দোস্ত : পর্ব-০৩
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আল আহসান ১৪ জুন, ২০১৪, ০৯:৫০:৩১ রাত
দোস্ত : পর্ব-০১
দোস্ত : পর্ব-০২
শক্ত করে রবিন রাশেদের হাতটা ধরে।আতঙ্কিত রাশেদ মাথা তুলে রবিনের দিকে কৃতজ্ঞচিত্তে তাকিয়ে বলে, “বড় বাঁচা বাঁচালিরে দোস্ত”। টিলার ঢালটা সুড়ঙ্গের মত অনেক নিচে নেমে গেছে দেখে রাশেদের একটু ভয় হলো। এরই মধ্যে রাশেদ টিলার গায়ে আরেকটি ছোট্ট গর্তে পা দিয়ে এবং কিছু ডালপালা ধরে নিজেকে স্থির করে নিচে নামা শুরু করে। আসলে টিলার এ পাশটা অন্য পাশের চাইতে বেশ নিচু, যার কারণে টিলার উপারে উঠে রাশেদ গাছগুলোর উপরের দৃশ্য খুব ভালোভাবে দেখতে পেরেছিল।
টিলার বাকি অংশ নামতে তেমন আর বেগ পেতে হয়নি রাশেদ আর রবিনের। উপরের মনোরোম দৃশ্য দেখার পর থেকে রাশেদের উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল নিচে কি রকম সেটা দেখার জন্য। নিচে নামার পর রাশেদের আশা ভঙ্গ হলো, লম্বা লম্বা গাছ আর সামনে ঘন ঝোপঝাড় ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলনা । কিছুটা হতাশ হয়েই একটা গাছের গোড়ায় মোটা শিকড়ের উপরে বসলো রাশেদ। রবিনের এসব পছন্দই হচ্ছে না, তাই কিচুটা ব্যঙ্গ করেই বলো, “কি দরকার ছিল এত কষ্ট করে এ ঝোপঝাড় দেখতে আসার??” আশা, উত্তেজনা অতপর নিরাশার করনে রাশেদ রবিনের কথাগুলো খেয়ালই করেনি। রাশেদের ঘোর কাটলো পাখিদের কিচির-মিচির আর জঙ্গলের চিরাচরিত কোলাহলে। উঠে দাড়িয়ে রাশেদ চারপাশটা ভালো করে দেখতে লাগলো। লম্বা লম্বা গাছের ডালপালা আর পাতা ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো জঙ্গলের বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে পড়ছে। কতগুলো গাছের গোড়া ঝোপঝাড়ে ভরা, চারপাশের মাটি কিছুটা স্যাঁতসেতে, একানে ওখানে সবুজ ঘাসে ভরপূর। সামনের লতাপাতা জড়ানো ঘন গাছগুলো অনেকটা দেয়ালের মত প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেছে।
রবিন কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো। সে আবার রাশেদকে তাগাদা দেয় ফিরে যারার জন্য। কিন্তু রাশেদের দৃষ্টি সামানের দিকে, যেখানে খড়গোশের মত কি যেন একটা সামনের দেয়ালরূপী ঝোপঝাড়ের ঠিক পাশ দিয়ে দুটি গাছের মাঝ বরাবর চলে যায়। সামনে পা বাড়ায় রাশেদ। চিপা গলির মত ঐ পথ দিয়ে দ্রুত সামনে এগিয়ে চলে রাশেদ আর রবিন। মিনিট দুয়েকের আঁকাবাকা পথ পেরিয়ে যাবার সময় ঝোপঝাড় আর লতা পাতায় চোখে অনেকটা অন্ধকার দেখে তারা। কিন্তু এখান থেকে বের হয়ে একটা খোলা স্থানে আসতেই দু’জনের চোখ ছানাবাড়া। তারা যে জায়গায় দাড়িয়ে আছে সেটা মাটি থেকে উপরে অনেকটা সিলিন্ডারের মতন। চারপাশের লম্বা লম্বা গাছগুলো সিলিন্ডারের দেয়ালের মত। আর গাছের উপরের ডালপালাগুলো এ বিশাল প্রাকৃতিক সিলিন্ডারের ঢাকনার ন্যায় কাজ করছে। জায়গাটায় আগের স্থানের চাইতে আলো কিছুটা কম। রাশেদ ঠিক বুঝলো না আসলে সন্ধ্যা হয়ে গেছে নাকি এখানে আলো কম প্রবেশ করছে।
জায়গাটা অনেকটা নিরব, নিজেদের হাটার শব্দে নিজেরাই শিহরিত হয়ে উঠছে তারা। এ জঙ্গলের মাঝে এমন সুন্দর মায়াময় নিরব স্থান আছে দেখে খুব ভালো লাগলো রবিনের। মনে মনে ভাবলো ধৈর্য্য ধরে লক্ষ্যের দিকে গেলে সেটা পাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যায়। স্থানটার ঠিক মাঝ বরাবর একটা ছোট্ট ডোবার মত যাতে পানি বেশ স্বচ্ছ। রবিন সামনে এগিয়ে গিয়ে গভীরতা বোঝার চেষ্টা করে। ডোবাটা খুব বেশী গভীর না হলেও দুইজন আদর্শ সাইজের মানুষ একজন অন্যজনের উপর দাড়ালে উপরের জনের কমপক্ষে বুক পর্যন্ত পানি হবে বলে ধারণা কলো রবিন। চারপাশটা ভালোমত বুঝে উঠার আগেই জায়গাটা অনেকটা অন্ধকার হতে লাগলো। রাশেদ বুঝলো এবার যাবার পালা। কিন্তু মনে মনে এখানে আবার আসার জন্য মনস্থির করে রাখলো। জায়গাটার জন্য কেমন জানি একটা টান অনুভূত হলো রাশেদ আর রবিনের মাঝে। তাদের এখানে আবার আসার ইচ্ছাকে আরো শানিত করলো যখন তারা ফিরে যাবার জন্য পা বাড়ায় তখন একটা গাছের ডালে দুটো বড় আকৃতির পাখির বাসার মত কি যেন দেখে। রাশেদের ইচ্ছে হলো এখনই উঠে গিয়ে দেখি কি আছে সেখানে। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাওয়া আর চারপাশের নিরবতা বাধ সাধলো। তাছাড়া ডোবার পানিতে কি যেন একটার অস্বাভাবিক নড়াচড়া তাদের এ স্থান ত্যাগে বাধ্য করলো।
দ্রুততার সাথে বেরিয়ে এসে রাশেদ আর রবিন টিলার গোড়ায় দাড়ালো। আসলেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখে একে অপরের দিকে তাকালো। কারণ বাসায় পৌছতে পৌছতে কিছুটা রাত হয়ে যাবে, আর এ জন্য তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তা শুধু তারাই ভালো জানে। (চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১২০১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন