মনের মুকুরে কিছু বিমূর্ত ক্ষণ ....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ০৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:৫০:১৮ সকাল
চলে যাওয়া রাতটি ছিল এ বছরের শেষ পূর্ণ রক্তাভ চন্দ্রগ্রহনের একটি মোহময় রাত !
মহাজাগতিক কর্মকান্ডের প্রতি আমার আগ্রহ সীমাহীন। মধ্যরাতের প্লাবনময় জোছনা থেকে শুরু করে গ্রীষ্মের উত্তপ্ত মধ্যদুপুরের সুর্যও আমাকে আকর্ষণ করে প্রবলভাবে। মেঘমুক্ত আকাশের তারার রাজ্য , চাঁদহীন রাতের আকাশের কারুকাজ আমার চিত্তে প্রশান্তি আনে। এই আমি তাই দর্শনযোগ্য চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ কোনটিকেইবা এড়িয়ে চলি !
৮ ই অক্টোবরের পূর্ণ চন্দ্রগ্রহনটি দেখতে পেয়েছে উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব এশিয়ার অধিবাসীরা। আমাদের এলাকার আজকের আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত চমত্কার। রাতের আকাশ ছিল মেঘমুক্ত পূর্ণ চাঁদের আবেশ মাখা। গ্রহণ শুরু হয়েছিল রাত আটটা থেকেই , আর তা স্হায়ী হয়েছিল প্রায় ঘন্টাব্যাপী। আমার কনিষ্ঠ পুত্রদ্বয় এর আগে কখনো কোনো গ্রহণ লাগা দেখেনি। চাঁদে গ্রহণ শুরু হতেই আমি ওদেরকে নিয়ে ঘরের পেছনের বারান্দায় বসলাম। ওরা দুজনেই অবাক হয়েই দেখছিল মহাজাগতিক এই অপূর্ব রহস্যময় ঘটনাটি। সে এক অসাধারণ ক্ষণ ! পুত্রদ্বয়ের বিষ্ময়্ভাব কাটছেনা কিছুতেই ! নির্বাক কাল পার হয়ে একসময় শুরু হলো তাদের প্রশ্নের ঝড়। অবিরাম প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে এক পর্যায়ে ওদেরকে ঘরে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হতে হলো আমাকে। ছয় বছরের পুত্রটি তখন গুগলে সার্চ দিয়ে সোলার ও লুনার এক্লিপস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে মহা ব্যস্ত হয়ে গেল ! আমিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম !
সে এক অপূর্ব ও অসাধারণ মুহূর্ত ! গ্রহণ যতই এগিয়ে আসছিল , আমার মনে হচ্ছিল যেন পূর্ণ চন্দ্র আভাটিকে কোনো এক অশরীরী শক্তি তার কালো ছায়া দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিল সবল শক্তিতে। ক্ষনিকের জন্য মনে হচ্ছিল , এ যেন অন্ধকারের কাছে আলোর পরাভব ... অস্বাভাবিকের কাছে স্বাভাবিকতার , গাম্ভীর্যের কাছে উচ্ছলতার পরাজয় ! চাঁদ যতই তার দীপ্ততা হারাচ্ছিল , বিশাল আকাশে ততই স্পষ্ট হচ্ছিল অযুত কোটি তারার সামিয়ানা। একটি সময়ে চাঁদ পূর্ণভাবেই ঢাকা পড়ে গেল , আর আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে শুধু মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনের সৃষ্টি বৈচিত্র ও অপূর্ব রহস্যময়তাকে কাজল করে দুচোখে মেখে নিছিলাম। মুগ্ধ হৃদয় নিয়ে দুচোখ ভরে দেখছিলাম একটি অন্ধকার আকাশে কোটি তারার মেলার মাঝে একটি রক্তাক্ত গোল অবয়বকে ! এরই মাঝে শুনতে পাচ্ছিলাম আশপাশের গাছপালাগুলোতে ঘুমন্ত পাখিগুলোর ক্রমাগত ডানা ঝাপটানোর শব্দ। ওরাও হয়ত প্রকৃতির স্বাভাবিকতার ক্ষনিক ছন্দপতনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠেছিল !
গ্রহণ স্থায়ী হয়েছিল ঘন্টাব্যাপী। এরপর ধীরে ধীরে পৃথিবী তার ছায়াকে চাঁদের উপর থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিল। আরো ঘন্টাখানিক পর চাঁদ ফিরে পেয়েছিল তার হৃত যৌবন। হয়ত হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ও সৌন্দর্যকে আবার ফিরে পাবার আনন্দেই চাঁদ বাকী রাতটুকুতে তীব্র ও প্রবল জোছনার জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছিল এ বিশ্ব চরাচর। দুধসাদা জোছনাগুলো যেন পারিজাত ফুল ফুটিয়ে দিয়েছিল ঘুমন্ত প্রকৃতির প্রতিটি অনুসঙ্গে। আমি একা দুহাত ভরে আমার অনুভবে স্পর্শ নিয়েছি সে অলৌকিকতার , আমার সমস্ত অস্তিত্ব শিহরিত হয়েছিল সে মুগ্ধতার স্পর্শে , আন্দোলিত হয়েছিল আমার প্রতিটি সত্বা ও অনুভব। আমি আনমনে আকাশ পানে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেয়েছি সেই বিপুল অদেখা সুরভিত সৌন্দর্যকে , যেন আমি হাত বাড়ালেই বাতাসে ভেসে বেড়ানো চেরি ফুলের কুঁচি পাপড়ির মত মিহি মিহি জোছনা কুঁচির স্পর্শ পাব !
রাত যতই এগিয়ে গেছে , জোছনা ততই তীব্রতর হয়েছে। আর আমি ততই অনুভব করেছি নিজের ক্ষুদ্রতাকে , মহার রবের বিপুল সৃষ্টি ও নিয়ামতরাজির মাঝে আমরা কতইনা সামান্য , ক্ষুদ্র ও অসহায় ! অথচ সারা জীবন কি অবলীলায় আমরা নিজের বড়ত্ব প্রমানে সদা তত্পর থাকি , কিন্তু এ জীবন একসময় ফুরিয়ে যায় , আমরা মিশে যাই মাটির সাথে , সেই সাথে মাটিতে মেশে আমাদের সারা জীবনের আহুত গর্ব, অহংকার , ভোগ বিলাস আর লোভ লিপ্সা। কিন্তু মহান রবের সৃষ্টি বৈচিত্রে তাতে আসেনা কোনো পরিবর্তন , একই নিয়মে আবর্তন ঘটে চাঁদ , পৃথিবী আর সুর্য তথা সমগ্র সৃষ্টিরাজীর। এমনই পরাক্রমশালী আমার প্রভু , সেই দয়াময় প্রভুর সান্নিধ্যে অবনত হই আমি .... আমার সর্বস্ব নিয়ে ... শুন্য , রিক্ত হাতে !
বিষয়: বিবিধ
২৪০৮ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগ্লো|আমাদেরকেও দেখার সুযোগ করে দিলেন|অনেনেনেক ধন্যবাদ আপনাকে|
এমনই পরাক্রমশালী আমার প্রভু , সেই দয়াময় প্রভুর সান্নিধ্যে অবনত হই আমি .... আমার সর্বস্ব নিয়ে ... শুন্য , রিক্ত হাতে ! অসাধারন লাগলো!
চর্মচক্ষু থাকলেই সবকিছু দেখা যায়না-
আরেকটি চক্ষুও তীক্ষ্ণ হতে হয়-
কথাটা আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ
জ্ঞানের ভারও মানুষকে বিনয়ী করে!!
আমার কথা নয়- কোথায় যেন পড়েছিলাম, শিখেছিলাম
আমার পরিকল্পনা ছিল চাঁদ দেখার। অথচ সারাদিন কাজ করে এত ক্লান্ত ছিলাম যে রাতে বের হলেও আকাশের দিকে তাকাতে মনে ছিলোনা। তবে সকালে চাঁদটা অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল, মাশাল্লাহ!
ঠিক তাই। গ্রহনের পরে চাঁদ যেন আরো বেশি উজ্বল মনে হয় , কে জানে কেন ! আপনারা সবাই ভালো আছেন তো !
শব্দচয়ন গুলো অসম্ভব ভাল হয়েছে। আপনি সম্ভবত অনেক দিন ব্লগে আসেন নি! কিন্তু কেন? আপনাদের মত বড়মাপের লেখকদের লিখা না পড়লে ব্লগে এসে সস্তি পাইনা। আশা করি নিয়মিত লিখা দিয়ে ধন্যো করবেন।
আসলেই তাই, আল্লাহর সৃষ্টি বৈচিত্র বিশালতার মাঝে আমরা কতইনা ক্ষুদ্র তুচ্ছ।
ধন্যবাদ সুন্দর লিখাটি শেয়ার করার জন্য।
> মহাজাগতিক কর্মকান্ড,
> মধ্যরাতের প্লাবনময় জোছনা,
> গ্রীষ্মের উত্তপ্ত মধ্যদুপুরের সুর্য,
> মেঘমুক্ত আকাশের তারার রাজ্য,
> চাঁদহীন রাতের আকাশের কারুকাজ,
> মেঘমুক্ত পূর্ণ চাঁদের আবেশ মাখা আকাশ,
> এক অশরীরী শক্তি উপলব্ধি করতে পারা,
> অপূর্ব রহস্যময়তাকে কাজল করে দুচোখে মেখে নিতে পারা,
> একটি রক্তাক্ত গোল অবয়বকে অবলোকন,
> আশপাশের গাছপালাগুলোতে ঘুমন্ত পাখিগুলোর ক্রমাগত ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পারা,
> চাঁদের আবার তার হৃত যৌবন ফিরে পাওয়া,
> ঘুমন্ত প্রকৃতির প্রতিটি অনুসঙ্গে দুধসাদা জোছনার আবার পারিজাত ফুল ফুটিয়ে তোলা,
> মিহি মিহি জোছনা কুঁচির স্পর্শ,
> > এগুলো কি সবার চোখে পড়ে?! ওন্নেক কিসুই ঠিক...ইয়ে...মানে যেভাবে বুঝার সেভাবে বুঝে উঠতে পারিনি... পরের লেখায় আর১টু ব্যাখ্যা করলে Rও ভালো হয়...
আচ্ছা, কিন্তু দয়াময় প্রভুর সান্নিধ্যে সর্বস্ব নিয়ে...শুন্য, রিক্ত হাতে কেন?! ঐ মহানের সৃষ্টিকে যিনি ওভাবে চিনতে পারলেন, ভাবতে পারলেন, তিনি...অর্থাৎ আপনি অবশ্যই অনেক অনেক সম্পদশালী, আলহামদুলিল্লাহ।
'ফা আম্মা মান সাক্বুলাত মাওয়াযীনুহূ ফাহুওয়া ফী ঈশাতির রাদ্বিয়াহ...
আপনি তো ভাইয়া ..... কি বলব .....একদম ....ইয়ে ... কি বলে .... থিসিস ..... করে ছেড়েছেন !!!!!!
লজ্জায়ই ফেলে দিলেন আমাকে !!! এত সাধারণ একটি লেখা , সাধারণ কিছু পর্যবেক্ষণ ..... আপনি এত্ত খুঁটিয়ে পড়েছেন ??? আমি মুগ্ধ ..... বিস্মিত ..... কৃতজ্ঞ ..... জাজাকাল্লাহু খাইরান কাসীরান !
'ফা আম্মা মান সাক্বুলাত মাওয়াযীনুহূ ফাহুওয়া ফী ঈশাতির রাদ্বিয়াহ'.....
...... আমীন , সুম্মা আমীন !!!
মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে
প্রাণ ছুঁয়ে গেলো। প্রতিটি লাইন প্রতিটি অক্ষর যেন জীবন নামক দালানটির প্রতিটি ইট বালু সিমেন্ট।
আমাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে প্রকৃতিতে অবিরাম ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিস্ময়কর মিল খুঁজে পাই , এতে যেমন আশ্চর্য হই , তেমনি সাথে সাথে রবের প্রতিও শুকরিয়াবনত হই ..... আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করে দিয়ে সর্বদা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ রাখুন !
শুকরিয়া ভাইয়া ! ভালো থাকুন সারাক্ষণ ......
তারপর খানিক তাকিয়ে থাকলাম। চাদের উপর পৃথিবী একটু ভাব নিয়ে ছায়া ফেলে চলে গেল। ছোটদের উপর ভাব নেওয়া অনেক বড়দের স্বভাব,কিছু বলার নেই। সূর্যও ভাব নিয়ে চলে। এসব ভাব একদিন চূর্ণ হবে। আল্লাহর ভয়ে সবকটা ফালাফালা হয়ে যাবে....
কথাটা একদম পারফেক্ট বলেছেন ভাইয়া , ভাব ধরা নিয়ে। দুনিয়াটাই চলে এখন ভাবের উপর। ভাবের ই জয়জয়কার সর্বত্র ! কিন্তু একদিন এই ভাব চুনবিচুর্ণ হয়ে যাবে , ওই সময়টা নিয়ে ভাবলে.......!!! আল্লাহ, রহম করুন !!!!
শুকরিয়া, ভাইজান ! দাওয়াত কবুল করার জন্য ..... ( ....ইয়ে .... খাওয়ার দাওয়াত ভাববেননা যেন , এটি হলো লেখা পড়ার দাওয়াত !)
আমি এতদিন পরে এসে কী মন্তব্য করবো? উপরের সবার মন্তব্য দেখেতো আমার ইচ্ছে করতেছে সবগুলো মন্তব্য আমি কপি করে কমেন্ট করি। কিন্তু সেটা করলে তো আমার পিটের চামড়া থাকবে না..... তাই করলাম নাহ্
মিষ্টি মন্তব্যটি আমাকে আনন্দ দিল অনেক ..... সে আনন্দ ঘিরে থাক আপনাকেও , প্রতিক্ষণ .... সারাবেলা .....
অজস্র করুনা যার, দয়া অফুরান
স্মরণ লইবেন মোরে তব প্রার্থনায়
ছোট্ট আর্জি হেথা রেখে যাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন