" ওরা আমায় বেধেছিলো ভালোবাসা প্রীতিতে "

লিখেছেন লিখেছেন দুর দিগন্তে ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫৮:০৪ রাত

স্মৃতিকথা - ৮

-

( দ্বিতীয় অংশ )

--------------------------------------

প্রসঙ্গঃ একজন কবির ভাই !

-

প্রকৃতির মাঝে কতক্ষন হারিয়ে ছিলাম ? আমার উদাস মনও তা বলতে পারে না । পড়ন্ত বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাসের নির্মলতায় যখন ছেদ পড়লো । কাঁধ বরাবর একটি হাতের উপস্থিতি টের পেলাম । ধমনী চোমকে উঠলো । ধনুকের মত ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি এক দ্বীনি ভাই l স্ফীত হাসির দ্যুতি টেনে সম্মুখে দাঁড়াল । ছোটখাট মানুষ । রুচিশীল স্টাইলে দাড়ির ছাট । মাথার চুলগুলো এতটায় খাড়া, যেনো মনে হচ্ছে জেল দিয়ে সটান করা হয়েছে । মেদহীন শক্তপেশির মজবুত অবয়ব । পরিছন্ন ও পরিপাটি ভঙ্গি l অভিজাত ও মানানসই পরিধেয় । কিছু বুঝে উঠার আগেই, সম্প্রসারিত তার দুবাহু মাঝে আবদ্ধ হলাম । যেনো হাজার বছর আগে, ছিলো পরিচয় । কত যে আপন তিনি ? দুই সেকেন্ডে তা-ই মনে হতে লাগলো l এমন অভিনব দ্বীনি সম্পর্কের স্বয়ংক্রীয় স্বাদ ! কোনো (ইসলামী আন্দোলন বিমূখ) বেদ্বীনের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব । যা আমাদের কাফেলার প্রতিটি কর্মী আস্বাদন করে আজীবন ।

-

চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসে পড়লেন । আমি যে কিছুটা উদাস । চিন্তায় আচ্ছন্ন । পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সময় যে আমাকে কিছুটা অশ্বস্থিতে রেখেছে । তিনি সেটা বুঝতে পেরে, আমাকে সঙ্গ দিতে এসেছেন । কারণ, ক্যাম্পাস যাওয়া আসার পথে, একি ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন । তিনি জানতেন, বিষন্বতা মানুষকে খোলা জানালায় টেনে আনে l চোখের ঘুমকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় । মনের প্রশান্তিকে জ্বালিয়ে আঙ্গার করে । ধৈর্য্য শক্তিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিস্ফরন ঘটায় । সে উপলদ্ধি থেকেই, ক্যাম্পাস হতে তড়িত ফিরেছেন l নামাজ খাওয়া সেরেই আমার রুমে হাজির ।

-

সংক্ষিপ্ত কুশলাদিতে জানা হলো পরস্পরকে । হুমায়ন কবির । গ্রামের বাড়ি বরিশাল । হিসাব বিজ্ঞান ফাইনাল ইয়ার (বি.বি.এস লাস্টব্যাচ) । শপথের জনশক্তি l চুড়ান্ত শপথের প্রস্তুতি নিচ্ছেন । প্রথম ব্লকের দ্বিতীয় তলার ২০৭ নম্বর রুমে থাকেন । স্বপ্রনোদিত হয়েই বল্লেন l চলেন- বিকালটা একটু ঘুরে আসি । বের হলে, মনের জ্যামটা দুর হবে । না করলাম না । জানি, এরকম হৃদয়ের মানুষ খুব বিরল । যারা নিজ উদ্দ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় । সময়ে আসময়ে । প্রয়োজনে অপ্রয়জনে । কুরআনের সেই আয়াতটি স্বরণ হলো । ওয়া' জাআল্লা না মিল্লাদুনকা ওয়ালীয়াও, ওয়া' জাআল্লা না মিল্লাদুনকা নাসীরা । মনের অবস্থা বুঝে, আল্লাহ তার বান্দাদের হইতো এভাবেই সাহায্যকারী পাঠান । দেরি না করে ঝটপট বেরিয়ে পড়লাম । আমার ডান হাতটা ধরেই উনি হাটছিলেন । একপা-দুপা করে এগিয়ে চলছি, মেহের চন্ডি স্টেশন বাজারের দিকে । থেমে নেই আমাদের কথামালা । বটগাছের নিচে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম । বিকালের চা-নাস্তা খেতে খেতে অনেক কথা । মাথার মধ্যে যে প্রশ্নগুলো ভয় আর দুশ্চিন্তা উত্পাদন করছিলো । একে একে সেগুলো উত্থাপন করলাম ।

-

হল সংক্রান্ত যে সকল তথ্যাবলী জানার চেষ্টা করলাম তা হলো :-

১ l হলের মৌলিক সমস্যা, সম্ভাবনা l অতীত ও বর্তমান ।

২ l জনশক্তির অবস্থা, মান, সংগঠনের সিট সংখ্যা ।

৩ l অন্যান্ন ছাত্রসংগঠনের অবস্থান, শক্তি, সামর্থ ও পরিধি l

৪ l বহিরাগত অবৈধ অনুপ্রবেশ l অছাত্র ও অনাবাষিক ছাত্রদের দৌরাত্ব l আইনশৃংখলা অবনতি হলে পুলিশ ও প্রসাশনের ভূমিকা । গেটমামু ও প্রহরা রত পুলিশ হয়রানি । হল তল্লাসির নামে ভীতিকর মুহুর্তে আমাদের সম্ভাব্য ভূমিকা ।

৫ l দলগত কর্মসূচীর ভিন্নতা । ধর্মীয় ও জাতীয় দিবস গুলো পালনে ছাত্রসংগঠন ও হল প্রসাশনের ভূমিকা l

৬ l দলভিত্তিক রুমের বিন্যাস । সিট এ্যালুটমেন্টে সব্চ্ছতা l কতটা মেধা ভিত্তিক l সিট বন্টনে, সরকারী ছাত্রসংগঠন ও হলপ্রসাশনের যোগসাজস l সিট পলিটিক্সের সূত্র ।

৭ l ডাইনিং, ক্যান্টিন কেন্দ্রিক ছাত্রকল্যাণ মুখি কর্মকান্ড । বৈরীতা বা সহনশীলতা l

৮ l টিভিরুম, গেমস-রুম, গেস্টরুম ভিত্তিক রাজনীতি ।

৯ l মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতী তত্পরতা । তাবলীগ বন্ধুদের পরশ্রীকাতরতা । ক্রীটিক্যাল সময় গুলোতে তাদের পরোক্ষ্য অসহযোগীতা ।

১০ । হল লাইব্রেরীর মান l বই সংগ্রহের নিয়ম । পত্রিকা রুমের পরিবেশ l পত্র-পত্রিকা নির্বাচনে আমাদের ভূমিকা ।

১১ l কর্মচারী কর্মকর্তাদের সহযোগিতা অসহযোগীতা ।

১২ l হলে- প্রভোস্টের নিরোপেক্ষতা । ছাত্রদের সাথে আচরণ অভিভাবক সূলভ ! না দলীয়দাস ?

১৩ l আমাদের কাছে সাধারণ ছাত্রদের অভাব অভিযোগ l ধরণ ও সমাধানের পথ ।

১৪ l হলের সাধারণ ছাত্রদের নিকট, ছাত্রসংগঠন গুলো কতটা আস্থাশীল । বিভিন্ন দলের ছাত্র নেতারাইবা আবাষিক ছাত্রদের প্রতি কেমন শ্রোদ্ধাশীল ।

১৫ l হলে অবস্থানে কোন ধরনের চাপ, ভয়-ভীতি বা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতে হয় l ইত্যাদি l

-

তিনি যেহেতু হলে মোটামুটি পুরোনো l আবাসিক ছাত্র হিসেবে সিনিয়র l তাই সুদীর্ঘ অভিগ্যতার আলোকে, য্থাসম্ভব ও সাধ্যমত ব্যাখ্যা দিলেন । যা আমার শুন্য মাথা অনেকটা সমৃদ্ধ করল । আলোচ্য বিষয় গুলির প্রতি সচেতনতা ও সম্যক ধারনা, আমি কেনো ? হলে অগত প্রতিটি দায়িত্ব্শীলের থাকা অত্যান্ত জরুরী । কবির ভাই আমাকে, সেই প্রাথমিক ধারনাটা দিয়ে ধন্য করলেন l অবশ্য তত্পরবর্তীতে উপরোক্ত বিষয় গুলিতে হলের সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছেন । যা আমাকে ভবিশ্যত পরিকল্পনা সাজাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো ।

-

কবির ভাই যথেষ্ট সাহসি মানুষ l কর্মঠ ও স্পষ্টভাষী l হৃদয় মন অনেক উদার । ভালবাসার উচ্চতা অপরিমিত । সহমর্মিতা ও সাহার্য্যের হাত থাকে সদা সম্প্রসারিত । কিন্তু তিনি সঠিক যাইগায় উচিত কথা বলতে সিদ্ধহস্ত l তাই অনেকেই ভূল বুঝে l অনেকে আবার এটাকে অপরাধের চোখে বিচার করে । ফলে- আপনজনদের থেকে হন উপেক্ষিত । ক্ষেত্রবিশেষে উর্ধতন বা সিনিয়র ব্যাক্তিবর্গের সুদৃষ্টি থেকে হন বঞ্চিত । ব্যাপারটা আমি অল্প কদিনে পরিস্কার হলাম । তবে, মূখের উপর সত্য বলা সাহসী মানুষদের কে, আমি বরাবরই সাথে রাখি । কারন- ভূল করা, অহংকারী হওয়া, একক কতৃত্ব পরায়নতা, নিজের মত জোর করে অন্যের উপর চাপানো, ভীন্নমতের তোয়াক্কা না করার মত আমল বর্বাদ কারী কর্মকান্ড থেকে রক্ষা পেতে এ সমস্ত মানুষেরা কার্যকর ভূমিকা রাখে । তাই কবির ভাই ধীরে ধীরে হয়ে উঠলো এক গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয় । ব্যাক্তিগত পরামর্শক । বলিষ্ঠ সহযোদ্ধা । সার্বোক্ষনিক আনসার । আমার হল জীবনের শুরু হতে শেষতক প্রতিটি কর্মে, পদক্ষেপে, অভিযানে, ময়দানে, শ্লোগানে, সফরে, অবসরে তাকেই পেতাম সবার আগে । বিপদ মুসিবতে ছায়ার মত তার উপস্থিতি, মুহুর্তেই মনের জোর শতগুণ বৃদ্ধি পেত । মজার ব্যপার হলো, তিনি অনুষদের দায়িত্বশীল । যে সমস্ত জনশক্তি হলে থেকে অনুষদ,শাখা উপশাখায় কাজ করেন । তাদের নিয়ে হল সংশ্লিষ্টদের, কিছু মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকে । কিন্তু, কবির ভাই ছিলেন ব্যাতিক্রমীদের একজন । হলময় নিজেকে একাকার করে মেলে ধরতেন । এটি নি:সন্দেহে একটি অনুস্মরনীয় দৃস্টান্ত ।

-

আজ প্রায় একযূগ । কবির ভাইয়ের সাথে দেখা সাক্ষাত নেই । হাজার হাজার মাইল দুজনের অবস্থান দুরত্ব। ডিজিটাল সূযোগ সুবিধার সবই আছে । কিন্তু, কথা হয়ে উঠে না l তবে হৃদয় মাঝে তার অস্তিত্ব কখনও যে বিলীন হবে না । আমার আজকের অবতারনা কিন্তু, তারই সুস্পষ্ট প্রমান । যখন মন চলে যায় স্মৃতিময় বন্দরে । ইতিহাস তখন পাতা ওল্টাতে থাকে । জীবনের শ্রেষ্ঠতম ঘটনাবহুল অধ্যায়ের পরতে পরতে 'হুমায়ন কবির, নামটি ঝলমল করে l কাতর মন-তখন ব্যাকুল হয়ে, ভালোবাসার ফানুস উড়ায় l বন্ধচোখ দুহাত তুলে দরখাস্ত পাঠায় আরশে আজীমের ঠিকানায় । সবটুকুন আকুতি বলে উঠে হে, আমাদের মালিক ! প্রিয় ভাইটিকে যেখানেই রেখো, ভালো রেখো । দ্বীনি আন্দোলনে উভয়কে আমৃত অবিচল রেখো । মতিহারের মত জান্নাতের ক্যাম্পাসেও এক সাথে রেখো । খুব কাছে l পাশাপাশি ।

-

চলবে..…

বিষয়: বিবিধ

৯৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File