একদিন ইফতারে ....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ০৪ জুলাই, ২০১৪, ০৮:০৬:৩৮ সকাল
আমি যে এলাকাটিতে থাকি , সেখানে প্রায় ৮০/৯০ টি বাংলাদেশী পরিবারের বসবাস। তাদের মধ্যে ও একটি অংশ তৈরী হয়েছে , যারা এক পরিবার অন্য পরিবারের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ। যে কোনো দাওয়াত , সোশ্যাল গ্যাদারিং এ এদেরকে সবসময়েই একসাথে দেখা যায়। এই ফ্যামিলিগুলো প্রতি রমজানে শনি ও রবিবারের ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে এক একজনের বাসায়। প্রায় ৫০ জনের আয়োজন থাকে সেখানে। প্রতিটি পরিবার ইফতারের এক একটি আইটেম বানিয়ে নিয়ে ইফতারে শরিক হয়। আর যিনি হোস্ট থাকেন , তাদের দায়িত্ব থাকে শরবত ও মুড়ির ব্যবস্থা করা। এটি অনেক বছর ধরেই চলে আসছে , আর আমরা এতে শরিক আছি তিন বছর ধরে !
এই অংশটি ধর্মীয় কর্মকান্ডে অতটা উত্সাহী নন। নারী পুরুষ একসাথে বসা বা পানাহার তারা ততটা মাইন্ড করেননা। তিন বছর আগে আমরা যখন এরকম একটি ইফতারে প্রথম দাওয়াত পেলাম , সেখানে গিয়ে তো আমাদের আক্কেল গুড়ুম ! একি অবস্থা ! মহিলাদের আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিক ই , কিন্তু তা নাম মাত্র। মহিলাদের বসার জায়গা থেকে পুরুষদের প্রত্যেককে দেখা যাচ্ছে , কথা বার্তাও বলা হচ্ছে ! আমি ভালই বিপদে পড়লাম। একেতো এলাকায় নতুন , আবার এই আয়োজনেও নতুন। অনেককেই চিনিনা , তারাও আমাকে চেনেন না। আমি একটি আড়াল খুঁজে নিয়ে চুপটি করে বসে রইলাম আর অবাক হয়ে দেখতে থাকলাম এদের কর্মকান্ড। আমরা ভেবেছিলাম , ইফতারের আগে কোনো হেদায়াতি বক্তব্য বা কুরআন সুন্নাহ রিলেটেড কোনো কর্মসূচি থাকবে , কিন্তু কিসের কি ! মহিলাদের গল্পগুজব , পুরুষদের রাজনীতির তর্ক বিতর্কের ভেতরেই ইফতারের সময় হলো , ইফতার করাও হলো। কিন্তু নামাজে দাঁড়ালো খুব কম সংখ্যক নারী পুরুষ। নামাজ পড়ে আর এক প্রস্থ ইফতার , হালিম খাওয়া ... এরপর বিদায় ! এসব দেখে আমার খুবই মন খারাপ হলো।
বাসায় এসে আমার স্বামীকে বললাম , এসব ইফতার মাহফিলে আমরা আর যাবনা , তুমি নিষেধ করে দিও। আমার স্বামী হেসে ফেলে বললেন , পৃথিবীটা একসময় মানুষের বসবাসের উপযোগী ছিলনা , মানুষ ই আল্লাহর দেয়া জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে অরণ্য সাফ করে নগরের পত্তন ঘটিয়েছে। দুর্গম বনের ভেতর দিয়ে পথ তৈরী করতে গিয়ে আগে কিছু সাহসী মানুষ লতা , কাঁটা , ঝোপ ঝাঁড় পরিষ্কার করে নিজেরা এগিয়ে গেছে , পরে তাদেরকে অনুসরণ করেছে অন্য মানুষ। যেখানে দ্বীন এখনো আলো ছড়াতে শুরু করেনি , আমাদেরকেই তো বাতি হাতে আগে এগিয়ে যেতে হবে , তাইনা !
পরেরদিন আরেকটি বাসায় ইফতারের আয়োজন। যথারীতি আমরাও আমন্ত্রিত। আমরা ঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছালাম। কিছুক্ষণ পরে আমার স্বামী কোনো একটি প্রসঙ্গ ধরে কুরআনের একটি আয়াত উঁচু গলায় তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন , সাথে সাথে ঘরের কথাবার্তা হাসাহাসি সব বন্ধ হয়ে গেল , সবাই মন দিয়ে তিলাওয়াত শুনতে লাগলো। তিনি তিলাওয়াত শেষ করে সংক্ষেপে তার তাফসীর করে শোনালেন। এরপর ইফতারের আগ মুহুর্তের দোয়াগুলো পড়ে নিয়ে নিজে হাত তুললেন মুনাজাতের উদ্দেশ্যে , সাথে সাথে সবাই হাত তুলল। মুনাজাত শেষ হওয়া মাত্র ইফতার ওয়াক্ত শুরু হলে সবাই চুপচাপ ইফতার করতেই ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি মনে মনে আল্লাহর অযুত শুকরিয়া আদায় করলাম !
এর পর থেকে এভাবেই চলতে লাগলো। প্রতিটি ইফতার আয়োজনে আমার স্বামী কোনো নির্দিষ্ট টপিক নিয়ে আলোচনা করেন , শ্রোতারা প্রশ্ন করেন , তিনি উত্তর দেন ... এভাবেই কাটছিল ইফতার আয়োজন মুহুর্তগুলো। এ বছর ২৯ শে জুন রবিবার আমাদের প্রথম রমজান পালিত হলো। একটি বাসায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হলো। সেখানে আমার কর্তা কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলেন , কিন্তু মেয়ে মহল থেকে তা পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিল না। এর সুযোগে নারী মহল আবার আলোচনায় মেতে উঠতে শুরু করলো। এবার আমি পরিবেশ টি বদলাতে সংকল্প করলাম। বললাম , ভাবীরা আসুন , আমরা নিজেরা একটুখানি কোরান থেকে তিলাওয়াত করে আল্লাহর দরবারে হাত তুলি। আলহামদুলিল্লাহ , সবাই সাড়া দিল ! সবাই মিলে কয়েকটি ছোট সুরা পড়ে নিয়ে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে হাত তুলে থাকলাম। এরপর ইফতারের সময় শুরু হলে চুপচাপ সবাই ইফতারে মনোনিবেশ করলো।
বাসায় এসে আমার স্বামীকে একথা বলতেই তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন , বললেন , এ কাজ তো একজন দা'য়ী হিসেবে তোমার আরো আগেই শুরু করা উচিত ছিল। কিন্তু তোমার কথা কম বলার স্বভাবের কারণেই এতটা দেরী হলো। একজন দা'য়ীর কাজ আনুষ্ঠানিক নয় , সার্বক্ষণিক। নিজের বক্তব্যকে অন্যের সামনে তুলে ধরার সুযোগ কেউ তৈরী করে দেবেনা , নিজেকেই তৈরী করে নিতে হবে। তার এ কথায় আমি উদ্দীপ্ত ও উত্সাহিত হলাম। আল্লাহর কাছে আমার দায়িত্ব পালনের জন্য আরো বেশি করে সাহায্য চাইলাম।
আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আমাদেরকে রমজানের গুরুত্ব ও তাত্পর্য সঠিকভাবে উপলব্ধি করে বেশি করে নেক আমল করার তাওফীক নসিব করুন , আমীন ...
সুম্মা আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২৩৫৮ বার পঠিত, ৯২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাওম বা রোজা অধ্যায় ::
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৩ :: অধ্যায় ৩১ :: হাদিস ১২১
ইবরাহীম ইবন মুনযীর (র)...আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাঁকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে । সে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সিয়াম পালনকারী, তাঁকে
রাইয়ান
দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সাদকা দানকারী তাঁকে সাদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বাকর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেনঃ হাঁ । আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে ।=======
আপনার নামটা কি এখান থেকে নেয়া
আমার মেয়ে হলেএই নাম রাখবো ইনশাআল্লাহ সিলেক্ট করছি তো তাই বললাম।
আপনার ' রাইয়ান ' কন্যার জন্য অগ্রীম মুবারকবাদ !
অসাধারণ বাণী জাজাকাল্লাহ খায়ের আপা ।
রমাদানে বাইরে ইফতারে একেবারেই অনাগ্রহী আমি! না পারতে অংশ গ্রহন করা আরকি! আপনাদের ভূমিকা সত্যি প্রশংশনীয়! আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন! আপনাদের দোআয় আমাদের শামিল রখাবেন আপু
আপনার দোয়াতেও আমাদেরকে শামিল রাখবেন তো !
লেখা আমাদের উপহার দিবেন। আল্লাহ যেন আপনার হাতকে গতিশীল করেন। সেই সাথে যুক্ত করলাম ইসলামপন্থীদের আলোচনার ছবি।
দুলাভাইর বক্তব্য চমৎকার এবং বাস্তব যা সকল দায়ীকেই স্বরণ রাখা জরুরী। কম কথা বলার খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসে দাওয়াতে দীনের কাজ স্বেচ্ছায় শুরু করায় আপনাকে আন্তরিক মুবারকবাদ।
আপনার জন্য ও সালাম ও শুকরিয়া।
Avjvn †Zvgv‡`i GB cÖ‡Póv‡K AviI mvejxj K‡i w`b| †`vqv iBj|
প্রস্তুত থাকে। আল্লাহ তোমাদের এই প্রচেষ্টাকে আরও
সাবলীল করে দিন। দোয়া রইল।
আপনার স্বামীকে আমার সেরকম একজনই মনে হয়েছে।
আল্লাহ আপনাদেরকে তার প্রিয় বান্দারূপে কবুল করুক ।আমিন
সুন্দর মন্তব্য ও দোয়ার জন্য অনেক শুকরিয়া।
আল্লাহ আপনাদের কবুল করুন। আ-মী-ন।
আপনার সুন্দর দোয়ার জন্য শুকরিয়া !
পরবর্তী ভাবারের ছবি দেখে আমি বিমোহিত,মন্ত্রমুগ্ধ। আমি তো পাগল হয়ে সে ঘ্রানের টানে..ছুটে যাই মুগ্ধ মনে....ওরে আমার ছেড়ে দে....যাব সেই রান্না ঘরে..
আগুন জ্বালা,আগুন জ্বালা...
যতসব খাবার আছে রান্না ঘরে
খেয়ে ফ্যাল বের করে
বাসায় এসে আমার স্বামীকে বললাম , এসব ইফতার মাহফিলে আমরা আর যাবনা , তুমি নিষেধ করে দিও। আমার স্বামী হেসে ফেলে বললেন , পৃথিবীটা একসময় মানুষের বসবাসের উপযোগী ছিলনা , মানুষ ই আল্লাহর দেয়া জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে অরণ্য সাফ করে নগরের পত্তন ঘটিয়েছে। দুর্গম বনের ভেতর দিয়ে পথ তৈরী করতে গিয়ে আগে কিছু সাহসী মানুষ লতা , কাঁটা , ঝোপ ঝাঁড় পরিষ্কার করে নিজেরা এগিয়ে গেছে , পরে তাদেরকে অনুসরণ করেছে অন্য মানুষ। যেখানে দ্বীন এখনো আলো ছড়াতে শুরু করেনি , আমাদেরকেই তো বাতি হাতে আগে এগিয়ে যেতে হবে , তাইনা
ধন্যবাদ।
আল্লাহ আপনাদের প্রচেষ্টায় আরও সহায়তা করুন।
সুম্মা আমীন
ভালো লাগলো। অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ !
মন্তব্য করতে লগইন করুন