এক টুকরো সুখের গল্প ....
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ২৯ মে, ২০১৩, ১১:৫৯:২৩ সকাল
বইগুলো বক্স থেকে বের করে ধুলো ঝেড়ে বুক শেলফে তুলে রাখছিল সেমন্তি । নতুন বাসায় উঠে এসে এখন অবধি আর ফুরসত মেলেনি বইগুলো গোছাবার । এই হলের হাউস টিউটর কোয়ার্টার এ নতুন উঠেছে ওরা , ওরা বলতে ও আর সাদমান । অনেক চেষ্টা চরিত্র করে তবে এই কোয়ার্টারটি মিলেছে । হলটি অনেক পুরনো , প্রচুর গাছ গাছালি আর তার চেয়েও প্রচুর আছে পাখি । খুব ভোরে পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সেমন্তির , তখন এত ভালো লাগে ওর !
বইগুলো গুছিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায় ও । পুরনো একটা সাহিত্য ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বেডরুমে ঢুকতে গিয়েও না ঢুকে বেরিয়ে পড়ল । সাদমান টক শো দেখছে বেডরুমের টিভিতে , এই সময় ওর হাতে ম্যাগাজিন দেখলেই খেপে যাবে , দরকার কি ঝামেলা বাড়িয়ে ! কিন্তু এত সাবধানতা অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা হলনা , দেখেই ফেলল সাদমান :
---- আবার ও ওসব ছাইপাশ নিয়ে বসেছ তুমি ? শুধু শুধু এগুলো পড়ে কেন যে সময় নষ্ট কর, বুঝিনা ! পড়াশুনার পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা কর, লেখালেখি কর !
---- ইসলামী সাহিত্য, মুসলিম ঐতিহ্য , সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা , জ্ঞানার্জন তো করতেই হবে , কারণ এগুলোইত আমার আত্মার তৃপ্তির রসদ জোগায় । কিন্তু সমকালীন সাহিত্য না পড়েও যে থাকতে পারিনা আমি ! বাস্তবের যাপিত জীবনের অনুসঙ্গগুলো এত নিবিড় আর সুক্ষ্মভাবে এই সাহিত্যের প্রতিটি লাইনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে , যা আমাকে বর্তমান সমাজ ও জীবনবোধ নিয়ে ভাবনার খোরাক জোগায় । আর সাহিত্যের একজন ছাত্রী হিসেবে এটি নিশ্চয়ই আমার চিন্তাধারার কোনো গুরুতর ভুল হিসেবে নেবেনা তুমি !
---- ( একটুখানি হেসে ) না, এটি কোনো ভুল বা অপরাধ কিছুই নয় । কোনো উপন্যাসে তুমি একবার ডুবে গেলে তোমার আর নাগাল পাওয়া যায়না, এজন্যই বলছিলাম !
বলতে বলতে সাদমান উঠে দাঁড়ালো , এগোলো দরজার দিকে ।
---- একি , তুমি এখন আবার বেরোচ্ছ নাকি ?
---- ( জুতা পড়তে পড়তে ) হ্যা , একটু ডিপার্টমেন্টে যাব , বেশ কিছু
এসাইনমেন্ট জমেছে , দেখে দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি ... কেন, কিছু বলবে ?
একটু দ্বিধা করলো সেমন্তি , এবারের পত্রিকার ঈদ সংখ্যাগুলো ভিন্ন স্বাদে, ভিন্ন বৈচিত্রে প্রকাশিত হয়েছে । তারই একটা যে দারুন পছন্দ হয়েছে , তা কেমন করে এই ক্ষণে মুখ ফুটে বলবে ও !
---- কি হলো, বলবে কিছু ? মনে হচ্ছে কিছু চাচ্ছ মনে মনে ?
---- কিছু একটা চাচ্ছি , সেটা ঠিক । কিন্তু তোমার কাছে অনুমতি চাচ্ছি বলে ভেবোনা যে ওটি নিজে অর্জন করার যোগ্যতা আমার নেই । আমি এজন্যই চাচ্ছি যে, আমার প্রতিটি কাজে তোমার উতসাহ ও সমর্থন থাকলে প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি প্রাপ্তিই আমার কাছে অন্যরকম আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে ।
---- তো , কি এমন চাও যাতে আমার সমর্থন দরকার হয়ে পড়ল ?
---- ( একটু দ্বিধা করে ) একটা ঈদসংখ্যা কিনব কিনা ভাবছি , না....না...কোনো জ্ঞান বিতরনমূলক কোনো কথা বোলোনা কিন্তু আবার ! ..... কি হলো, অমন করে দুষ্টু হাসি হাসলে যে...!
সাদমান একটুখানি এগিয়ে এসে সেমন্তির নাকটা একটু নেড়ে দিল । দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মুখ ঘুরিয়ে একটু হেসে ছোট্ট করে বলল :
---- নো !
রাগে গা জ্বলে গেল সেমন্তির । এমন বদ স্বামী পৃথিবীতে আর কোনো মেয়ে পেয়েছে কিনা সন্দেহ ! দরজাটা বন্ধ করে ফ্যান চালিয়ে সোফায় বসতে যাবে, এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো । তাড়াতাড়ি মুখে নেকাব জড়িয়ে দরজা খুলে দেখল হলের দারোয়ান রশিদ মিয়া দাড়িয়ে আছে । সালাম দিয়ে একটা ব্রাউন পেপার প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল :
---- আপা , স্যার যাওয়ার সময় এই প্যাকেটটা আপনাকে দিতে বলে গেছেন ।
---- আচ্ছা, ঠিক আছে, অনেক শুকরিয়া ।
অবাক হয়ে প্যাকেটখানি খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একখানি নয়....দুখানি নয় ....তিনখানা ঈদ সংখ্যা ! তাও আবার মোটা, ঢাউস সাইজের একেকটি ভলিউম ! আলাদা করে একটি হাতে নিতেই গড়িয়ে পড়ল একটি চিরকুট , তাতে লেখা :
" পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়েটির জন্য তার ' বদ জামাইয়ের ' পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার ! কি, রাগ কি কমাতে পেরেছি একটুও ? "
বিস্ময়ে, আনন্দে , অদ্ভুত এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল সেমন্তি । মনে মনেই এক ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সাদমানের বুকে । মনে হলো কোথাও যেন সেতারে সংগীতের সব কটি রাগ রাগিনী এক সুরে বেজে উঠলো , পাখিরা গেয়ে উঠলো মিলনের গান । আর অজস্র ভালবাসা আর সুখের অনুভূতিরা নানা রঙের ফুল হয়ে ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো মিষ্টি এই স্বপ্নালু দম্পতির উপর !
বিষয়: বিবিধ
৩৯৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন