একটি ব্যতিক্রমী ঈদ যাত্রা : পর্ব - ০২
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান আল আহসান ১০ মার্চ, ২০১৪, ১০:২৭:০২ রাত
একটি ব্যতিক্রমী ঈদ যাত্রা: পর্ব - ০১
এরই মাঝে ট্রেন একটু দ্রুত চলা শুরু করেছে, বাতাসের বেগও বাড়ছে। একা একা বসে থাকতে ভালো লাগে না বিধায় পাশের আরো কিছু ভাই এর সাথে পরিচয় হয়ে নিয়েছিলাম। তাদের জিজ্ঞাস করলাম, “ভাই, গাছপালা এসে বাড়ি দেয় না তো আবার??”। অভয় দিয়ে বললো, “আরে ভাই কোন সমস্যা নাই, একটু সাবধানে থাকলেই হলো”। এতক্ষণ একটু রিল্যাক্সড মুডেই ছিলাম। কিন্তু এয়াপোর্ট স্টেশনে এসে আশা ভঙ্গ হলো। পিপড়ার মত মানুষ ছাদে উঠা শুরু করলো । অবলম্বন হিসেবে যে রিং টা ধরেছিলাম সেটাও ছাড়তে হলো মানুষের চাপাচাপিতে। মনে পড়ে গেল গুলিস্তান টু আব্দুল্লাহপুর ৩নং বাসের কথা, তার পরেও স্বার্থপরের মত ঠেলেঠুলে নিজের বসার জন্য ভালো মতই জায়গা করে নিলাম। প্রতিবারই ট্রেন এ উঠে বাসায় ফোন দিই। এবার বলার সাহস হলো না । মোবাইলটা বের করে এক বন্ধুকে ফোন দিলাম। বললাম, “দোস্ত, আমি ট্রেন এর ছাদে। দোয়া কর যেন ভালো মত বাসায় পৌছাতে পারি”। কেন ছাদে উঠেছি এরকম হাজার প্রশ্ন করে, নিচে নেমে যাবার জন্য বলে, কিছুটা রাগ করেই ফোনটা কেটে দিল সে।
কীট-পতঙ্গের মত মানুষ মাথায় নিয়ে ১২ বগির পদ্মা এক্সপ্রেস রওনা দিলো। এরই মাঝে রাজু আমার থেকে বেশ দুরে সরে গেছে, বলা যায় মানুষের ভিড়ে ওকে আর দেখা যাচ্ছে না, নতুন মানুষ এসে জুটেছে। এখন নিজে নিজেই আসে পাশের বিভিন্ন দৃশ্য দেখি আর কল্পনার সমুদ্রে ভেসে যায়। নিস্তব্ধ ফাঁকা মাঠ, দূরে দাড়িয়ে থাকা ঘন-কালো গাছপালা, মৃদু শীতল বাতাস, মাঝে মাঝে দেখা দেয়া শান বাধানো পুকুর ঘাট আর তার পানিতে চাদের আলোর ঝলকানি; সে এক অপূর্ব অনুভূতি।
আল্লাহর রহমতে আমি বসেছিলাম ছাদের একেবার মাঝখানে যেখানে একটু ব্যালান্সড থাকা যায়। ট্রেন লাইনের দুপাশের গাছগুলোর ডাল পালা মেপে কাটা হয়েছে যেন ডাল এসে যাত্রীদের শরীরে না লাগে। কিন্তু তার পরেও মাঝে মাঝে গাছের ডালের একে বারে শীর্ষ ভাগের পাতা আমাদের শরীরে আলতো ছোয়া দিয়ে তাদের বর্ধনশীলতার প্রমাণ দিয়ে যায়। তবে ট্রেনের তীব্র বেগের কারণে তাদের এ আলতো ছোয়াগুলো যাত্রীদের জন্য বেতের বাড়ির মত মনে হয়। মাঝখানে বসলেও পাতার বাড়ি বেশ অনেকবারই এ হতভাগার চোয়াল, কাধ আর মাথা স্পর্শ করে গেছে। মোশাররফ করিম তার “ভূগোল” নাটকে ইয়ার আলী স্যার এর যে শপাং শপাং বেতের বাড়ির কথা বলেছিল, মনে হচ্ছিল প্রাইমারী স্কুলের কোন অদৃশ্য স্যার যেন গাছের ডালকে বেত বানিয়ে আমাকেও শপাং শপাং পিটাচ্ছে।
পদ্মা ট্রেনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, রাতে এটা বেশ দ্রুত চলে। দেরি করে ছাড়লেও সেই টাইমটা কাভার করার চেষ্টা করে। হঠাৎ করেই ট্রেন এর স্পীড বেড়ে গেল। সাবধানী সবাইকে অবাক করে দিয়ে ড্রাইভার মহোদয় দূর্দান্ত গতিতে আরো স্পীড বাড়িয়ে দিল। দুচোখে শুধু ঝড়ো বেগে গাছপালার পিছনের দিকে চলে যাওয়া, গাছের ডালের হালকা বাড়ি খাওয়া আর আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকল না। নতুন অভিজ্ঞতা বলে আমি একটু বেশিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কয়েক মিনিট এভাবে চলে ড্রাইভার মহোদয় ব্রেকটা আস্তে আস্তে চাপা শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পেলাম আমরা যমুনা সেতুর (বঙ্গবন্ধু সেতু) কাছাকাছি চলে এসেছি।
দশ মিনিট বিরতির পর ধীরে ধীরে সাপের ন্যায় ট্রেনটি সেতুর উপর উঠলো। ট্রেনের মধ্যে থেকে সেতুর এক পার্শ্বকেই কেবল দেখা যায়। তাও আবার পুরোটা না। কিন্তু উপর থেকে পুরো সেতু দর্শন, সত্যিই অসাধারণ। সারি সারি লাইট জ্বালানো সেতু। দুপাশে অসীম শূন্যতা, যুগল পাখির ক্লান্তিহীন উড়ে যাওয়া, দূরে কোন চরে মাঝে মাঝে হালকা আলোর ঝলকানি, সাথে মৃদু শীতল বাতাস। সত্যিই মায়াময় একটা পরিবেশ। (চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১২৩৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন