এসে থাকে সেই ইউরোপ-আমেরিকা থেকেই! এসব আয়ের টাকা প্রায় সব খরচ করি আমরা আমদানী করা মাল কিনে খেতে এবং সেটা করে আরেকবার গর্বে বুক ফুলাই আমরা এ বলে যে – আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য্য থেকে প্রায় সব-ই ইউরোপীয়ান-আমেরিকান-ইন্ডিয়ান-চাইনিজ-জাপানীজ ষ্ট্যান্ডার্ডের!

এমতবস্থায় আমাদের সামনে তিনটি পথ খোলা রয়েছেঃ (১) ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের সক্ষমতার জন্য জান-মাল বিনিয়োগ করা, অথবা (২) চলতি অবস্থায় (নির্বোধের মতো খেটে খাওয়া) চলতে দেয়া, অথবা (৩) প্রথম দুই পথ ত্যাগ করে ভিক্ষা বা ফরেইন গ্র্যান্ট এর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়া।

প্রথম পথে পা বাড়ালে এক অথবা দুই প্রজন্মের একটু কষ্ট করতে হবে (আমাদের জাতিগত লোক হিসেবে মালয়েশিয়া ভালো উদাহরন, ভিয়েতনামও খারাপ না); কিন্তু আমরা কেউ-ই কোনরূপ যুক্তিসঙ্গত-কষ্ট না করে আরাম-আয়েশ অর্জনে বদ্ধপরিকর এবং তার জন্য যা করার প্রয়োজন (ঐক্যহীনভাবে যার যার ক্ষেত্রে নির্বোধের মতো খেটে যাওয়া) তাই করতে ইচ্ছুক বিধায় আমরা স্বাভাবিকভাবেই চলে এসেছি দ্বিতীয় পথে এবং এখনও চলছি এভাবেই সে পথে-ই। ইদানীং একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে – আমাদের দেশের অনেক ভাই ও বোনেরা তাদের অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত একটি স্বাভাবিক-মনোকষ্টের কারণে সেই ইউরোপ-আমেরিকার সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক নষ্ট করার ইচ্ছা এবং তার জন্য কি-করনীয়-সে-বিষয়ে মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে আসলেই যদি আমরা তাদের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক নষ্ট করি এবং তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যদি আমাদের সাথে অনুরূপ সম্পর্ক নষ্ট করে তবে আমরা আমাদের চলিত দ্বিতীয় পথ থেকে সরে এসে তৃতীয় পথে নেমে যাবো বলে আমার মনে হয়।

এক্ষেত্রে আমার মতামত, আমাদের যেসব ভাই ও বোনেরা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে – সেটাকে আপাতত গবেষনামূলক কাজে সীমাবদ্ধ রেখে, সে গবেষনালব্ধ বিষয়াদি আরও বেশী তথ্য সমৃদ্ধ করে, এখানে আলোচনা সমালোচনা করে নিজেদেরকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং আমাদের যার যার পরের প্রজন্মকে এসবের শিক্ষা দেয়া। এসব বিষয়ের ব্যাপক-আলোচনা-সমালোচনা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষন না হওয়ায় আমি এবং আমরা অনেকেই ভাসা-ভাসা জ্ঞান নিয়ে আবেগ-তাড়িত হয়ে অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছি বলেও আমার মনে হয়।

বিঃদ্রঃ উপাত্তগুলো বেশ আগের দেখা, তাই সেসব জায়গায় প্রায় অথবা আনুমানিক ব্যবহার করা হয়েছে, তবে আশা করি মোটামুটি ঠিক-ই আছে।


বিষয়: বিবিধ

১৩২৬ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

249837
০১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:১১
হতভাগা লিখেছেন : পরনির্ভরশীল একটা দেশের জনগনের মুখে পন্য বর্জনের এই স্লোগান শোভা পায় না ।

০১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
194180
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হুম; তবে এ নিয়ে যারা আলোচনা করেছেন – তাদের অনেকেই কিন্তু বেশ তথ্য যোগার করেছেন, এটা একটা ভালো দিক এবং তাদের এ চেষ্টায় আমরাও অনেক অজানা তথ্যও জানতে পারছি।
249857
০১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৪২
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : পণ্য বর্জনের আন্তর্জাতিক দিক দেখলেন, অথচ, দেশীয় দিকটা দেখলেন না। বিদেশী পণ্য বর্জনে দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটবে তা নিয়েও কিছু বললেন না। আসলে যার যাতে লাভ সে তাই বলবে। এ দেশের অনেক দালালের ও এইসব পণ্যের সাথে স্বার্থ জড়িত। তবে, দালালদের স্বার্থ দেখতে গেলে আসলে নিজের স্বজাতির স্বার্থ দেখা যায় না। আর কে বলেছে পণ্য বর্জন কোন কাজের না? প্রতি ৫ জন ইহুদী ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন ব্যবসায়ি বাহিরে পণ্য বিক্রি করতে যেয়ে বয়কট ফেইস করছে। গাজায় চলমান সহিংসতার কারনে ৬১ পারসেন্ত পণ্যের দাম কমিয়ে দিতে হয়েছে। এরপরেও কি এই কথাই বলবেন?
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
194219
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এ-পোষ্টে ৪-নাম্বার মন্তব্যে আমি আমার মতামত দিয়েছি – তার শেষ প্যারাটা খেয়াল করে দেখবেন, তাতে আপনি আমার কাছ থেকে যেরকম বলাটা আশা করছেন, সে আকাঙ্খিত বিষয়ের প্রতিফলন দেখতে পাবেন।

এ বিষয়ে বিভিন্ন পোষ্টে যে মতামতগুলো দিয়েছি – সেসব মন্তব্যগুলো আর পোষ্টে আনি নাই, আর এ পোষ্ট-টা মূলত এলিট-এর এ-পোষ্ট প্রসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বড় হয়ে যাওয়ায় এভাবে প্রকাশ করাটাই ভালো মনে হয়েছে।

আপনি আমার সম্বন্ধে যে কোন ধারণা-ই পোষন করতে পারেন, সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারঃ এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই; আত্মপক্ষও সমর্থন করার দরকার পড়বে না মনে হয়।
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৫২
194225
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ৬১% দাম কমানোর যে বিষয় বললেন, সেটাও প্রথম যে লিঙ্ক-টা দিয়েছি উপরের প্রতিমন্তব্যে ৪ নং মন্তব্য রেফার করে, সেটার নীচে হাবিবুল্লাহ ভাইয়ের মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে দেখে নিয়েন – হালাল সাবান দিয়ে উদাহরণ দেয়া আছে। কি কাজ হয় আর কি হয় না তার সম্বন্ধে ক্রস-বর্ডার-সাবসিডাইজেশন নিয়ে ষ্ট্র্যাটেজিক-ম্যানেজমেন্ট এর কারও সাথে কথা বললেও জানতে পারবেন।
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮
194226
বুড়া মিয়া লিখেছেন :
চলমান সহিংসতার কারনে ৬১ পারসেন্ত পণ্যের দাম কমিয়ে দিতে হয়েছে। এরপরেও কি এই কথাই বলবেন?


এর প্রেক্ষিতে বলতে হয় – আদিকাল থেকে প্রচলিত ডাম্পিং পদ্ধতিতে অন্যদের প্রোডাক্ট একদম কিক-আউট করে দিবে নয়তো ওই নতজানু অবস্থায়-ই থাকবে। যতক্ষন আপনার নিজের অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন না হবে, ঐরকম ডাম্পিং পদ্ধতিতে কিক খেয়ে যেতে-ই হবে, কেননা তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক মজবুত। এসবের অনেক উদাহরন মনে হয় অনেক আগে বিভিন্ন টেক্সট এবং রেফারেন্স বইতেই পড়েছি অনেক, এখনও খুজে দেখেন পেয়ে যাবেন ...
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:১০
194228
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আরেকটা বিষয় – আমার সম্বন্ধে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং আমাকে একটা গোষ্ঠীভুক্ত করে ফেলেছেন! – এ মন্তব্যে।

আমি আপনার করা দুইটা মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে যা বলেছি, যে লিঙ্ক দিয়েছি এবং যে ওয়েবসাইটের রেফারেন্স দিয়েছি; প্রত্যেকটা বিষয় মিলিয়ে দেখে, বুঝে – আপনার সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হয়েছে কি-না? জানিয়ে যাবেন আশা করি।
249858
০১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৪৩
সাফওয়ানা জেরিন লিখেছেন : আর আপনার লেখাটা একদম ঢালাও মনে হয়েছে আমার কাছে। এসব ব্যাপারে লিখলে অবশ্যই কিছু তথ্য দিবেন। নাহলে, এসব পড়ে অযথা সময় নষ্ট
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
194224
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হ্যা, আমার লেখাটা ঢালাও ভাবেই লিখেছি; আর যে তথ্যগুলো উপাত্ত ছাড়া উল্লেখ করেছি – সেগুলোর সবগুলোর উপাত্ত বাংলাদেশ-ব্যাংক এর ওয়েবসাইটে পাবেন; এবং মিলিয়ে দেখলে আশা করি আমার লেখার সাথে মিল-ই পাবেন।

সময় আপনার সেটার সদ্ব্যবহারের বিষয়ও আপনার-ই।
249883
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:২৭
শুকনা মরিচ লিখেছেন : পণ্যবাদ দিয়ে কোনো লাভ নাই
কারন আমরা বহিরাগত পণ্য ছাড়া অচল
এরপরও ইউরোপ আমেরিকাটেই আমাদের পণ্য অনেক বেশি চলে
ধন্যবাদ ভালো লাগলো
০১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৩৮
194230
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এভাবে পণ্য বর্জনের পরিণতি কি হতে পারে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোন থেকে সে বিষয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটের কারণে আলোকপাতের সামান্য চেষ্টা করেছি।
249916
০১ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:১২
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : jodi meneo niy j kono lav nai, tarpor o ami etake ekti protibader maddhom hisebei mone kori
০১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৩
194262
বুড়া মিয়া লিখেছেন : অবশ্যই এ পদ্ধতি সাধারন্যের কাছে স্বীকৃত এক প্রতিবাদের পন্থা, তাতে আমারও কোন দ্বিমত নেই।
249985
০১ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কোল্ডড্রিংকস বা প্রসাধনির মত পন্য বর্জনে আদেী দেশের কি কোন সমস্যা হবে? কিংবা দামি অপ্রয়োজনিয় ফিচার যুক্ত মোবাইল। দরিদ্র দেশ এর জন্য আরো বেশি প্রয়োজন এই ধরনের অতিরিক্ত বিলাস উপকরন বর্জন করা। আমাদের প্রবাসিরা এবং শিল্প শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন তার বেশিরভাগ কিন্তু এই সব ফালতু জিনিস এর জন্য নষ্ট হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহরু এর একটি উক্তি মনে পড়ছে। ভারতে বিদেশি ব্লেড আমদানি বন্ধ করে দিলে কেউ কেউ তার কাছে অভিযোগ করেন যে ভারতিয় ব্লেডে দাড়ি কামান যায়না। তিনি মন্তব্য করেন যে যারা ভারতিয় ব্লেডে দাড়ি কামাতে পারবেনা তারা যেন দাড়ি রাখে। যদিও বর্তমান ভারত তার অর্থনিতি বিসর্জন দিয়েছে।
০১ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২০
194312
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আমি বেশ আগে খুব সম্ভবত মিনিষ্ট্রি অফ ফাইনান্স এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সরকারের পোর্টফোলিও দেখেছিলাম, সেখানে মনে হয় ইউনিলিভারের একটা বড় অংশ সরকার হোল্ড করতোঃ যতদূর মনে পড়ে ৪০% এর মতো। এ দেশের সব কোল্ড-ড্রিংকস এর পুরো লীজ-তো বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের-ই, লাভের বড় অংশ তারাই রেখে দেয়। সেরকম মোবাইল এবং ফালতু বিলাসিতার দ্রব্যে আমিও আপনার মতোই মনোভাব পোষন করি – এগুলোর দরকার নাই, কিন্তু অনেক ডিউটি-ইম্পোজ করেও এটা ফেরানো যাচ্ছে না।

ইন্ডিয়ার একটা ব্লেড কোম্পানী যেটা বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করে, সেটায় কিছু সময় কাজ করেছিলাম এক-সময়; খরচ কমাতে ওরা জান দিয়ে দেয় পারলে এখনও! এছাড়াও ওদের আরো বেশ কিছু কোম্পানী কাজের সুবাদে দেখেছি – একচেটিয়া ব্যবসা করে আমাদের এখানে, সেসব সেক্টরে আমাদের লোকাল কোন ইনভেষ্টর-ই নাই। আমাদের লোকাল ইনভেষ্টরগুলো দেশ-তো দূরে থাক, নিজের পরিবার ছাড়া আর কারও কথা চিন্তাও করে না।
০২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:২৪
194366
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইউনিলিভার ইন্টারন্যাশনাল নয় বরং ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর শেয়ার হোল্ড করে বাংলাদেশ সরকার। অনেক চেষ্টা করেও তাদের ষ্টক এক্সচেঞ্জ ভুক্ত করা যাচ্ছেনা।দির্ঘদিন বিভিন্ন দেশিয় এবং বহুজাতিক টেলিকম প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও ব্যবসার সুত্রে যা বুঝেছি ভারতিয় প্রতিষ্ঠানগুলি টাকা বাচাতে গিয়ে যা করে তা অতি নিন্মরুচির। আর দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলির বড় সমস্যা অতিরিক্ত লাভ করার প্রবনতা।
০২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
194370
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হ্যা, ভালো কোম্পানীগুলো মার্কেটে গেলে কিছু ডাকাতি করবে সেখানেও, তবে দীর্ঘমেয়াদী সুফল আছে। লিভারের বাংলাদেশের সব কার্য্যক্রম ঐটাই চালায়, আর বৈশ্বিক-আইনগত কারণে সমস্ত ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানী- ই কিছু উৎপাদন দেশে করে কিছু বাইরে থেকে এনে বেচে।

ইন্ডিয়ার নিম্নরুচী এখনতো বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ; আমাদের দেশের বেশীরভাগ লাভ ওরাই নিয়ে যায়। আর পূজিবাদী ব্যবস্থা লাভ করার প্রবণতা বাড়িয়ে-ই তুলতে থাকবে, অনেক আগে থেকেই তা করতে করতে এখন সারা বিশ্বের সম্পদের মালিকানার বড় অংশ-ই এখন উন্নত দেশগুলোর।
250033
০২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৪৪
আহমদ মুসা লিখেছেন : দ্বিতীয়বার পড়ে বিস্তারিত মস্তব্য করবো
০২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
194371
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ঠিক আছে।
251530
০৬ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:২৪
জীবন রাহমান লিখেছেন : ফাল্তু কথা, আমি কোকাকোলা না খেলে কি হবে? পেপসি কি খুব প্রয়োজনীয়? এগোলা হলো আমাদের মানসিক সমস্যা..............
০৬ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪০
195690
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বর্জন-ই তো করতে পারবে না!

আমাদের এখনো সাফিশিয়েন্ট প্রোডাকশন এর ক্যাপাসিটি-ই নাই! কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা একটু আছে, কম্পিটিটিভ মার্কেটে যুদ্ধ করে টিকে থাকার শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তিও নাই!

তারপরেও অনেকে বলছেন – সেটা খারাপ না, এতে করে মার্কেট সম্বন্ধে ভালো গবেষনাও হয়ে যাচ্ছে তাদের এবং আমরা জানতেও পারছি সেসব তথ্য-উপাত্ত।
252073
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৩০
সাদাচোখে লিখেছেন : আপনি বলেছেন, 'আমাদের যেসব ভাই ও বোনেরা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে – সেটাকে আপাতত গবেষনামূলক কাজে সীমাবদ্ধ রেখে, সে গবেষনালব্ধ বিষয়াদি আরও বেশী তথ্য সমৃদ্ধ করে, এখানে আলোচনা সমালোচনা করে নিজেদেরকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং আমাদের যার যার পরের প্রজন্মকে এসবের শিক্ষা দেয়া। এসব বিষয়ের ব্যাপক-আলোচনা-সমালোচনা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষন না হওয়ায় আমি এবং আমরা অনেকেই ভাসা-ভাসা জ্ঞান নিয়ে আবেগ-তাড়িত হয়ে অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছি বলেও আমার মনে হয়'।

আমারো তাই মনে হচ্ছে। তবে আমাদের দূর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের গবেষকরা গবেষনা করছেন বিদেশী টাকায়, বাহিরের দেশের এ্যাপ্রুভ করা 'টার্মস অব রেফারেন্স' এর আলোকে। এখানে বেইজ লাইন সার্ভে হতে শুরু করে, কোশ্চেনিয়ার তৈরী হয়ে, ডাটা এ্যানালাইসিস ও কনক্লুশান টানতে গিয়ে বায়াসড ম্যাথোডলিজির যেমন আশ্রয় নেওয়া হয়, বায়াসড কনক্লুশান টানতে ফ্যাক্টস ও ফিগারকে বেমালুম কার্পেটের নিচেও ঠেলে দেওয়া হয়।

আমি একসময় সিপিডিতে চাকুরী করতে গিয়ে গবেষনা প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে যতটা বুঝেছিলাম -

১। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের এ্যাবসুলুট লয়ালটি ও এ্যাকাউন্টেবিলিটি কোথায় - তা ঠিক করতে পারেনা (সম্ভবতঃ ফান্ডিং এ স্বয়ংসম্পূর্ন না হওয়ায়)।
২। আর তারা এ্যাক্সেপ্টেবেলিটি বাড়াতে গিয়ে যার পর নাই মিডিয়া ফ্রেন্ডলী হতে চায় - এবং এ জন্য ক্রিটিক্যাল বিষয় সমূহ, কন্ট্রোভার্সিয়াল বিষয়সমূহ (তা যতই ন্যাশানাল ইন্টারেস্ট এর হোক না কেন) এড়িয়ে যায়। তাদের ক্রিটিক্যাল বিচার বিশ্লেষনটা অনেকটা এমন যে তারা কখন 'হাফ গ্লাস পানি বলবেন' আর কখন 'হাফ গ্লাস এম্পটি' বলবেন তা সমসাময়িক রাজনীতি, মিডিয়া ও জনসেন্টিমেন্ট বিবেচনা নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ আলোচনা চালান।

সো আমার মনে হয় - সামহাউ যদি বাংলাদেশের কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড 'সিএসআর' এর পার্ট হিসাবে রিসার্স অর্গানাইজেশানকে ফান্ডিং করতো, টি ও আর করে দিত কিংবা গভার্নমেন্ট/বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ - তবে হয়তো মাইন্ড ব্লোয়িং কিছু জিনিস আমি আপনি জানতে পারতাম।
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৫১
196255
বুড়া মিয়া লিখেছেন : লাষ্ট প্যারায় খুবই ভালো বলেছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রিসার্স-সেল একান্ত দরকার, আর সে বয়সের ছেলে-মেয়েদের মাইন্ডটাও থাকে স্কেপটিক, ডাটা মাইনিং-ও হবে অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে। ষ্টুডেন্টও কম নাই – ইচ্ছা করলে প্রত্যেক সেশনে-ই একটা থরো সার্ভে চালানো যায় ডাটা এ্যাকুইজিশন এবং এযানালাইসিস এর জন্য। এটা করা উচিৎ বলে আমিও মনে করি।
১০
252088
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৯
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : নিজেকে বাংগালী হিসেবে ভেবে এমনটা বিশ্লেষণ করাটা অন্যায় অন্যায্য নয়,
কিন্তু নিজেকে মুসলিম ধরে নিয়ে যখন তাকাবেন আমাদের সামনে দুশমনের বিরূদ্ধে বয়কট ছাড়া কনো উপায় নেই.......

ছোট্ট পরিসরে ভেবে দেখি, আমাদের সমাজ পুরোটাই এমন এলিট স্তরে এখনো পৌছেনি যে ল'রিয়াল ব্যবহার না করলে এলারজিতে পুরো জাতি মারা পড়বে......
আমরা চাইলেই দেশীয় ডাব ফলের রস বড়জোর মজো কিংবা লাচ্ছি দিয়ে পেপসি কোকের বিকল্প তৈরী করতে পারি।
আসলে আমরা যতটুকু না তৃপ্তির জন্য পেপসি খায় তারচেয়ে বেশি হুজুগ কাজ করে।

একটু ভাবলেই বুঝবেন অরথনীতিতে আমদানীর চেয়ে রপ্তানীর গুরূতব বেশি।
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৫৯
196263
বুড়া মিয়া লিখেছেন : প্রসাধনীর ব্যাপার খুবই সামান্য, সেটা খুব একটা ধর্তব্য নয়। আমার জানামতে আমাদের দেশের জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত ব্যালান্স অফ ট্রেড নেগেটিভ – মানে আমদানী বরাবরই রপ্তানীর চাইতে অনেক বেশী! এবং আমাদের এসব বাণিজ্যের সিংহভাগই অল্প কিছু দেশের সাথে, তাই আমরা মুসলিম জাতিগত হলেও আমাদের ভৌগলিক-অবস্থানের কথাটাও চিন্তা করা উচিৎ বলে মনে করি। আমার মতে মুসলিমদের অবস্থান পাকা-পোক্তের জন্য আলাদা আলাদা দলের সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা উচিৎ - সবাই গয়রহভাবে একই দিকে ধাবিত হওয়া উচিৎ নয় বলেও মনে হয় – অনেকটা সূরা মুজ্জাম্মিলের মতো – একদল ফী-সাবিলিল্লাহ, একদল রিজিক-অবস্থান শক্ত করতে আরেক দল জিকিরে ফিকিরে সালাতে ...

আর হুজুগের ব্যাপারে তো আমাদের বাংলাদেশীদের একটা বড় উপাধি রয়েছেই। বিকল্প ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ অবশ্যই আশাব্যাঞ্জক, এবং সে জন্যও আমাদের যুগোপোযোগী চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
০৮ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
196422
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : দারুন পর্যালোচনা, ধন্যবাদ
১১
252320
০৮ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৪
জিয়া্ মির্জা লিখেছেন : পন্য বর্জন কোন স্থায়ি সমাধান নয়। বরং ইরানের মত সাইন্স টেকনোলজি বেসড ইসলামি শিক্ষা প্রবর্তন ও তাদের মত কসমেটিক্স, মোবাইল,অস্ত্র,মিজাইল সহ সব কিছু আবিস্কার এর মাধ্যমে ই হতে পারে সত্যিকারের সমাধান
০৮ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০১
196444
বুড়া মিয়া লিখেছেন : পণ্য বর্জন অবশ্যই সমাধান নয়, বরং এটা আমাদেরকে একটা নতুন যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে এবং তা হবে বাণিজ্যিক যুদ্ধ! এতে করে গরীব মুসলিম দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সমর-যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি তো দূরে থাক, মুসলিম দেশগুলো বেচে থাকার যুদ্ধে লিপ্ত হবে – তারা গরীব মুসলিম দেশ ছেড়ে চলে গিয়ে পাশ্চাত্যের-ই গোলাম হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়।

আর পাশ্চাত্য-তো সক্ষম এসব ব্যাপারে তাদের নিজের প্রয়োজন মেটাতে এবং এ কারণেই তারা এক ধাপ এগিয়ে যেচে এসে মুসলিম দেশগুলোতে সমর-যুদ্ধ করে, অপরদিকে মুসলিম দেশগুলো বেচে থাকার উপকরণ থেকে শুরু করে যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদনে অক্ষম হওয়ায় তাদের যেচে আসা যুদ্ধ প্রতিরোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছে।

তাই আপনার মতো আমিও মনে করি উৎপাদনে সক্ষমতাটা আগে অর্জন করার জন্য চেষ্টা করা এবং ধারণা করি শাসককূল চেষ্টা করলে ২০-৫০ বছরের মধ্যে আমরা অনেক বিষয়েই সক্ষম হতে পারবো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File