রাজনীতিতে দায়িত্বশীলতা ও ভাষার ব্যবহার:
লিখেছেন লিখেছেন আবরণ ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০৮:২৬ রাত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রম বর্ধমান অস্থিরতার মূলে রয়েছে রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীলতার অভাব এবং তাদের মুখে উচ্চারিত ভাষার ব্যাবহার। দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনেক নেতার মুখেই প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত ভাবে কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করার প্রবনতা আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি থাকবে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য । প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে, রাজনৈতিক চাল দিয়ে কুপোকাত করতেই পারেন। কিন্তু তার মানে এই না যে প্রতিপক্ষকে যা ইচ্ছে তাই বলবেন। একজন আর একজনের প্রতি চরম অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করবেন। পাগল, মানষিক রোগী, রক্ত পিপাসু - এসব বাংলা শব্দ হলেও তার ব্যবহার এর ক্ষেত্রে রাজনীতিবীদদের সংযত এবং দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ। প্রতিপক্ষ হলেই যে তাকে যা ইচ্ছা তাই বলে গালিগালাজ করা যায় না - এ কথাটি রাজনীতিবিদদের বেশি করে মনে রাখতে হবে। পরমত সহিষ্ণুতা বিকাশমান গনতান্ত্রিক পরিবেশের পূর্ব শর্ত। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় চলমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে "পর মত সহিষ্ণুতা" শব্দটি চরমভাবে উপেক্ষিত এবং অনুপস্থিত। প্রতিপক্ষ ও ভিন্ন মতের অনুসারী হলেই তাকে নির্মূল করতে হবে, এটাই যেন বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা গনতান্ত্রিক দেশের জন্য অবশ্যই অশনি সংকেত ও দেশের মানুষের জন্য চরম ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে সরকারী দলের রাজনীতিবিদদের তাদের কর্মকান্ড, কথাবার্তায় আরও বেশি সংযমী হতে হবে। বিরোধী দল বা ভিন্নমতের দাবী দাওয়া, আন্দোলন একটি গনতান্ত্রিক দেশে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বিরোধী দলকে তাদের দাবী দাওয়া উত্থাপন, আন্দোলনের ব্যাপারে দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে। তাদেরকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রনয়ন করতে হবে। তা' যেন দেশের মানুষের কাছে যুক্তিগ্রাহ্য এবং গ্রহন যোগ্যতা পায়। আবার যারা সরকার চালাচ্ছেন তাদেরকেও মনে রাখতে হবে "এই দিন দিন না আরও দিন আছে" , আজকে আপনারা বিরোধী দলকে যা উপহার দিচ্ছেন কালকে তারা সুদেমূলে আপনাদেরকে ফেরৎ দিবেন। সরকারী ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদেরকে সব সময়ই বেশী সহনশীল হতে হয়। তাদেরকে বুঝতে হবে ইচ্ছে করলেই ভিন্নমত বা বিরোধী দলকে যেনতেন প্রকারে নির্মূল করা একটা গনতান্ত্রিক দেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ নয়। ইচ্ছে করলেই বিরোধী দলের উপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়া যায় না, বিরোধী দলের মিছিলের উপর গুলি করে মিছিল সমাবেশ পন্ড করা যায় না। সরকারী ও বিরোধী দল উভয়ই পরষ্পরের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে গনতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের মানুষ তাদের প্রতি আস্থা হারায়। উভয় দলের নেতৃবৃন্দের ভিতর পরষ্পরকে তির্যক ভাষায় আক্রমন অনেক ক্ষেত্রেই শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যা দেশের মানুষকে ব্যাথিত করে। তাঁদের মনে রাখা উচিৎ প্রতিপক্ষকে অসম্মান করে নিজ দলের গুটি কয়েক চাটুকারের বাহবা পেলেও প্রকৃত পক্ষে তারা নিজেদেরকেই অসম্মান করেন। শীর্ষ রাজনীতিকদের স্মরন রাখা উচিৎ দেশের মানুষ এখন আরও বেশী সচেতন, সজাগ। মানুষ তাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আচরণ, তাদের ভাষার ব্যবহার সবই লক্ষ্য করে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার দিন খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে বেশিক্ষন ঢেকে রাখা যায় না । রাজনীতির অঙ্গনে আজ ঘোর অমানিশা। দেশের মানুষ আজ হতাশ, দেশের অর্থনীতি আজ প্রায় পঙ্গু। এমতাবস্থায় দেশ প্রেমিক রাজনীতিকদের উচিৎ তাদের মধ্যকার ব্যক্তিগত ঈর্ষা, অহমবোধ এর উর্দ্ধে উঠে দেশে ও দশের স্বার্থে কাজ করা। রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানকালে ভাষার ব্যবহার ও শব্দ চয়নে আরও বেশি সংযমী ও দায়িত্বশীল হওয়া। তাহলেই দু'পক্ষের মধ্যেকার দুরত্ব কমতেপারে। দুরত্ব কমাতে পারলেই পরষ্পরের প্রতি আস্থার ক্ষেত্র তৈরী হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষ তাদের প্রিয় রাজনীতিবিদদের প্রতি আবারও শ্রদ্ধাশীল হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন