আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আদেশ যেভাবে-৬ প্রমাণ না থাকলেও শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার সাজিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে
লিখেছেন লিখেছেন মবকল ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৮:১৫:৪৫ সকাল
শহীদুল ইসলাম : মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭১ সালে রাজাকার ছিলেন না, তিনি শান্তি কমিটিরও সদস্য ছিলেন না। এমনকি তার বিরচদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তা যে সময়ে সংঘটিত হয়েছে মর্মে অভিযোগে বলা হয়েছে ঐ সময়ে তিনি পারেরহাট বা পিরোজপুরেই ছিলেন না। রাজাকার দেলু সিকদার ওরফে দেলোয়ার সিকদারের অপরাধ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ঘাড়ে চাপিয়ে দায়েরকৃত অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল সত্য ধরে নিয়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এই দেলু সিকদার শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং রাজাকার বাহিননীর সদস্য হিসেবে নিজে অপরাধ করেছেন এবং পাকিস্তান বাহিনীকে অপরাধে সহযোগিতা করেছেন। যে সময়ের অভিযোগ সেই সময় তিনি যশোরে রওশনের বাড়িতে ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায়ে সেটা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকারপক্ষের অভিযোগ হলো তিনি স্বাধীনতার পরে রওশনের বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেটা প্রমাণের জন্য রওশনকে সরকারপক্ষ সাক্ষী হিসেবে আনেননি। আসামীপক্ষের সাক্ষী হিসেবে রওশন সাক্ষ্য দিয়ে জানিয়েছেন যে সাইদী সাহেব তার বাড়িতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরচ হলে এপ্রিলের প্রথম থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সময়ে। ট্রাইব্যুনাল গত ২৮ ফেব্রচয়ারি প্রদত্ত রায়ে রওশনের বক্তব্য সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। তার বক্তব্য বিবেচনায় নেননি। তার বক্তব্য বিবেচনায় নিলে প্রমাণ হতো যে সাঈদী সাহেব রাজাকার ছিলেন না। তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন না। স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকান্ডেই তিনি জড়িত ছিলেন না।
প্রসিকিউশন পক্ষের মামলা হলো : ফরমাল চার্জ সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং প্রদর্শিত দলিল পত্র হইতে দেখা যায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যিনি ঐ সময় তাদের কথিত মতে দেলু বা দেলোয়ার সিকদার নামে পরিচিত ছিল যে পারেরহাটে মুদির ব্যবসা করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচ হলে তিনি ভাল উর্দূ জানার কারণে পাকিস্তান আর্মির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং পাকিস্তান আর্মিদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন বা পাকিস্তান আর্মিদের ঐ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সহায়তা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে আত্মরক্ষার্থে পিরোজপুর হতে যশোরের বাঘারপাড়া থানার দহকলা গ্রামের রওশনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে আত্মগোপন করে সৌদী আরব চলে যান। ১৯৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পিরোজপুরে ধর্মসভা করেন।
আসামীপক্ষের মামলা হলো তিনি কখনো দেলু বা দেলোয়ার সিকদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, তিনি কখনো মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে ওয়ায়েজীন হিসেবে দেশে বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ-মাহফিল করতেন। বিশেষত যশোর জেলায় ওয়াজ মাহফিল করতেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচর আগে যশোরের নিউমার্কেট এলাকায় নিউ টাউনে বসবাস করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচ হলে তিনি নিউ টাউন হতে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করার পর মহিরনের পীর সাহেব সদরচদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে দহকলার রওশন আলীর বাড়িতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবন্থান করেন। পরে নিজ এলাকায় ফেরত আসেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সমাপ্ত হবার পরও বেশ কিছুদিন নিজ এলকায় থাকার পর খুলনায় যান এবং সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াজ মাহফিল করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা নির্বাচিত হন। পরে তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার রাজনৈতিক ভূমিকা এবং তিনি জনপ্রিয় ওয়ায়েজীন হওয়ার কারণে তার বিরচদ্ধে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে যার সাথে তার ন্যূনতম সম্পর্ক নাই। এই অভিযোগসমূহকে আলvমা সাঈদী শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তার বিরচদ্ধে আনীত যে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বাইরে মিথ্যা অভিযোগ হলো তিনি রাজাকার ছিলেন, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বা তার ডাক নাম দেলু সিকদার ছিল। সাঈদী সাহেব কখনোই দেলু সিকদার বা দেলোয়ার সিকদার ছিলেন না সেটা আমরা পূর্ববর্তী সিরিজে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।
ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের অনুচ্ছেদ ১২তে সাঈদী সাহেবকে রাজাকার বাহিনী এবং শান্তি কমিটি বা পিস কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এটা যথার্থ আইনসঙ্গত বা সাক্ষ্য প্রমাণভিত্তিক কোনটাই নয়। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল PW-১ মাহবুবুল আলম হাওলাদার PW-২ রচহুল আমীন নবীন, PW-৩ মিজানুর রহমান তালুকদার, PW-৪ সুলতান আহমেদ হাওলাদার, PW-৫ মাহতাব উদ্দীন হাওলাদার, PW-৬ মানিক পশারী, PW-৭ মফিজউদ্দিন পশারী, PW-৮ মোস্তফা হাওলাদার, PW-৯ আলতাফ হোসেন হাওলাদার, PW-১০ বাসুদেব মিস্ত্রি, PW-১১ আঃ জালাল শেখ, PW-২৬ আবেদ খান, প্রদর্শনী-৩৫, প্রদর্শনী-৮, প্রদর্শনী-১১ এবং প্যারা ৮১ তে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও বেআইনীভাবে ডা. এম এ হাসানের যুদ্ধাপরাধের তালিকা ও বিচার প্রসঙ্গ প্রকাশকাল ২০০৯ এবং অন্য একটি মামলায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক দাখিলকৃত শান্তি কমিটি-১৯৭১, প্রকাশকাল ২০১২-এর উদ্ধৃতি দিয়ে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এমনকি আসামীপক্ষের বক্তব্যের একটি মাত্র বাক্য বিবেচনায় না নিয়ে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উলেখ করা যায়, ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধের ঐ অঞ্চল (পিরোজপুর)-এর সাব সেক্টর কমান্ডার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড শামসুল আলম তালুকদার (DW-১) পারেরহাটের ক্যাম্প কমান্ডার খসরচল আলম (DW-৫) এবং অন্যান্য DW আসামীপক্ষের সাক্ষী এবং আসামী পক্ষ থেকে প্রদর্শিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (প্রদর্শনী- AK) জেলার ইতিহাস (প্রদর্শনী- AJ) এবং ঐ অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন এর ‘‘মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিনগুলো’’ (প্রদর্শনী-R) বিবেচনায় আনেন নাই।
উলেখিত সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রসিকিউশন পক্ষ (সরকারপক্ষ) সাঈদী সাহেবকে বাজাকার প্রমাণের জন্য মূলত যে সমস্ত দলিলপত্রের ওপর নির্ভর করেছেন তার প্রতিটি ২০০০ সালের পরবর্তীতে রচিত বা লিখিত। কিন্তু উক্ত দলিলসমূহ প্রস্ত্ততকারী বা লেখক বা সংবাদদাতা জীবিত থাকলেও তাদের কাউকে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি বরং তাদেরকে হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে প্রসিকিউশন পক্ষে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেছেন। প্রদর্শনী-১১তে ৪/১১/২০০৭ তারিখের দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার রিপোর্টটি ‘‘একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ঐ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এই সম্পর্কে প্রথম দুটোই আসামীপক্ষের বক্তব্য ছিল যে ঐ কমিশনের সদস্য ছিলেন এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং অপর সদস্য ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। কাজেই তারা বিচারকার্যে অংশগ্রহণ বা পরিচালনা করার উপযুক্ত ব্যক্তি নন কিন্তু বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তার বিরচদ্ধে আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তি করার সময় বলেন যে, Non-Active Participation এর কারণে তা বিচারকে প্রভাবিত করবে না যদি এই রিপোর্টটি সেক্রেটারিয়েট সদস্যদের অংশগ্রহণ ছাড়াই প্রস্ত্তত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেই রিপোর্টটির ওপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পূর্ণ বেআইনী।
প্রদর্শনী-৩৫ মূলে দাখিলকৃত দলিলটির ওপর নির্ভর করে প্রসিকিউশন পক্ষ সাঈদী সাহেবকে রাজাকার হিসেবে প্রমাণের প্রয়াস পেয়েছেন। সে সম্পর্কে বলা যায় যে, উক্ত রিপোর্ট সম্পাদনকারী ডা. এম.এ হাসান জীবিত আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন টকশোতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু কেন তাকে এই মামলায় প্রসিকিউশন সাক্ষী করলেন না তা বোধগম্য নয়। এ সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় জেরা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কোন যৌক্তিক জবাব দিতে পারেন নাই।
উপরন্তু এই রিপোর্টটির যাচাই প্রক্রিয়া আইনসম্মত, গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ তদন্তকারী কর্মকর্তা জেরার জবাবে জানান যে, তিনি পিরোজপুরের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক সেন্টুর নিকট ১৭-৮-২০১০ তারিখে যাচাই করে এর সত্যতা পান। অথচ তিনি জেরায় স্বীকার করেন যে, তিনি ১৮-৮-২০১০ তারিখে সর্ব প্রথম পিরোজপুরে যান। কাজেই এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
সাঈদী সাহেব রাজাকার ছিলেন মর্মে যে সমস্ত সাক্ষী আদালতে এসে মৌখিক সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তাদের বক্তব্য প্রচুর গরমিল, বৈপরিত্য, বৈসাদৃশ্য এবং পরস্পর সাংঘর্ষিক। এ সমস্ত সাক্ষীর বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তারা এমনও বক্তব্য প্রদান করেছেন যে, পাকিস্তানী আর্মি পারেরহাটে আসার অর্থাৎ ৭ মে’র এক মাস পূর্বে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। যার সদস্য ছিলেন সাঈদী সাহেব। এটা যদি সত্য ধরে নেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠনের পূর্বে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এমনকি তাদের বক্তব্য অনুযয়ী এপ্রিল মাসে পারেরহাটে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছে যা বিশ্বাস করার কোন কারণ নাই। এটা হাস্যকরও বটে। উপরন্তু PW-12 স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মাওলানা সাঈদীর প্রতিদ্বন্দ্বী এ. কে. এম. এ আওয়াল এর বক্তব্য থেকে দেখা যায় মে মাসের শেষের দিকে পাকবাহিনী আসার পরে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। যদিও তিনি পরবর্তীকালে ৭ মে পাকবাহিনী আসার পরবর্তীতে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এটিকে সত্য ধরে নিলে অন্য সকল সাক্ষীর বক্তব্য অর্থাৎ রাজাকার বাহিনীর গঠন ও উহার সদস্য হওয়ার বিষয় কথিত বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসিকিউশনের দালিলিক কাগজপত্র এবং মৌখিক সাক্ষ্যতেই যেখানে তথ্যে এত বৈপরিত্য সেখানে মাওলানা সাঈদীর রাজাকার শান্তি কমিটির সদস্য থাকার প্রশ্নই অবান্তর।
স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তীকালে সাঈদী সাহেব প্রথমে দহকলার রওশনের বাড়ি এবং পরবর্তীতে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপন করে থাকেন মর্মে ট্রাইব্যুনাল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রায় দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য, আমলযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল যে সমস্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অনুচ্ছেদ-৩৪-এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ট্রাইব্যুনাল শুধু PW-4, PW-8, PW-12 এবং PW-14 দের জেরার এই অংশটুকু অর্থাৎ ’৭১ সালে সাঈদী সাহেব দুই সন্তানের পিতা ছিলেন এবং প্রদর্শনী-১৫১ তে সাঈদী সাহেবের দ্বিতীয় সন্তান শামীম সাঈদীর জন্ম তারিখ ০১-০১-৭২ লেখা আছে এবং PW-2 রচহুল আমীন নবীন, PW-12 এ.কে.এম.এ আউয়াল আসামীকে পারেরহাটে দেখেননি এবং লোকজনের কাছে শুনেছিলেন যে, সাঈদী সাহেব পালিয়ে গেছেন কাজেই আসামী পক্ষের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা যথার্থ নয়। কারণ প্রদর্শনী - ১৫১ বিধি ১০ অনুযায়ী জব্দ করা হয় নাই বা কোন আইনগত কর্তৃত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে বা আইনসম্মত উপায়ে সংগৃহীত হয় নাই। উপরন্তু আমাদের দেশে জন্ম তারিখ সাধারণত দাখিল বা এসএসসি সনদ অনুযায়ী লেখা হয়। আমাদের দেশে চাকরি বা অন্যান্য সুবিধার জন্য সাধারণভাবে ছেলে-মেয়েদের বয়স ২-৩ বছর কম দেখানো হয়ে থাকে। উপরন্তু ট্রাইব্যুনাল বয়স বিবেচনার ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি বা আচরণ করেছেন। PW-1 সাক্ষ্য প্রদানকালে তার বয়স ৬০ বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে বয়স ছিল ২০ বছর, অথচ তার এসএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫৯ সালে এবং জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী তার বড় বোন মাতোয়ারার জন্ম ১৯৫৭ সালে। PW-23 গৌরাঙ্গ সাহা ১৯৭১ সালে তার বয়স ২৭ বছর দাবি করলেও তার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ০৮-০৭-১৯৬৩ দেখা যায়। এক্ষেত্রে এই দুইজন সাক্ষীর বক্তব্য বিবেচনায় আসার কোন যৌক্তিক কারণ ছিল না। অথচ ট্রাইব্যুনাল কোন কারণ ছাড়াই তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। উপরন্তু PW-15 এবং PW-16 অর্থাৎ সোলায়মান আলী এবং জুলফিকার আলীর বক্তব্য অনুযায়ী দেখা যায় ১৯৭০ সালে সাঈদী সাহেবকে তারা যাশোরে দেখেছেন এবং PW-24 হোসেন আলীও প্রসিকিউশনের বক্তব্যকে সমর্থন করেন নাই। উপরন্তু সাঈদী সাহেবকে স্বাধীনতার পরে যাশোরে রওশন-এর বাড়িতে দেখেছেন এমন কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হাজির করেন নাই বরং শোনা সাক্ষী হাজির করেছেন।
আসামী পক্ষ কোন পি প্রমাণে ব্যর্থ হলেই প্রসিকিউশনের বক্তব্য গৃহীত হবে এটা আইনের বিধান নয় বরং প্রসিকিউশনের বক্তব্য প্রসিকিউশনকে প্রমাণ করতে হবে এটাই আইনের বিধান। সাঈদী সাহেব স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রওশনের বাড়িতে ছিলেন মর্মে প্রসিকিউশন ৩ জন সাক্ষী (PW-15, PW-16, এবং PW-24) ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করলেও তাদের মধ্যে PW-24 হোসেন আলী প্রসিকিউশনের বক্তব্যকে নিশ্চিতভাবে সমর্থন করেন নাই। PW-15 এবং PW-16 দুই জনই আওয়ামী লীগের নেতা তাদের সাক্ষ্যে উলেখ আছে। এছাড়াও তাদের সাক্ষ্য হতে দেখা যায় তারা কেহই সাঈদী সাহেবকে রওশনের বাড়িতে দেখেন নাই বরং তারা শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য দিয়েছেন। PW-15 সোলায়মান শেখ জেরায় জানায়, দেশে ফিরে আসার পর সাঈদী সাহেবের সাথে তার দেখা হয় নাই। তিনি তোজাম্মেল হোসেন, হোসেন আলী, জুলফিকার আলী এবং সদরচদ্দিন গংদের নিকট থেকে বিষয়টি শুনেছেন। PW-16 জুলফিকার আলী তার জেরায় জানান, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি জানতে পারেন রওশন আলীর বাড়িতে এক অপরিচিত লোক আশ্রয় নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাকে রওশন আলীর বাড়িতে দেখার বিষয়টি প্রমাণিত হয় না। কারণ তারা যাদের কাছ থেকে সাঈদী সাহেবকে রওশন আলীর বাড়িতে থাকার কথা শুনেছেন। তাদের মধ্যে একজন রওশন আলী এবং অপরজন হোসেন আলী। এদের কেউই প্রসিকিউশনের বক্তব্য সমর্থন করেন নাই।
রওশনের বাড়িতে সাঈদী সাহেবের অবস্থান এই মামলায় অত্যন্ত গুরচত্বপূর্ণ বিষয়। সত্য প্রমাণের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি ছিল প্রসিকিউশন রওশনকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করবে। কিন্তু তা করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা রওশনের বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়েছেন। তার ভিডিও ছবিও দেখিয়েছেন যাতে রওশনকে দেখা যায়। কিন্তু তাতে রওশনের কোনো বক্তব্য নেই। তাকে সাক্ষী হিসেবেও হাজির করা হয়নি। সত্য প্রমাণের জন্য আসামীপক্ষের সাক্ষী হিসেবে রওশন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সরকার পক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী তাকে ব্যাপক জেরা করেন। জবানবন্দী ও জেরায় তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মাওলানা সাঈদী তার বাড়িতে ছিলেন। পরে তিনি পিরোজপুরে চলে যান। রায় প্রদানের সময় রওশনের বক্তব্য মোটেও বিবেচনায় নেনটি বিচারকরা। বিবেচনায় নিলে মাওলানা সাঈদী বেকসুর খালাস পেতেন। কারণ তার বিরচদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সবই মে ও জুন মাসের।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন