পিকটিনের খেরোখাতা

লিখেছেন লিখেছেন ভুল উচ্ছ্বাস ১৬ মার্চ, ২০১৩, ১১:১৩:৩৮ রাত

তখন যেন কেমন ছিলাম আমি, উদ্ভট, পাগুলে, অস্থির, বেবি মেন্টালিটির। আমার চোখের সামনেই বন্ধুরা প্রেম করতো, প্রেমে পরত আর আমি ফ্যালফ্যাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। শুনতাম কিউরিয়াস হয়ে কে কি বলে। যদিও অনেক কিছুই বুঝতাম না। আর ঠিক সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরতাম, বই পড়তাম শুধু। অবশ্য টুকটাক টিভিও দেখতাম বিশেষ করে খেলার চ্যানেল গুলো। আমি এর বাহিরে তেমন কথাও জানতাম না। কি করে জানবো? ছোট বেলা থেকেই আমার নিজের একটা আলাদা জগত ছিলো যা অন্যদের সাথে একদম মিলত না। তবে একা একাই অনেক কিছু করতাম, ইয়েস তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম, আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু ছিলো সেবার তিন গোয়েন্দা গুলো। একটা লাল রঙের sansi সাইকেল ছিলো, যদিও লাল রঙ আমার একদম পছন্দ নয়, বরাবরের মতো ওটাও আম্মুই পছন্দ করে দিয়েছিলো। প্রায়ই বিকেলে সাইকেল নিয়ে চলে যেতাম কীর্তনখোলার কিংবা ওপাশে আরো একটা নদী আছে মে বি ধানসিঁড়ি ওটার তীরে। তারপর বসে বসে সন্ধ্যাওবধি চলত আমার গল্পের বই পড়া। আমি এবং আমার সহজ জীবনধারা। তখন ছিলো ২০০১ সাল।

তারপর উঠে পড়লাম উপরের ক্লাসে, আম্মুর প্রেসারে দিন রাত শুধু বই বই আর বই। আম্মু খাবার খেতে বলত বই পড়, ঘুমাতেও বলত বই পড়, ডাকলেও বলত বই পড়। আমি আর আব্বু তো ভয়েই থাকতাম কবে না জানি আম্মুর মাথাটা বিগড়ে যায়। সে যাই হোক আমি পড়তাম আর পড়তাম। কিন্তু একটা কথা আছে না বেশি প্রেসার নিলে সব যায়, আমারো হয়েছিলো তাই আমার ক্লাস এইটে স্কলারশিপ পাওয়া হয়নি। আম্মুও আমাকে দিলো বিরক্ত হয়ে ছেড়ে। মুক্ত স্বাধীন আমি ক্লাস নাইন টেন কাটিয়েছি স্রেফ ঘুরে ঘুরে। কিভাবে যে এস এস সি তে পাশ করলাম কে জানে। তারপর যথারীতি কলেজ। আমার কলেজ লাইফ এটা ভাবতেই একটা মজার স্মৃতি চলে আসে, টিটিতে খুব ভালো ছিলাম আমি, আর ছিলো দাবা। দুটোতেই প্রথম হয়েছি কলেজে সেবার ফার্স্ট ইয়ারে। সবার কাছেই অনেক পপুলার আর দুস্টো হিসেবেও টিচাররা খুব ভালোবাসতো আমাকে। কলেজের শেষের দিকে আবারো দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে আবারো রেজাল্টের ১২ টা বাজালাম এমনকি আমার কোন টিচার আমার এই রেজাল্ট আশা করেই নাই। তাদের ধারনা ছিলো আমি গোল্ডেন পাবো কিন্তু আফসুস না আমি পেলাম না আমার দুই ঈর্ষা কাতর বন্ধু পেলো, তিন জনেই গবেট মার্কা রেজাল্ট করে, একজনের ঠাই হলো আহসানউল্লাহ ইউনির CSE তে একজনের BM কলেজের ইংরেজীতে আর আমি? এই মুরগীর খোপে। অবশ্য মাঝে কেমিস্ট্রি পড়েছি দুই বছর।

আজ থেকে তিন বছর আগে যখন আমি এই প্রাইভেট ইউনি তে ভর্তি হই তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়েছিলো, আমি কল্পনায় অদ্ভুত কিছু করতাম। একটা উদাহরন দিচ্ছি আপাতত যেটা ফিজিক্সের স্টুডেন্টদের জন্যে বুঝতে পারা ইজি হবে অন্যদের জন্যে কি হবে জানিনা।

মনে করি একটি বিন্দু আর তাকে ঘিরে বৃত্তাকার একটি ক্লাউড, আর এই ক্লাউডে অবস্থান করছে আমাদের পৃথিবী ঐ বিন্দুটি হচ্ছে সূর্য। এবার ধরা যাক পুরো সূর্য ও তার ক্লাউডেড অঞ্চলটি অন্যে একটি বৃত্তাকার ক্লাউডের অংশ যাকে আমরা বলতে পারি ছায়া পথ। এভাবে অন্য একটি ছায়া পথ কল্পনা করা যাক, সেই ছায়াপথের একটি নক্ষত্রে একটি গ্রহ আছে সূর্যের মতো। একবার চিন্তা করুন পাঠক এখানে প্রতিটি জিনিস ঘূর্ণায়মান, সো পৃথিবী থেকে আমি যদি কোন মেসেজ সিগন্যাল আকারে ঐ আলাদা ছায়াপথের অন্য একটি গ্রহে পাঠাই কিংবা কোন একটি রকেট পাঠাই যোগাযোগের জন্যে তবে নির্দিষ্ট সময় পরে যেখানে আমার রকেটটি যাবে সেখানে কিন্তু ঐ গ্রহটি থাকবে না, কেন থাকবে না? যদি আমাকে ঐ গ্রহটি ধরতে হয়ে তবে এখানে কতগুলো ভেরিএবল হিসেবে নিয়ে আমাকে রকেটকে কোন পথে পাঠাতে হবে? এবং কোন গতিতে পাঠাতে হবে এবং কোনও কারনে যদি রকেটে ত্রুটি দেখা দেয় তবে কারেকশুন করে আবার কোনদিকে কোন গতিতে পাঠাতে হবে পুরো জিনিসটা আমি হিসেব করছিলাম। তাও মনে মনে হলে ভালো ছিলো কিন্তু যখন আমি এটা হিসেব করার জন্যে কাগজ কিনে আনলাম আর পুরো ফ্লোর জুড়ে কাগজ বিছিয়ে হিসেব করতে শুরু করলাম কয়েকদিন পরেই অর্ধউন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম। একটা জিজ্ঞেস করলে আরেকটা উত্তর দিতাম, অথবা মাঝ রাতে না ঘুমিয়ে বসে হা করে উদাস হয়ে থাকতাম, কি যে ভাবতাম কে জানে।

সো এরকম আরেকটি উদাহরন দিয়ে আপনাদের মাথার বারোটা বাজাবার ইচ্ছা নাই আমার। কিন্তু এরপরেই শুরু হলো হ্যালুশিনেশন। যা হচ্ছেই না আমি তাই দেখছি, আমার সর্বশেষ হ্যালুসিনেশনটা শেয়ার করছি। এটা আজ থেকে দুই বছর আগের কথা, আমি সন্ধ্যার কিছু আগে ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি আর তক্ষুনি মনে হলো আমি আসলে বিশাল একটি মাঠের মধ্যে দাড়িয়ে আছি, আর আমার সামনে একটা প্রানী ঠিক কি জিনিস বুঝতে পারছি না, সো আমি ওটাকে কিছু শুকনো গাছের পাতা দিলাম, ওটা সেগুলো খেয়ে ফেলল, এভাবে কয়েকবার দিলাম ওটা সেগুলো খেয়ে ফেলছে। আমার মনে হল এটা হয়তো কোন এক প্রকার তৃণভোজী কিছু হবে। আমার নিজেকে খুব ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছিলো, আমি ওটাকে ধরে ঝলসে ফেলার জন্যেই ওটার দিকে হাত বাড়ালাম কিন্তু একি ওটা ছিলো একটা কুকুর এবং সে উল্টো আমার উপরেই শ্বদন্ত বের করে ঝাপিয়ে পড়লো। ঠিক ঐ মুহূর্তে আমি ভয়ে চিৎকার দিলাম।

এরপর থেকেই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। ডাক্তারের অনেক নিষেধ যে কোন কিছু পড়া যাবে না, পড়াশুনা বাদ, আমাকে থাকতে হবে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডারত। সব সময় মাস্তি। আব্বু আম্মুও আসলে আমাকে অনেক ভালোবাসেন তাই তারাও চাইত না আমি পড়াশুনা করি। কিন্তু এটাই আমার জীবন। পড়াশুনা না করলেই এখন ভালো লাগে না। আব্বু তাই খুব বকেও আম্মুকে এখন, আমার ছেলেটা যদি পাগল হয় তো তুমিই দায়ী, সারাক্ষন শুধু পড় পড় পড়। এখন বুঝো। কিন্তু আমি তো পাগল নই। অবশ্যই নই। নিজেকে তা মনেও করি নাই কোনদিন। হ্যা কিছুটা অদ্ভুত স্বীকার করছি।

ওহ হ্যা পাঠক আমার নামটা বলা হয় নাই, আমিই পিকটিন, আর আপনারা এখন পিকটিনের ডায়েরী পড়েছেন। আজ এটুকুই দিলাম। বাকিটা কাল রাতে আবার।

বিষয়: সাহিত্য

১১৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File