" ওরা আমায় বেধেছিলো ভালোবাসা প্রীতিতে "

লিখেছেন লিখেছেন দুর দিগন্তে ০৩ মার্চ, ২০১৬, ০৫:২৩:৫৬ বিকাল

স্মৃতিকথা - ৭

-------------------------------------

( প্রথম অংশ )

-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা শেষ হয়েছে । ফলাফল একে একে বের হচ্ছে । তখনো বেশ কিছু বিভাগ বাকি । কলা অনুষদের তিনটিতে মেধা তালিকায় ও সামাজিক বিজ্ঞান, জিব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে একটি করে অপেক্ষমান তালিকায় নিজের নাম এসেছে । সেই সংবাদটি জানাতে সংগঠনের অফিসে গেলাম । বিনোদপুর মহানন্দা শিক্ষানিবাসে তখন রা:বি, সভাপতির কার্যালয় l

পর্দা সরিয়ে সালাম দিয়ে, বাহির থেকেই উকি দিলাম l ছোট্ট রুমটায় পাঁচছয় জন দায়িত্বশীল বসা । মুহতারাম দায়িত্বশীল পরম স্নেহে আমাকে তার পাশে বসালেন । ততকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভাই, এমন একজন মানুষ । যার ভিতরে আমি খুজে পেতাম, শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের প্রতিকৃতি । বিনয় নম্রতায় সার্বক্ষনিক হাস্যোজ্জ্বল । আচার ব্যাবহারে সরল ও ঊদার । পোষাকে আষাকে খুবই সাদাসিদা । খাওয়া দাওয়াই নিরহংকার । বুদ্ধি বিবেচনায় তীক্ষ্ণ l দুরদৃষ্টি সম্পন্ন l চিন্তাশীলতায় বাস্তব মূখী । মেধা ও দক্ষতায় অপ্রতিরদ্ধ । খুলুসিয়াত সম্পন্ন একজন ভালো মানুষ l আমার চান্স হওয়া সংবাদটি জেনে প্রশ্ন করলেন- কোন হলে এ্যাটাস্ট ? মাদার বখশ বলতেই, একটু উচ্চকন্ঠেই বললেন- আলহামদুলিল্লাহ ।

নতুন সেশনে ভর্তি শুরু l মানেই- হলে জনশক্তি বৃদ্ধির মৌসূম । তাই আহলে সূফ্ফার মত, হল সভাপতিগন শাখা সভাপতিকে ঘিরে বসে থাকেন । বিকাল থেকে মধ্যরাত অবধী । এক হল সভাপতি বিদায় নেন, তো আরো দুই সভাপতির আগমন । দরবারে ভক্ত অনুরোক্তে থাকে সদা জীবন্ত ।

আমার যতদুর মনে পড়ে, তখন শেরই বাংলার জিবন্ত শহীদ খন্দকার ভাই l আমীর আলীর আব্দুল জলিল ভাই l সোহরাওয়ার্দীর সরদার এনামুল ভাই l ও মাদার বখশ সভাপতি ওয়ালীউর রহমান ভাই বসা । আব্দুল জাব্বার ভাই, ওয়ালীউর ভাইয়ের হাতে আমার হাতটি তুলে দিলেন l বললেন, দায়িত্বশীল দিলাম যত্ন নিয়েন । প্রিয় হলের প্রিয় সভাপতি, তার স্বভাব সূলভ হাসি দিয়ে প্রাথমিক খোজ খবর নিলেন । যেহেতু তখনো আমার উপর একটি সাথী শাখার দায়িত্ব আছে । ষান্মাসিক রিপোর্ট করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে, দ্রুত হলে আসতে বললেন । এলাকায় ফিরে তত্কালীন জেলা সভাপতি গোলাম কবির ভাইয়ের অনুমদোন নিয়ে অর্পিত যাবতীয় দায়িত্ব হস্তান্তর করে ব্যাগবস্তা সহ জুলাইয়ের ১৫ তারিখ হলে উঠলাম ।

সভাপতি দ্বিতীয় ব্লকের নিচতলায় ১৪৯ নাম্বার রুমে নিয়ে গেলেন । পরিচয় করিয়ে দিলেন হল সেক্রেটারী ইবাদাত ভাইয়ের সাথে । সৌজন্য সাক্ষাত হলেও উনার পরীক্ষা চলায় তেমন কথা হলো না । ফিরলাম আবার ২২১' সভাপতির রুমে । ওয়ালীউর রহমান ভাইয়ের বাইরে প্রোগ্রাম থাকায় ফিরতে দেরি হবে বলে বের হলেন ।

কোন রুমে আমার ঠাঁয় হবে । কারা রুমমেট হবে । তারা কিভাবে গ্রহন করবে । একাকীরুমে সাতপাচ ভাবছি । হল মসজিদের মাগরিব আযানের সুর কানে আসল । ঊঠে দাঁড়াতেই ২২৩ এর এক বড় ভাই হাজির হলেন । মসজিদে যেতে যেতে পরিচয় হলো । আনোয়ার ভাই, দর্শনে মাষ্টার্স পরীক্ষার্থী । চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা সমিতির বিশাল নেতা । তিনি যে বিশাল হৃদয়ের মানুষ, তা তার স্নেহমাখা অল্প আলাপে টের পেলাম l হৃদয়ে অনুভূত হলো কোনো এক আপনজনের মায়াবী স্পর্শ l

ফিরে এসে রুমে অপেক্ষার ঘন্টা খানেক বাদে, সেক্রেটারী ভাই আরো দুজন নবাগতকে ২২১ এ রেখে গেলেন । অপেক্ষার প্রহরে আর দুজন সাথী পেয়ে একাকীত্ব কাটলো । পারস্পারিক কুশলাদীতে জানা গেলো । একজন কে.এম.শরিফুল হক । কুমার খালী কুস্টিয়া । লোকপ্রশাসনে ভর্তি হয়েছে । অন্যজন জিয়াউর রাহমান । কেশবপুর যশোর । গনিতে ভর্তি হয়েছে । টুকটাক পারস্পারিক কথাবার্তায় বুঝলাম তারা উভয়েই সংগঠনের বিষয়ে পূর্বধারনা কম । ফলে তাদের চোখ মুখ শুকনো l তাদের ভাবনা হলের নতুন পরিবেশ নিয়ে । আমার চিন্তা হলের সংগঠনে নিজের ভবিশ্যত কর্মততপরতা নিয়ে । চিন্তার জগতে পরস্পরের অসহায় চাহনি, চোরা চোখে উপভোগ করছি । এমন মুহুর্তে ইবাদাত ভাই কয়েকজন বড় ভাই মিলে আমাদের সাথে নিয়ে হল ডাইনিং এ রাতের খাবার পর্ব শেষে সভাপিতির রুমে রেখে গেলেন ।

রাত ১১টা । হল সভাপতি দিনের সাংগঠনিক ব্যাস্ততা সেরে রুমে ফিরলেন । খোজ খবর নিলেন । তিন জনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, বেতাগী বরিশালের আসলাম খানের সাথে । একাউন্টিং তৃতীয় বর্ষের পড়েন । খুব বিনয়ী l সুমিষ্টভাষী l উচালম্বা ভাইটি আমাদের নিয়ে গেলেন ফাস্ট ব্লকের ১০৩ নাম্বার রুমে । সব কিছু বুঝিয়ে থাকার পরিবেশ করে দিলেন । চার সিট বিশিষ্ট বিশালাকৃতির রুমটিতে ২টি সিট সংঠনের । বাকী দুই সিটে দুজন সাধারন ছাত্র থাকেন l রুমের দক্ষিনপশ্চীম মুখি খালি সিট টায় আমাকে ও জিয়াউর রাহমান ভাইকে বিছানা বিছাতে বললেন । কে এম শরিফুল ভাইকে তার বেডে ডাব্লিং করতে বললেন ।

একদিকে জীবনের এক নতুন গন্তব্য l বন্ধুর পথ l সূদীর্ঘ সফর শুরু । অন্যদিকে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মাথা গুঁজার ঠাই l আল্লাহর প্রসংসা আর নব উচ্ছাস এ মাথা নুয়ে এলো । ক্যাম্পাস নামক উত্তাল সাগরের গর্জন l হল নামক দুর্বিসহ কিস্তির উথালপাথাল উম্মাদনা l যেখানে সুদক্ষ, সুশৃংখল ও প্রতিশ্রুতিশীল হাজারও মাঝি মাল্লা লক্ষপানে অবিচল l সেখানে নিজেকে অতিক্ষুদ্র একজন নবীণ সারেং কল্পনা করতে করতে কখন যে বেডে মাথা এলিয়ে দিয়েছি মনে নেই । ফজর ওয়াক্তের প্রথম প্রহর l ভিন্নভিন্ন কন্ঠে অস্পষ্ট অওয়াজের তীব্রতায় ঘুম ভাংলো । অজানা ভয়ে খানিকটা হতচকিত হলাম । হলে যখন তখন মারপিঠ । অস্ত্র আর গলাবাজির মহড়া । জান নিয়ে দিকবিদিক ছুটাছুটির একটা ঐতিহ্য জানতাম । তাই গলা শুকিয়ে এলো l ঢোল পিটানো হার্টবিট কিছুটা নিয়ন্ত্রনে রেখে, ভালো করে কান পাতলাম । বুঝলাম জনা দশেক দ্বীনি ভাই সমোস্বরে সালাত সালাত বলে নামাজের দাওয়াত দিচ্ছে । হলময় তারই প্রতিদ্ধনী প্রকম্পিত হচ্ছে । হুড়মুড় করে উঠে জামাতে শামীল হলাম ।

-

সকাল ১০ টা l একে একে যে যার মত ক্যাম্পাসের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে যাচ্ছে l শুধু আমিই একাকী হলে l সারাদিন দরজা বন্ধ রুমে খোলা জানালার ধারে l সবুজ প্রকৃতির ফাক দিয়ে আকাশের বিশাল মহাশুন্যতায়, লীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ।

-

চলবে..…

বিষয়: বিবিধ

১০৫১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

361349
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:১৮
আফরা লিখেছেন : বিডি ব্লগের কীর্তি দেখে আমি টাসকি খাইছি Day Dreaming Day Dreaming

যাগগে বিডি ব্লগ টোমাকে অনেক ধন্যবাদ তোমার টনকে যে নাড়া দিতে পেরেছে তাকে ও ।

অনেক ভাল লাগার একটা লিখা ধন্যবাদ ।
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:২৮
299428
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আপনি যেমন খেলেন আমিও ঠিক তাই খেলাম!
361350
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:২৩
শেখের পোলা লিখেছেন : চলতে থাকুক৷ ভাল লাগল৷
361352
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:৩২
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : স্টিকি পোস্ট যখন আবার শুরু হল, তখন এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এটাই প্রত্যাশা করছি.
আপ্নার স্মৃতিচারণ ভালো লেগেছে তবে বানানে সতর্ক হবেন
361358
০৫ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৭:২৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File