" বদলে গেছি আমরা ও আমাদের চারপাশ "
লিখেছেন লিখেছেন দুর দিগন্তে ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:০৮:২৬ সন্ধ্যা
_
১৯৯৮ সালের মে মাস । ছেড়ে আসি শীতল ছায়ায় ঘেরা, মায়ায় জড়ানো আমার প্রিয় গ্রাম । সে থেকে বাইরে আজও । শুধু কি এলাকা ছাড়া ? দেশ ছাড়াও প্রায় এক যূগ । য্খন আমি ইন্টারমিডিয়েট শেষ করি । তখন যে ছেলেটির বয়োষ চার কি পাঁচ । আজ সে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করেছে l পাঁ দিয়েছে কর্ম জীবনে । দৃঢ় প্রত্যয়ী উদ্যমী এক তরুন । আমার গ্রাম সহ দুপাঁচ গ্রামের সে সময়ের বিচ্ছুবাহীনিকে যেমন আমি চিনতাম না । আমাকেও তাদের চেনার কথা নয় । এবং ততপরবর্তীতে জন্ম ও বেড়ে উঠা আমার এলাকা তথা, পৌরসভার অধিকাংশ প্রতিবেশি, সুহৃদ, স্বজন, ভাই, ভাতিজা, আপনজনদের কাছে থেকে গেছি তাই অনেকটা অচেনা ।
-
সংক্ষেপে বললে, এ আমলের ডিজিটাল প্রজন্ম টা কে আমি চিনিই না । ফলে, যে সমস্যাটা ইদানিং তৈরী হচ্ছে, তা হলো ? এলাকার যে সকল আত্নীয় স্বজনরা আজ ভার্চুয়াল জগতের কন্টিনিউড এ্যাক্টিভিস্ট । তাদের মধ্যে কে যে কখন ? ভাইবার, ইমো, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপি, ফেসবুক, চ্যাটন, টুইটার, হোয়াটসআপ সহ বিভিন্ন ব্লগ, অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নক করে বসছে, তা বুঝে উঠা মুসকীল । কেঊ ভাই তো, কেউ হাই । কেউ কাকু,তো কেউ মামু l প্রতিনিয়ত তাই ইনবক্সে কমেন্টে কিংবা চ্যাটস্ক্রীনে পড়ছে আনরিড টেকস্ট জ্যাম । রিপ্লেই দেয়ার য্থাসাধ্য চেষ্টা থাকলেও, ব্যর্থতার পাল্লায় ভারি হচ্ছে । পড়ছি কখনো বিড়ম্বনায় । হতে হচ্ছে কখনো উভয়কে বিব্রত । কেউ আবার দ্রুত এ্যান্সার না পেয়ে, ভূল বুঝে বিরুপ মন্তব্য করার প্রয়াস পাচ্ছে ।
-
প্রবাস জীবনে সময়ের একটা দুর্ভিক্ষ্য, সব সময় সাথে নিয়ে চলতে হয় । তবু আপ্রান চেষ্টা থাকে সে দুর্বলতা চেপে রাখার । দুএক মিনিট হলেও চ্যাট, ভয়েসচ্যাট কিংবা সেলফোনে রিং দিয়ে সংযোগ রক্ষা করি । কিন্ত সব থেকে বড় অসহায় বোধ করি, যখন বুঝতে বা চিনতে ব্যর্থ হই । কি সম্বধন আর কোন ধরনের অনুভুতি দিয়ে তার ইনবক্সের রিপ্লেই দিলে কুল রক্ষা হবে । সামাজিক সুসম্পর্কের ভিত্তি হবে উত্তরত্তর শক্তিশালী l ফিরে পাবে আস্থা আর অগাধ বিশ্বাষ । গড়ে উঠবে অনাগত উত্তরসূরীদের সাথে সেতু বন্ধন l আরো প্রসস্থ হবে শ্রদ্ধা ও স্নেহ আদান প্রদানের পথ l
-
আমি যখনএকটু পেছনের দিকে ফিরি । চোখে ভাসে আমাদের ছেলে বেলা । কৈশরের সেই লাজুক লাজুক দৃষ্টি । কলেজে পা দেওয়া অবধী লুঙ্গি গেঞ্জী পড়া l লুঙ্গি সার্ট পড়ার ধুম । স্কুল হাট বাজার খেলার মাঠ বন্ধুদের সাথে সান্ধ্য আড্ডা । এ সব কিছুতেই লুঙ্গি/গামছা/সেন্ডগেঞ্জির ভুমিকা ছিলো ব্যাপক । দুই ঈদের বাইরে ফ্যাশনাবল পোষাক এ কেউ বের হলেই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হত । কোথায় যাবা ? বেড়াতে নাকি দাওয়াতে ? অর্থাত উপলক্ষ ছাড়া ভাল কাপড় সাজ গোজ যেনো নীতিবিরুধী ব্যাপার ছিলো । তখনকার দিনে আজকের মত সুটেড বুটেড মানজা সোজা ফিটফাট ছেলে পাওয়া ভার । খুব সাদামাঠা ও সাদা মন নিয়ে চলাফেরা করত কিশোর তরুণেরা । ফলে এলাকার মুরুব্বী ও বড়রা খুব সহজে পোষাক-আষাক ভাব-ভঙ্গি নম্রতা-ভব্যতা চেহারা-সুরত গায়ের রং ও শরীরের গঠন দেখে অনায়াসে বলে দিতে পারতেন । কে কোন পাড়ার । কার ছেলে,ভাতিজা বা নাতী ।
-
কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞানের উত্কর্ষতা ও ভার্চুয়াল উন্নতি বদলে দিয়েছে আমাদের সমাজ সভ্যতা ও পরিবেশ । বদলে গেছি আমরা ও আমাদের চার পাশ । ডিজিটালের ছোয়ায় যেনো মাত্র একযূগ আগের বাস্তবতাকে রাতারাতি এক রুপকথার গল্পে পৌছে দিয়েছে । তাই আজকের কৈশর ও তারুন্য হয়ে উঠছে অনেক কিছুতেই যেমন সচেতন l তেমন ওভার স্মার্ট । পোষাকে আষাকে শরীর কিংবা রুপচর্চায় যথেষ্ট পরিপাটি । তারই প্রভাবে আর চোখে পড়ে না রাস্তা ঘাটে ঘাড়ে গামছা, সেন্ড গেঞ্জিতে, খালি পায়ে, খালি গায়ে ঘুরাঘুরি বা আড্ডায় । উঠনে বা স্কুল মাঠে কাদাপানিতে ফুটবলে মেতে ঊঠা ।
-
বস্তুতঃ এ প্রজন্মের যে কাউকে বাড়ির চার দেওয়ালের বাইরে দেখলেই স্লীমফিট l পরিপাটি l বাহারী পরিসরে । ফলে আগের মত বুঝার কোন উপায় আর থাকছে না । কে কোন পাড়ার, কোন পরিবারের সন্তান । যার কারনে আমার মত যারা দেড় যূগ নিজ গ্রামের বাইরে ? তাদের পক্ষে আপন ভাই ভাতিজাকে চেনায় যেখানে অস্টমাশ্চার্য্য । সেখানে দুপাঁচ গ্রামের পাড়া প্রতিবেশী ভাই ব্রাদারদের চিনতে গুগল সার্চে বাটি চালান দিয়েও ফলাফল শুন্য ।
-
প্রিয় জনপদের হে আত্নার আত্নীয়রা ! আমার আজকের উপাখ্যান বর্ননা ? নেতিবাচক কোন বিষয়ে ইঙ্গিত করা উদ্যেশ্য নয় । বরং ইতিবাচক ভাবে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ পূর্বক ক্ষমা সুন্দর দৃস্টি প্রার্থ্যনা করা l এবং সমস্যা সমাধানের পথ সুগম করায় লক্ষ্য । আজকের এ লিখার ভিতর দিয়ে আমার প্রিয় শিবগঞ্জবাসী তথা পৌরসভার এ প্রজন্মের স্নেহাসপদ প্রিয়জনদের একটি দৃষ্টি আকর্ষনই করতে চাই । যে সমস্ত সুহৃদ, ডিজিটাল অনলাইন বা টেলিকমিউনিকেশনে সময় মত, প্রত্যাশিত জবাব, যথেষ্ট সমাদর, মাধুর্যপূর্ণ ভালবাসা, দায়িত্বশীলতা, মমত্ববোধ, উদার ও মর্মস্পর্শী আচরন থেকে হয়েছ বঞ্চিত । তার শিংহভাগ দায়ী পারস্পারিক পরিচয়ের সল্পতা । তার জন্য দুখ্য প্রকাশ পূর্বক ক্ষমাপ্রার্থী l আমি একটু অবসর পেলেই আনরিড ইনবক্স গুলো পড়ি l সংশ্লিষ্ট অনুজদের প্রফাইল ছবি ইনফো ঘেটে আপ্রান চেষ্টা করি, কোন পাড়ার- কোনো আত্নীয়ের- কোনো ঘরানার- সাথে কোনো মিল পায় কি না । কিন্তু সুদীর্ঘ সময় এলাকা ছাড়া আমার দুটি চোখ ফিরে আসে ব্যার্থতাকে সাথে নিয়ে ।
-
তাই অনাগত প্রিয়জনদের নিকট আমার বিনীত প্রত্যাশা থাকবে-
নিজের পরিচয় দিয়ে ইনবক্স বা এসএমএস করা । ফিরতি জবাবের জন্য অপেক্ষা করা । খুব জরুরী প্রয়োজনে মোবাইল নম্বর দিয়ে রিং ব্যাক রিকুয়েস্ট করা । সর্বপরি প্রবাসী ভাই ব্রাদারদের অপারগতা, ব্যাস্ততাকে সহজ ভাবে নেয়া l সকল ভূল বুঝাবুঝির অবসান হোক । সুসম্পর্কের দিগন্তে উদীত হোক পবিত্র ভালবাসার দীপ্তিময় আভা । সে প্রত্যয় ও প্রত্যাশার দুয়ারে দাঁড়িয়ে কবি সুফিয়া কামালের সুরে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হয় --
-
" আমরা যখন আকাশের কোলে উড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন স্মার্টফোন চালাও বিশ্ব হাতের তুড়ি "
-
মোশাররফ. ২৪.১২.১৫
বিষয়: বিবিধ
১২৪০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ একমত হওয়ার জন্য । ভাল থাকুন সব সময়
[
০০ লেখাগুলোকে খুব সহজ ও প্রান্জল ভাষাতেই ফুটিয়ে তুলেছেন
********************************************************
০ ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল , সে সময়ে এলাকা ছাড়া মানে আপনি হয় বিএনপির না হয় জামায়াতের ।
আর প্রায় এক যুগ আগে যদি দেশ ছাড়া হয়ে থাকেন তাহলে সেটা হবে ২০০৩/২০০৪ এ । সে সময়ে আবার বিএনপি-জামায়াতই পাওয়ারে ছিল । তাহলে আপনি লীগের । কারণ এলাকা ছাড়া হয় ক্ষমতায় না থাকা দলের লোকেরা।
আসলে আপনি কোন দলেরই নন । নিজের জন্য পরিবারের জন্য দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশে গেছেন । সেটাকে ভাব দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে এত কাহিনীর আয়োজন - অমুকে ফোন করে ধরি না , রিক্যুয়েস্ট পাঠায় ব্যস্ততা কারণে দেখা হয় না , উত্তর দেওয়া হয় না !!
ব্যস্ততা সবারই আছে । তবে বোঝাই যাচ্ছে যে আপনি খুবই পপুলার ও পরোপকারী লোক কারণ , লোকজন তো এমনি এমনিই আপনাকে জ্বালাতন করে না !
তা আপনি কি করেন ভাই যে এত ব্যস্ত ?
ছাড়া বা ছেড়ে আসা মানে যদি …
বিএনপি আমলীগের ভয়ে পালানো হয়…
তাহলে …ট্রেনটি ছেড়ে আসলো … এর অনুবাদ কি হপে ?
,দেশে চাকরী হয় নি, তাই বিদেশে আশা এযদি হয় বিশ্বব্যাপি ছরিয়ে থাকা প্রবাসীদের উপর আপনার ধারনা তাইলে .… আপনার জ্ঞানের দোউড়ের কাছে আমি এক অসহায় ।
পুরা লিখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
আর আপনাদের মত অনেক প্রবাসীই আছে (বিশেষ করে যারা পশ্চিমাদেশে যায়) যারা বিদেশে যে গিয়েছে সেটা নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বেশ ফুটানী মারে । খুব দেশপ্রেমের কথা বলে ।
যখন বলি যে , এতই যখন দেশের জন্য দরদ তখন চলে আসছেন না কেন ?
ব্যস্ অমনিই উনাদের IBS শুরু হয়ে যায়
মন্তব্য করতে লগইন করুন