মানবাধিকার কমিশনের কমিশন কত পার্সেন্ট!
লিখেছেন লিখেছেন মুকুলসরকার ১৮ মার্চ, ২০১৩, ০৫:০১:১৬ বিকাল
আমাদের অনেক মুরব্বীগণ টেবিল টকিংয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের বিধি-নীতি-আইন প্রণয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। আইন প্রণয়নের পর তারা ব্যাপক প্রচারণার বদৌলতে এ খ্যাতিও নাকি পেয়ে যাচ্ছে যে, আগে কিছুই ছিলনা বর্তমান সরকার এই এই করেছে। আমার কাছে ব্যাপারটা শুধু আইন প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে না বরং তার চেয়েও বেশি কিছু মনে হচ্ছে। আমি যদি একটা উদাহরণ দিই নিশ্চয় পাঠকগণ আমাকে মিথ্যুক বলতে পারবেন না। এইতো সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শরীয়তপুর সফরে গিয়ে নদীশাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন। যদিও আমি ভবিষ্যদ্বক্তা নই, তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, নির্বাচনী প্রচারণায় বর্তমান মতাসীন দল ও তাদের সহযোদ্ধারা প্রচারণা চালাবে যে তারা পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেছেন। আর নিজস্ব (?) অর্থায়নে এ সেতুর কাজ শেষ করতে আবার বাকশালীগদের(বাকশাল+আ’লীগ) ভোট দিন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শ্যামল দত্ত, মুনতাসির মামুন ও আনোয়ার হোসেন গং বাবুদের আকাঙ্খা অনুযায়ী, তাদের সহযোদ্ধারা আদর্শিক কারণে মুক্তিযোদ্ধা। কেননা মুক্তিযুদ্ধ নাকি হয়েছিল ধর্মহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য, যদিও তাদের অনেকে রাজাকার ছিলেন বলে কথা ওঠেছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কারো কারো বিরুদ্ধে স্যা দিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ধর্মহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য- এটা শ্যামল দত্ত, মুনতাসির মামুন ও আনোয়ার হোসেন গং বাবুদের আকিদা হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের আকিদা কিনা সে প্রশ্ন থাকতেই পারে। অবশ্য ভাষা ও সংস্কৃতিগত বিরোধ, ভৌগলিক দূরত্ব, আইউবী সামরিক শাসন, পশ্চিম পাকিস্তানী সামন্ততন্ত্রের আভিজাত মুসলিম জাতীয়তাবাদ বনাম সাধারণ মুসলিম জাতীয়তাবাদ, পশ্চিম পাকিস্তানী বৈষম্য, সর্বোপরি ডিকটেটরশীপ তথা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিুদ্ধ সাধারণ বাংলাদেশীরা সাম্য ও গণতন্ত্রের চেতনায় বিশ্বাস করে। তারা কোন বিশেষ সুবিধাবাদীগোষ্ঠীর চরমপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী মতবাদে বিশ্বাসী নয়, যা বাদল, বড়–য়া, ইনু ও মেনন বাবুদের নিজস্ব মার্কা ও আদর্শের প্রতিমা নিয়ে নির্বাচনকালে জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে। আরেকটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, যারা তাদের কথা ও কর্মে, চেতনায় ও বিশ্বাসে, আদর্শ ও বাস্তবে ইসলামের রঙে রঙিন হয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করতে চায় তারা ধর্ম ব্যবসায়ী নাকি যারা কেবল ভোটের জন্য ধর্মের লেবাস পরে জনগণের সামনে আসে তারা ধর্ম ব্যবসায়ী সে বিষয়টা বাংলাদেশের জনগণ বুঝতে পারে কি-না, বাবুরা কি মনে করেন? কেউ মাফ চেয়ে মতায় এসে আবার গাদ্দারী করা শুরু করলে জনগণ সেটাও বুঝে কি-না, এব্যাপারে স্বপ্নচারী বাবুরা কি মনে করেন?
সে যাক, যে কথা বলতে চাচ্ছিলাম, বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা। এ কমিশনের প্রধান নিয়োগের েেত্রও বর্তমান সরকার তার চিরাচরিত চরিত্র দলবাজী থেকে বের হতে পারে নি। নিরপে ও স্বাধীনচেতা ব্যাক্তিবর্গকে সাংবিধানিক পদে নিয়োগ না দিয়ে তাদের প্রতি নতজানু ও অনুগত ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশের শুধু নয় পাকিস্তানী আমলের সব রেকর্ডও ভঙ্গ করেছে। এ কমিশনের প্রধান তাঁর কর্মমূখরতা প্রদর্শনে সিলেট কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে কারা ফটকের বাইরে থেকে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। বিভিন্ন ঘটনায় তার মানবাধিকার রা (?) বাণী ছেড়ে আসছেন। এমন বাণী আমাদের দেশের পরজীবী বিভিন্ন এন জি ও-প্রতিনিধিরাও করে থাকেন। যেমন বাকশালীগদের ও বাকশাসাংবাদিকদের প্রচারণার সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে সুলতানা কামালও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানোর জন্য জামায়াত –শিবিরকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন, যদিও তারা কোন রূপ প্রত্য স্বাী কিংবা সরেজমিনে তদন্ত করার প্রয়োজনও মনে করেন নি। কেননা বাকশালীগদের(বাকশাল+আ’লীগ) পকেট সা¤প্রদায়িক সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টিান ঐক্য পরিষদ নেতারা জামায়াত –শিবিরকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন, সুলতানা কামালদের সে সুরে সুর মিলানো ছাড়া আর কোন উপায় হয়ত ছিল না? কেননা গ্রামবাংলার লোকজন বলে যে, রসুণের কোয়া সব একজাগায় লাগানো থাকে। বস্তুত ইসলামী আদর্শের ধারকদের বিরুদ্ধে সবাই একাট্টা যদিও ইসলামপন্থীরা ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে একাট্টা নয়। বলছিলাম যে কথা, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় দেয়ার পূর্বে একটি মন্তব্যে বলেছিলেন, শাস্তি মৃত্যুদন্ড ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। কিন্তু নিজ দেশের নাগরিক বৈধ রাজনৈতিক দলের সমর্থক –কর্মীদের দেখা মাত্র গুলি চালানোর অর্ডারের বিষয়ে তার কোন মন্তব্য জাতি জানতে পারে নি। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি ন্যায় বিচার পাওয়া ও তার পরে সব ধরনের প্রমাণাদী সাভাবিকভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাওয়া মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে কি না(?) এ ব্যাপারে তার কোন বক্তব্য জানা যায় নি। তিনি মতাসীনদের অপকর্ম আড়াল করার যে মুখোশ, শাহবাগীদের মত স্বস্তা বক্তব্য দিতে পারেন কিনা(?) তা জানার অধিকার এ জাতির রয়েছে। কেননা, তিনি লিমনের বিষয়ে কথা বলেছেন, যাকে বর্তমান সরকারের পেটুয়াবাহিনী অপরাধী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছিল। আমার যতদূর খেয়ালে পড়ে, তিনি বিশ্বজিৎ হত্যা নিয়েও কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কি মনে করেন যে, ইসলামপন্থীদের কোন মানবাধিকার থাকতে নেই! অবশ্য বিশ্ব জুড়ে নজর বুলালে চান্স সম্পাদক(?) মাহমুদুর রহমানের সাথে একমত না হয়ে পারা যায় না যে, মুসলমানদের মানবতা থাকতে নেই!! আর মুসলিম দেশে ইসলামপন্থীদেরও মানবাধিকার থাকতে নেই। আমরা জানিনা, ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলম, ইবির মেধাবী ছাত্র ওয়লিউল্লাহ-মুকাদ্দিস সহ আরও গুম হওয়া অন্যান্য নাগরিকদের ব্যাপারে তিনি কি ভুমিকা রেখেছেন! নাকি তাদেরও মানবাধিকার থাকতে নেই। ওয়লিউল্লাহ-মুকাদ্দিস-এর বিষয়ে আমার একটু ভিন্ন অনুভূতি রয়েছে। সংবাদে প্রকাশ তারা দুজনেই বাড়ি বেড়ানো শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় প্রাঙ্গণে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আমিন বাজার থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হানিফ পরিবহনের গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। সে থেকে আজও তাদের আর কোন খোঁজ নেই। প্রসঙ্গত আমার নিজের কথা না বলে পারছি না। ক্যাম্পাস থেকে যখন বাড়ি ফিরতাম মা জড়িয়ে ধরে কি যে কান্না করত। আমার খুব সে দৃশ্য চোখে ভেসে আসে। কিন্তু ঐ ছাত্রদের মা-বাবা ও নিকট জনেরা নিশ্চয় কল্পনাও করে নি যে, তাদের চোখের মনি এভাবে চিরতরে বিদায় নিবে! মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কি তাদের শোকসন্তপ্ত আপনজনদের একটু শান্তনা দিতে কোনভাবে চেষ্টা করেছেন? চেষ্টা করেছেন কোনরূপ প্রতিবিধান করতে? তিনি ঠুটু জগন্নাথ আমি সে কথা বলছি না, যেহেতু তিনি সাংবিধানিক পদে আসীন । যেহেতেু তার বাংলাদেশী জাতির নিকট দায়বদ্ধতা রয়েছে, তাই তিনি কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থসংরণের কূট-কৌশলে অংশ নিতে পারেন কি-না সে প্রশ্ন অবশ্যই থাকবে। আমার পর্যবেণে, দেশের মানুষ স্বস্তা স্লোগানের মাধ্যমে প্রদত্ত রাজাকার খ্যাতি কুড়াতে চায় না বলে অপছন্দনীয় হলেও অনেক কথা বলেন না। যেখানে জিয়া, কাদের সিদ্দিকীরাও বাম ও নক্সালপন্থীদের অভিধানে রাজাকার উপাধি পায় সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থাতো তথৈবচ। সুতরাং মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা সাবধান! লালনের ভাষায়: সময় গেলে সাধন হবে না! সাধারণ মানুষ তথা কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা, আবাল-বনিতা-বৃদ্ধা, মা-ভগিনি-সন্তানরা ২৮ ফেব্রুয়ারী একটু জেগে দেখিয়েছে। ৭১-এর অপশক্তির প্রেতাত্মারা দেখিয়েছে তারা কত রক্ত ঝরাতে পারে! কিন্তু ৭১ –এর হানাদাররা কি পেরেছিল এ স্বাধীন চেতা জাতিকে পরাজিত করতে ? মানসিংহরা কি পেরেছিল ঈসা খাঁকে পরাস্ত করতে? কিন্তু মীর জাফররা সফল হয়েছিল সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু তার পরের ইতিহাস কি? গোটা পাকভারত গোলামীর জিঞ্জির পরেছিল। সুতরাং সাধু সাবধান! আজও জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের জন্য গোটা ব্রিটিশ জাতি কালিমালিপ্ত। আজও তারা ভারতবর্ষে আসলে শ্যাম ধ্বনি উচ্চারিত হয়। ব্রিটিশরা হাজার মাইল দুরের বলে পার পেয়ে গেছে। পাকিস্তানিরাও মুজিব-ইন্দিরার বদান্যতায় পারপেয়ে গেল। কিন্তু আজকে যারা বাংলাদেশের মায়ের বুক খালি করল, বোনকে বিধবা করল, সন্তানকে ইয়াতীম করল, পিতাকে সন্তানহারা করল তারা এদেশ থেকে কোথায় যাবে? ফেরিওয়ালারা আসে যায়, বাংলাদেশীরা থেকে যায়। ফেরিওয়ালারা সাঈদীর সাী আদালতগেট থেকে অপহরণের বিষয়ে চুপ কেন? চাপাতিলীগ, সরকারী পেটুয়াবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনে যখন সারা বাংলাদেশ আজ লন্ডভন্ড, সেখানে একটি ছোট দলের নেতার পে স্বাী পাওয়া ও তাদের নিরাপত্তাতো আরও অসম্ভব। সে অবস্থায় কিভাবে সুষ্ঠু বিচার হতে পারে সে প্রশ্ন কি উত্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে? কিন্তু মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা কি বলেন? গত কয় দিনের যে গণহত্যা হল সে ব্যাপারে সম্মানিত মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান একচোখা দৈত্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন কেন? তাত্বিক বিতর্কের আড়ালে তিনি কেন গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করলেন? যুদ্ধকালীন অবস্থায় কেবল গণহত্যা হবে আর শান্তি কালিন অবস্থায়(২৮ফেব্র“য়ারী,২০১৩) নৃশংস ও ব্যাপক হত্যাকান্ডকে গণহত্যা বলা হবে না কেন? এই নিহত লোকজন কি সশস্ত্র যোদ্ধা ছিলেন নাকি নিরস্ত্র প্রতিবাদকারী ছিলেন? শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচীকে পেটুয়াবাহিনী কি হামলা ও মামলা দ্বারা সহিংস করে তুলে নি? ব্রিটিশদের জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যা কি ৭১-এর পাকবাহিনীর গণহত্যা দ্বারা গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে? তা না হলে তিনি কেন বললেন যে, ২৮ফেব্র“য়ারীর হত্যাকান্ডকে গণহত্যা বলে ৭১-এর গণহত্যাকে খাট করার চেষ্টা করা হয়েছে? ড. মিজানরা কবে সা¤প্রদায়িক(ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-সংকৃতি-ুদ্রনৃতাত্মিক জনগোষ্ঠী-দল-মতের সা¤প্রদায়িকতা) গোষ্ঠির ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার মানবাধিকারের পে দাঁড়াবেন ? কমিশনের মধ্যে কবে মানবাধিকার নিয়ে ১০০% সঠিক ও স্বচ্ছ অবস্থান নিবেন? নাকি পার্শিয়াল মানবাধিকার নিয়েই হুজুগে মেতে থাকবেন? ড. মিজানরা কি ইসলামের সেই মানবতার মহা শ্লোগান শুনেছেন: আর আমি সম্মানিত করেছি আদম সন্তানকে! (আল-কুরআন, সূরা:বনী ইসরাঈল, আয়াত:৭০) রাসূল স. বলেছেন: আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ কর, শান্তি-নিরাপত্তা প্রাপ্ত হবে। সুতরাং মানব রচিত মতবাদের পে ওকালতি করা বর্জন করুন। আদম সন্তানকে তার স্বাভাবিক মর্যাদা দান করুন। মানবতার জয় গান করুন: নজরুলের ভাষায়:
উহারা প্রচার করুক হিংসা-বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ
আমরা বলিব সাম্য-শান্তি
এক আল্লাাহ জিন্দাবাদ।।
বিষয়: বিবিধ
১২৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন