ইসলামী সঙ্গীত : ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে এক অনন্য মাধ্যম ।

লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:২৬:২৬ সকাল



এনটিভিতে প্রচারিত ' গাহি সাম্যের গান ' অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম বসে বসে । ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে দেশে আগেও বহুবার বিভিন্ন পর্যায়ের ও ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন হলেও টিভিতে এ ধরনের প্রতিযোগিতা সম্ভবত এটাই প্রথম । পাশাপাশি আরো দেখলাম , ' কুরআনের আলো ' নামের একটি হিফ্জুল কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার ও আয়োজন করেছে চ্যানেলটি । নি:সন্দেহে এটি একটি প্রশংসাযোগ্য অসাধারণ উদ্যোগ । ছোট্ট ছোট্ট হাফিজগন যখন তাদের কচি সুললিত কন্ঠে কুরআন থেকে বিচারকদের নির্বাচন করে দেয়া একটি অংশ তিলাওয়াত করতে শুরু করে , আমার তখন মনে হতে থাকে হেরার আলোকপ্রভা ওই অনুষ্ঠানস্থল থেকে শুরু করে সুদূর প্রবাসে আমার এই ঘরখানিও বুঝি আলোকিত করে তুলল । এ ধরনের আয়োজনগুলো করে এনটিভি সত্যিই অসংখ্য ইসলামপ্রিয় মানুষের মন জয় করে নিয়েছে ।

যাই হোক , বলছিলাম ' গাহি সাম্যের গান ' অনুষ্ঠানটির কথা । দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণ তরুনীরা এসে কোনো যন্ত্রানুসঙ্গ ছাড়াই তাদের নির্ভীক কন্ঠ ইথারে ইথারে ছড়িয়ে দিচ্ছে করুনাময় আল্লাহর প্রশংসাগাঁথা , রাসুল (স) এর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ মিশ্রিত বিনয়ী সুরসম্ভার । কারো কন্ঠে ফুটে উঠেছে মহান রবের প্রতি ক্ষমার আবেদন , কারো কন্ঠ কাতর হৃদয়ে প্রকাশ করছে প্রিয়তম মহান নেতার প্রতি হৃদয় উজাড় করা প্রেম । একটি মেয়ে তার সুমধুর কিন্নর কন্ঠে শোনালো এমন সঙ্গীত যেখানে মদীনা পর্যন্ত যেতে অসমর্থ এক নবী প্রেমিকের সালাম পৌঁছে দেবার জন্য গভীর করুণ আকুতি ফুটে উঠেছে গানটির প্রতি অন্তরায় অন্তরায় । এসব সঙ্গীত শুধু যে অবসরের সুস্থ বিনোদনেরই একটি অনুসঙ্গ , তা নয় ... বরং অবসর মুহূর্তটিতেও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় দুনিয়াতে মানুষ হিসেবে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বের কথা , রাসুল (স) এর বীর সেনাপতিত্বে রনাঙ্গনে বাতিলের মোকাবেলায় একজন সত্যনিষ্ঠ সৈনিকের কর্তব্যের কথা ।

এসব ইসলামী সঙ্গীতের প্রয়োজনের একটি বিরাট অংশ পূর্ণ করেছে কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামী সঙ্গীত । নজরুল ইসলাম নিজেই ইসলামী সঙ্গীতের ভুবনে তার অবদানের কথা লিখে গেছেন এভাবে :

" কাব্যে ও সাহিত্যে আমি কি দিয়েছি জানিনা , তবে ইসলামী সঙ্গীতে যা দিয়েছি সে ব্যাপারে আজ না হলেও ভবিষ্যতের মানুষ আমাকে স্মরণ করবেন , এ বিশ্বাস আমার আছে । "

নজরুল কখনো ইসলামের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মক্কা ও মদিনাতে না গিয়েও শুধুমাত্র মানসচক্ষে দেখে সেসব ছবি তার সঙ্গীতগুলোতে ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুনহাতে , অনিন্দ্যরূপে । আল্লাহর প্রতি শঙ্কা মিশ্রিত ভয় , নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে নির্ভীক ও উদাত্ত ঘোষণা , রাসুল (স) এর প্রতি বিনয়কাতর প্রেম ও আনুগত্যের প্রকাশ , ইসলামের ঝান্ডা হাতে বীর মুজাহিদের দৃপ্ত পদে সমুখ পানে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান ..... কি নেই সেখানে ! এসব গান যুগ যুগ ধরে অমূল্য সম্পদ হয়ে মানুষের মনে প্রেরণা যোগাবে ।

আমাদের সমাজের ভেতরটি ঘুনেরা খেয়ে যাচ্ছে নি:শব্দে । শুধুমাত্র সমাজের দৃশ্যমান অংশটুকু দৃশ্যত সজীব মনে হলেও যেকোনো মুহুর্তে নৈতিকতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ধ্বসে পড়ার আশংকা প্রতিটি সচেতন মানুষের মনেই । এর প্রথম ও প্রধান কারণ , সামাজিক সাংস্কৃতিক অবক্ষয় । মুসলিম জাতি যখন নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের কথা ভুলে ধার করা বিদেশী সংস্কৃতি দিয়ে সাজাতে চায় মানস , তখনি এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় বিবেক , মানুষ তখন হারায় ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা , ভুলে যায় নীতি ও নৈতিকতা । ভয়াবহ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যখন কন্ঠ রোধ করে দাঁড়ায় , তখনি ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বদলে মনে ভালবাসার আসনটি দখল করে নেয় পর্ণস্টাররা । তাদের নেক নজর থেকে শুরু করে পোশাক আশাকটি পর্যন্ত মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে হলেও পেতে চায় । এগুলো বড়ই ভয়াবহ ভবিষ্যতের লক্ষণ , যে ভবিষ্যত এগিয়ে আসছে নিকষ কালো অন্ধকারের শ্বাসরুদ্ধতা নিয়ে , যেখানে নির্মল এক ফোঁটা বাতাস ঢোকার পথ আমরা নিজেরাই রুদ্ধ করে দিচ্ছি চিরতরে ।

তাই , সময় থাকতেই সাবধান হতে হবে । সর্বক্ষেত্রে বাড়াতে হবে ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা । যা আমার নিজের নয় , যা কিছু পেতে গেলে আমাকে আমার আমিত্বকে , মর্যাদাকে হারিয়ে পেতে হবে .... সে জিনিস পাওয়ার বাসনা ত্যাগ করতে হবে সময় থাকতে থাকতেই । চিনতে হবে আমাদের আসল পথ ও গন্তব্য । ইসলাম নির্দেশিত প্রতিটি পথেরই দিক , বাঁকগুলো সুনির্দেশিত , আলোয় ঘেরা । কষ্ট করে সে পথটি একবার চিনে নিতে পারলে পথটিই আমাদেরকে পৌঁছে দেবে আমাদের একমাত্র গন্তব্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও চির সুখময় জান্নাতের দিকে । করুনাময় প্রভু আল্লাহ নিজেই সে পথের বর্ণনা করেছেন সুরা আল ইমরানের ১৩৩ নং আয়াতে :

" দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশ সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে , যা তৈরী করা হয়েছে আল্লাহভীরু লোকদের জন্য । "

বিষয়: বিবিধ

১৮৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File