মাওলানা মাসউদের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক প্রযোজ্য নয়! আজ মতিঝিলে সমাবেশ
লিখেছেন লিখেছেন মবকল ২৩ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫৯:২১ সকাল
রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের মধ্যেও আজ রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন আওয়ামীপন্থী ও শাহবাগি মাওলানা হিসেবে পরিচিত ফরিদউদ্দিন মাসউদ। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, নাস্তিকদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে এই মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি। নানা বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও আজকের সমাবেশ সফল করতে সরকারের সহযোগিতায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে যোগ দিতে ঢাকার পাশের ১৫ জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট ইমাম ও গণশিক্ষার শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকার বিনিময়ে লোক আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওলামা-মাশায়েখ, তৌহিদি জনতা সংহতি পরিষদের ব্যানারে ঘোষিত আজকের এই সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশের প্রথম সারির ইসলামি দলগুলোর মধ্যে। শাহবাগে নাস্তিক ব্লগারদের সমাবেশে গিয়ে সংহতি ও দোয়াকারী এই আলেমের পক্ষ থেকে ঘোষিত সমাবেশ আসলে নাস্তিকদের রক্ষার জন্যই ডাকা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা। এক পর্যায়ে ফরিদউদ্দিনের সমাবেশ প্রতিহত করতে কাফনের কাপড় পরে সেখানে পাল্টা সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় খেলাফত যুব আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। তবে রাষ্ট্রপতির ইন্তেকালে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় পূর্ব ঘোষিত আজকের কর্মসূচি স্থগিত করে ওই সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে ফরিদউদ্দিন মাসউদকে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে যথারীতি আজ সমাবেশ করবেন তিনি। এদিকে রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যেও সমাবেশ করার ঘোষণায় ফরিদউদ্দিন মাসউদকে রাজাকার ও জামায়াতের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে খেলাফত যুব আন্দোলন। গতকাল এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করা হয়। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যে এই সমাবেশ করলে ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও শাস্তি দাবি করেছে ইমাম-খতিব ঐক্যপরিষদ।
আজকের সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল আলেমদের এক সৌজন্য সাক্ষাত্ অনুষ্ঠানে ফরিদউদ্দিন মাসউদ বলেন, ২৩ মার্চের মহাসমাবেশে সফল করার জন্য সারাদেশ থেকেই ওলামায়ে কেরাম নিজ উদ্যোগে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে, মওদুদীর ফেত্নার বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধ ওলামায়ে কেরাম। কুচক্রী মহলকে হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, তৌহিদি জনতার বাঁধভাঙা জোয়ারে ষড়যন্ত্র বানের পানির মতো ভেসে যাবে। আজকের সমাবেশ সম্পর্কে মিডিয়া কর্মকর্তা মাওলানা আরমান কায়সার বলেন, আজ সকালে সমাবেশে সারাদেশ থেকে লোকসমাগম হবে। এতে শোক দিবসের জন্য বিশেষ দোয়া করা হবে।
অভিযোগ মতে, আজকের সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার আশপাশের ১৫টি জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশ সংশ্লিষ্ট ইমাম এবং মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার শিক্ষকদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল সংশ্লিষ্ট জেলা শাখার উপ-পরিচালককে টেলিফোনে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ সকাল ১০টার মধ্যে বায়তুল মোকাররমে জমায়েত হয়ে মতিঝিলের সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান।
খেলাফত যুব আন্দোলন: খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইন্তেকালে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের কারণে বিরোধী দলীয় নেতাসহ দেশের অনেক রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন তাদের সব প্রোগ্রাম স্থগিত ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রীয় শোকে শোকাবহ হয়ে আমরা খেলাফত যুব আন্দোলন ও আমাদের ২৩ মার্চের মতিঝিলের শাপলা চত্বরের সামাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেছি। কিন্তু মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কোনো দেশের নাগরিক যে, তিনি তার ২৩ মার্চের সমাবেশ স্থগিত করতে পারলেন না। আমার মনে হয় তার অন্তরে প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রের মর্যাদা বলতে কিছুই নেই। মূলত তালাস করে দেখা দরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সাহেব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, না রাজাকার ছিলেন। তার আচরণে বোঝা যায় তিনি বড় রাজাকার এবং জামায়াতে ইসলামীর দালাল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা করতে গিয়ে আসলে জামায়াতকে প্রতিষ্ঠা করতে মাঠে নেমেছেন।
তিনি গতকাল সকালে দলের কেন্দ্রীয় দফতরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আগত যুব আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এ কথা বলেন। তিনি আজকের সমাবেশে অংশগ্রহণ না করে নবী প্রেমিকের পরিচয় দিয়ে নাস্তিক ব্লগার ও জামায়াতে ইসলামীর দালাল ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে বয়কট করার জন্য খেলাফত যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার প্রতি আহ্বান জানান। অপর এক বিবৃতিতে ইসলামী যুব ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত আজকের পাল্টা সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন