মওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ কে লেখা একখানি খোলা চিঠি

লিখেছেন লিখেছেন আবরণ ২৬ মার্চ, ২০১৩, ০৭:১৮:১৫ সন্ধ্যা

শ্রদ্ধেয় মওলানা সাহেব,

আমার সালাম গ্রহন করিবেন। আশা করি আপনি ভাল আছেন। গত কয়েক বৎসর যাবত দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত শোলাকিয়ার ইমাম হিসাবে আপনার নাম বাংলাদেশের অনেকেই জানেন। লক্ষ মুসুল্লির জামায়াতের ইমাম হিসাবে আমার মনেও স্বাভাবিক ভাবেই আপনার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা জন্মাইয়াছিল। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে অত্যন্ত ব্যাথিত চিত্তে এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে খোলামেলা ভাবেই বলিতে বাধ্য হইতেছি যে আপনার প্রতি যত শ্রদ্ধা আমার হৃদয়ে জন্মাইয়াছিল তাহার বিন্দুমাত্র আর অবশিষ্ট নাই। আমরা স্বল্প শিক্ষিত সাধারণ মানুষ। বাংলা ইংরেজী যাই হোক একটু আধটুক জানিলেও আরবী খুবই কম জানি। পবিত্র কুরআন হাদিসের মূল গ্রন্থ আরবী ভাষায় রচিত হওয়ায় উহার বাংলা অনুবাদ পড়ার চেষ্টা করি। কুরআন হাদিস ভলমত বুঝা , শেখা এবং পবিত্র কুরআনের আলোকে একজন মুসলমান হিসাবে নিজের জীবনকে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে আপনাদের মত আলেমকে অনুসরণ করাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইদানিং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটে প্রকাশিত আপনার কর্মকান্ড, কথাবার্তায় অন্তরে বড়ই কষ্ট পাইতেচি। আপনি হুসে আছেন না বেহুস অবস্থায় এই সমস্ত কর্মকান্ড ও কথাবার্তা বলিতেছেন তাহা বোধগম্য হইতেছে না। আপনার মত একজন জবরদস্ত আলেম কি করিয়া এমনটা করিতে পারিলেন? কি করিয়া, কোন পার্থিব লোভের মোহে ভুলিয়া গেলেন যে আপনি শোলাকিয়ায় লক্ষ লক্ষ মুসুল্লির জামায়াতে ইমামতি করেন। আপনার এ হেন কর্মকান্ডে যে সমস্ত ধর্মভীরু মুসুল্লিরা আপনার পিছনে ঈদের জামায়াতে নামাজ পড়িয়াছেন তাহাদের বিশ্বাস, শ্রদ্ধার প্রতি এতটা অবজ্ঞা প্রদর্শন করিয়া তাহাদের হৃদয়কে ভাঙ্গিয়া দিতে আপনার হৃদয়ে কি একটুও কম্পন অনুভূত হয় নাই? সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের কল্যানে বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর নিকট সকল খবরই পৌঁছাইয়া যায়। তেমনি ভাবে আমরা জানিয়াছি কিছু সংখ্যক ব্লগার যাহারা আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) ও ইসলামের রীতিনীতিকে ব্যঙ্গ করিয়া অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট ভাষায় অবমাননাকর মনগড়া বানোয়াট কল্পকাহিনী তৈয়ার করিয়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াইয়া দিয়াছে। তাহাদের আয়োজনে গণ জাগরণ মঞ্চে গিয়া তাহাদের সহিত সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করিয়াছেন। যাহারা আমাদের নবী (সঃ) এবং মহান আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম ইসলামকে এভাবে অপমান করিতে পারে তাহাদের নেতৃত্বে যে সমাবেশ হয় তাহার সহিত কি করিয়া আপনি সংহতি প্রকাশ করিলেন? আপনার এই সংহতি প্রকাশ যখন এ দেশের লক্ষ কোটী তৌহিদী মানুষের হৃদয়ে আপনার প্রতি ধিক্কার আর ঘৃণা জন্মাইয়াছে তখন আপনি নিজেকে তৌহিদী জনতার রোষ হইতে বাঁচাইবার কৌশল হিসাবে অন্য পথ ধরিলেন। গত ২৩ মার্চ মতিঝিলে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় ও ব্যবস্থাপনায় "ওলামা মাশায়েখ ও দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ" এর ব্যনারে এক বিশাল (?) সমাবেশের ডাক দিলেন যাহা আপনাকে পথভ্রষ্ট আলেমের কলঙ্ক হইতে মোটেই উদ্ধার করিতে পারে নাই। সমাবেশে আপনি কি বয়ান করিলেন? আপনি বয়ান করিলেন, ইসলামী ব্যংকে টাকা রাখা হারাম'। ইসলামী ব্যংকে টাকা রাখা যদি হারামই হইয়া থাকে তাহা হইলে এই হারাম কাজটি করিবার পূর্বে আপনার কি একবারও মনে হয় নাই যে আপনি একটা হারাম কাজ করিতেছেন? "ইসলামী ব্যংকে টাকা রাখা হারাম" কথাটি এতদিন আপনার মনে হয় নাই কেন? এতদিন আপনি কোথায় ছিলেন? আর হঠাৎ করিয়াই বা এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা এত বছর পর মনে পড়িল কেন? ইসলামী ব্যংক তো আর দুই এক মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। আপনার মত বিজ্ঞ আলেমের দৃষ্টি এড়াইয়া বাংলাদেশের আনাচে কানাচে স্থাপিত ইসলামী ব্যংকের এতগুলি শাখায় কয়েক লক্ষ একাউন্ট হোল্ডার কি করিয়া এততিন ধরিয়া এ হেন হারাম কাজের সহিত জড়িত থাকিল? আপনার অবগতির জন্য অতীব বিনয়ের সহিত জানাইতেছি যে আপনি ইসলামী ব্যংকে একাউন্ট খুলিয়াছেন তাহা ইন্টারনেটের কল্যানে দেশময় জানাজানি হইয়া গিয়াছে। মওলানা সাহেব, এত ডাক ডোল পিটাইয়া সরকারী অর্থের অপচয় করিয়া কেমন সমাবেশ করিলেন? একজন স্বনামধন্য আলেম, দেশ জুড়িয়া আপনার নাম ডাক- আর আপনার ডাকে ,আপনার সমাবেশে হাতে গোনা যায় এই কয়েকজনের উপস্থিতি। শুনিলাম যাহারা আপনার সমাবেশে যোগ দিয়াছিল তাহাদের বেশীর ভাগই ছিল আপনার মাদ্রাসার ছাত্র আর জনাকয়েক অনুসারী। আপনি হয়ত ভাবিয়াছিলেন আপনার ডাকে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হইবে- কিন্তু বাস্তবে যাহা ঘটিল তাহা সত্যিই হতাস হওয়ার মতই। সংবাদ চিত্রে এবং টিভি চ্যানেলে যাহা দেখিলাম তাহাতে মনে হইল আমাদের মহল্লার জুম্মার জামাতেও এর চাইতে বেশী লোকের সমাগম হয়। আপনি আপনার মূল্যবান বয়ানে বলিয়াছেন , জামায়াতে ইসলামী কোন ইসলামী দল নয়। নাস্তিক ও মুরতাদের দল। তাহাদের গুরূ (মওদুদী সাহেব) কোন আলেম ছিলেন না। তাহারা কুরআন ও হাদীসের ভুল ও অপব্যখ্যা করে। মওলানা সাহেব , আপনি দয়া করিয়া বলিবেন কি জামায়াতে ইসলামীর কোন লোকটা কোথায় কুরআন হাদীসের কি অপব্যখ্যা করার মত অপকর্ম করিয়াছে? কথাটি কি আপনি জানিয়া বুঝিয়া বলিয়াছেন ? না কি কোন বিশেষ মহলের সন্তুষ্টির জন্য কোন কিছুর বিনিময়ে বলিয়াছেন? আমরা প্রায় মূর্খ মানুষ। কুরআন হাদীসের সঠিক অনুবাদ, ব্যখ্যা আমরা আপনার মত করিয়া হয়ত বুঝিনা- তবে কেউ যদি কুরআন হাদীসের ভুল বা অপব্যখ্যা করার মত স্পর্ধা দেখায় তাহার সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করিয়া এ দেশের ধর্ম ভীরূ লক্ষ লক্ষ লোককে সতর্ক করিয়া দিয়া ধোকাবাজীর হাত হইতে রক্ষা করাও আপনার মত ইমামের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর যদি এই কাজটি করিতে ব্যর্থ হন বা না করেন তাহা হইলে একদিকে যেমন নিজেকে ভ্রষ্ট আলেমের দলে নাম লেখার কারনে কলঙ্কিত করিবেন অন্যদিকে শেষ বিচারের দিনে এই ব্যাপারে মহান আল্লাহর নিকট জবাবদিহী করিবার জন্য প্রস্তুত থাকিবেন। অনেক কথা লিখিলাম । আদবের বরখেলাপ হইলে নিজগুনে ক্ষমা করিবেন।

ইতি -

বিষয়: বিবিধ

২৪৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File