ছাত্রশিবিরের চূড়ান্ত মগজ ধোলায় পদ্ধতি
লিখেছেন লিখেছেন দুর দিগন্তে ১৫ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৪৫:০৪ রাত
“ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন দায়ীত্বশীল কিভাবে একজন সাধারণ ছাত্রকে চূড়ান্ত শপথের কর্মী হিসেবে তৈরী করেন”
বন্ধু থেকে সমর্থকঃ
প্রথমেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের দায়ীত্বশীল তিনি যে এলাকায় দায়ীত্ব পালন করেন সেই এলাকার এমন ছাত্রকে মনে মনে টার্গেট করেন যে ছাত্র মেধাবী, বুদ্ধিমান ও কর্মট, চরিত্রবান, নেতৃ্ত্বের গুণাবলি সম্পন্ন এবং সমাজে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী তাকে, কারণ যে ক্লাশে ফার্স্টবয় তার অনুসরণ করে বাকী সবাই, এলাকায় যার কথায় অন্যান্যরা ছাত্ররা চলে, সে যদি শিবির হয় তাহলে বাকীরা তার দেখাদেখি-ই শিবিরে চলে আসবে এতে কষ্ঠ কম হবে।
এর পরে ঐ দায়ীত্বশীল পরিকল্পনা করেন যে কিভাবে তাকে দাওয়াত দেওয়া যায় বা কিভাবে তার মান উন্নয়ন করা যায়।
তার পর তিনি তার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে পরিচিত হন, নিজের পরিচয় দেন এবং তার পরিচয় নেন… এবং তার সাথে এমন সম্পর্ক স্থাপন করেন যে সে উনাকে তার শুভাকাঙ্খি হিসেবে মনে করে, এবং সে এটি বিশ্বাস করে যে তিনি তাকে খারাপ কোনো দিকে আহবান করবেননা।
তার পরে আস্তে আস্তে তাকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝান, সমাজে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণা বুদ্ধিমত্বার সাথে তার সামনে তুলে ধরেণ, তার ভিতরে আখিরাতের ভয় ঢুকিয়ে দেন, তাকে ইসলামী নিয়ম-কানুন মেনে চলার জন্য আগ্রহী করে তুলেন এবং ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামী সংগঠনের গুরুত্ব কোরআন-হাদীস অনুযায়ী বুঝান।
তার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একসংগে ভ্রমন করেন, একত্রে নাস্তা করেন, নিজের বাসায় তাকে নিয়ে যান এবং তার বাসায়ও তিনি যান একে অন্যকে উপহার দেন ইত্যাদি।
তাকে একমাসের একটি ‘ব্যাক্তিগত প্রতিবেদন’ দেন এটার মধ্যে সে প্রতিদিনের কাজ-কর্ম অর্থাৎ আজ সে কোরআন পড়লো কি না, সে হাদীস পড়লো কি না, আজ পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতে নামাজ পড়েছে কি না, সে আজ কত ঘন্টা পাঠ্যপুস্তক পড়লো ইত্যাদি… লিখে রাখবে এবং ২-৩ দিন পরপর দায়ীত্বশীল এটা পর্যবেক্ষন করেন।
এত কিছু হয়ে গেলে সে ইসলামী ছাত্রশিবিরে তথা ইসলামী আন্দোলনের একজন সমর্থক।
কিন্তু একজন ছাত্রকে শুধু ইসলামী আন্দোলন বুঝালেই, সংগঠনের দাওয়াত কাজ শেষ হয়ে যায়না, সংগঠনের লক্ষ্যে পৌছতে হলে চাই কাজের জন্য কর্মী।
সমর্থক থেকে কর্মীঃ
এর পর দায়ীত্বশীল তাকে সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতি প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে আগ্রহী করে তুলেন। সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তকে শামীল করেন, তার জ্ঞান, বুদ্ধি, আন্তরিকতা, মানসিকতা ও ঈমানের দৃড়তা লক্ষ্য করে পরিকল্পিত ইসলামী বই পড়ান, বিভিন্ন ইবাদাতের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করান, সময় এবং মনমানষিকতা বুঝে ছোট-খাটো কাজ দেন।
এর পরে তাকে সাধারণ সভায় উপস্থিত করান, এই সভার কর্মসূচী হচ্ছে… অর্থসহ কোরআন তিলাওয়াত, বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা এবং সভাপতির বক্তব্য।
এধরণের আরও বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে উপস্থিত করান। তাকে একটি ‘ব্যাক্তিগত রিপোর্ট বই’ দেন এটার মধ্যে সে প্রতিদিনের কাজ-কর্ম অর্থাৎ আজ সে কোরআন পড়লো কি না, সে হাদীস পড়লো কি না, আজ পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতে নামাজ পড়েছে কি না, সে আজ কত ঘন্টা পাঠ্যপুস্তক পড়লো ইত্যাদি… যার ফলে সে ক্রমান্বয়ে নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে তৈ্রী করতে সক্ষম হয়।
সে প্রতি মাসে ইসলামী এই সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে তার সাধ্য অনুযায়ী টাকা (বায়তুলমাল) দিবে, নিয়মিত সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত হবে, সে ঐ ‘ব্যাক্তিগত রিপোর্ট বই’টি নিয়মিত লিখবে এবং দায়ীত্বশীল তার ঐ বই দেখেন এবং সে অনুযায়ী তাকে দিকনির্দেশনা দেন।
উপরের এই কাজগুলা করলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তথা ইসলামী আন্দোলনের সে একজন আদর্শ কর্মী।
কর্মী থেকে ১ম পর্যায়ের শপথের কর্মী (সাথী):
কর্মী যদি তার কাজগুলা ঠিকমত পালন করে, নিয়মিত নামাজ পড়ে, নিয়মিত রিপোর্ট রাখে তাহলে তাকে সাথী বানানোর জন্য তার দায়ীত্বশীল তাকে বাচাই করবেন, সে সাথী হতে হলে তাকে একাধারে তিন মাস নামাজ ক্বাজা বন্ধ রাখতে হবে অর্থাৎ সে প্রতিদিন সময়ের ভিতরে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে, এমন যদি হয় যে, দুই মাস নামাজ ক্বাজা হয়নি কিন্তু তিন মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বে ক্বাজা হয়ে গেছে তাহলে তাকে পূনরায় নতুন করে তিন মাস হিসেব করতে হবে। নিয়মিত কোরআন-হাদীস অধ্যয়ন করতে হবে, ইসলামের দাওয়াতী কাজের মনমানষিকতা থাকতে হবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ দফা কর্মসূচীর উপর প্রতি বিষয়ের উপর ক্রমান্বয়ে কমপক্ষে ৫টি আয়াত এবং ৩টি করে হাদীস মুখস্ত করতে হবে, বাচাইকৃ্ত ৬টি বইয়ের নোট করতে হবে। তার পরে তাকে ঐ দায়ীত্বশীল স্থানীয় দায়ীত্বশীলের সাথে যুগাযোগ (contact) করানোর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান পুরপোরি পরিষ্কার কিনা এটা যাচাই বাছাই করে তাকে একটি শপথ করাবেন। শপথটি নিম্নে তুলে ধরছি…
১ম পর্যায়ের (সাথী) শপথ
আমি…………………… আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সাক্ষী করে ওয়াদা করছি যে-
১ আমি বাংলাদেশ ইসলামী ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদর্শ লক্ষ্য, কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির সাথে সম্পূর্ণরুপে একমত। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে আমি সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগীতা করবো।
২ আমি ইসলামের মৌ্লিক বিধি-বিধান সমূহ যথাযতভাবে পালন করব এবং
৩ আমার উপর অর্পিত আমানাত যথাযতভাবে রক্ষা করব।
আল্লাহ আমাকে এ ওয়াদা পালন করার তাওফিক দিন- আমীন।
এ ওয়াদা করার পর থেকে ঐ কর্মী শপথের কর্মী (সাথী) হন।
এই সাথীরাই হচ্ছেন ময়দানে কাজ করার ক্ষেত্রে শিবিরের মূল জনশক্তি।
১ম পর্যায়ের শপথের কর্মী (সাথী)-চুড়ান্ত শপথের কর্মী (সদস্য)
উক্ত সাথী যদি তার উপর অর্পিত সকল দায়ীত্ব যথাযতভাবে পালন করেন, ইসলামের সকল নিয়ম কানুন সম্পূর্ণরুপে মেনে চলেন, জীবনের সকল কাজ ইসলামী আইন অনুযায়ী করেন অর্থাৎ এক কথায় ‘দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্য’ কথাটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেন তাহলে দায়ীত্বশীল তাকে সদস্য করানোর জন্য বাচাই করবেন।
অতঃপর তিনি সদস্য হতে হলে উনাকে একাধারে ছয় মাস নামাজ ক্বাজা বন্ধ রাখতে হবে অর্থাৎ তিনি প্রতিদিন সময়ের ভিতরেই ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে, এমন যদি হয় যে, চার মাস নামাজ ক্বাজা হয়নি কিন্তু ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বে ক্বাজা হয়ে গেছে তাহলে উনাকে পূনরায় নতুন করে ছয় মাস হিসেব করতে হবে। পূর্বের ন্যয় আরো কিছু নির্ধারিত বই নোট করতে হবে, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদীস মুখস্ত করতে হবে।
তার পর উনাকে যুগাযোগের (contact) মাধ্যমে উনার সকল কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করে যথাযত হলে উনাকে চুড়ান্ত শপথ করানো হয়। নিম্নে চুড়ান্ত শপথবাক্য তুলে ধরলামঃ
চুড়ান্ত (সদস্য) শপথ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মোহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল।
আমি………………বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সাক্ষী করে ওয়াদা করছি যে,
১ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশিত আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী জীবন গঠন করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করাই হবে আমার জীবনের মূল লক্ষ্য এবং লক্ষ্যে পৌছার জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার সংকল্প নিয়ে নিছক আল্লাহর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হচ্ছি।
২ আমি শিবিরের কর্মনীতি ও কর্মসূচী পুরোপুরি সমর্থন করি।
৩ আমি শিবিরের সংবিধান অনুযায়ী শিবিরের নিয়ম-কানুন পালন করবো। আমি আরো ওয়াদা করছি যে, আমার সাধ্য অনুযায়ী-
৪ আমি সমস্ত ব্যপারে নিজের দৃষ্টিভিঙ্গি, চিন্তাধারা এবং কার্যক্রমকে কোরআন-সুন্নাহর ছাঁচে ঢেলে গঠন করার চেষ্টা করবো এবং নিজের জীবনের উদ্দেশ্য, পছন্দ-অপছন্দের মাপকাঠি ও আনুগত্যের কেন্দ্র পরিবর্তন করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ লাভের অনুকূলে গড়ে তুলার চেষ্টা করবো।
৫ আমি জ্ঞান অর্জন করতে এবং শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিকাশ সাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
৬ আমি ছাত্রদের নিকট শিবিরের আহবান পৌঁছাতে এবং যারা তা গ্রহন করে তাদেরকে শিবিরের পতাকা তলে সংঘবদ্ধ করতে চেষ্টা করবো।
৭ আমি আমার উপর অর্পিত আমানাত যথাযথভাবে রক্ষা করবো। নিশ্চই আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য যিনি সারা বিশ্বের প্রতিপালক।
আল্লাহ আমাকে এ ওয়াদা পালন করার তাওফিক দান করুন- আমীন।
এর পর থেকে তিনি চুড়ান্ত শপথের কর্মী অর্থাৎ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বোচ্চ পর্যায় ‘সদস্য’
এই সদস্যরাই হচ্ছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের মূল দায়ীত্বশীল, এদের মধ্য থেকেই কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন, এদের মধ্য থেকেই সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন থানা, মহানগর পরিচালনা করেন।
ইসলামী ছাত্রশিবির হচ্ছে এমন একটি বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে তার প্রত্যেকটি কর্মীকেই এভাবে ইসলামী শিক্ষাদানের মাধ্যমে একজন পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলে।
লেখকঃ মোহাম্মাদ আশরাফ উদ্দিন
বিষয়: বিবিধ
৩৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন