"রাজশাহীর মাটিতে আমার প্রথম তাকবীর"
লিখেছেন লিখেছেন দুর দিগন্তে ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৮:৫২ রাত
রাতের শেষ প্রহরে । ঘুমের ডানায় মাঝে সাঝেই স্বপ্ন ভর করে । মনের জানালায় ভেসে উঠে নাটকীয় নানান দৃশ্য ।তবে অবাক হই,যখন হাজারো অস্পষ্টতার মাঝে, কিছু কিছু স্বপ্ন দেখি বেশ স্পষ্ট । যেমন দেখেছি সেদিন তোমাকে । দেখেছি সেই চিরচেনা যাদুমাখা হাসিটা । একযূগ পর তোমায় দেখে,আমি পাগলের মত দৌড়ে গেলাম । নাহ কথা বললে না । আমাকে দেখেই কেটে পড়লে দ্রুত। হারিয়ে গেলে স্বপ্নের ভীড় ঠেলে অজানায় । ঘুমের ভেলা নোঙ্গর করলো তখনি । কিন্ত স্বপ্নের মানে খুজে পেলাম না । উদ্ভ্রান্ত মন উড়াল দিলো রেখে আসা দিনগুলোর বাঁকে বাঁকে ।
বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন কোচিং "কনটেস্ট"এ ভর্তি হয়ে বিনোদপুরে একটি মেসে উঠেছি । সেদিন মাগরীব নামাজের পর একাডেমিক কর্ণারের সামনে তোমার সাথে প্রথম দেখা । শুধু সালাম বিনিময়ে হলো পরিচয় । তারপর মাঝেমাঝে দেখা হতো । ততদিনে বুঝেছি তুমি আমাকে কর্মী টার্গেট নিয়েছ । তাই সংগঠনের প্রকাশনা আর এটা ওটা খাওয়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু করলে । আমি তখন অলরেডি সদস্যপ্রার্থী । ততকালীন রাবি' সাভাপতি আব্দুল জব্বার ভাইয়ের নিষেধাজ্ঞা ছিলো আমার প্রতি, পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে । তাই তোমার কাছে সাংগঠনিকমান গোপন করেছি । কিছুটা মজা পাচ্ছিলাম আমার পেছনে তোমার পরিশ্রম দেখে । পুলোকিত হচ্ছিলাম একজন সদস্যপ্রার্থীকে, কর্মী বানানোর নয়া টার্গেট আর নিখুত
কৌশল দেখে । সতর্কতা আর যত্নের পদ্ধতি দেখে ।
ইতিমধ্যেই তোমার উদারতা, বিনয়-নম্রতা স্নেহ-মায়ার একাগ্রতা, দায়িত্বশীল ভালোবাসা, সর্বোপরি পাহাড়সম সরলতা দেখে আমি বিমূগ্ধ হয়েছি । বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য দায়িত্বশীলদের প্রতি সম্মান আমার পুরোনো । কিন্ত শতগুণ বেড়ে গেলো তোমার বিনম্র ব্যবহারে । চার/পাঁচ মাস কিছুটা প্রতারনা (পরিচয় গোপন) করে সকাল/সন্ধা গিফট আর আপ্যায়ন ভালই গ্রহন করেছি । এরপর যখন তুমি আমার পিছলামিতে কিছুটা টের পাচ্ছিলে যে, ডালমে কুচ কালাহায় ? ঠিক এমন একদিন, চট্রগ্রামে দুই ভাইয়ের শাহাদাতের ঘটনা ঘটলো । রাজশাহী ও বেশ উত্তপ্ত । বিকালে সাহেব বাজারে বিক্ষোভ মিছিল । আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি শহিদী মিছিলে যাবই । সে মিছিলে তুমি আমাকে দাওয়াত দিলে । সাথে নিয়ে এলে বিনোদপুরের ততকালিন সভাপতি নাজমুস সাদাত ওবায়েদ ভাইকে । আমি চালাকি করে বলেছি, ভেবে দেখবো । বিকালে আমি প্রস্তুত ছিলাম । তুমি ওবায়েদ ভাই আবার আমাকে নিতে এলে । আমি মন বেজার করে বল্লাম, আপনারা এসেছেন কেমনে না করি ? তুমি বললে, ঠিক আছে থাক তাহলে আমরা যায় । আমি বল্লাম আচ্ছা চলেন । তুমি খুবই খুশি হলে । ভাবলে এতোদিনের পরিশ্রম সফল । সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে মিছিল শুরু হলো । আমার ডান হাত তুমি ধরেছিলে । বাম হাত ওবায়েদ ভাই । কিছুদুর এগিয়েই আমি আমার হাত দুটি তোমাদের থেকে ছাড়িয়ে নিলাম । আমার মুষ্ঠিবদ্ধ ডান হাত আকাশের দিকে উঁচু করে, সারা শরীরের শক্তি কন্ঠে এনে, শ্লোগান ধরেছি । রাজশাহীর মাটিতে সেটায় আমার প্রথম লিল্লাহি তাকবীর । তুমি আর ওবায়েদ ভাই ভেপাঁচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলে । তখন তোমরা নিশ্চিত হলে আমি কিছু একটা গোপন করেছি ।
ঈশা ওয়াক্ত শেষে আমি তখন পড়ার টেবিলে । তুমি আমার রুমে এসে কন্টাক্টের জন্য সময় নিলে । অনেকটা বাধ্য হয়ে বলতে হলো আমার সাংগঠনিক মান । তুমি আমায় জড়িয়ে নিয়ে কিযে আনন্দ প্রকাশ করলে । খুশিতে তোমার চোখে অশ্রু গরিয়ে পড়লো । অবশ্য অল্পতেই তোমার চোখদুটি অশ্রু বিয়োগ করতে পারে । ক্যাম্পাস জীবনে তা নিয়ে আমরা অনেক সময় মজাও করেছি । দাওয়াতে গিয়ে কখনো বা দায়িত্বশীল বৈঠকে সে জন্য তোমাকে মাসুল দিতে হতো । সে থেকে সাতটি বছর ক্যাম্পাসে একসাথে পথচলা । মহানন্দায় দুবছর একি রুমে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে । আনন্দ বেদনার সমন্বিত এক ঐতিহাসিক দিন ছিলো । সে যে এক স্বর্গীয় বন্ধন আবদ্ধ জীবন । সেটা এ আন্দোলনের সব সৈনিকরাই আজীবন টের পায় । হৃদয়ের অস্তিত্ব জুড়ে স্ফুলিঙ্গ তরঙ্গায়িত হতে থাকে । নোমানী, শাহাদাত, রান্টুদের নিস্তেজ দেহের শেষ উচ্চারন তাই, ক্ষণেক্ষণে রক্তপেশিতে শিহরণ জাগায় । কিন্ত বাস্তবতার চিরন্তন দায়বদ্ধতায়, দীর্ঘদিন তোমাদের অনেকের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে ব্যার্থ হয়েছি । জানি না সেই অভিমানেই কি তুমি স্বপ্নে এসেও, দেখা দিলে না ? নীরব আত্নার সম্পর্কের সাথে দৃশ্যমান সম্পরকের মেলবন্ধন না ঘটলে ? সে সম্পর্ক জান্নাতের দুয়ার পর্যন্ত গড়াবে না, সে বার্তায় কি ঝরে পড়লো তোমার স্বাপ্নিক অভিমানে । প্রিয় জিহাদী ভাই, আই রিয়েলি স্যরি । মিস্ ইউ টু-মাচ্ ব্রাদার ।
১৭\১২\১৪
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন