কবরের প্রশ্নোত্তর বনাম রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন টার্গেট ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:২২:০৯ বিকাল
লা-ইলাহ ও কবরের প্রশ্নোত্তর
১। মানুষ সৃষ্টি
আল্লাহ হযরত আদম(আ)কে সৃষ্টির সেরা হিসাবে সৃষ্টি করেন। হযরত আদম(আ ছিলেন দুনিয়ার প্রথম মানুষ। কোরআন বলে যে, আমি আদম(আ)কে বর্তমান মানুষের আকারে সৃষ্টি করি। অর্থাৎ শুরু থেকেই মানুষের এই আকার।তারপর স্বজাতির হযরত হাওয়া(আকে সৃষ্টি করে মানুষের ধারাবাহিক বংশবৃদ্ধির পথ নিশ্চিৎ করা হয়।কোরআন মানুষ জাতিকে “সৃষ্টির সেরা”বলে মানুষকে সম্মানিত করেছে।
আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে উনার প্রতিনিধি হিসাবে মনোনীত করেছেন এবং কোরআন/শরীয়তের দায়িত্ব মানুষের কাছে দিয়েছেন। আর প্রতিনিধির কাজ মূল মালিকের স্বার্থ-রক্ষা করা। কাজেই আল্লাহর তৈরী মানুষ আর ডারউইনের মানুষতত্বের মধ্যে তফাৎ অনেক।কোরআনসহ সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ, ডারউইনের “বিবর্তনবাদকে” ভুল ও মিথ্যা বলছে। মূলতঃ এটা একটা ‘থি ওরী’ ও প্রমানিত সত্য না। আর ডারউইন নিজেও এটাকে সঠিক বলেননি।
পক্ষান্তরে ডারউইনের “বিবর্তনবাদ” অনুযায়ী বানরের বিবর্তন থেকে মানুষের সৃষ্টি।ডারউইন মানুষ জাতিকে বানর থেকে সৃষ্ট বলে মানুষকে বানর জাতির অন্তর্ভুক্ত করেছে।আর এই হিসাবে মানুষ সৃষ্টির সেরা নয়।
কুরআন বলছে-
নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে অতি উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি”। সুরা ত্বীন-৪
“আর নি:সন্দেহে আমি আদম সন্তানদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছি”। সুরা বনী-ইসরাঈল ৭০
“ মানুষকে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে”। বাকারা-৩০ আহযাব-৭২
“মানুষ কি এরুপ ধারনা করে নিয়েছে যে, তাকে উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে ?” “অনন্তর আমি মানুষকে ভাল ও মন্দের উভয় পথ প্রদর্শন করেছি”।
মানুষ সৃষ্টি
মহান আল্লাহ হযরত আদম(আকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি
করেছেন।তার খামীর প্রস্তুত হবার আগেই আল্লাহ ফেরেস্তাদের জানালেন, তিনি মাটি দিয়ে এক জাতি সৃষ্টি করবেন। এর নাম হবে ‘বাশার’ এবং সে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্ব করবে।হযরত আদম(আ)এর মাটির খামীর তৈরী হচ্ছিল আর সেটা ছিল অনবরত পরিবর্তনশীল মাটি।এই মাটি দিয়ে তৈরী করা অবয়ব শুকিয়ে পাকা মাটির পাত্রের মত হয়ে গেল।সে মাটিতে আঘাত করলে সেটা ঠন ঠন শব্দ করতে লাগল। তখন মহান আল্লাহ সেটাতে ‘রুহ’ ফুকে দিলেন।সাথে সাথেই তাতে মাংস,চামড়া,হাড়,রগ,শিরা ইত্যাদি বিশিষ্ট জীবন্ত মানুষ হয়ে গেল।
ইবলিশের বিতর্ক
আল্লাহ ফেরেস্তা/জিন সবাইকে বল্লেন, ‘তোমরা এর সামনে সেজদায় পতিত হও’ কিন্তু ইবলিশ গর্ব-অহংকারের সাথে সেজদা করতে অস্বীকার করলো।
শয়তানের যুক্তি ছিল, ইবলিশ আগুনের তেরী আর আদম মাটির তৈরী। আগুন উর্ধ্বগামী ।আগুনের সাথে মাটির তুলনা হতে পারেনা।হে আল্লাহ, আপনি যে আদেশ করলেন ‘আগুণের সৃষ্টি মাটির সৃষ্টিকে সেজদা করুক’ এটা কি ঠিক হয়েছে ?আমি সর্বাবস্থাতেই আদমের চেয়ে উত্তম। সুতরাং আদম আমাকে সেজদা করুক। কিন্তু শয়তান একথা ভুলে গেল যে, তারা উভয়েই আল্লাহর সৃষ্টি।স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি বেশী জানতে পারেনা।সৃষ্টির মর্যাদা সৃষ্টির তৈরীর পদার্থের ভিত্তিতে নয়।
* ইবলিশ আল্লাহর কাছে অবকাশ প্রার্থনা করলো। ইবলিশ দেখলো যে, আল্লাহর আদেশ না মানার ফলে তাকে আল্লাহর দরবার ও বেহেস্ত হতে বিতাড়িত হয়েছে। সে ক্ষমা প্রার্থনা না করে বল্লো যে, ‘ কিয়ামত পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দান করুন, দীর্ঘ সময়টুকুর জন্য আমার আয়ু বৃদ্ধি করে দিন।‘ আল্লাহ শয়তানের দাবী মন্জুর করলেন।ইবলিশ বললো, আপনি আমাকে আপনার দরবার থেকে বিতাড়িত করে দিলেন। যে আদম সন্তানের জন্য আমার এই অপমান, সেই আদমের সন্তানকে আমি পথভ্রস্ট করবো।তবে খাটি বান্দাদের পারবো না। তারা ঠিক থাকবে। আল্লাহ বলেন, তাতে আমার কোন পরোয়া নাই। যে যেমন কাজ করবে, সে তেমন ফল ভোগ করবে। যে আদম সন্তান আমার কথা শুনবে না, সে তোমার জাহান্নামের সাথী হবে।
হযরত আদমের(আ কাছে ফেরেস্তাদের পরাজয়
আল্লাহ আদমকে নিজের সবচেয়ে উচু স্তরের গুন ‘ইলম’ দান করলেন এবং তাকে যাবতীয় জিনিসের নাম বলে দিলেন। ফেরেস্তাদের ডেকে বললেন, তোমরা এই জিনিসগুলো সম্পর্কে কি জানো ?।ফেরেস্তাদের আগে কখনও এগুলো শেখানো হয়নি। ফেরেস্তারা এটা বুঝতে পারলো, তাদের পরীক্ষা করা আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়্।কারন এগুলো তাদের আগে শেখানো হয়নি ।বরং তারা এটা বুঝতে পারলো, আল্লাহর আনুগত্য যিকিরের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং তা ‘ইলম’ নামক গুনাগুনের উপর নির্ভরশীল। জমিনের উপর শাসন পরিচালনা করার জন্য ‘ইলম’ নামক গুনাবলীর প্রয়োজন।
আদম(আ ও হাওয়ার(আ এর বেহেস্তে অবস্থান
হযরত আদম(আ দীর্ঘকাল পর্যন্ত বেহেস্ত অবস্থান করতে লাগলেন। কিন্তু তিনি কিছুটা শূন্যতা অনুভব করতে লাগলেন। কারন তারমত কোন সাথী সেখানে ছিলনা। সুতরাং আল্লাহ হযরত হাওয়া(আকে সৃষ্টি করলেন।জীবনসাথী ও বন্ধু পেয়ে হযরত আদম(আ আনন্দিত হলেন। আল্লাহ তাদের বেহেস্তার সব জায়গায় বেড়াতে বলেন। কিন্তু শুধু একটি গাছ থেকে দূরে থাকতে বলেন।
হযরত(আদম বেহেস্ত থেকে বের হলেন
এখন ইবলিশ সুযোগ পেল।সে আদম(আ ও হাওয়া(আএর মনে মন্ত্রনা দিল যে, এই গাছটি ‘অমর গাছ’।এই গাছের ফল খেলে অনন্তকাল বেহেসতে বাস করা যাবে ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যাবে।দুই জনেই আল্লাহর আদেশ ভুলে গেল ও ফল খেয়ে ফেললো। সাথে সাথে তাদের মানবীয় গুনাবলী প্রকাশ পেয়ে গেল্।তারা নিজেদের উলংগ আবিষ্কার করলেন ও বেহেসতি পোষাক অদৃশ্য হয়ে গেল।তাড়াতাড়ি উভয়ে গাছের পাতা দিয়ে, নিজ নিজ আবরনীয় স্থান ঢাকতে লাগলেন। হযরত আদম(আ সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ভুল স্বীকার করলেনএবং বল্লেন, এটা মানবীয় ভুল্। আল্লাহ সেটা কবুল করে বললেন, আদমের(আ) পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা সময় হয়ে গেছে। কাজেই তোমাদের দুজনকেই একটা নিদিষ্ট সময় পর্য্যন্ত পৃথিবীতে থাকতে হবে।তোমাদের সন্তানরা ও শয়তানও তার নিজস্ব সমস্ত উপকরনসহ তোমাদের সাথে থাকবে।
২। ইবাদত ও পরীক্ষা
মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করলেন উনার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষের এই ইবাদত উনার কোন কাজে লাগেনা। মানুষ মূলতঃ নিজে পরকালের পরীক্ষায় পাস করার জন্যই ইবাদত করে।
# আল্লাহ বলেন, যারা শুধুমাত্র এ দুনিয়ার জীবন এবং এর শোভা-সৌন্দর্য কামনা করে ,তাদের কৃতকর্মের সমুদয় ফল আমি এখানেই তাদেরকে দিয়ে দেই এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে কম দেয়া হয় না৷ কিন্তু এ ধরনের লোকদের জন্য আখেরাতে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই৷ (সেখানে তারা জানতে পারবে) যা কিছু তারা দুনিয়ায় বানিয়েছে সব বরবাদ হয়ে গেছে এবং এখন তাদের সমস্ত কৃতকর্ম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে৷ সুরা হুদ-১৫,১৬
# তোমরা এ অস্থায়ী জীবনের প্রতারণা জালে আবদ্ধ হচ্ছো । আর আল্লাহ তোমাদের শান্তির ভুবনের দিকে আহবান জানাচ্ছেন৷ (হেদায়াত তার ইখতিয়ারভুক্ত) যাকে তিনি চান সোজা পথ দেখান৷ সুরা ইউনুস -২
৩। জীবন-বিধান
ক) মানুষের তৈরী জীবন-বিধান
যে প্রতিষ্ঠান জিনিস তৈরী, সেই সবচেয়ে ভাল জানে কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হবে। আমাদের স্রষ্টা হিসাবে মহান আল্লাহ জীবন-বিধান তেরী করবেন, এটাই স্বাভাবিক। সাধারন ভাবে আমরা ধর্ম বলতে আমরা রোজা,নামাজসহ কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানকেই বুঝি, যেটা জীবনের অত্যন্ত ক্ষুদ্রতম অংশের সাথে জড়িত। আর জীবন-বিধান হচ্ছে জীবনের প্রতিটি ও সমস্ত মূহুর্তকে নিয়ন্ত্রন করা আইনের নাম।
# ""আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন অবলম্বন করে তা কখনো গৃহীত হবে না৷"" আল ইমরান : ৮৫
# "যখন রব তাঁকে বললেন, মুসলিম (ফরমানের অনুগত) হয়ে যাও, সে বললো আমি মুসলিম হয়ে গেলাম রব্বুল আলামীনের জন্য৷
বাকারা ১৩১
# "ইবরাহীম ইহুদী ছিল না, খৃষ্টানও ছিল না বরং একনিষ্ট মুসলিম৷" আল ইমরান ৬৭
# বনী ইসরাইলের আসল ধর্ম ইহুদীবাদ নয় বরং ইসলাম ছিল৷ সুরা ইউনুস ৯০
রাজতন্ত্র
মানুষের বিধানগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। রাজার ছেলের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়। সম্রাট শাহজাহান, সম্রাট অশোক ইত্যাদি।বর্তমানের সৌদি আরবের প্রশাসনিক অংশে রাজতন্ত্র চলছে , যেটা ইসলাম সম্মত না।মূলতঃ এই রাজতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন, হযরত আলীর(রাঃ) পরের আমীর হযরত মুয়াবিয়া(রাঃ)।উনি ছিলেন ইয়াজিদের পিতা, যিনি সম্ভবতঃ কারবালাতে ইমাম হোসেন(রাঃ) হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন।
স্বৈরতন্ত্র
ব্যাক্তি-বিশেষ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা। কিউবার প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন,লিবিয়ার গাদ্দাফী, সিরিয়ার বশীর আল আসাদ।
গনতন্ত্র
ডিকশেনারীতে এর অর্থ পাওয়া যায়, জনগন ক্ষমতার উতস। সার্ব-ভৌমত্ব জনগনের। জনগন যেকোন ধরনের আইন পাশ করতে পারে। বর্তমান আমেরিকা,কানাডা,অষ্ট্রেলিয়াসহ সমস্ত ইউরোপ এই মতবাদে চলছে। তবে এই দেশগুলোতে মুসলিম হবার হার সবোর্চ্চ, প্রায় ২৫০% ।
দেশ-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ
আমাদের দেশে কিছু দল এই মতবাদে বিশ্বাসী। বাস্তবে যাই হোক, এদের সংবিধান তাই বলে। একটা নির্দিষ্টি দেশে বিভিন্ন জাতি/ধর্মের মানুষ থাকবে। এরা সবাই সেই নির্দিষ্ট দেশের স্বার্থ দেখবে। এটাই হচ্ছে এই দলের বক্তব্য। ফলে এটাই দাড়াচ্ছে, ওই দেশের মুসলিমরা নিজেদের মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিতে পারছেনা। আর আল্লাহ/কুরআনের “সব মুসলিম ভাই ভাই” কিংবা “সমস্ত মুসলিম উম্মাহ হচ্ছে, একটা শরীর”। এই শরীরের কোন অংশ অসুস্থ হলে, সবাইকেই এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এই চিন্তার পুরো উল্টো।ধরা যাক, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাধল ! জাতীয়তাবাদের চিন্তানুযায়ী দুই দেশের মুসলিমরা নিজ নিজ দেশের স্বার্থ দেখবে। আর মহান আল্লাহ বলছেন, উভয় দেশের মুসলিম নেতাদের মুসলিমদের/আল্লাহর দীনের স্বার্থ দেখতে হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের এই ধরনের ফুল-প্রুফ জীবন-বিধান কিংবা আখেরাতের ব্যাপার নাই। যদিও আপনি নিজেকে বাংলাদেশী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন, আখেরাতে আল্লাহ, আপনি বাংলাদেশী ছিলেন কিনা এটা জিজ্ঞাসা করবেন না।
ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ
আমাদের দেশেও এই ধরনের দল আছে। যদিও বাস্তবে “শুধুমাত্র একই ভাষার মানুষ থাকবে” এই ধরনের দেশ তৈরী করা সম্ভবনা। পৃথিবীতে এই ধরনের কোন দেশ নাই। এই পৃথিবীর ইতিহাস পড়লে, এধরনের উগ্র ভাষা-ভিক্তিক জাতীয়তাবাদের চিন্তা অনেক জায়গায় হয়েছিল। যেমন ২য় মহাযুদ্ধের জার্মান কিংবা হিটলার। এভাবে আপনাকে বাংগালী হিসাবে পরিচয় দেওয়া শেখানো হচ্ছে। ফলে মুসলিম মিল্লাত বাংগালী,পাঠান,পান্জাবী,বালুচি ইত্যাদি বলে বিভেদ তৈরী করে, মুসলিম ঐক্যকে দূর্বল করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবেনা, আপনি কোন ভাষায় কথা বলতেন। আর আল্লাহ বলছেন, মুসলিম হিসাবে পরিচয় দেবার জন্য।
যদিও বিভিন্ন বংশ, গোত্র,এলাকা, ভাষার মানুষকে নবী হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছিল, আল্লাহ বলছেন উনারা সবাই ছিলেন মুসলিম। ‘বিদায় হজ্জের’ ভাষনে এটা ভালভাবে দেয়া আছে। মূলতঃ ইহুদীরা এই সমস্ত মতবাদগুলো তৈরী করে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে, “divide & rule” এর চিন্তা করে। কারন এরা তো ধর্ম মানেনাো এরা নিজেরাই ধর্ম পরিবর্তন করে নিয়েছে।
ধর্ম-নিরপেক্ষতা
মহানবী(সঃ) মক্কা থেকে উনার দীনের প্রচার শুরু করেছিলেন। এখানে সমস্যা হওয়ার ফলে, মহান আল্লাহর নির্দেশে মদীনা চলে যান। মদীনায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষ এটা গ্রহন করে। পরবর্তীতে মক্কা দখলের মাধ্যমে, মক্কা-মদীনায়সহ বিশাল আরবে “ইসলামী-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানবী(সঃ) নবু্য়ত পান ৪০ বছর বয়সে এবং এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে উনাকে প্রায় ২২ বছর কষ্ট করতে হয়। মহান ও সর্ব-শক্তিমান আল্লাহ দীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ শুরু করেন, হযরত আদম(আঃ)-এর সময় থেকে আর এটা শেষ হয় শেষ নবী (সা) এর সময়। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নবী করেন ২৭টা যুদ্ধ। ইসলামী রাষ্ট্র করে ৬০টা যুদ্ধ।ধর্ম-নিরপেক্ষতা মহান আল্লাহ চাইলে, রাষ্ট্র তৈরীর প্রয়োজন হোতনা। “তবলীগ-জামাতের” সিসিটেম করলেই হোত।
যখনই মুসলিমদের জন্য আদর্শ দল/দেশের প্রশ্ন আসবে, তখনই রোজা,নামাজ,হজ্জ,জাকাতের সাথে সাথে দলটা “ইসলামিী-রাষ্ট্র” চায় কিনা, এটা না জানলে সেটা আদর্শ দল হবেনা। নাহলে এটা আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবেনা।
বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের একটা বিরাট অংশ রোজা,নামাজ ইত্যাদি পালন করছে, কিন্তু ভোট দিচ্ছে “ধর্ম-নিরপেক্ষ” দলকে। মুসলিমদের জন্য এটা হচ্ছে মহান আল্লাহর সাথে “মুনাফেকী” আর অমুসলিমদের জন্য এটা হচ্ছে “কুফরী”। যে মুসলিম দল বা ব্যাক্তি মহান আল্লাহর সাথে মুনাফেকী করতে পারে, তার জন্য সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করা, কিছুই না। হাশরের দিনে এরা কিংবা এদের সমর্থকরা কি বলবে তা কুরআনে দেয়াই আছে।
আধুনিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা শুরু হয়েছে, প্রথম মহাযুদ্ধের পরে। এই দীর্ঘ সময় ইসলামী-রাষ্ট্র কম হবার দায়িত্ব অবশ্যই এই সমস্ত মুসলিমদের নিতে হবে, যারা ‘ইসলামী-রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য ভোট দিচ্ছে না। কারন এটা “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর” মূল চেতনা। মহান আল্লাহ সব জানেন।
খ) মহান আল্লাহর পাঠানো জীবন-বিধান
- সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ যেহেতু মানুষের পরীক্ষা নিবেন,কাজেই উনি কিছু প্রশ্নও তৈরী করেন। এই প্রশ্নের নাম হচ্ছে, কুরআন। সময় হচ্ছে সমস্ত জীবনকাল। পাশ করলে, বেহেস্ত আর ফেল করলে জাহান্নাম। পরীক্ষাতে নির্দিষ্ট প্রশ্ন থাকে, এখানেও তাই।এখানে সার্ব-ভৌমত্ব আল্লাহর। জনগনের ভোটে আপনি এই বিধান পরিবর্তন করতে পারবেন না।
একমাত্র গ্রহনীয় দ্বীন
# “ আজ আমি দ্বীনকে পরিপূর্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন-বিধান হিসাবে মনোনীত করলাম”।
# “আল্লাহর কাছে দ্বীন বলতে একমাত্র ইসলাম”
# “ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহনীয় দ্বীন”
# হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না,কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন৷
সুরা বাকারা ২০৮
৪। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’
এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোন আইনদাতা নাই ও মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। একই অর্থ, হযরত মুসার(আঃ) জন্যও প্রযোজ্য। আমরা সবসময় মুখে এটা বলি আর অন্তরেও এটা বিশ্বাস করি। কিন্তু এটার অর্থ, বেশীর ভাগ মানুষ জানেনা। অনেকে পুরো লাইনটা জানলেও, ‘ইলাহ’র অর্থ জানেনা। আমরা মুখে আল্লাহ ছাড়া কোন আইনদাতা নাই বল্লেও বাস্তবে কিন্তু মানুষের তৈরী করা আইনে দেশ চলছে। আর আমরাও খুশী মনে এটা মেনে নিচ্ছি। আর ভোট দিচ্ছি এমন দলকে যে, আমার কাছে দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ওয়াদা করেনি। এটা আল্লাহর সাথে মুনাফেকী।
৫। সুরা নাস-এর শুরুতেই আছে
মানুষের রব,মালিক ও ইলাহ, এই শব্দগুলো। মহান আল্লাহ আবার নিজেকে মানুষের রব, মালিক ও ‘আইনদাতা’ হিসাবে নিজেকে পরিচয় করায়ে দিচ্ছেন। কোনও ভাবে কেউ যেন,বলতে না পারে আমি বুঝতে পারিনি। মহান আল্লাহ এই জন্য বার বার একই কথা মানুষকে স্মরন করায়ে দিচ্ছেন।
৬। সমস্ত নবীকে একই দায়িত্ব দেয়া হয়।
অতীতের সমস্ত নবী-রাসুলকে, মহান আল্লাহ “ইসলাম প্রতিষ্ঠার” একই মিশন দিয়ে সবাইকে পৃথিবীতে পাঠায়েছিলেন।মহান আল্লাহ বলেন,
“নবীগন ছিলেন, একই দ্বীনের পতাকাবাহী”
আমাদের রাসুল(সঃ) তার ব্যাতিক্রম ছিলেন না। ভবিষ্যতের ইমাম মেহেদী(রা) ও হযরত ঈশা(আঃ) এসে “ইসলাম” প্রতিষ্ঠায় নিজেদের উতসর্গ করবেন।
৭।নবীদের ধারাবাহিকতায় মানুষেরও একই দায়িত্ব।
প্রথম দিকের নবীদের দেখা যায়, উনারা মূর্তিপূজার শিরক নিয়ে প্রায় সবাই ব্যস্ত ছিল। যেমন হযরত নূহ(আঃ),হযরত সালেহ(আঃ), হযরত হুদ(আঃ),হযরত ইব্রাহিম(আঃ),হযরত লুত(আঃ)। কিন্তু হযরত মুসা(আঃ),হযরত দাউদ(আঃ),হযরত সুলাইমান(আঃ) উনারা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা কিংবা ধারাবাহিকতা যাই হোক না কেন, আমাদের শেষ নবী(সঃ) একটা আদর্শ রাষ্ট্রের মডেল তৈরী করেন,রাষ্ট্রীয় আইন তৈরী/প্রয়োগ করেন।
# “ আজ আমি দ্বীনকে পরিপূর্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন-বিধান হিসাবে মনোনীত করলাম”। সুরা মায়েদা ০৩
# এ আনুগত্য ( ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত ৷ সুরা আল-ইমরান- ৮৫
# “যারা বিধান অনুযায়ী বিচার করেনা,তারা জালেম,ফাসেক ও কাফের”। মায়েদা -৪৪,৪৫,৪৭
# যারা আমার অবতীর্ণ উজ্জল শিক্ষাবলী ও বিধানসমূহ গোপন করে , অথচ সমগ্র মানবতাকে পথের সন্ধান দেবার জন্য আমি সেগুলো আমার কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো , আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং সকল অভিশাপ বর্ষণকারীরাও তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে৷ সুরা বাকারা ১৫৯
৮। শেষ নবীর তৈরী মডেল, সব দল ও মানুষের জন্য প্রযোজ্য
সমস্ত মুসলিম রোজা,নামাজ,হজ্জ,যাকাত তো সবাই দেয় বা করে। কিন্তু ইসলামী-রাষ্ট্রের মডেলের সাথে প্রায় ১ হাজারের মত আয়াত জড়িত।এই আয়াতগুলো নিয়ে খুব কম সংখ্যক মুসলিম চিন্তা করে।
৯। আংশিক বিশ্বাসীদের কথা
ঘ) “তোমরা কি আমার কিতাবের কিছু অংশ প্রকাশ কর আর কিছু গোপন কর ?
ঙ) “তোমরা কি আমার কিতাবের কিছু বিশ্বাস কর আর কিছু অবিশ্বাস কর”।
চ) “হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না,কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন” ৷ সুরা –বাকারা-২০৮
ছ) “যারা বিধান অনুযায়ী বিচার করেনা,তারা জালেম,ফাসেক ও কাফের”।
মিথ্যা-সাক্ষী ও ধর্ম-নিরপেক্ষতা
পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশই ধর্ম-নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় চলছে। এই ব্যবস্থায় মিথ্যা সাক্ষী উপস্থিত করাকে উতসাহিত করা হয়, মিথ্যা-সাক্ষীর বিরদ্ধে কঠোর আইন না করার মাধ্যমে। যদি মিথ্যা সাক্ষী দেবার অপরাধ মৃত্যুদন্ড/ যাবজ্জীবন থাকতো, তাহলে এই কাজের জন্য লোক পাওয়া যেত না। ফলে,
বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি হোত ও প্রকৃত অপরাধী সাজা পেত। মিথ্যা-সাক্ষীর এই ব্যবস্থায় প্রভাবশালী-ধনী শ্রেনী লাভবান হচ্ছে। এর ফলে বিচার বিলম্বিত হয়ে, ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।মিথ্যা-সাক্ষীর কঠোর সাজা দেবার মাধ্যমে বিচার বিভাগ-প্রভাবশালীদের এই সিন্ডিকেট ভেংগে দেয়া সহজ কাজ।
১০। ভোট দেয়া
আপনার মূল্যবান ভোট মহান আল্লাহর সামনে বিরাট বাধা হয়ে দাড়াতে পারে,যদি আপনি এই অধিকার “ইসলামী-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার” পক্ষে না দেন। মূলতঃ এটাই হচ্ছে, আপনার ঈমান। এই রায় ছাড়া আপনি মহান আল্লাহর সামনে কিভাবে প্রমান করবেন, আপনার দ্বীন ইসলাম ছিল ?
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মত, ইসলামিক দলেও অবশ্যই ভাল-খারাপ থাকবে। এটা আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে। সবাই যে একটা ইসলামি দলকে মানবে এটা সঠিক না। ধর্ম-নিরপেক্ষ দলগুলোর মধ্যে কে ভাল, জাতি কি এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে ?
তবে ইসলামী রাষ্ট্র হলে, কোন ধর্ম-নিরপেক্ষ দল থাকবে না। তবে অবশ্যই বহুদল থাকবে। সবাইকে এখান থেকে একটাকে পছন্দ করতে হবে।বর্তমানে ইরানে যেটা হচ্ছে। বর্তমানের তৈরী দল/দেশ কখনও মহানবী(সঃ)-এর মানের হবেনা। কিন্তু মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন হয়ে যাবে। আর এটাই সবচেয়ে জরুরী হয়ে দাড়াবে কবরে ও হাশরের মাঠে।
# “মুসলিম উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। এর মধ্যে একটা দল যাবে জান্নতে”।
# “যে ব্যাক্তি বিভিন্ন রকম ইসলামী দলের মধ্যে সঠিক দল নির্বাচন করে, “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ”কে আগায়ে নিয়ে যেতে পারবে, মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে ১০০ শহীদের মর্যাদা দিবেন”।
১১। শহীদ
“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়,তাদের মৃত বলোনা, বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারনা”।
১২। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ
আপনার কাজ হচ্ছে, সমাজের সর্বস্তরে “ইসলামী-রাষ্ট্র” তৈরীর জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করা। কুরআনে মোট ১১২ বার “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ”র কথা বলা হয়েছে।
# তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর জন্য নিদিষ্ট হয়ে যায় ৷ তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখো যালেমদের ছাড়া আর করোর ওপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয় ৷ সুরা বাকারা- ২০৫
# তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহকে ‘করযে হাসানা’ দিতে প্রস্তুত, ২৬৭ যাতে আল্লাহ তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তাকে ফেরত দেবেন ?কমাবার ক্ষমতা আল্লাহর আছে, বাড়াবারও এবং তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে ৷ বাকারা -২৪৫
# তোমাদের যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর৷হতে পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমা -দের জন্য খারাপ৷আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না৷ সুরা বাকারা ২১৬
তোমরা কি মনে করে রেখেছ তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে ? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেন নাই, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী৷ সুরা ইমরান ১৪২
# তাদের সাথে যেখানেই তোমাদের মোকাবিলা হয় তোমরা যুদ্ধ করো এবং তাদের উৎখাত করো সেখান থেকে যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে উৎখাত করেছে ৷ কারণ হত্যা যদিও খারাপ , ফিতনা তার চেয়েও বেশী খারাপ ৷ আর মসজিদে হারামের কাছে যতক্ষণ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে, তোমরাও যুদ্ধ করো না ৷ কিন্তু যদি তারা সেখানে যুদ্ধ করতে সংকোচবোধ না করে, তাহলে তোমরাও নিসংকোচে তাদেরকে হত্যা করো ৷ কারণ এটাই এই ধরনের কাফেরদের যোগ্য শাস্তি৷ সুরা বাকারা -১৯১
১৩। সাধারন অপরাধ VS দ্বীন অস্বীকার
যেকোন ইসলামী রাষ্ট্রে যে কেউ অপরাধ করতে পারে।এটা ঈমানের সাথে সম্পর্কিত না। সেই অপরাধের বিচার হবে। আমাদের শেষ নবীর সময়েও সাধারন অপরাধ যেমন চুরি,মদ খাওয়া এই সমস্ত অপরাধগুলো হয়েছে। এই অপরাধের কারনে তাদেরকে কেউ মুনাফিক বলেনি।
কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল না মানা সরাসরি মহান আল্লাহর সাথে মুনাফেকী।একই ভাবে কেউ যদি বলে, নামায ২ ওয়াক্ত পড়লে হবে কিংবা রোজা না রাখলেও হবে, এটাও মুনাফেকী।
কারন নিজেকে মুসলিম বলার পর এগুলোর বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। এটা মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী ঘৃনিত। সাজা হচ্ছে দোযখের সিজ্জিন। এটা মুনাফিকদের জন্য নির্ধারিত। কাফেরদের সাজা এরচেয়ে সহজ। কারন কাফেররা কাউকে বিভ্রান্ত করছেনা।
একজন মুসলিম মুনাফেক আরেক জনকে বিভ্রান্ত করছে। রোজা,নামায ইত্যাদির বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান গ্রহন করেনা।কারন এগুলো কিছুটা ব্যাক্তিগত কিছুটা সামাজিক। কিন্তু রাষ্ট্রের ব্যাপারটা আন্তর্জাতিক। ফলে মুসলিম রাষ্ট্র-রায়করা অন্য রাষ্ট্রের প্রভাবে, নিজে ক্ষমতায় যাবার জন্য দলের সমর্থকদের মুনাফেক বানায়।
১৪। মুসলিম মুনাফেক ও কাফেরদের ইবাদত কবুল
তবে মুনাফেক,কাফেরদের,মুশরিকদেরও মহান আল্লাহ দেন। তবে সেটা হয় শুধু দুনিয়ার জন্য। ইবাদত বলতে ‘আল্লাহ মাকে সুস্থ করে তোল কিংবা আমাকে একটা সন্তান দাও কিংবা আমার অভাব দূর করে দাও’ এগুলো না। রোজা,নামায, হজ্জ, জাকাত,পৃথিবীর জীবন,পরকাল সব ইবাদতের সাথে জড়িত। কোন মানুষ যখন চায়, তখন মহান আল্লাহ তাকে ৩ ভাবে দেন।
# পৃথিবীর ব্যাপার যদি হয়, যেমন চাকুরী,অসুস্থতা,বিয়ে,অভাব ইত্যাদি তাকে সাথে সাথে দিয়ে দেন।
# একটা বিপদ আসার ছিল, মহান আল্লাহ সেটা সরায়ে দেন।এটা দেখা যায় না।
# সরাসরি পরকালের জন্য জমা রাখেন, যেটা সেই ব্যাক্তি পরকালে দেখতে পাবে। এটা নিঃসন্দেহে সেরা।
ইবাদত কবুলের অনেক শর্তের মধ্যে ২ টা শর্ত প্রধান।
ক) আয় বৈধ হতে হবেঃ-
খ) কুরআন কিংবা ইসলাম বিরোধী কাজে জড়িত হলে, কিংবা মনে মনে বিশ্বাস করলেও তার কোন ধরনের ইবাদত কবুল হবেনা। মহান আল্লাহ মুসলিম মুনাফেকদের রোজা,নামায,হজ্জ,যাকাতসহ কোন ইবাদত গ্রহন করেন না, তাদের কুরআন বিরোধী ঈমানের জন্য। এদের জন্য শুধু পৃথিবী। এটা কুরআনের যেকোন অংশের জন্য প্রযোজ্য। বহু মানুষ আছে, যারা নামাজ বিশ্বাস করে, কিন্তু নামাজ আদায় করেনা। এটা নামায অবিশ্বাস করার চেয়ে অনেক ভাল। তবে শরিয়ত হচ্ছে বিশ্বাস করা ও পালন করা।
১৫। যেভাবে ‘রুহ’ কবজ করা হয়।
“তিনিই তো আল্লাহ, যিনি মৃত্যুর সময় রুহগুলোকে কবজ করেন”। সুরা যুমার- ৪২
“হায় ! তুমি যদি জালেমদেরকে সে অবস্থায় দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে থাকবে ৷ নাও, তোমাদের প্রাণ বের করে দাও৷ তোমরা আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করে যেসব অন্যায় ও অসত্য কথা বলতে এবং তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে তারি শাস্তি স্বরূপ আজ তোমাদের অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে”৷ সুরা আনআম- ৯৩
“তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, প্রতিদিন সকাল-সন্ধায় তার ভবিষ্যত বাসস্থান তার সামনে পেশ করা হয়। সে যদি বেহেশতী হয়,তাহলে বেহেশতীদের স্থান দেখানো হয়। আর যদি সে দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়, তাহলে তাকে দোযখীদের স্থান দেখানো হয়।সাথে সাথে বলা হয়, এটাই তোমার আসল স্থান। আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাকে এখানে পাঠাবে।
বুখারী,মুসলিম
রাসুলুল্লাহ(সঃ) পরকালের তথ্য অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরেছেন।কোন মুমিন যখন এই দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে, পরকালে যায়, তখন আসমান থেকে একদল ফেরেস্তা আসে। তাদের চেহার সুর্যের আলোর মত উজ্জ্বল।তাদের সাথে থাকে বেহেশতের একটা কাফন আর সুগন্ধি।তারা এত কাছে এসে বসে যে, মৃত্যুপথ যাত্রী তাকে দেখতে পায়। তারপর “মালাকাল মওত” তার শিয়রে বসে বলে, “ হে, পাক রুহ ! চল, আল্লাহর ক্ষমা এবং তার সন্তুষ্টির দিকে। তারপর রুহ বের হয়ে আসে ও কলসের পানির মত গড়িয়ে পড়ে। “মৃত্যুদূত” সাথে সাথে সেটা হাতে তুলে নেয়। এই সময় অন্য আরেকটা ফেরেস্তা সামনে আগায়ে আসে।সে মৃত্যুদূতের হাত থেকে ‘রুহ’ নিজের হাতে নেয় ও কাফনের মধ্যে রেখে ‘রুহ’তে সুগন্ধি মেখে দেয়। এই সুগন্ধি পৃথিবীর সেরা সুগন্ধির চেয়েও সেরা।
এই ফেরেস্থা ‘রুহ ও কাফনসহ’ আসমানের দিকে চলে যায়। পথে ফেরেস্তাদের যে দলের সাথে দেখা হয়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে , এটা কোন পবিত্র ব্যাক্তির রুহ ? বহনকারী ফেরেস্তা ‘ব্যাক্তি ও পিতার নাম’ বলে।
দুনিয়ার সবোর্ত্তম নামেই, এখানেও তাকে পরিচয় দেয়া হয়। এভাবে বহনকারী ফেরেস্তা প্রথম আসমানে পৌছে যায়। সে তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলে।
প্রত্যেক আসমানের বিশিষ্ট ফেরেস্তা পরবর্তী আসমান পর্য্যন্ত যায়।এভাবে বহনকারী ফেরেস্তা সপ্তম আসমানে পৌছে। তখন মহান আল্লাহ বলেন, আমার এই বান্দার ঠিকানা “ইল্লীনে” লিখে দাও এবং তাকে তার পৃথিবীর দেহে পৌছায়ে দাও।
১৬। কবরের প্রশ্নোত্তর
ক) তোমার রব কে ?
উত্তর হবে আল্লাহ। ‘রব’ বিভিন্ন অর্থে যেমন মালিক,আইনদাতা,স্রষ্টা ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হতে পারে। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লা’তেও ইলাহ আছে, যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন আইনদাতা নাই।
খ) তোমার দ্বীন কি ?
দ্বীন অর্থ জীবন-ব্যবস্থা।মূলতঃ ইসলাম হচ্ছে ‘একমাত্র ও পরিপূর্ন জীবন-ব্যবস্থা’। এটা ছাড়া মহান আল্লাহ অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা গ্রহন করবেন না। আমেরিকান/ ইউরোপের গনতন্ত্র,রাজতন্ত্র,সমাজতন্ত্র, একনায়ক ইত্যাদি মানুষের তৈরী করা জীবন-ব্যবস্থা।
মহান আল্লাহ বলেন,
# “ইসলামই আল্লার কাছে একমাত্র গ্রহনীয় দ্বীন”
# “তোমরা কি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীনের খোজ করছে “?
গ) নবী মুহাম্মাদ(সঃ)-এর ছবি দেখায়ে জিজ্ঞাসা করা হবে ,এটা কে ?
শেষ নবী মুহাম্মাদ(ষঃ)-এর ছবি।
ঘ) উপরের উত্তরগুলো তুমি কোথা থেকে জেনেছ ?
মহান আল্লাহর কুরআন ও শেষ নবীর হাদিস থেকে। যারা দুনিয়ায় কুরআন-হাদিসকে বিশ্বাস করে, নিজে প্রতিদিন পড়ে ও প্রচার করে, তারাই শুধু তখন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
===্
বিষয়: রাজনীতি
১৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন