একটি ব্যতিক্রমী ঈদ যাত্রা : পর্ব - ০৩

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আল আহসান ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৬:০৫ রাত

একটি ব্যতিক্রমী ঈদ যাত্রা : পর্ব - ০১

একটি ব্যতিক্রমী ঈদ যাত্রাঃ পর্ব - ০২

পরিচ্ছন্ন আকাশটা দেখতে বিশাল থালার মত, আর তাতে অসংখ্য তারার মেলা দেখে ইচ্ছে হচ্ছিল কাছে টেনে একটা একটা করে কুড়িয়ে নিই। চাঁদের উজ্জ্বল আলো আকাশে হালকা মেঘের আস্তরণ গুলোর উপর প্রতিফলিত হয়ে যমুনার এ পরিবেশে যোগ করেছিল অন্য রকম মাত্রা। যতক্ষণ সেতুর উপর ছিলাম শুধু এগুলোই চিন্তা আর অবলোকন করেছি। আর শূণ্যতা অনুভব করেছি কিছু কাছের মানুষের যাদের সাথে এ অনাবিল পরিবেশটা উপভোগ করতে পারলে জীবনে বাকি আর খুব বেশি কিছু চাওয়ার থাকতো না।

আসলে জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত থাকে যেগুলো ভুলে যাওয়ার মত নয়। ঝুকিপূর্ণ হলেও এ যাত্রা আমার জন্য ছিল ঠিক সেরকমই। এসব ক্ষেত্রে আমার মত আবেগী মানুষ আরো বেশি আবেগী হয়ে উঠে, জীবনকে নতুন করে ভাবতে শিখে। এরই মধ্যে কখন যে সেতু পার হয়ে ট্রেন তার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে বুঝতেই পারিনি। সম্বিত ফিরে পেলাম পাশের এক ভাইয়ের চিল্লাচিল্লিতে। আমার ঠিক একজনের পরেই বসা এক চাচা সেই কখন থেকে ঝিমুচ্ছিলেন বলে তাকে কখনও চিমটি কেটে, আবার কখনও “দে ফেলে দে” বলে হালকা ঝাকুনি দিয়ে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে মাঝে মাঝে আঞ্চলিক ভাষার বহুবিধ ব্যবহার ছিল হাসির অন্যতম উপলক্ষ্য।

হালকা চোখ বুজে এসেছিল। বেশ কয়েক ঘন্টা যাত্রার ফলে বসে থাকতে তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল না। হঠাৎ করেই পাশের জনের শরীরে বসা একটা জোনাকি পোকা নজরে এলো। ছোট বেলায় সন্ধ্যার পর যখন বাইরে ঘোরাঘুরি করতাম, প্রতিদিনই এসব জোনাকি পোকা ধরে ধরে রাখতাম ছোট্ট প্যাকেটে। প্যাকেটটিকে তখন একটা লাইটের মত মনে হতো, আলোও হতো বেশ। প্রায় অনেকেরই ছোট বেলায় এ অভ্যাসটা ছিল, বিশেষ করে যাদের শৈশব কেটেছে গ্রামে। ইচ্ছা করেই জোনাকিটাকে ধরে নিজের হাতের উপরিভাগে রাখলাম।

অনেকটা সময় একা একা আনমনে চিন্তা করেছি, খেলেছি প্রকৃতির সাথে। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে সারাদিন পরিশ্রম করা মানুষগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঝিমু্চ্ছিল। খেয়াল করে দেখলাম ভিড়ের মাঝে ট্রেনের ঠিক মাঝ বরাবর সেই ছোট্ট রাজু এক ভাইয়ের কোলের উপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বিষয়টা আমার মনকে খুব নাড়া দিয়েছিল। ছাদে উঠার কিছুক্ষণ পর ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “নামবে কোথায়?” উত্তরে বলেছিল রাজশাহী স্টেশনে। রাজশাহীতে কেউ নাই তবুও সে ওখানেই ঈদ করবে। তার নিবিড় ঘুম, জীবন সম্পর্কে নিশ্চিন্ততার প্রমান। আমরা কজনই বা এমন করে ঝড়ো বিপদের মাঝে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি?

হঠাৎ করেই ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হলো যতক্ষণ না ট্রেন থামে। মাইকে সতর্কতা সংকেত বেজে উঠলো। বুঝতে পারলাম সামনে ঝুকিপূর্ণ কোন কিছু আছে। আশে পাশে জিজ্ঞেস করে জানা গেল এটা সেই ব্রিজ যেখানে গত বছর ৩/৪ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। অনবরত মাইকে ঘোষণা এলো, “সাবধান!! সাবধান!!, সামনে ঝুকিপূর্ণ ব্রিজ। উপরের যাত্রী ভাইয়েরা শুয়ে পড়ুন, শুয়ে পড়ুন”। সবাই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাথা যতটুকু পারা যায় নিচু করে ট্রেনের সাথে শরীর এলিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু করলো।

সকল সাবধানতার পর ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনের সামনের দিক থেকে যাত্রীরা আস্তে আস্তে যতটুকু পারা যায় শুয়ে পড়ার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পর আমাদের পালা। মাঝখানের রিংটাকে ধরে পা কে নিচের দিকে এলিয়ে দিয়ে ট্রেনের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম। ট্রেন আস্তে আস্তে ব্রিজ (বড়াল ব্রিজ) এর মধ্যে প্রবেশ করলো। এত সতর্কতার কারণ বুঝলাম এতক্ষণে। ব্রিজটি পুরাই একটা খাচার মতো, উপরের দিকে আটকানো। সুতরাং মুহূর্তের ভুলে মাথা থেতলে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। ব্রিজের উপরের অংশ আমার নাক থেকে সর্বোচ্চ এক বিঘত পরিমান দূরে ছিল। স্থির শুয়ে থেকে সাবধনতার সাথে ব্রিজ পার হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞপন করলাম। কিছুক্ষণ পরে ঠিক একই রকমের আরেকটি ব্রিজ অতিক্রম করতে হয়েছিল। তবে দু:খজনক হলেও সত্য ট্রেনের গতি কমানো ছাড়া অন্য কোন সতর্কতা এবার দেয়া হয়নি। (চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১২৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

190893
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:০১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
191357
১২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৩৯
সজল আহমেদ লিখেছেন : চরম!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File