কেবলি পিছু ডাক শুনি ....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ১০ জুন, ২০১৫, ০৭:২৬:৫৯ সন্ধ্যা
মানুষের জীবনে রূপান্তর ব্যাপারটি বড়ই অদ্ভুত। ছোট্ট এক জীবনে মানুষ কতবার যে নিজেকে ভেঙ্গে নতুন করে গড়ে , ভাবলে অবাকই হতে হয় ! একজন নারীর কথাই ধরি , ছোট্ট একফোঁটা শিশু হয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে তার। ধীরে ধীরে শৈশব পার হয়ে আসে কিশোরীকাল। দেহে মনে প্রকাশ ঘটে নতুন কুঁড়ির। তরুণীকাল সে কুঁড়ির ফুটে ওঠার শুরু। আর যৌবনে প্রস্ফুটিত একটি পূর্ণ সতেজ ফুলের জীবন নিয়ে সেই নারী প্রবেশ করে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে , নতুন অঙ্গনে একজন স্ত্রী হিসেবে। মনের জমিয়ে রাখা ভালোবাসাগুলো পায় পূর্ণতা। সময়ের নিয়মে সেই নারী হয় মমতাময়ী মা। একসময় জীবন সুর্য পশ্চিমমুখী হবার সাথে সাথে আবার ঘটে রূপান্তর। প্রথমে শাশুড়ি , এরপর নানী - দাদী হবার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে এই প্রক্রিয়ার ।
তাই বলছিলাম , আমরা চাই বা না চাই , পরিবর্তন আমাদের মনুষ্য জীবনে অপরিহার্য। ক'দিন ধরে আমার বর্তমান আবাসকে গোটাতে গোটাতে এই চিন্তা আমাকে ভালোভাবেই পেয়ে বসেছে। জীবনের নিয়মে , জীবনের প্রয়োজনেই এই স্থানান্তর। কয়েকটি বছর কাটিয়েছি এখানে। এই জায়গাটি ছবির মত সুন্দর। দূরে দূরে পাহাড় , কোথাও বা ঢালু উপত্যকা , বিস্তীর্ণ হ্রদ ... সব মিলিয়ে জায়গাটি আমার মত নির্জনতা প্রিয় মানুষের জন্য অত্যন্ত পছন্দের হয়ে উঠেছিল ক্রমে ক্রমে। মানুষের মধ্যে অকৃত্রিম হৃদ্যতা , চমত্কার বন্ধুবত্সল প্রতিবেশী আর বেশ কিছু বাংলাদেশী পরিবার নিয়ে বেশ হেসে খেলে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো !
কিন্তু ওই যে ! সময় কড়া নেড়ে যায় প্রতিনিয়ত ! আর সময়ের পথ ধরে আমাকেও হতে হবে ঠাই নাড়া। নিজের বাড়ীর আপন অঙ্গনে স্থানান্তরের আনন্দ নি:সন্দেহে অতুলনীয় হবারই কথা। কিন্তু যখন সময় এলো শেকড়টাকে টেনে তুলবার , তখন দেখি , অবহেলায় প্রথিত চারাগাছটির দুর্বল শেকড়টিই আমার অজান্তে কখন যেন তার মূলকে বিছিয়ে রেখেছে মাটির অতল গহীনে। জোর করে তুলতে গিয়ে হৃদয় কুঁকড়ে উঠছে অজানা ব্যথায়। এখানে বাচ্চারা অকপটে মিলে মিশে গিয়েছিল তাদের সহপাঠীদের সাথে। সেই কচি মুখগুলো আমার কাছে এসে বলে ,' চলেই যেতে হবে ? না গেলে হয়না ?' ছোট্ট ওই মুখ হাসিমুখে আদর করতে গিয়ে ভিজিয়েছি চোখ , উথালপাথাল ঢেউ ভেঙ্গেছে মনে। কবে যে এদেরকে , এই জায়গাকে এত ভালোবেসে ফেলেছি , চলে যাবার ক্ষণ না এলে হয়ত কখনও বোঝাই হতোনা ! আমার সবুজ বাগানটির চত্বরে পাতা দোলনায় বসে ধূমায়িত কফির মগ হাতে বৃষ্টি দেখা , পেছনের লনে ভরা পূর্নিমার রাতে শরীরে জোছনা মেখে হেঁটে বেড়ানো , গোলাপ কলির ওপর ঝরে পড়া বৃষ্টিকনার সৌন্দর্য এখানে আর দেখা যাবেনা। বাসার লাগোয়া চেরি ফুলের গাছে এই বসন্তে আবারও গোলাপী চেরি ফুলের বন্যা বয়ে যাবে , কিন্তু দুচোখ ভরে সেই সৌন্দর্য দেখার সেই আমি যে আর এখানে নেই , কে বলে দেবে তাকে ? আমার প্রিয় প্রকৃতিকে ?
ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস বাক্স বন্দী করছি , অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিচ্ছি অবলীলায় , আর ভাবছি , মনের যে অংশটি এত স্মৃতিকাতর , যে শুধু অদৃশ্য ডাকে কেবলি পেছন ফিরে চায় , তাকে যদি এভাবেই ফেলে দেয়া যেত বা নিদেনপক্ষে বদলে ফেলা যেত , তবে জীবনটাকে বার বার নতুন করে যাপন করা কতটা সহজ হয়ে যেত ! কিন্তু হায় , এখানেই তো মানুষের অপারগতা , সৃষ্টিগত সীমাবদ্ধতা। দুনিয়ার এ রূপান্তর তো ক্ষনিকের। যখন আসল জীবনের স্থায়ী ঠিকানায় যাবার ডাক এসে যাবে , তখন কেমন করে আমি পাড়ি দেব সে অজানা পথ একাকিত্ব আর নি:সঙ্গতাকে সঙ্গী করে ! অথচ আসল ঠিকানা তো সেটাই , আমি সেই ঠিকানায় যাবার আগে আমার প্রয়োজনীয় রসদ বাক্স বন্দী করে নিয়েছি তো !
আর এ কথা ভেবেই স্বান্ত্বনা দিচ্ছি নিজেকে , তৈরী হচ্ছি নতুন এক রুপান্তরের জন্য , কারণ ... সময় যে আর বেশি নেই !
বিষয়: বিবিধ
১৯৫৬ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শেষের দিকের কথাগুলো মন কে ভাবিয়ে তুলল।
সত্যিই কি সত্যিই অজানার পথ পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজনীয় রসদ বাক্সে বন্দি করেছি? অনেক শুকরিয়া এমন একটি লিখা উপহার দেওয়ার জন্য। জাযাকিল্লাহ খাইর
কথাগুলো ভাবিয়ে তুললো...
শান্ত পুকুরে ঢিল ছোড়ার পর যে ছন্দময় ঢেউ সাড়া জাগায় পুরো পুকুরজুড়ে আপনার লিখা প্রতিটি লাইন এভাবেই নাড়া দিয়ে গেলো আমাকে! রুপান্তরিত আমি, আমরা সবাই ছুটছি ! একসময় থেমে যাবে পথচলা!
ভাবনা জাগানিয়া লিখাটির জন্য শুকরিয়া আপু !
পড়ে কিন্তু চোর বলতে পারবেননা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন