সুখের সে ক্ষণ ....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ০৫ জুন, ২০১৫, ০৯:১১:৪৯ রাত
আমার ছোট্ট সোনা বাবাটা যখন পৃথিবীতে এলো , তখন জুনের প্রবল ঠান্ডা এখানে। সারাদিন কনকনে হিমেল বাতাস আর সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এমন মেঘলা আর শীতল আবহাওয়ার মাঝেও ওর আগমনে যেন বসন্তের মিষ্টি উষ্ণ বাতাস আর রোদ খেলে বেড়াতে লাগলো আমাদের পুরো পরিবার জুড়ে। ওর ছোট্ট হৃদয়ের উত্তাপ স্পর্শ করলো আমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি রক্তকনাকে !
আমার মেজ পুত্রটি তখন দেড় বছরের এক অতি দুরন্ত শিশু। বিশ্রামহীন ও কর্মমুখর এই শিশুটিকে সামলাতে গিয়ে ক্ষণে ক্ষণেই হাঁপিয়ে উঠতাম। শিশুটির পিতা তাঁর আসন্নপ্রসবা স্ত্রীকে প্রসবপরবর্তী নবজাতক সহ অন্যান্য সাংসারিক কর্মব্যস্ততা ও এই দুরন্ত শিশুটিকে সামলাবার ভবিষ্যত চিত্র কল্পনা করে হয়ত আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। তাই তাঁর কাতর অনুনয়ে সাড়া দিয়ে আম্মু এলেন আমার কাছে। দেশে ভরা ও জমজমাট এক সংসারের মধ্যমনি হয়েও আম্মু সবকিছুকে পেছনে ফেলে এসে আমার ও আমার পুরো সংসার সামলাবার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আমাকে বিশ্রামের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
জুন মাস এলেই বাবুটার জন্মকালীন মুহুর্তগুলোর কথা মনে পড়তে থাকে। স্মৃতির জানালা খুলে স্মরণীয় মুহুর্তগুলো যেন শ্বেত বলাকার সারির মত পাখা মেলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ইথারে ইথারে। সে দিনটির সকালটি ছিল কুয়াশার চাদরে মোড়া। আমি যখন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম , সেই মুহূর্তটি আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন। আম্মু নীল রঙের চমত্কার একটি শাড়ি পরেছিলেন।
আমাদের বাসার ড্রাইভওয়েটি ছিল অনেক বড় আর বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা। গাড়িটি যখন ড্রাইভওয়ে পার হয়ে রাস্তায় নামল , আমি ঘাড় ঘুরিয়ে এ জীবনে আমার দেখা সবচেয়ে স্মরণীয় কয়েকটি মুহুর্তের একটিকে দেখতে পেলাম। দেখলাম , সাদা কুয়াশায় মোড়া সবুজ বনানীর মাঝখানে শুন্য ড্রাইভওয়েতে দাঁড়িয়ে আছেন আকাশ নীল রঙ্গা শাড়ী পরা আমার আম্মু। অপরূপ এক নৈসর্গিক রহস্যময়তার মাঝখানে দুরুদুরু অন্তরে এক সমুদ্র মমতা ও ভালবাসা বুকে নিয়ে ভেজা চোখে আসমান সমান উচ্চতার দোয়া ও কল্যাণ কামনা নিয়ে প্রসব কাতর কন্যার গমন পথের দিকে নিশ্চল এক পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেন এক মা ..... আমার আম্মু !
অপার প্রতীক্ষা ও অপরিসীম কষ্টের মুহুর্তগুলোর অবসান হলো এক সময়। আমার ভুবনে পূর্ণতা এনে জন্ম হলো আমার বাবুর। আমার পুত্রদ্বয় তাদের আরো একটি পুতুল ভাইকে পেয়ে সে কী খুশি ! আমার সমস্ত কষ্ট তাদের হাসিখুশিমাখা আনন্দে ভরপুর মুহুর্তগুলোর আভায় নিমেষে ম্লান হয়ে গেল। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় পূর্ণ হলো আমার সংসার , আমার পৃথিবী , আমার অস্তিত্ব।
সেদিনের সেই ছোট্ট বাবুটি আজ প্লে স্কুলে যায়। তার স্কুলের রাশি রাশি খেলনা ও আনন্দমাখা ঘরটিতে তাকে রেখে আসার সময় সে আমাকে আদর জানিয়ে বিদায় দেয় আর বলে , ' আম্মু তুমি ভালো থেক , বাসায় বিশ্রাম নিও। ' প্রথমবার ছোট্ট মুখখানিতে এত্ত বড় কথাটি শুনে হেসেই কুটিকুটি হয়েছিলাম , কিন্তু অন্তর আর্দ্র হয়েছিল প্রবল এক সুখের বেদনায় , তার প্রভাবে হয়ত ভিজে উঠেছিল চোখ। সেই ভেজা চোখ নিয়েই মন নত হয়েছিল স্রষ্টার দরবারে একটি ই আর্জি নিয়ে ......
" রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুর্রিয়াতিনা কুররাতা আ'য়ুন ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকীনা ঈমামা। "
বিষয়: বিবিধ
১৭৪১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার রাজপুত্র এবার চার হলো !
আপনার ছেলেরা যেন হয় মুত্তামীদের ইমাম আপনারদের জন্য হয় চুক্ষশীতলকারী সন্তান আল্লাহর দরবারে এই কামনা রইল ।
ধন্যবাদ আপু ।
অনেক দিন পর এলেন, নিশ্চয়ই অনেক ব্যস্ত ছিলেন। জাযাকিল্লাহ খাইর।
মাথার উপ্রে দিয়া গেল...
আপু পিক গুলো কোথায় পাও?..
অনেক সুন্দর।
" রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুর্রিয়াতিনা কুররাতা আ'য়ুন ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকীনা ঈমামা। "
" রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুর্রিয়াতিনা কুররাতা আ'য়ুন ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকীনা ঈমামা। "[/b- আমিন..(আমিনটা আমি বললাম).. ভালো লাগলো, ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন