দোস্ত : পর্ব-০২
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আল আহসান ১২ জুন, ২০১৪, ১১:৫৫:২১ রাত
দোস্তঃ পর্ব-০১
হাতের মার্বেলগুলো বাসার মধ্যে রেখে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে রবিন আর রাশেদ রওনা দিলো। আগের মতই এক দৌড়ে রাশেদের বাসায় এসে পৌছায় তারা। রবিনকে দেখে রাশেদের মা তার দাদীর শরীরের অবস্থা জিজ্ঞেস করে।
-"এখন বেশ ভালো আছে" বিনয়ের সাথে উত্তর দিলো রবিন।
খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে রাশেদও রবিনের মত কিছু জিনিস পকেটে পুরে নিলো। রাশেদের তাড়াহুড়ো দেখে মা জিজ্ঞেস করলো:
-"আবার কোথায় যাস?"
-"উত্তর পাড়া মা", "চল, রবিন" - বলেই দুজনে দিলো দৌড়। উত্তরপাড়ার কথা শুনে রাশেদের মা উকি দেয়ার ভঙ্গিতে ওদেরকে দেখে বলল:
- "সাবধানে যাস"।
দুপুর গড়িয়ে এলে রাশেদের মা ফেলে রাখা কাজে মন দেয়।
রাশেদ আর রবিনের গ্রামটা খুব বড় না হলেও বৈচিত্র খুব একটা কম নেই। দক্ষিণে বয়ে যাওয়া শান্ত নদী গ্রামটাকে দিয়েছ অন্য রকম সৌন্দর্য। পশ্চিমের বড় বাজার এলাকাবাসীর নিত্য প্রয়োজন পূরণের কেন্দ্রস্থল। এপাড়া-ওপাড়ায় রয়েছে আরো কিছু বাজার। পুবের খোলা প্রান্তর আর দীর্ঘ গাছের সারি গ্রামের সকাল-সন্ধ্যার সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করেছে অনেকগুণ। গ্রামের কেন্দ্রে রয়েছে বিশাল মাঠ আর একপাশে একটা স্কুল। উত্তরটা বরাবরই নির্জন। বসতবাড়ি খুব একটা না থাকায় মানুষের আনাগোনাও কম। এই উত্তরের শেষের দিকে রয়েছে টিলার মত এক জায়গা। আসলে গ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে উত্তরে হাটা শুরু করলে ঐ টিলার কাছে গিয়ে সবাই থেমে যায়। কারণ ঐপাশে গাছপালা আর ঝোপঝাড় ছাড়া আর কিছুই নেই।
দীর্ঘক্ষণ দৌড়ানোর পর রাশেদ হঠাৎ করে একা অনুভব করে, পেছনে ফিরে দেখে রবিন নেই। এপাড়া ওপাড়া ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাশেদ আর রবিন সাইকেলের অব্যবহৃত টায়ারকে একটা ছোট লাঠি দিয়ে চালিয়ে নিয়ে বেড়ায়। চাকার সাথে নিজেরাও খুব দ্রুত একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। দুপুরের খাওয়ার পরপরই তারা বের হয়েছিল সেদিন। গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের খোলা মাঠের পরে নদীর পাশ দিয়ে সারি সারি গাছের মাঝ বরাবর চলা শুরু করে রাশেদ আর রবিন। গাছপালার ছায়া আর নদীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে উত্তরের দিকে আনন্দের সাথেই যাচ্ছিল দু'জন। রবিন কখন যে পিছনে পড়ে গেছে রাশেদ সেটা খেয়ালই করেনি। উত্তরপাড়ার টিলার কাছে এসে দাড়িয়ে থাকে রাশেদ, অপেক্ষা করে বন্ধুর জন্য। পাশের একটি ভেঙ্গে পড়া গাছের উপর গিয়ে বসে চিন্তিত মনে বসে রাশেদ। হঠাৎ করেই পাশের এক পথ দিয়ে রবিন এসে রাশেদকে ভয় পাইয়ে দেয়। ইতস্তত রাশেদ বলে উঠে:
-"এতক্ষণ কোথায় ছিলি?? দেরী হলো ক্যান?? পিছনে পড়লি কিভাবে??"
রবিন হাপাচ্ছে। উত্তেজনা প্রশমিত করে দুটো পাকা কলা রাশেদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে:
-" নে, খা"।
-"কোথায় পেলি??"
-"নদীর পাশেই একটা গাছ থেকে ছিড়েছি। পাকা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি।"
কলায় কামড় দিয়ে রাশেদ বলে:
- "আমাকে থামালিনা কেন?? তাইলে আরো কয়েকটা নিয়ে আসা যেত"।
- " যাওয়ার সময় নিবো তাইলে।"
আশেপাশে ভালো মত লক্ষ করে রবিন বলে:
-"জায়গাটা তো খুব সুন্দররে রাশেদ"।
-"হ্যা, টিলাটাও বেশ সুন্দর কিন্তু একটা উচু আর কি। চল, উপরে উঠি"।
-"ঐপাশে তো মনে হয় জঙ্গল ছাড়া কিছু নেই। গিয়ে কি করবি?? চল মিয়া বাড়ির পুকুরপাড়ে যাই"।
কিন্তু রাশেদের মন টিলার অপর পার্শ্ব নিয়ে চিন্তা করছে। অন্যরকম একটা টান অনুভব করছে রাশেদ। সে ঐপাশে যাবেই আজ।
দুজন মিলে কিছুক্ষণ সলাপরামর্শ করে অবশেষে টিলায় উঠতে পা বাড়ায় রাশেদ। প্রায় তিন-চার তলা উচ্চতার টিলার বামদিকে নদীসহ জঙ্গল আর ডান দিকটাও ঝোপ ঝাড়ে ভরপুর। তার পাশ দিয়ে চলে গেছে মিয়া বাড়ির দিকে ছোট্ট একটা রাস্তা। ফলে রাশেদ টিলার মাঝ বরাবর উঠা শুরু করলো। টিলায় গায়ে জন্মানো ছোট কিন্তু মোটা কান্ডওয়ালা গাছগুলো তাদেরকে উঠতে বেশ সাহায্য করছিল। অনেকটা পাহাড়ে উঠার মত স্টাইলে রাশেদ-রবিন টিলার চূড়ায় এসে পৌছায়। উপরে এসে উঠে দাড়াতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় রাশেদের। সামনের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে গাছগুলোর মাথা দেখে মনে হয় যেন সবুজের চাদর ছাড়িয়ে আছে আর তার বাম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শান্ত নদী। বিকালের অস্তগামী সূর্যের সোনালী আলো পরিবেশকে আরো উজ্জ্বল আর আবেগী করে তুলেছে।
রাশেদ অপর পার্শ্বে নামার প্রস্তুতি নেয়। পা নামিয়ে একটা ছোট্ট গর্তে রাখতেই পিছলে যায়। উপর থেকে হাতে টান পড়ে রাশেদের..... (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একেবারে শৈশবকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। পর্ব ভালো লাগছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন