দোস্ত : পর্ব-০১
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আল আহসান ১১ জুন, ২০১৪, ০৯:৩৬:৪০ রাত
চরম ঝগড়া আর মারামারির পর রাশেদের মনটা বেশ খারাপ। বাসার ছোট্ট আঙ্গিনায় জাম গাছটার নিচে বসে আছে বিমর্ষ মনে। পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটাপঞ্চাশেক মার্বেল। ছোট্ট এক শাখা নদীর পাড় থেকে একটু উচুতে টিলার মত তাদের বাসা। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আর কোমলতার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠা রাশেদের।
ছুটির দিনে সারাবেলা বন্ধু রবিনের সাথে খেলাধুলা, হৈ হট্টগোল করে বেড়ায়। আজও অন্যান্য ছুটির দিনের মত রবিন ও রাজুর সাথে মার্বেল খেলছিল। খেলার মাঝে হঠাৎ করে বাধে ঝামেলা। তর্কাতর্কি আর চিল্লাচিল্লির এক পর্যায়ে মারামারি বেধে যায় দুজনের মধ্যে, দুজনই গড়াগড়ি খায় ধুলোময় মাঠে। রাজু না থাকলে হয়তো মারামারিটা আর কিছুক্ষণ স্থায়ী হতো। তার মধ্যস্ততায় মারামারি থামার পর দু'জন দুজনের বাসার দিকে পা বাড়ায়। তর্কবিতর্ক, ঝগড়া প্রায়ই হয় দুজনের মধ্যে। কিন্তু আজ একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। রাশেদ এজন্য মনে মনে নিজেকেই দোষ দেয়।
ক্ষেত থেকে শাকসবজি তুলে এনে ছেলেকে আঙ্গিনায় বসে থাকতে দেখেই কি হয়েছে বুঝতে পারে রাশেদের মা। জিজ্ঞাস করেঃ
- "কিরে, আবার মারামারি করেছিস?? তোরা না..., পারিসও।"
সাথে সাথে রাশেদ বলে উঠলোঃ
- "আমি কি করবো বলো?? ও...ইতো, খেলার মাঝে মার্বেলের ঘরের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলো। ওর জন্যই তো মার্বেলটা লাগলোনা।"
- "হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না। খেলতে পারেনা আবার মারামারি করে। হাত মুখ ধুয়ে আই খাবি।"
রাশেদ বাবাকে হারিয়েছে জন্মের পরপরই। এরপর মা ই তার সব। ক্ষেত-খামারের সামান্য আয় দিয়েই মা-ছেলে জীবনটা পার করে দিচ্ছে। রাশেদকে ভর্তি করেছে এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। একটু চঞ্চল হলেও পড়াশুনাটা মোটামুটি নিজ ইচ্ছাতে করে বলে মায়ের এ নিয়ে তেমন চিন্তা করা লাগেনা। মা’কে রাশেদ সাহায্যও করে বেশ। চিন্তা শুধু মাঝে মাঝে এর সাথে ওর সাথে মারামারি। তবে বেশিরভাগ সময় রাশেদ রবিন এর সাথেই থাকে। হাত মুখ ধুয়ে এসে রাশেদ মাকে বলে, “মা, রবিনকে ডেকে নিয়ে আসি?? ও মনে হয় এখনও খায়নি।” হাসতে হাসতে মা বলে, “যা, নিয়ে আই, তাড়াতাড়ি আসবি।”
রবিনের বাসা খুব দূরে না। বাড়ির পাশের বিশাল মাঠটার পরে হালিম স্যারের বাসার পরেই। এক দৌড়ে রবিনের বাসার উঠানে এসে হাজির। একটা গাছের গুড়ির উপর বসে রবিন তখন মার্বেলগুলো নিয়ে খেলছিলো। রবিন এখনও রেগে আছে দেখে পেছন থেকে রাশেদ মাথায় টোকা দেয়। পেছন ফিরে রাশেদকে দেখে রবিন বলে উঠেঃ
- “এখানে আসছিস ক্যান?? যা, একা গিয়ে খেল”
- “যা হবার হইছে। চল, মা ডাকছে একসাথে খাবো।”
- “আমি যাবোনা, তুই যা”
- “চলনা, খেয়ে দেয়ে আজ উত্তরপাড়ায় যাবো। যাবিনা??”
উত্তরপাড়ার কথা শুনেই মাথা ঘুরিয়ে মুচকি হেসে রবিন বললো, “চল...” (চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১১০৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন