সাম্প্রদায়িকতা শব্দের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়া দরকার-শাহ আবদুল হান্নান

লিখেছেন লিখেছেন জেমস বন্ড ০০৭ ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫২:০১ দুপুর

পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ পালিত হয়। বাংলাদেশে ঢাকায় এবং অন্য অনেক স্থানে বাংলা নববর্ষ উৎসাহের সাথে পালিত হয়। পরের দিন একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রথম পাতায় চার কলাম হেডিং দেয়া হয়। হেডিংটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। ‘মিলমিশ, সাম্প্রদায়িকতা নয়’ (Harmony, not Communalism)।

এ শিরোনামে বাংলাদেশের সেকুলার মহল এবং অতি সেকুলার পত্রপত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাচ্ছে। এখানে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটি এ শিরোনামে কেন ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণভাবে যে অর্থে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় তার আলোকে দেখলে এর অর্থ হচ্ছে, এ কথা বলা যেÑ বাংলা নববর্ষ উৎসবকে কোনোভাবেই ইসলাম প্রভাবিত করেনি। তাই এটাতে সম্প্রীতি প্রকাশ পেয়েছে, সাম্প্রদায়িকতা নয়।

আমি চিরদিনই বাংলাদেশের সেকুলার পত্রপত্রিকার ইসলামবিরোধী, ধর্মবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যথা অনুভব করি। কেননা এ দেশের নব্বই ভাগ মুসলিমসহ ১০০ ভাগ জনগণ সবাই ধর্মবিশ্বাসী ও নৈতিকতায় বিশ্বাসী; এখান থেকে বাদ যেতে পারে কয়েক হাজার লোক।

সেকুলার পত্রপত্রিকা নারী সম্পর্কিত বা মানবাধিকার সংক্রান্ত ইসলামি শিক্ষাকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। এসব সেকুলার পত্রপত্রিকা বিশেষ করে নারী ও যুবকদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চায়। তারা ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশাকে উৎসাহিত করে, যার ফলে ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। এসব কোনো ধর্মেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এমন সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে উৎসাহিত করে, যেখানে অনেক অশ্লিলতা থাকে এবং মেয়েদের শরীর প্রদর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইটেম হয়। এভাবে তারা নারীকে পণ্যে পরিণত করে। এখন সম্প্রদায় (Community) সম্পর্কে আলোচনা করব। সব মানুষই কোনো না কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ। মুসলিমরাও তাই। স্বাভাবিকভাবেই সব সম্প্রদায় তাদের লক্ষ্য কার্যকর করার চেষ্টা করবে। মুসলিমরাও তাদের সম্প্রদায় বা সমাজের লক্ষ্য কার্যকর করার চেষ্টা করবে। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিমরা তাদের উৎসবকে তাদের ধর্মের আলোকে পালন করবে। মুসলিমদের পরিচয় ইসলাম দ্বারা; তাদের বিশ্বাস, আইন ও সংস্কৃতি দ্বারা নির্ধারিত। মুসলিমরা তাদের উৎসবে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা, প্রকাশ্যে বয়স্ক মেয়েদের নাচ বা কোনো ধরনের শিরকের অন্তর্ভুক্তি পছন্দ করে না। তারা মঙ্গলপ্রদীপ বা মঙ্গলশোভাযাত্রা চায় না। প্রদীপ থেকে কোনো মঙ্গল আসে না। মঙ্গল আসে কেবল স্রষ্টার কাছ থেকে। তেমনিভাবে অশালীন পোশাক ও বড় বড় পশুর মূর্তিসহ শোভাযাত্রা কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। যদি এগুলো না গ্রহণ করা হয় তাহলে সেকুলার প্রেসের মতে তা হয়ে যায় সাম্প্রদায়িকতা। যদি এগুলো মেনে নেয়া হয় তা হলে তা হয় মিলমিশ বা সম্প্রীতি (harmony)।

স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে নব্বই শতাংশ মুসলিম বাস করার কারণে সব উৎসবই ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। অশালীন পোশাক, অবাধ মেলামেশা অন্য ধর্মেরও অংশ নয়। পয়লা বৈশাখে আগের মতো নানা রকম মেলা হওয়া, খেলাধুলা হওয়া, ভালো খাবারের ব্যবস্থা এবং দরিদ্রদের সাথে একত্র হওয়াই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। যদি নৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা হয়, তাহলে তা অধিকতর শালীন হয় এবং কোনো ধর্মের শিক্ষারও বিরোধিতা করা হয় না।

লেখক : সাবেক সচিব,বাংলাদেশ সরকার

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File