আকাশ ও জমীন পরস্পরের নিকট বিষ্ময়কর বটে কিন্তু হে মানুষ ! আপনি কার নিকট বিষ্ময়কর?
লিখেছেন লিখেছেন মুকুলসরকার ০৫ আগস্ট, ২০১৩, ০২:৩৬:১২ দুপুর
আল্লাহ তাআলা মানব জাতির মুক্তি ও কল্যাণের মহাসংবিধান আল-কুরআনে ফরমান: যারা বুদ্ধি-বিবেকে ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃততি, রাত্রদিনের অনবরত আর্বতনে, মানুষের প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর দরিয়ার চলমান জলযানসমূহ, বৃষ্টিধারার মধ্যে, যা আল্লাহ র্বষণ করেন ওপর থেকে তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিকে জীবন দান করনে এবং নিজের এই ব্যবস্থাপনার বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমরে প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ু প্রবাহে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্য নর্দিশন রয়েছে ৷ সূরা: বাক্বারাহ, আয়াত:১৬৪।
নিশ্চয় আকাশ ও জমীন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিবসের আবর্তনে/বৈপরীত্যে অবশ্যই দৃষ্টিবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত:১৯০
আমরা যদি ল করি তাহলে দেখতে পাব আকাশ ও জমীনের কিছু বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:
১. আকাশ পৃথিবী অপো অনেক বিশাল, যার তুলনা করা কঠিন । পান্তরে জমীন তথা মানুষের আবাসস্থল এই পৃথিবী অতি ছোট আয়তনের সৃষ্টি ।
২. অতি বিশাল আকাশে মানুষ- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব ও বুদ্ধিমান প্রাণীর আবাস না হয়ে ূদ্র পৃথিবীর বসতি তথা বস্তিতে তাকে পুনর্বাসিত করা হল।
৩. আকাশ যে সব জিনিস ধারন করে আছে পৃথিবী তা ধারন করতে পারে না । অনুরূপ পৃথিবী যে সব জিনিস ধারন করে আকাশ তা ধারন করতে পারে না। যেমন: আকাশ বড় বড় গ্রহ-নত্র, ছায়াপথ, নীহারিকা, মেঘমালা, বাস্প প্রভৃতি তার বে ধারন করে আছে। কিন্তু পৃথিবীর খাল-বিল, পুকুর-হ্রদ, নদ-নদী, ঝর্ণা-নিকুঞ্জ, সাগর-মহাসাগর এমনকি ছোট একফোঁটা বৃষ্টিকেও ধরে রাখতে পারে না। আবার মজার ব্যাপার হল, পৃথিবী এতকিছু ধরে রাখতে পারে কিন্তু হালকা একটু বাস্প সে ধরে রাখতে পারে না।
৪. আমরা আরও ল করি যে, পৃথিবীর মধ্যে নানান প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে কিন্তু আকাশে এসবের কিছুই নেই।
এমনি ভাবে আমরা যতই পর্যবেণ করব দেখব যে, আকাশ ও জমীনের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে এবং পরস্পর পরস্পরের নিকট বিস্ময়করও বটে। এতসব বৈশিষ্ট্য ও বৈপরীত্য সত্ত্বেও পরস্পরের মধ্যে কোন সংঘাত সংঘর্ষ নেই। বরং সৃষ্টির অনুপম সৌন্দর্য সুধার ক্ষেত্রে পরস্পর পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। পৃথিবী থেকে আকাশের দিকে তাকালে কত সুন্দর মনে হয়, মনে হয় কত উদার তার বক্ষ।
কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের ক্ষেত্রে কি অবস্থা ল করা যায়? ’রাসূল স. বলেছিলেন: আমার যুগ সর্বোত্তম যুগ, তারপর পরবর্তী যুগ তারপর পরবর্তী যুগ।’ বিশ্ব ইতিহাসে মানুষের সুকুমার সৌন্দর্যগুলো আর কখনো এমনভাবে বিকশিত হয় নি যেমনটা হয়েছিল রাসূল স. এর হাতে গড়া সোনার মানুষদের েেত্র। আর আমরা তাঁদের চারিত্রিক গুণাবলীর কথা পাঠ করে আবেগে সিক্ত হয়ে উঠি। তাঁদের দেখেই অবাক হওয়া যায়, ভাবা যায়- মানুষ কিভাবে এত সুন্দর ও ভাল হতে পারে ! তাঁরাই সারা বিশ্বের বিষ্ময়, মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের ঝান্ডাবাহক। যাদের দেখে ফেরেশতাকুলও অবাক হয়, তাঁদের জন্য দোয়া করে তামাম মাখলুকাত। যারা যুদ্ধের সময় মৃত্যুর মুহূর্তেও অপরের কল্যাণ চিন্তায় বিভোর ছিল ও অপরকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল, যে নেতাগণ বিশ্বাস করতেন ও বলতেন:’যদি ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায় সে জন্য আমি ওমারকে আখেরাতে আল্লাহর আদালতে জবাবদিহী করতে হবে।’ যারা নিজের তখত রার জন্য একজন মানুষেরও রক্ত ঝরানোকে পছন্দ করতেন না। তার চেয়ে নিজের শাহাদাতকে পছন্দ করেছিলেন! যে যুগে সুদূর সানআ(ইয়ামেনের রাজধানী) থেকে হাযারামাওত পর্যন্ত একজন নারী একা পথ চলতে গিয়ে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করতো না। অর্থাৎ নিরাপদে ও নিরুপদ্রবে পথ চলতে পারত কোন ইভটিজারের হয়রানীর স্বীকার হতে হতো না আর ধর্ষনের তো প্রশ্নই উঠেনি। অথচ তার অব্যবহিত পূর্বেই আইয়ামে জাহেলিয়াতে ধর্ষণ-ব্যাভিচার, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফনের মত নৃসংস ঘটনা ঘটেছিল । এসব গল্প মনে হতে পারে, হতে পারে বর্তমানে কল্পনার বিষয়। কিন্তু এসবই ইতিহাসের নির্মোহ সত্য ঘটনা। এই ইতিহাসকে বর্তমানে টেনে আনা সম্ভব কি-না? মনে হতে পারে তা অসম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেন: মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী আর যারা তাঁদের সর্বান্তকরনে অনুসরণ করে আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর(আল্লাহর) প্রতি সন্তুষ্ট। সূরা: তাওবা, আয়াত:১০০ এ আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, যদি সে সোনালী যুগের সোনার মানুষদের আন্তরিকভাবে অনুসরন করা হয় তবে তাদের মত হওয়া সম্ভব। যার ফলে আপনাকে দেখেও মাখলুকাত বিস্মিত হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন