টুকিটাকি ইদানিং ....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ০৩ জুলাই, ২০১৫, ০৬:৩৩:৫৯ সকাল
সদ্য কেনা বাড়িটি যখন প্রথম দেখতে এসেছিলাম , তখন বাড়িটির অপর্যাপ্ত লাইটিং সিস্টেম আর হালকা সবুজাভ রঙের দেয়ালে হলুদ ক্ষীণ আলোর কিছু বাল্বের প্রতিফলন আমার মনটাকে বিমর্ষ করে তুলেছিল। এছাড়া আরো টুকিটাকি কিছু অব্যবস্থাপনা তো ছিলোই। আমরা তখন নিজেরাই বাড়িটি যথাসম্ভব নিজেদের মনের মত করে গুছিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইলেকট্রিসিয়ান , কার্পেন্টার , প্লাম্বার ... সবাই একই সঙ্গে কাজ শুরু করে দিল .... সে এক মহাযজ্ঞ !
যে ইলেকট্রিসিয়ান আমাদের কাজটির দায়িত্ব পেল , সে অস্ট্রেলিয়ান , নাম নেইল ... আমি ডাকতাম নীল বলে। ২৫/২৬ বছরের চুপচাপ ধরনের একটি ছেলে। সারাদিন নিজের মত করে কাজ করে যেত। ইফতারির আগে আমি অল্প কিছু ইফতারি বানাতে পারতাম নিজেদের জন্য। আমার কর্তা সেই অল্প ইফতারির খানিকটা নীলকেও খাইয়ে আনন্দ পেতেন। আমাদের ঝাল খাবার ও বেশি না খেলেও সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছিল আমার বানানো চা। আমি খাঁটি দেশী কায়দায় চুলায় জ্বাল দিয়ে চা বানাই , কর্তা প্রথমদিন ওকে চা অফার করে বলেছিলেন , আমার স্ত্রী খুব ভালো চা বানাতে পারে , তুমি না খেলে মিস করবে। ও কৌতুহলী হয়ে খেয়ে খুবই মজা পেয়েছিল। এরপর যে কদিন কাজ করেছে , কখনো চা না খেয়ে বিদায় নেয়নি।
কথায় কথায় জেনেছি , ও এখানকার একটি ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে উচ্চতর পড়াশোনারও স্বপ্ন দেখে সে। পাঁচ ও তিন বছর বয়েসী দুটি ফুটফুটে সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার তাকে জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বাড়িটিতে রং করার দায়িত্ব পেয়েছে কয়েকটি ইরানি ছেলে। দামী স্পোর্টস কার চালিয়ে কাজে আসে। তাদের একজনের নাম মুর্তজা। মেলবোর্নে এখন প্রবল ঠান্ডার মৌসুম চলছে , ঘরে ঘরে সবাই ঠান্ডা সর্দি জ্বরে আক্রান্ত , আমার পুত্ররাও এ থেকে রেহাই পায়নি। আমার মেজ পুত্রকে কাশি কাবু করে ফেলল সহজেই। সারাদিন খক খক কাশি। একদিন কিচেনে কাজ করছি। মুর্তজা তখন ডাইনিং এরিয়া রং করায় ব্যস্ত। একটু পরে আমাকে বলল , ম্যাম ... আমার মনে হচ্ছে আপনার ছেলেটির কাশিটি আরো বেড়ে যাবার আগে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে। আমি একটু বিরক্তই হলাম। ওর দিকে তাকাতেই ও প্রবল বিব্রত হয়ে বলল , তুমি কিছু মনে করোনা , আমি একজন কোয়ালিফাইড নার্স। এবার আমারই অবাক হবার পালা !
ছোটবেলায় দেখেছি , ছেলে পেলেরা পড়াশোনার চেয়ে দুষ্টুমিতে মন দিতে চাইলে বাবা মায়েরা বলতেন , পড়াশোনা না করলে রংমিস্ত্রি , রাজমিস্ত্রী হয়ে কাজ করে খেতে হবে , গাড়ি বাড়ীর সুখ আর জীবনে পেয়ে দেখতে হবেনা। কিন্তু এসব দেশে চিত্র একেবারেই উল্টো। এধরনের কাজেই বরং পয়সা বেশি। সুপারমার্কেট গুলোতে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা কাজ করছে দুর্দান্ত গতিতে। এখন মনে হচ্ছে আমাদেরকেই ভাবতে হবে , এ যুগের ছেলে মেয়েদেরকে পড়াশোনায় মন বসাতে আমরা নতুন করে কি শোনাব ....
বিষয়: বিবিধ
১৫৮২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অথচ উন্নত দেশ গুলোতে উচ্চ শিক্ষিতরাই নিম্নমানের কাজকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করে। সেচ্ছায় অনেক সময় লেবারের কাজ করে।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই চেঞ্জ হওয়া দরকার।
কতদিন পরে যে দেখলাম আপনাকে ! ভালো ছিলেন তো ভাইয়া !
আমি তো নিয়মিত ব্লগে আছিই। কিন্তু আপনিসহ বেশ কয়েকজন পুরাতন এবং সিনিয়র ব্লগারকে দেখা যায় অনেকদিন থেকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন