আবু তালেব হত্যার ঘটনায় সাক্ষীদের বক্তব্য পরস্পরবিরো

লিখেছেন লিখেছেন মবকল ০৪ জুন, ২০১৩, ০৭:৫৯:৫০ সকাল

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিলের শুনানি চলছে। ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজার তিন নম্বর অভিযোগ সাংবাদিক ও আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব হত্যার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন ডিফেন্সপক্ষ। ডিফেন্স টিমের প্রধান কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক শুনানিতে এই অভিযোগের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের রায়, ফর্মাল চার্জ, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীতে সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুনানিতে তুলে ধরেন। আজ মঙ্গলবার এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদ- দেয়া হয়েছে খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ এর মধ্যে একটি।

গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এই যুক্তি তুলে ধরেন। শুনানিতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, এডভোকেট মশিউল আলম, এডভোকেট গিয়াসউদ্দিন মিঠু, ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, এডভোকেট মাইনউদ্দীন ফারুকী, এডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ। সরকারপক্ষে শুনানিতে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।

শুনানিতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খন্দকার আবু তালেব হত্যার ঘটনার বিবরণে ফরমাল চার্জ এবং সাক্ষীদের দেয়া সাক্ষ্যে পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। যেমন ফরমাল চার্জে ঘটনা বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে আবু তালেবকে কাদের মোল্লা অন্যান্য আল-বদর, রাজাকার এবং বিহারী দুষ্কৃতিকারীরা ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানায় নিয়ে হত্যা করে। অপরদিকে এ ঘটনা বিষয়ে প্রসিকিউশনের যে দু’জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা বলেছেন খন্দকার আবু তালেব বাসায় ফেরার পথে ইত্তেফাকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অবাঙ্গালী আবদুল হালিম তাকে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়। আবদুল হালিম মিরপুরে বাসায় পৌঁছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে খন্দকার আবু তালেবকে তুলে নিয়ে তাকে কাদের মোল্লা ও বিহারীদের হাতে তুলে দেয়।

আবু তালেব হত্যা বিষয়ে সাক্ষী, তদন্ত কর্মকতা এবং ফরমাল চার্জের গরমিল তুলে ধরে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জের তিন নম্বর অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যার ঘটনা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর-১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্য, রাজাকার এবং দুষ্কৃতিকারী এবং অবাঙ্গালী বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে ফেলে। তারা খন্দকার আবু তালেবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়।

ফরমাল চার্জ থেকে পড়ে শোনানোর পরে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আবু তালেবের ছেলে ৫ নম্বর সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসানের সাক্ষ্য পড়ে শোনান।

সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ২৫ মার্চ ইত্তেফাক অফিস গুঁড়িয়ে দেয়ার খবর শুনে তার পিতা খন্দকার আবু তালেব সেখানে যান তার সহকর্মীদের অবস্থা জানতে। তিনি সেখানে কিছু মৃতদেহ দেখতে পান। ২৯ মার্চ তিনি তাদের মিরপুর বাসায় আসছিলেন তার গাড়ি এবং টাকা নেয়ার জন্য। কিন্তু মিরপুর যাবার পথে ইত্তেফাকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অবাঙ্গালী আবদুল হালিমের সাথে দেখা হয় তার। আবদুল হালিম তাকে পৌঁছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে ওঠান এবং আবদুল কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে যান। এরপর মিরপুর-১০ জল্লাদখানায় তার পিতাকে আবদুল কাদের মোল্লা হত্যা করে। এসময় আবদুল কাদের মোল্লার সাথে আক্তার গু-া এবং আরো অবাঙ্গালী দুষ্কৃতিকারীরা ছিল।

সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান জেরায় জানান, তিনি তার পিতার এক সময়কার সহকর্মী এডভোকেট খলিলের কাছ থেকে শুনেছেন যে, ইত্তেফাকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল হালিম তার পিতাকে তার গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে কাদের মোল্লা এবং তার সহযোগীদের হাতে তুলে দিয়েছে। জেরায় তিনি আরো বলেন, তাদের অবাঙ্গালী ড্রাইভার নিজাম তাকে বলেছেন যে, আবদুল হালিম তার পিতাকে আবদুল কাদের মোল্লা এবং তার সঙ্গীদের হাতে তুলে দিয়েছে।

এ ঘটনায় প্রসিকিউশনের আরেক সাক্ষী হলেন আবদুল কাইউম। তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি মিরপুরের বাসিন্দা এবং খন্দকার আবু তালেবের বন্ধু ছিলেন। তিনি বলেছেন, ফারুক খানের (তার কলিগ) কাছে তিনি শুনেছেন যে, স্থানীয় আক্তার গু-া, বিহারী এবং কাদের মোল্লা তালেব সাহেবকে হত্যা করেছে মিপুর-১০ জল্লাদখানায়। এছাড়া তালেব সাহেবের ড্রাইভার নিজামের কাছ থেকেও তিনি শুনেছেন যে, খন্দকার আবু তালেব মিরপুরে তার বাসায় আসার পথে ইত্তেফাকের অবাঙ্গালী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল হালিম তাকে বিহারীদের হাতে তুলে দেয় যারা তাকে মিরপুর-১০ নম্বরের জল্লাদখানায় হত্যা করে।

খন্দকার আবু তালেবকে ধরে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে প্রসিকিউশনের এ বিপরীতধর্মী তথ্য তুলে ধরে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান এবং অপর সাক্ষী আবদুল কাইউম দু’জনেই বলেছেন, ইত্তেফাকের বিহারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল হালিম আবু তালেবকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার নাম করে তার নিজের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় এবং বিহারীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। তিনি বলেন, তিন পক্ষের পরস্পরবিরোধী তথ্যের কোনটা আপনারা বিশ্বাস করবেন? তাছাড়া দু’জন সাক্ষীই শোনা কথা বর্ণনা করেছেন। অপরদিকে জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন আক্তার গু-া হাক্কা গু-া এবং কাদের মোল্লা আবুল তালেবকে হত্যা করেছে একথা ১০ নম্বর সাক্ষী আবদুল কাইউম তার কাছে বলেননি।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাছাড়া জল্লাদখানা জাদুঘর কর্তৃপক্ষের দু’ভাই-বোন যথা খন্দকার আবুল আহসান এবং সখিনা বেগম তাদের পিতা আবু তালেব হত্যা বিষয়ে যে জবানবন্দী দিয়েছেন সেখানেও তারা কেউই আবদুল কাদের মোল্লার নাম উচ্চারণ করেননি। জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষও এ ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করেছে অবাঙ্গালী বিহারীরা আবু তালেবকে হত্যা করেছে। কাজেই আবু তালেব হত্যা বিষয়ে আবদুল কাদের মোল্লা কোন অবস্থাতেই জড়িত নন।

বিষয়: বিবিধ

১১৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File