একান্তই প্রানের .....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ১২ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:০২:৩০ সকাল
তুমি যখন এসেছিলে ......
ভোর হতে তখনো অনেক দেরী। পুরো এলাকা ঘুমে আচ্ছন্ন। পেপার মিলটির ওভারটাইম করা শ্রমিকেরাও কাজ শেষে তাদের ঘরে ফিরে গেছে বহুক্ষণ হয়েছে। চারপাশে শুধুই রাতের ঝি ঝি ডাকা হিরন্ময় নিরবতা। শুধু চারতলা বিল্ডিংটির দোতলার ফ্ল্যাটের একটি ঘরে আলো জ্বলছে। সেই ঘরে প্রবল কষ্টকাতর একজন মা একটি নতুন শিশুর মুখ দেখার আকাঙ্খায় পিয়াসী মুহুর্তগুলো পার করছেন !
প্রতীক্ষাকাল শেষ হলো একসময়। চাঁদের চেয়েও ফুটফুটে এক শিশুর সুতীব্র আগমনী ক্রন্দনে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খান খান হলো। আর সেই চিত্কারেই ঘুম ভেঙ্গে গেল শিশুটির পাঁচ বছরের বড় বোনটির। দৌড়ে এ ঘরে এসেই তো সে বিস্ময়ে বিমূঢ় ! ' আম্মু ! এই বাবুটা আমাদের ! ' বিস্ময়ের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছেনা তার ! হাসলেন আম্মু। বড় বোনটি নিশ্চিত হলো .... এই বাবুটা আমাদের , একদমই আমাদের। কাউকে কখনো নিয়ে যেতে দেবনা আমাদের এই একান্ত সম্পদ। সে যে আমার ছোটবোন , বড় আদরের ছোটবোন !
দিনে দিনে বড় হলো ....
দিন , মাস , বছর গড়িয়ে যায়। ছোট্ট বাবুটি বড় হতে থাকে। পরিচিতরা তাকে পুতুল বলেই ডাকে , কারণ সে দেখতে এক্কেবারেই পুতুলের মত। আম্মু যত্ন করে অনেক ঘের দিয়ে বানিয়ে দেন রেশমি জামা। তার চলার ছন্দে ছন্দে নাচের বিভঙ্গ লক্ষ্য করে মামা এনে দেন রুপোর ঝুমকো মল। সে মল পায়ে দিয়ে দিনমান ঝুমুর ঝুমুর নেচে বেড়ায় ছোট্ট পুতুলটি। মুগ্ধতায় ভরে ওঠে সবার দৃষ্টি , মমতায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে মনের আঙিনাগুলো।
তোমায় আমায় মিলে এমনি বহে ধারা .....
দুটি বোন বড় হতে থাকে একসাথে ... একজন অন্যজনের ছায়া হয়ে , একদম গানের ওই লাইনটির মত , 'তুমি যেখানে আমি সেখানে ....! ' বয়সের দুরত্বটি পাঁচ বছরের হলেও মনের দুরত্বটি নেই এক ন্যানো সেকেন্ডেরও ! বড় বোনটি যদি হয় শরতের শান্ত সরোবর , ছোট বোনটি সেখানে আষাঢ় মাসের রিমিঝিমি বর্ষণের মাঝে বয়ে চলা ছোট্ট চঞ্চলা নদীটি। তার স্বভাব মুহুর্তেই সবাইকে আপন করা , মায়ার ডোরে বেঁধে ফেলা। এ কারণে সে স্কুলে , কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিয় ও পরিচিত মুখ , জনপ্রিয় আপু ! প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্রী। একটি উদাহন না দিলেই নয়। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বার্ষিক দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রধান সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করেছে সে। নিজ হাতে সমস্ত অলংকরণ করেছে , লেখা বাছাই করেছে , দিন রাত কাজ করে একটি দেয়ালিকার সফল সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করেছে অক্লান্তভাবে। যখন পুরো দশটি ক্লাসের মধ্যে অর সম্পাদিত দেয়ালিকাটি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলো , তখন সবাই অভিভূত না হয়ে পারেনি। এত্ত পিচ্চি মেয়ে , আর এত বড় গুরুদায়িত্ব !!
দুজনে বড় যে আপন ....
একসাথে বেড়ে ওঠা , শৈশব , কৈশোর ..... কত যে স্মৃতি ! ভালোলাগার টুকরো টুকরো ক্ষণগুলিকে আরো বিমূর্ত মনে হয় স্মৃতির আয়নায় . কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে দুই বোন শুধু গল্প করে করে , ফজরের আজান শুনে সচকিত হয়ে হেসেই কুটি কুটি ! আম্মু ফজর পড়তে উঠে দুই বোনকে তখন সজাগ আর গল্প করতে দেখে কি যে বকা ! মনে পড়লে হেসে উঠি এখনো !
ফ্রেন্ড ... গাইড.... ফিলসফার ...
বড় বোনটির জন্য তার ছোট বোনটি ই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু , পরামর্শদাতা। বড় বোনটির বিয়ের প্রতিটি অনুসঙ্গে তার ছোট বোনটির অবদান ছিল বড়ই গুরুত্বপূর্ণ , এমনকি ছোট বোনটির হবু দুলাভাইটিকেও তার পছন্দের যথোপযুক্ত মর্যাদা দিতে হয়েছে পুন্খানুখুঙ্খভাবে ! এককথায় , সব কাজের ই কাজী ছিলেন দুষ্টু মিষ্টি ছোট বোনটি। বড় বোনের শ্বশুরবাড়ী চলে যাওয়া একা করে দিয়েছিল ছোটটিকে। মনে পড়ে , একবার ভরা পূর্নিমার চাঁদকে দুই বোন দুই এলাকার দুই বাড়ির বারান্দা থেকে একসাথে দেখছিল আর অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলো দুই বোনের চোখ ও হৃদয় !
চতুর্দোলায় দুলে যাবে পরের ঘর ....
ছোট বোনটির বিয়ে ঠিক হলো। কিন্তু বড় বোনটির বাবুটি তখন খুবই ছোট্ট। প্রবাসী বড় বোন উপস্থিত থাকতে পারেনি সে বিয়েতে। কিন্তু সে প্রতি মুহুর্তে অনুভব করেছে তার প্রানের চেয়েও প্রিয় ছোট্ট বোনটির বিয়ের বিশেষ বিশেষ মুহুর্তগুলো। ছোট বোনটির হৃদয় ছেঁড়া কথামালায় সাজানো অন্তর্জালিক পত্র বড় বোনটিকে কাঁদিয়েছে পলে পলে। আজ সেই ছোট্ট বোনটি দুটি মিষ্টি ফুটফুটে পরীর আম্মু .... ভাবাই যায়না !
প্রানের মাঝে আয় ....
ছোট বেলায় আম্মুর মুখে একটি প্রবাদ শুনতাম প্রায়ই ,'নদীর সাথে নদীর হয়ত কোথাও না কোথাও গিয়ে দেখা হয়েও যেতে পারে , কিন্তু বোনের সাথে বোনের দেখা সহজে হয়না। ' কথাটির সত্যতা গভীরভাবে বিশ্বাস করি এখন। বড় বোনের সংসার এক দেশে , ছোট বোনটি ও সংসার পেতেছে অন্য এক দেশে। দুবোনের দেখা হবার সুযোগ প্রায় হয়না বললেই চলে। তবু ... কথা হয় , দুষ্টুমি মাখানো আড্ডায় মেতে ওঠে ওরা। দুচোখ আর হৃদয় ভরে থাকে প্রকাশিত অপ্রকাশিত আবেগমন্জরী দিয়ে। কখনো বা চোখ ভরে জলে , কখনো বা ভেজা চোখ হাসি ও আনন্দের আলো মেখে হয়ে ওঠে রঙ্গীন। এ হাসিকে কখনো স্পর্শ করেনি কোনো মলিনতা , পংকিলতা। দুজনের ভালবাসা , আবেগ ও মমত্ববোধ সর্বদাই দুই বোনকে বেঁধে রেখেছে অটুট এক বন্ধনে।
( আজ সেই দিন , যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আমার ছোট্ট বোনটিকে আমাদেরকে দিয়েছিলেন পৃথিবীতে অসাধারণ ও অমূল্য এক উপহার হিসেবে। ওকে পেয়ে আমার জীবন ভরে উঠেছিল এক অপার্থিব আলোয় , ও আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছে ওর মমতা ও ভালবাসা দিয়ে। মহার রব ওর জীবনকেও পূর্ণতা দিন , সফলতা দিন জীবনের প্রতিটি মোড় ও বাঁকে , তাঁর করুনাধারায় ওর জীবন ও পরিবারকে সিক্ত করে দিন ... বিশেষ এই দিনটিতে এ আমার দোয়া ও শুভকামনা ! )
বিষয়: বিবিধ
৩৭৪৩ বার পঠিত, ১২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুকরিয়া মন্তব্যের জন্য !
বকা দিলাম , কেমন লাগলো !
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ....
অনেক কিছু জেনেছি আপনার লেখা থেকে।
হারিকেন টা নাই তো তাই কমেন্টস করতে মনে চায়না।
তাছাড়া সংসার বাচ্চা কাচ্চা সব সামলাতে হয়, তাই একটু ব্যাস্ত.....
ওরে ধইরা
এই রখম দিলে ঠিক সোজা সুজি ব্লগে চলে আসতো
হ্যারি, তোমাকে দেখে খুব ভালৈ লাগছে... এই নাও তোমার জন্য আদর মাখা
মাথায় বাড়ি।
এই না হলে ব্লগ জমে !
আমার মাঝে মাঝে মনেহয় হারিকেনের হবু বউয়ের জন্মই এখন হয়নাই
বেচারার বয়শ ৯০ পার হলে তবে জন্মাবে...
আপনার দোয়া ও শুভকামনা পৌছে গেছে ওর কাছে , আর আমাদের এই ভাইয়াটার শুভকামনা তো সব সময় পেয়ে আসছি ! অসংখ্য শুকরিয়া জানবেন ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যটির জন্য !
আমি থাকি অস্ট্রেলিয়ায় আর আমার পুতুল বোনটি থাকে মালয়েশিয়ায়। আপনার সুন্দর দোয়াটির সাথে আমীন !
ভালবাসা বলে কি আছে আমগো মনে?
কথা বলিবো আমরাও বোনের সনে!
বোন আসে বোন যায় সৃতি গুলোর স্লান
মাঝে মাঝে অসুখী মনের উদার আহবান।
শুকরিয়া অসংখ্য ছন্দে আনন্দে মন্তব্যের জন্য !
অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য , আফরামনি ! ভালো থাকুন সারাক্ষণ ....
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য !
বিরহের শয্যায়
ক্লান্ত দু’বোনের
কথা জানলাম,
শুভেচ্ছা জন্ম-
দিবসের;
দোয়া রইলো দু’জনের
জন্যই।
আপনার লেখা পড়ে তাদের কথা মনে পড়ে গেল।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন...
আপনাকেও শুকরিয়া , প্রিয় ভাইয়া !
অসংখ্য শুকরিয়া আপনাকে , সুন্দরের আহবান !
আপনার রাজকন্যাটির জন্য আমার অনেক অনেক শুভকামনা রইলো !
জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও দোয়া রইল। আল্লাহ তাঁকে কবুল বান্দাদের কাতারভুক্ত করুন। আমীন।।
আপনার নেক দোয়াটির সাথে আমীন , সুম্মা আমীন ।
আর হারিয়ে যাওয়া নয় .... শুরু করুন নতুন করে পথ চলা , হাতুড়ি বিবাদ ... *-
আল্লাহ’র কাছে মোনাজাত করি..... আমরা যেন আল্লাহ’র দেয়া এই সুস্থ জীবনটাকে আল্লাহ’রই নির্দেশিত পন্থায় কাটাতে পারি।
আরো একটা কথা কিন্তু মনে পড়তে পাড়ে....
"যতই বেশি এই জন্মদিনটি কানে বাজে আমার তত বেশিই আমার বিয়ার কথা মনে পড়ে""
আপনার সুন্দর দোয়ার সাথে একাত্মতা আমারও । শুকরিয়া অসংখ্যবার ....
আপনি আমার হাতুড়িটা রাখেন...... যেখানে পাবেন তেলাপুদেরকে আদর করে একটাকরে বারি দেবেন...... ব্যস ফিনিশশশশশশশ শ্যা
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও .....
আপনি আমাদের এত কাছের একজন ভাইয়া , আগে তো বুঝিনি ! আবারও শুকরিয়া আপনাকে ভাইয়া , বোনটিকে সবসময় দোয়ায় শামিল রাখার আবদার রইলো ......
জাজাকাল্লাহু খাইরান কাসীরান ।
কি সুখবর , আপুনি !!!
থেকে
এখন ---- ২৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
কৈ তোমার ছন্নছাড়া কবিতি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন