তাকওয়ার গুনগুলো অর্জন করি ... এই মাহে রামাদানে !
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ২৯ জুন, ২০১৪, ০৭:৩০:১৯ সকাল
আজ কি আবার কা'বার পথে
ভীড় জমেছে প্রভাত হতে ,
নামলো কি ফের হাজার স্রোতে
'হেরা'র জ্যোতি জগত জুড়ে।
মাহে রামাদান ! রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মহিমান্বিত মাস। ভালো কাজের নিয়ত করে তা বাস্তবে প্রতিফলিত করার এক অনুপম সময় , মহান রবের সন্তুষ্টি ও মহামূল্যবান পুরস্কার দিয়ে ঝুড়ি ভরে ফেলার এক অসাধারণ মওসুম ! হাজার মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম এ মাস এলে আমরা হৃদয় দিয়েই অনুভব করি এর অনুপম সুঘ্রান , যা ভেসে আসে জান্নাত থেকে , মানুষকে আহ্বান করে এক আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিতে , মহান রবের করুনাধারায় নিজেকে সিক্ত করে নিতে , সাগর সমান বিস্তৃত গুনাহরাশি থেকে নিজের অন্তরকে পাক সাফ করে পরিশুদ্ধ অন্তরে আল্লাহর বন্দেগীর পথে আত্মনিয়োগ করতে। এ মাস কুরআন নাজিলের মাস। মুমিনের জন্য জান্নাত্সমূহের দরজা খোলা রেখে জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখার , শয়তানকে শিকলবন্দী করে রাখার ঘোষণা এসেছে এ পবিত্র মাসটির জন্যই। এ মাসের প্রথম দশদিন মহান রব তাঁর রোজাদার বান্দাদেরকে রহমতের বারিধারায় সিক্ত করেন , দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমার দরজা উম্মুক্ত করে দেন এবং তৃতীয় দশদিন জাহান্নাম থেকে প্রিয় বান্দাদেরকে মুক্তি লাভের আশ্বাস দেন। নিজেকে আল্লাহর রঙ্গে রাঙিয়ে নিতে , তাঁর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে এবং 'রাইয়ান ' নামক দরজা দিয়ে প্রবেশের অধিকার লাভের এর চেয়ে স্পেশাল সুযোগ আর কি হতে পারে !يأيها الذين آمنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون ●《 ١٨٣》
" হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায় , তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুনাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। "
( সুরা বাকারাহ - ১৮৩ )
মাহে রমজানের এই মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যই ফরয করা হয়নি , পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে যত নির্দেশনা নাজিল হয়েছে , তার প্রতিটিতেই রোজা রাখার বিধান ছিল। হযরত মুসা (আ) এর অনুসারীদের জন্য রোজার বিধান দেয়া হয়েছিল প্রায়শ্চিত্ত করার উদ্দেশ্যে। হযরত মুসা (আ) যখন সিনাই পর্বতে আল্লাহর কাছ থেকে ওহী লাভ করতে গিয়েছিলেন , তখন চল্লিশ দিন সিয়াম পালন করে কঠোর ইবাদতের মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ওহী প্রাপ্ত হন। ফিরে এসে দেখেন , তার অনুসারীগণ তাওহীদ থেকে সরে গিয়ে মুর্তিপুজা করতে শুরু করেছে। তিনি এতে অত্যন্ত কষ্ট পান এবং আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে চল্লিশ দিন পর্যন্ত রোজা রেখে প্রায়শ্চিত্ত করার নির্দেশ দেন।
বাইবেলের বর্ণনা থেকেও জানা যায় , হযরত ঈসা (আ) চল্লিশ দিন পর্যন্ত রোজা রাখতেন। নিউ টেস্টামেন্ট এ উল্লেখ আছে :
''And when he ( Jesus) had fasted forty days and forty nights , he was afterword unhungered .''
(Mathew - 4 :2)
সব ধর্মে রোজা রাখার বিধান থাকলেও সেগুলোর সংখ্যা ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। কিন্তু তবুও আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন কেন রোজা পালনকে অপরিহার্য মনে করেছেন , সে কারণে সকল যুগে সকল বিধানেই এই রোজা পালনকে অপরিহার্য হিসেবে গন্য করা হয়েছে , তা ভেবে দেখা জরুরি।
মানব জীবনে তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত : খাদ্য গ্রহণ , দ্বিতীয়ত : জৈবিক চাহিদা পূরণ ও তৃতীয়ত : আরাম আয়েশ। একজন রোজাদারকে রমজান মাসে এই তিনটি ক্ষেত্রে চরম সংযমের পরীক্ষা দিতে হয়। যারা অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটায় , তাদের জন্য না খেয়ে দিন কাটানো নতুন কিছু নয়। কিন্তু যাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটাবার মত অঢেল খাদ্যসামগ্রী ঘরে মজুদ , ইন্দ্রিয় বাসনা পূরণ করার জন্য প্রিয়তমা স্ত্রী ও আরামদায়ক স্বস্তিকর গৃহকোণ বর্তমান , তাদের জন্য এই তিনটি ক্ষেত্রে সবসময় সংযমের পরিচয় দেয়া সহজ নয়। রমজান সুদীর্ঘ একটি মাস সেই দুরূহ ও কষ্টকর কাজ সম্পন্ন করার যোগ্যতা তৈরীরই ট্রেনিং দেয় , যার কারণ , একমাত্র আল্লাহ পাককে ভয় করে তাকে সন্তুষ্ট করা। এটাই হচ্ছে তাকওয়া বা পরহেজগারী। আল্লাহর সর্বব্যাপী উপস্থিতিকে সর্বদা স্মরণে রেখে মুমিন একা ঘরেও নিষিদ্ধ কোনো কাজ করতে প্রবৃত্ত হয়না।
রোজার প্রথম উদ্দেশ্যই হচ্ছে আল্লাহর ভয় ভীতি অন্তরে জাগিয়ে তোলার প্রশিক্ষণ লাভ , মনের পরিচ্ছন্নতা অর্জন , প্রভু প্রেমের গভীর আবেগ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহর ভয় জাগিয়ে তোলা যার ফলে সে জীবনের প্রতিটি ব্যাপারে বাছ বিচার করে চলতে পারে। আর এই তাকওয়া অন্তরে জাগ্রত হবার কারণে সে হৃদয় এই কঠিন ফরজ আদায় করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। আবার এই কাজটি আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায় এবং তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় সর্ব প্রকারের ত্যাগ স্বীকার করতেও বান্দা রাজী হয়ে যায়।
এই তাকওয়াই গুনাহের কাজ করে রোজা নষ্ট হওয়া থেকে রোজাদারদের অন্তরগুলোকে পাহারা দিয়ে রাখে। তাকওয়া অর্জনই রোজার আসল উদ্দেশ্য যার দিকে মুমিনের আত্মা ধাবিত হয়। আর এই গুনাবলী অর্জন করাটাই রোজার উদ্দেশ্য বলে আমরা সুরা বাকারাহ এর ১৮৩ নং আয়াতে দেখতে পাই।
দীর্ঘ মাসব্যাপী রোজা পালন মুসলিমদেরকে লম্বা একটি সময় ধরে দ্বীন ও শরিয়াহর নির্দেশ ধারাবাহিকভাবে পালন করতে বাধ্য করে , এর মাধ্যমে প্রতি বছর মুসলিম জাতি পরিপূর্ণ মজবুত একটি আইনের বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। তারা আল্লাহর আদেশে একই সময়ে একই সাথে সিয়াম পালন করতে শুরু করেন। এর মাধ্যমে এই নির্দেশটি মানুষের ব্যক্তিগত ইবাদতকে সামগ্রিক ইবাদতে পরিনত করে দিয়েছে।
এভাবে একটি মাস আল্লাহর নির্দেশিত ও রাসুল (স) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে সিয়াম সাধনার দ্বারা কোনো লোক যখন সমাজে তৈরী হয় , সে সমাজ হয় শান্তি , শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতির এক অনুপম বাগিচা। সে বাগিচায় সর্বদাই ফুটে থাকে নজরকাড়া বেহেশতী ফুল , পাখিরা মধুর কূজনে মুখরিত রাখে চারিধার। আর শয়তানের প্রবেশাধিকার সেখানে রুদ্ধ হয়ে যায় একেবারেই।
কিন্তু মুসলিম সমাজে বাস্তবে কি তাই ঘটে ? কিছু লোক ব্যক্তিগতভাবে তাকওয়ার গুনগুলো অর্জন করতে পারলেও সামগ্রিক সমাজে এ গুনগুলো অনুপস্থিতই থেকে যায়। তাই মেলেনা আকাঙ্খিত ফলাফল , দুনিয়াতেই বেহেশতী বাগান রচনার স্বপ্নগুলো থেকে যায় অধরাই !
বছর ঘুরে আবারও আমরা পেয়েছি রমজান। আর এই মর্যাদাপূর্ণ মাসটির আগমন ধ্বনি প্রতিধ্ধণিত হচ্ছে চারিধারে , সমগ্র পরিবেশ নেকী আর পরহেজগারীর পবিত্র ভাবধারায় হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল। আমরা যেন সবাই সজাগ হই , সতর্ক হয়ে উঠি , সচকিত হই নিজের ঘুমন্ত বিবেকবোধকে জাগ্রত করার ক্ষেত্রে। হৃদয়ের অলিতে গলিতে , অলিন্দে অলিন্দে তাকওয়া অর্জনের এই মহান দাওয়াতকে পৌঁছে দেই। জীবনকে পরিচালিত করতে ব্রতী হই এক আলোকিত গন্তব্যের দিকে , মহান রবের ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে।
তথ্যসূত্র :
১) তাফহীমুল কুরআন।
২) ইবাদত।
৩) সিয়াম এর উপর লিখিত বিভিন্ন ইসলামী সাহিত্য।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭১ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভীড় জমেছে প্রভাত হতে ,
নামলো কি ফের হাজার স্রোতে
'হেরা'র জ্যোতি জগত জুড়ে।
অপূর্ব কবিতাটি দ্বারা শুরু।
অসাধারণ ভাবে শেষ জাজাকাল্লাহ সুন্দর লিখাটির জন্য।
খুব ভালো লাগলো।
অনেক সুন্দর করে লিখেছেন ভাইয়া।
লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য শুকরিয়া , আর আপনার সুন্দর দুয়াটির সাথে আমীন , সুম্মা আমীন ৷
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন