সরকার দেশের কোটি কোটি মুসলমানের মনের ভাষা বুঝতে না পারলে চরম মূল্য দিতে হব-আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী
লিখেছেন লিখেছেন জেমস বন্ড ০০৭ ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৫৩:১৯ সকাল
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এবং বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে সরকার এ দেশের কোটি কোটি মুসলমানের মনের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে না পারলে চরম মূল্য দিতে হবে। তা ছাড়া হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবিকে মধ্যযুগীয় বলার মানে পুরো ইসলামকে অস্বীকার করার মতো। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থই হলো ধর্মহীনতা। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে জাতিকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নিজেদের নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য পর্দাসহকারে নারীদের কর্মক্ষেত্রে বা ঘর থেকে বের হতে কোনো বাধা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, নীতি-আদর্শ, কৃষ্টিকালচার, সঠিক ধর্মীয় বিধিবিধান ও অনুশাসনের সুরক্ষা এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবেলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতিকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক বছর থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের দেশী-বিদেশী দুশমনরা এ দেশের সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও কূটচাল চালিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নাস্তিক্যবাদিরা সম্প্রতি জাতীয় আবেগকে পুঁজি করে ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন বা কম জ্ঞান রাখেন এমন কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করে শাহবাগ গণজাগরণের নাম দিয়ে প্রকাশ্য মাঠে নামিয়েছে। তারা শুধু আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেই থামেনি। সাথে সাথে আবহমান বাংলার রক্ষণশীল সামাজিক অনুশাসন ও সংস্কৃতির ওপরও আঘাত হানতে শুরু করেছে। তারা বিয়েবহির্ভূত ও ঘনিষ্ঠ অনাত্মীয় নারী-পুরুষের দৃষ্টিকটূ বিচরণ এবং রাস্তায় রাত যাপনের মতো ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু করে। দাড়ি-টুপিধারী ও ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি ওরা যেভাবে হামলে পড়ছে, তা অমুসলিম দেশেও সচরাচর দেখা যায় না।
আর ওলামায়ে কেরামের অন্যতম বিশেষ দায়িত্ব হচ্ছে -ইসলাম ও মুসলিমসমাজকে সব অনৈসলামিকতা ও লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্ত রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাওয়া। তা ছাড়া আমাদের সব কর্মসূচিই ধর্মীয় স্বার্থ ছাড়াও দেশাত্মবোধক, শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক। আমার ব্যক্তিগত লাভালাভের কোনো বিষয় এখানে নেই। শুধু আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর ইজ্জত রক্ষার তাগিদেই আন্দোলনের এসব কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।
লংমার্চের সবচেয়ে বড় যেই অর্জন সেটা হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আমরা জোরালো এই বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি যে, দেশের ওলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ছোটখাটো মতভেদ থাকলেও ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের ওপর কোনো আঘাত এলে, সেক্ষেত্রে তারা দ্রুত সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়েন। আমাদের অরাজনৈতিক কর্মসূচির পক্ষে দলমত নির্বিশেষে বিশাল জনগোষ্ঠীর জোরালো সমর্থন রয়েছে। সুতরাং যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের ওপর আঘাত আসবে, তখনই হেফাজতে ইসলাম তৎপর ভূমিকা রাখবে। আমি জোরালো আশাবাদী, হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক এই আন্দোলন দেশের ওলামা-মাশায়েখ স্থায়ীভাবে অব্যাহত রাখবেন। কিন্তু সরকার ধর্মনিরপেতার কথা বলে দেশকে ধর্মহীনতা, নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারকে এখন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তারা কি দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মের পে থাকবে, নাকি গুটি কয়েক নাস্তিকের কথায় উঠবে-বসবে?
নারী-পুরুষের দৃষ্টিকটূ অবাধ মেলামেশা বন্ধ করার দাবির অর্থ এই নয় যে, নারীরা কর্মক্ষেত্রে যেতে বা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো নগ্নতা ও বেহায়াপনা বন্ধ করা। আমরা তো নারীর পক্ষেই বলছি। ইসলাম নারীর নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে। কাজেই পর্দা সহকারে নারীরা কর্মক্ষেত্রে বা ঘর থেকে বের হতে তো কোনো বাধা নেই। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে তো নারীর ন্যায্য অধিকারই নেই। শাহবাগে যেভাবে নারী-পুরুষের এক সাথে রাত্রিযাপন, অবস্থান এবং বেহায়াপনা হয়েছে, তা একটি জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। কাজেই আমাদের কথা পরিষ্কার যে, হিজাব বা শালীনতার সাথে নারীদের কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো বাধা নেই। নারী নীতির কুরআন-সুন্নাহবিরোধী ধারাগুলোই আমরা সংশোধনের কথা বলেছি। তা ছাড়া দেশে ভাস্কর্যের নামে আবক্ষ মানব বা জীবজন্তুর মূর্তি তৈরি এবং ফুল দিয়ে সেসবকে সম্মান প্রদর্শনের রেওয়াজ যে হারে শুরু হয়েছে, তা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কখনও কাম্য হতে পারে না। ইসলামে মূর্তি তৈরি ও সম্মান প্রদর্শনকে স্পষ্টভাবে শিরক ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমরা কখনও প্রাণহীন শিল্পকর্মের বিরোধী নই। মোমবাতি প্রজ্বলন অগ্নিপূজক ও পশ্চিমাদের সংস্কৃতি। এটা এদেশে নতুন করে প্রচলনের জোর চেষ্টা চলছে। কাজেই আমাদের দাবি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো বা বিরোধিতার সুযোগ নেই।
ইসলাম অন্য ধর্মের মতো শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের ধর্ম নয়। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ং আল্লাহ মনোনীত করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত ইসলাম রাজনীতি কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে কারো মুখাপেক্ষী নয়। ইসলামি শরিয়তের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিয়াছাত বা রাজনীতিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। মদিনায় ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রই তার প্রমাণ দেয়। ইসলাম শুধু নামাজ, রোজা ও জাকাতের মতো মৌলিক ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান ও নির্দেশনা রয়েছে। ধর্ম এবং রাজনীতি আলাদা এ কথা ঠিক নয়।
আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে, সংবিধানে আল্লাহ্র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাস। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহ্, রাসূল সা:, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর জঘন্য কটূ প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। পাঠ্যবইয়ের সব ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ। সব অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমা ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সব স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি। আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের সব দাবিই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং সব নাগরিকই এতে একমত পোষণ করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন