হে ঢাকাবাসী ! তোমাদের ভালবাসা কোনদিন ভুলব না
লিখেছেন লিখেছেন রফিক আল জায়েদ ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:০০:৪০ বিকাল
একজনমানুষ
আরেকজনকে ‘শুধু
একজন মানুষ’ এ
পরিচয়ের
কারনে কতটুকু
ভালবাসতে পারে?
অচেনা একজন
মানুষকে কতটা ভালবাসা যায়?
প্রশ্নটি খুব জঠিল।
যুক্তি দিয়ে, তর্ক
করে এর উত্তর বের
করা খুবই কঠিন কাজ।
তবে এরকম ভালবাসার
বাস্তব ঘটনার
উদাহরণ
দিয়ে তা বুঝানো খুবই
সহজ।
মাহবুব মিয়া পুরান
ঢাকার মানুষ। ঐতিহ্য
অনুযায়ী বিরিয়ানীর
ব্যবসা করেন। বউ
ছেলে মেয়েদের
নিয়ে তার সংসার
ভালই চলে।
স্বভাবগতভাবেই পুরান
ঢাকার অন্য মানুষদের
মতো কাউকে তেমন
পরোয়া করে চলেন না।
কারোরই
মুখাপেক্ষী থাকা পছন্দ
করেন না তিনি। ডেম
কেয়ার প্রকৃতির মানুষ
এই মাহবুব সাহেব
গতকাল ঘুম
থেকে উঠে ড্রাইভারকে বললেন
ঠেলাগাড়িতে ‘মাল’ (বিরিয়ানির
ডেগ) উঠাতে।
ড্রাইভার
যথারীতি উঠিয়ে নীলক্ষেতের
বিরিয়ানীর দোকানের
দিকে যাত্রা করতে উদ্যত
হল। কিন্তু
বাধা দিলেন মাহবুব।
বললেন, ‘আজ
এদিকে নয়,
যাবো উল্টাদিকে।’
তিনি মতিঝিলের
কথা বুঝালেন।
এরপর ড্রাইভার কিছু
বুঝে ওঠার আগেই
মাহবুব ঠেলাগাড়ির
চালকের
সিটে চেপে বসলেন।
ড্রাইভার অবাক
হয়ে বলে ‘ওস্তাদের
কী অইলো!’ মাহবুব
ধমক দেন, ‘কথা কইস
না বেটা।
আইজকা নবীর
উম্মতরা হাইটা হাইটা আইতাচে আমার
বাড়ির কাছে। আইজ
কোনো ব্যবচা নাইক্কা।
ছবগুলান
হেগোরে নিজের
হাতে খাওয়ামু। তুই
মাথায় পানি ল এক ডেগ
(ডেকচি) আর চল
আমার লগে।’
ড্রাইভার অবাক হয়!
মাহবুব
মিয়া মানুষটা ভাল
হলেও কখনো এক
পয়সা অতিরিক্ত খরচ
করে না। আজ তার
এমন কী হল?
দোকানের জন্য
বানানো দুই
ডেকচি বিরিয়নি অচেনা মানুষদের
খাওয়ানোর জন্য পাগল
হয়ে গেল লোকটা!
ড্রাইভার
কথা মতো পানিভর্তি একটি ড্রাম
মাথায় নিয়ে মাহবুবের
ঠেলাগাড়ি ফলো করে।
দৈনিক
বাংলা মোড়ে এসে আর
এগুতে পারেনা তাদের
গাড়ি। এখানেই
থামিয়ে রাস্তার
পাশে বসে পড়েন দু’জন।
দুপুরের পর
থেকে বিকাল পর্যনন্ত
দু’জনে মিলে প্লেট
ভরে ভরে বিরিয়ানি হাতে তুলে দেয়ন
৭০/৮০ কিলোমিটার
পায়ে হেটে আসা ক্লান্ত
পরিশ্রান্ত
মুসল্লীদের হাতে। পরম
তৃপ্তি নিয়ে সারি বেঁধে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছেন
কিশোর-যুবক আর
বৃদ্ধরা। মাহবুব
মিয়া তখন অপলক
তাকিয়ে আছেন
মানুষগুলোর তৃপ্ত মুখের
দিকে। সবাই খেয়াল
করছিল, একটু পর পর
শার্টের
হাতা টেনে কেন
জানি বার বার চোখ
ঘষছিলেন তিনি।
ইতোমধ্যে খাবার শেষ
হয়েছে কয়েকজনের।
তাদের
মধ্যে থেকে একজন
মাঝ
বয়সী এসে দাড়ালেন
মাহবুব মিয়ার সামনে।
পাঞ্জাবির ডান
পকেটে হাত
ঢুকিয়ে বললেন,
‘ভাইজান, আপনার বিল
কত হয়েছে?’
সাথে সাথে তার হাত
পকেট থেকে বের
করে নিয়ে এসেছে কয়েকটি ১০০
টাকার নোট। হুজুর
তখন তার প্রশ্নের
উত্তরের অপেক্ষায়।
এমন সময় হুট
করে তাকে জড়িয়ে ধরলেন
মাহবুব মিয়া। হুজুর
একটু হতচকিত হলেন।
কিন্তু এতক্ষণ
ধরে মাহবুবের
জমে থাকা আবেগের
বাঁধ যেন
ভেঙ্গে পড়লো মুহুর্তেই।
হাউমাউ
করে কেঁদে উঠলেন
তিনি। বললেন, ‘মনটায়
বড় কষ্ট পাইলাম,
হুজুর’! আপনারা একশ’
মাইল হাইটা আইছেন
আমার বাড়ির
পাশে নবীরে ভালবাইসা।
আমগো কি কোনো অধিকার
নাই
নবীরে ভালবাসার?
নামাজ
পড়ি না তো কী অইছে!
নবীর লাগি যারা জান
দিতে আইসে তাগোরে একটু
মেহমানদারিও
করতে পারুম না, কন?’
হুজুরেএতক্ষণে ঘটনা বুঝতে পারলেন।
তার চোখও তখন
টলমল।
খেতে থাকা লোকজনও
থমকে আছে।
আশপাশে এক
ভারি পরিবেশ। সবার
চোখের কোণায় পানি।
কেউ আবেগের ভার
সইতে না পেরে একটু
দুরে গিয়ে চোখ মুছলেন।
এতক্ষণ
একতরফাভাবে তাকে জড়িয়ে ধরা মাহবুব
মিয়াকে এবার নিজেও
বুকে টানলেন হুজুর।
মাথায় হাত
বুলিয়ে বললেন, ‘কষ্ট
পাবেন না, আল্লাহ
আপনার ভাল করবে’।
এই মাহবুবের মতো ৬
এপ্রিলের
লংমার্চে হাজারো ঢাকাবাসীর
যে ভালবাসা পেয়েছি আমরা,
তা কখনো ভুলব না্। এই
ভালবাসাই আমাদের
শক্তি যুগিয়ে যাবে যুগ
যুগ ধরে। হে ঢাকাবাসী,
তোমাদের এ ভালবাসার
স্বাক্ষ্য দেবো সেদিন,
যেদিন
কারো পক্ষে স্বাক্ষ্য
দেয়ার জন্য
কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আল্লাহ আমাদের
সবার সহায় হোন।
[ঘটনাটি নিজে শোনা আর ধারাবর্ণনা ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]
বিষয়: সাহিত্য
১১৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন