দোস্ত : পর্ব-০৪
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আল আহসান ১৭ জুন, ২০১৪, ১১:০০:২০ রাত
দোস্ত : পর্ব-০৩
দ্রুততার সাথে বেরিয়ে এসে রাশেদ আর রবিন টিলার গোড়ায় দাড়ালো। আসলেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখে একে অপরের দিকে তাকালো। কারণ বাসায় পৌছতে পৌছতে কিছুটা রাত হয়ে যাবে, আর এ জন্য তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তা শুধু তারাই ভালো জানে। তাই আর দেরী না করে দ্রুত টিলা পার হলো রাশেদ আর রবিন। পুবের মিয়া বাড়ির দিকে লক্ষ্য করে উদ্ভ্রান্তের মত দু’জনে দৌড় দিলো। তাদের ভাবটা এমন যে, আগে পৌছতে পারলে কোন পুরষ্কার আছে মনে হয়। তবে পুরষ্কার থাকুক আর না থাকুক যত দ্রুত বাড়ি যাওয়া যায় ততই মঙ্গলজনক এটা তারা ভালো করেই জানে। অল্প সময়েই তারা মিয়াবাড়ির সামনে এসে পৌঁছলো যেখানে রাজুর সাথে কিছু সময়ের জন্য দেখা করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল এবং আজ বেশী দেরী করা ঠিক হবেনা বলে বিদায় নিলো। তারা যখন রবিনের বাড়ির ঠিক কাছাকাছি আসলো তখন হটাত ডাক পড়লোঃ “রবিন, এত দ্রুত দৌড়াচ্ছিস কেন? কোথায় গেছিলি??”
রবিন পেছনে ঘুরে দেখে তার বাবা জনাব নূরুল ইসলাম। নূরুল সাহেব এলাকায় মোটামুটি প্রভাবশালী এবং ব্যবসায়িক মানুষ। তবে রবিন নিজেও জানে না তার বাবা কিসের ব্যবসা করে।
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গিয়ে রবিন বললো, “উত্তরপাড়া গিয়েছিলাম বাবা”।
-“উত্তরপাড়া!! কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বললো নূরুল সাহেব” ।
রাশেদ বলে উঠলো, “জ্বি চাচাজান, ঐ টিলার ওপাশের জঙ্গলটার মধ্য একটু গিয়েছিলাম। বেশ মজার একটা জায়গা”।
নুরুল সাহেব তাদের জিজ্ঞেস করে যে তারা জঙ্গলের কতটুকু ভেতরে গিয়েছিল। তারপর রাশেদ-রবিনের বর্ননা শুনে বেশ ভালো ধরনের বকাঝকা করল তাদের এবং পরবর্তীতে যেন ঐদিকে পা না বাড়ায় সে জন্য সতর্ক করে দিলো। মাথা নিচু করে রবিন রাশেদকে বলে, “দোস্ত, আজ আসি”। এরপর বাসার দিকে পা বাড়ালো রবিন। কিছুটা মন খারাপ করে রাশেদও নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
বাসায় পৌঁছে রাশেদ যথারীতি মায়ের বকাঝকা হজম করল এবং হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসলো মায়ের সাথে। খেতে খেতে রাশেদের বাবার বিভিন্ন স্মৃতি বলছিল রাশেদের মা এবং নিজের অসহায়ত্ব আর অক্ষমতার জন্য আক্ষেপ করছিলো। নিজের স্বামীর কথা স্মরণ করতে গিয়ে চোখের দু’কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো রাশেদের মায়ের। মা সেটা লুকানোর চেষ্টা করলেও রাশেদের দৃষ্টি এড়াতে পারলনা। মনে মনে রাশেদ ভাবে সে একদিন অনেক বড় হবে আর মায়ের দুঃখ কষ্টগুলো দূর করবে। খাওয়া দাওয়া করে যথারীতি ঘুমাতে গেল রাশেদ।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নদীর পাড়ে একা একা বসে আছে রাশেদ। এই চিন্তা ঐ চিন্তার মাঝে উত্তরপাড়ার কথা শুনে রবিনের বাবার রেগে যাওয়া এবং ঐ দিকে আর না যেতে বলার পেছনে কারন কি সেটা নিয়ে ভাবছিলো। পরবর্তীতে যাওয়া টিক হবে কি না এটা নিয়েও চিন্তা করে সে। কিন্তু জায়গাটার প্রতি রাশেদের একটা আলাদা আকর্ষণ তৈরী হয়ে গেছে। বিশেষ করে লম্বা গাছের উপর অস্বাভাবিক বড় পাখির বাসা আর ঐ নির্জন স্থানের জলাশয়ের অস্বাভাবিক নড়াচড়া তার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছুটা ভয় আর আশংকাও মনের মধ্যে উঁকি দেয়। ক্ষতিকর কিছু নাইতো সেখানে? রবিনের বাবা কেনই বা ঐখানে যেতে নিষেধ করছে? রবিনকি তার বাবার বকাঝকর পর আবার যাবে আমার সাথে? ইত্যাদি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। তবে বন্ধু হিসেবে রাশেদের এ বিশ্বাস আছে যে রবিন অবশ্যই যাবে। আর কোনক্রমে রবিনের না যাওয়া হলে বন্ধু রাজুকে সাথে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করলো রাশেদ। দিন হিসেবে বেছে নিলো দু’দিন পর সরকারী ছুটির দিনটিকে। (চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১১১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন