একটি বিকেল ও মাছ ধরার গল্প
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২৫:৩৫ সকাল
এক বন্ধু পরিবার এসেছেন আমাদের বাসায় । আমাদের সঙ্গে একটি উইক এন্ড কাটাবেন এবং আমাদের বাসার অদূরবর্তী একটি বিশাল লেক এ মাছ ধরবেন । আমার কর্তা তো দারুন খুশি ! তার অনেকগুলো শখের একটি হলো মাছ ধরা । আর তার এই শখের কথাটি আমার আব্বু আম্মু বিলক্ষণ জানেন । তাইতো আব্বু সারা বছর আমাদের নিজস্ব পুকুরে মাছের চাষ করেন , যত্ন করেন । আমরা দেশে যাবার আগে থেকেই পুকুরের চারি পাশ পরিষ্কার করানো হয় , কেনা হয় নতুন নানান সাইজের জাল । আমার কর্তা যেদিন আমাদের বাসার পুকুরে মাছ ধরবেন বলে ঠিক হয় , সেই দিনটি পরিনত হয় এক উত্সবের দিনে ! মাছ ধরা উপলক্ষ্যে আত্মীয় স্বজনেরা আসেন , বড় আকারের রান্নার আয়োজন হয় । আব্বু তার বাগানের গাছের কচি ডাব দিয়ে আপ্যায়িত করেন অতিথিদের । পুকুরের পাশে চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো হয় , বাচ্চারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে কখন শুরু হবে মাছ ধরার উত্সব !
চা পানি নাস্তা পর্ব শেষ করে এক সময় শুরু হয় মাছ ধরা । জাল ফেলে ফেলে ধরা হয় প্রচুর মাছ । কয়েকটি ড্রাম ভর্তি হয়ে যায় মাছে । এদিকে আম্মু বড় বড় হাড়িতে মেহমান অভ্যাগতদের জন্য রান্না করতে থাকেন । অনেক আইটেমের মধ্যে সদ্য ধরা মাছের ও কয়েকটি পদ অন্তর্ভুক্ত থাকে । শখের জেলেরা মাছ ধরা শেষ করে গোসল ও নামাজ পড়ার সময়টুকুতেই আম্মু রান্না করে ফেলেন সদ্য ধরে আনা মাছের আইটেমগুলো । খাবার টেবিলে সাজানো মাছের কড়া ভাজা , মাছের ঝোল ও আস্ত আস্ত মাছের রোস্ট দেখে মেহমানরা অবাক হন , হন আপ্লুত !
এই মুহুর্তগুলোর অপেক্ষায় থেকে থেকে আমার আদরের ছোট্ট ভাইটি বছরের অন্য সময়ে কাউকে পুকুর থেকে মাছ ধরতে দেয়না ! তার কথা , ব'পা ছোটপা আসবে , ভাইয়ারা , ভাগ্নে ভাগ্নিরা আসবে ..... শুধুমাত্র তখনি ধরা যাবে পুকুর থেকে মাছ , তার আগে নয় ! কেউ যদি শখ করেও একটি মাছ ধরে ফেলে , ও নিজে গিয়ে পুকুরে সেই মাছ ছেড়ে দিয়ে আসে , তবেই ওর শান্তি ।
কেমন করে যে আমরা বোনেরা আমাদের এত্ত এত্ত আদরের ভাইটিকে ছেড়ে বিদেশে থাকি !!
বলছিলাম উইক এন্ডের শখের মাছ ধরার কথা ।
এক দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে লেকে মাছ ধরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হলো । শখের জেলেদের সবাই লাইসেন্সধারী , সুতরাং , অসুবিধার কিছু নেই । আমি বড় ফ্লাস্ক ভরে চা আর কিছু স্ন্যাকস , চাদর এসব গুছিয়ে নিয়ে বাচ্চাদের তৈরী করিয়ে গাড়িতে বসলাম । এই চমত্কার লেকটি আমাদের বাসা থেকে দশ মিনিট ড্রাইভের দূরত্বে অবস্থিত ।
উষ্ণ গ্রীষ্ম দিনটি আস্তে আস্তে সহনীয় তাপমাত্রার বিকেলে রূপ নিচ্ছে , এটুকুই যা স্বস্তি ! লেকের পাড়ে পৌঁছে সবাই যার যার ছিপ বরশি তৈরিতে লেগে গেল , আর আমরা মেয়েরা গুছিয়ে বসে দূর থেকে মত্স্য শিকারিদেরকে উত্সাহ যুগিয়ে যাচ্ছি নিরন্তর !
বেশ কিছুক্ষণ পরে এক উল্লাস ধ্বনি শুনতে পেয়ে এগিয়ে গেলাম । দেখি কারো এক ছিপে ধরা পড়েছে বেশ বড় সাইজের একটি কার্প মাছ । দুই পক্ষে বেশ কিছুক্ষণ অভিনন্দন প্রদান গ্রহণ চলল ! এমনি করে কিছুক্ষণ পরে পরেই মাছ ধরা পড়ছিল আর শিকারীদের উল্লাস ও আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছিল জ্যামিতিক হারেই !
মাছ ধরা দেখার পাশাপাশি আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম পড়ন্ত বেলার রূপ ! প্রভাত হবার ঠিক আগের মুহূর্ত আর সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের মুহূর্ত আমার খুব প্রিয় দুটি সময় ! এ সময় দুটিতে অপার্থিব , অজানা অচেনা এক ভাবাবেগ আমাকে ঘিরে ধরে গভীরভাবে ! না দু:খ না সুখের এক অচেনা অনুভুতি , এর কোনো নাম নেই , নেই কোনো পরিচয় , এ আমার একান্তই একার একটি ক্ষণ !
সেরকমই এক সন্ধ্যাতে পরিনত হতে দেখছিলাম এক মধুময় বিকেলকে । মাছ শিকারীদের ক্ষণে ক্ষণে উল্লাসধ্বনি , বাচ্চাদের কলধ্বনি সব ছাপিয়ে আমার মন কোন এক অজানালোকে হারিয়ে যাচ্ছিল বার বার !
সেদিন এক বিকেলে বারোটি মাছ ধরেছিলেন শখের শিকারীরা । বাসায় এনে মাছগুলোকে সাজাবার পরে সবার সে কি আনন্দ , সে কি খুশি ! মাছদের সাথে ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়ে গেল সবাই । আর সুন্দর একটি বিকেল আরো সুন্দরভাবে কাটানোর কথা স্মরণ করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ল আমাদের শখের মত্স্য শিকারীরা !
বিষয়: বিবিধ
৩৩৩৯ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বরাবরের মতই আপনার লেখা এবং ছবি দুটোই সুন্দর হয়েছে
অনেক ধন্যবাদ , আপুজ্বি !
শুকরিয়া ভাইয়া , সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ধন্যবাদ আপুমনি ।
ধন্যবাদ আপনাকেও অনেক অনেক ...
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !
মাছ ধরা বড়ছি দিয়ে সখ হিসেবে ভালো কিন্তু যাদের এটা অভ্যাস হয়ে গেছে বাস্তবিক দেখেছি এবং শুনেছি তারা পড়ালেখায় খুউব অমনোযোগী হয়।
মাছ ধরা কারো কারো কাছে একটি নেশার মত। আর নেশার জন্য মানুষ কি ই না করতে পারে ! তবে যেসব নেশা মানুষকে অবশ্য কর্তব্য গুলো করা থেকে দূরে রাখে সেসব নেশা অবশ্য পরিত্যাজ্য , তাইনা আওন !
আমি আবার মেছো বাঙ্গালী। মাছ ভীষণ পছন্দ আমার। তাজা মাছ দেখে সত্যিই লোভ লাগছে।
অনেক অনেক ভালো লাগলো আপুনি আপনার পোষ্টটি।
আমার মাছ পোস্ট আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুশি লাগছে , মাছের আঁশটে গন্ধ নেই তো !
প্রতিটা বিকেলই আমার চোখে সুন্দর। মাঝে মাঝে মন খারাপ বা ভালো থাকলে দু একটা রঙের প্রলেপের কমবেশি হয় , এই যা !
আপনাকে পেয়ে আমার বিকেল টা আরো সুন্দর হলো আপু !
বর্শিতে মাছ ধরা পড়তে থাকলে সেটি আসলেই আনন্দময় সময় , নইলে একটু বোরিং ই বটে ! অনেক ধন্যবাদ , আপুনি !
বাড়িতে হঠাথ কোনো মেহমান চলে আসলে ডাক পড়ত আমার।
মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে মায়ের সামনে পুকুর হতে ধরা হরেক রকমের মাছ মায়ের সামনে হাজির করে দিতাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এই বড়বেলাতেও মাঝে মাঝে ছোটবেলার হাতছানি দেখতে পাই , তাইতো ব্যস্ততম মুহুর্তগুলোকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও একপাশে সরিয়ে রেখে মানুষ শৈশবে ফিরে যায় , অনুভব করে সেই আনন্দময় সময়গুলোকে !
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য ও।
হুম ... ভিশু অভিধানের চর্চা বোধ হয় শুরুই হয়ে গেল ....
অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য !
গুরুজ্বীর আবিষ্কারকে সম্মান দেখাইতেই এই চর্চা
মন্তব্য করতে লগইন করুন