গ্রীষ্মের অবসরে .....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৪৬:৫৯ বিকাল
প্রচন্ড গরম পড়েছে ! এই সপ্তাহে তাপমাত্রার পারদ কিছুতেই চল্লিশ ডিগ্রির নিচে নামবেনা বলে যেন গোঁ ধরে আছে ৷ খবরে দেখতে পাই পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে প্রবল তুষার ঝড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত , অথচ এক ই সময়ে এক ই পৃথিবীর অন্য পাশটি পুড়ে যাচ্ছে প্রচন্ড দাবদাহে ! কি বিপুল পরাক্রমশালী আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং কি বৈচিত্রপূর্ণ তাঁর সৃষ্টি ! অন্তর থেকেই ' সুবহান আল্লাহ ' উঠে আসে ৷
বলছিলাম গরমের কথা ৷ বাচ্চাদের স্কুল , কর্তার ইউনি সব প্রতিষ্ঠানে সামার ভ্যাকেশন শুরু হয়েছে ৷ আমাদের এখানে বছরের প্রায় নয় মাস থাকে শীত ৷ অক্টোবর থেকেই অফিসিয়াল্লি বসন্তের শুরু , কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া লাগতে সময় নেয় আরো কয়েকটি সপ্তাহ ৷ আমরা পুরো শীত শুয়োপোকা হয়েই কাটিয়ে দেই ৷ একে শীত , তার উপর থাকে দিনমান টিপ টিপ বৃষ্টি ৷ দিনগুলো থাকে ছোট আর ভেজা ৷ যখন প্রকৃতিতে বসন্তের সুর বেজে ওঠে , আমরাও তখন শুয়োপোকা থেকে হয়ে উঠি একেকটি রঙিন প্রজাপতি ! দিনগুলো বড় হতে থাকে , বাতাসে স্পর্শ লাগে উষ্ণতার , পুরোটা শীত ঘাপটি মেরে থাকা গাছপালাগুলো নতুন পত্র পল্লবে বিকশিত হয়ে ওঠে ..... সমস্ত প্রকৃতি যেন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় জেগে ওঠে , সবাই মিলে যেন গাইতে থাকে সমবেত কোনো জাগরণী সংগীত !
প্রজাপতি হয়ে বেশ ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে বেড়ালাম চারিপাশ ৷ কিন্তু তাতে মন ভরলোনা আমার ভ্রমন পিয়াসী কর্তার ৷ তিনি প্রস্তাব রাখলেন দূরে কোথাও সমুদ্রের পাড়ে দুটি দিন অবকাশ যাপনের ৷ আমাদের বেশ কয়েকটি বন্ধু পরিবার এরকমই একটি আয়োজন করে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে আমাদেরকেও ৷ আমি প্রস্তাব শুনে পরিষ্কারভাবেই ' না ' করে দিলাম ৷ কারণ , এই গরমে বাচ্চাদের নিয়ে দূরের ভ্রমন করা মানেই ওদেরকে কষ্ট দেয়া আর নানান গরমজনিত অসুস্থতায় ওদেরকে জড়িয়ে ফেলা ৷ উত্তরে কর্তা কিছু না বললেও বুঝলাম , মনটা খারাপ হয়েছে তার ! পরদিন নিজেকে অনেক বুঝিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে রাজী হয়ে গেলাম সফরের জন্য ৷
আমাদের গন্তব্য নির্ধারিত ছিল জার্ভিস বে তে , যা নিউ সাউথ ওয়েলস থেকেও প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত ৷ এক শনিবার সকাল বেলা আমার সংসারের প্রায় অর্ধেক জিনিসপত্র দিয়ে গাড়ি ভরে ফেলে বিসমিল্লাহ বলে যাত্রা শুরু করলাম ৷ আমাদের বাসা থেকে জার্ভিস বে সংলগ্ন কটেজে পৌঁছুতে আমাদের সময় লেগেছে প্রায় ৭ ঘন্টা ! এরই মাঝে চলার পথের দুপাশে কত যে বৈচিত্রময় দৃশ্যকে দেখে দেখে এগিয়ে গেছি !
চলন্ত গাড়িতে প্রতি মুহুর্তেই পরিবর্তিত হয়েছে দৃশ্যপট , এই পাহাড় কাছে তো আবার পরক্ষনেই সরে গেছে বহুদূর !
কখনো সমভূমি , কখনো বা ঢালু উপত্যকায় চরে বেড়াচ্ছে ফার্মের পোষা গরু , ঘোড়া বা লোমশ ভেড়া !
দেখলাম বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী একটি সেতুর তোরণ দ্বার , উত্সাহী পর্যটকরা ছবি তুলছিলেন নিবিষ্ট মনে !
বিকেলে আমরা কটেজে গিয়ে যখন পৌঁছলাম , ততক্ষণে এসে গেছে সবাই ৷ যান্ত্রিক জীবনকে পিছনে ফেলে সবাই রিল্যাক্স মুডে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে অবসর ক্ষণের প্রতিটি মুহূর্তই !
খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা সবাই গেলাম জার্ভিস বে এর মনোরম সমুদ্র তটে ৷ সবাই উতলা হয়ে উঠেছিল সমুদ্রের বিশালতার সান্নিধ্যে নিজেদের ক্লান্তি ঘোচাবার মুহুর্তের অপেক্ষায় , বাচ্চারা আমাদের পাগল করে দিচ্ছিল কখন পানিতে নামবে , ভেজাবে তাদের ছোট্ট কোমল পা ! যখন তারা পানিতে নামার অনুমতি পেয়ে ছুটে গেল পানির কাছে , ভেঙ্গে পড়া ঢেউ এর দোলায় দুলতে দুলতে তাদের আনন্দ আর দেখে কে !
রাতের বেলা ক্যাম্পফায়ার করে গহীন জঙ্গলের শতকোটি ঝিঁ ঝিঁ পোকার কান স্তব্ধ করে দেয়া শব্দের মাঝে আমরা মেয়েরা জমজমাট আড্ডা মিলিয়েছি , সংসারের দৈনন্দিন ব্যস্ততাকে বহুদূরে রেখে উপভোগ করেছি অবসরের প্রতিটি অনু মুহুর্তকেও ৷ প্রতি বেলার রান্নার , এমনকি চা বানিয়ে আমাদের হাতে তুলে দেয়ার দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন আমাদের কর্তারা , আমাদেরকে তারা উপহার দিয়েছিলেন নিখাদ একটি ছুটির আনন্দকে পরিপূর্ণভাবে উদযাপনের !
দুদিন পর ফিরেছি আপন আলয়ে ৷ পথের ক্লান্তিতে সবাই ছিলাম বিধ্বস্ত , পর্যুদস্ত ৷ কিন্তু তারপরেও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে রইলো জার্ভিস বে তে কাটানো দুটো দিনের কিছু অবিস্মরণীয় মুহূর্ত ৷
গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ মাখা সেই দিন দুটি আর কি কখনো ফিরে আসবে !
( আমার তোলা ছবিগুলো কিছুতেই সাইজে ছোট করতে পারছিলামনা , আপলোড না হওয়ায় গুগল এর সাহায্য নিতে হলো ৷ আমার তোলা ছবির মতই ছবি দিয়ে সাজিয়ে দিলাম পাঠকের জন্য ৷ )
বিষয়: বিবিধ
২৪০৫ বার পঠিত, ৪৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
++++++++++++++++++++++++++
আপনাকে অনেক অন্নেক ধন্যবাদ , প্রিয় আলোর আভা !
পরের ছবিটা দেখে ফুটবল খেলতে ইচ্ছে হল
তার পরেরটাকে ইচ্ছে হর ঘোড়া হব, ঘাষ খাব
তাপর কিছুই মনে হলনা
অবশেষে সাতার কাটতে মন চাইল
হুম.............কাজের চাপ আবার ডুব দিলাম কাজে
তখনই ধুলোর ধরায় মৈত্য প্রবাহ শানিছে অনল প্রবাহ
রক্ত করবী মিলিয়ে গেছে আকাশের পাতালে
ভীন্ন গ্রহের আমেছে চলিছে পিঠা পায়েসের বাজার
রাজার উজীরের আয়েশে জমিছে চাষির চারন ভূমিতে
অপলক নেত্রে চেয়ে রয়েছে চোরকাটা
বিষের বাশির সুদুর পরাহত নয়ন গগন বিদারী আর্ত চিৎকারে
ভোরের সুবাসে তীব্র ঝাকুনি সে তো রবী ঠাকুরের ঝাকড়া
চুলের নজরুল বৃন্দাবন
গয়া কাশি,বয়স আশি
মুড়ি নাড়ু খাইতেছে পথপানে চেয়ে
না থাক...যথেষ্ট হয়েছে
চোখ তুলে যতটুকু আলো আসে ,
সে আলোয় মন ভরে যায়। '
চমৎকার ভ্রমণ কাহিনী , ভালো লাগলো আপুনি
মন্তব্য করতে লগইন করুন