গ্রেট ওশান ড্রাইভ এ দুটি দিন (৩ য় পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন রাইয়ান ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:২০:২৮ দুপুর
অনেক কাজ !
এখানে চাইলেই যখন তখন বাইরে খেতে যাওয়া যায়না । আমরা অন্তত যাইনা । মূল সিটি আর কিছু কিছু সাবার্বে মুসলিম বাস করায় কয়েকটি হালাল খাবারের দোকান থাকলেও , এর বাইরে প্রায় নেই বললেও চলে । আবার কিছু কিছু দোকানে হালাল সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে রাখে , যার অধিকাংশই বিশ্বাস যোগ্য নয় । বাচ্চাদের জন্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিনতে গেলেও যথাসম্ভব খবর নেই যে, এটি আলাদা তেলে ভাজা হয়েছে কিনা । এসব দেখে আমার ছেলেটি একদিন বলেছিল , আম্মু চল, আমরা মিডল ইস্টিয়ান কোনো দেশে চলে যাই । কেন ? ওখানে ম্যাকডনাল্ড'স এ সব কিছুই হালাল । শুনে হেসে ফেলেছিলাম । যাই হোক, যা বলছিলাম । সেজন্য , যখনই দু'একদিনের জন্য বাইরে কথাও বেড়াতে বের হই , আমি কিছু মাছ, মাংশ আর সবজি রান্না করে বক্স ভরে ভরে ডীপ ফ্রিজে রেখে জমিয়ে নেই । এরপর পোর্টেবল ফ্রিজারে করে সাথে নিয়ে যাই । কাপড় চোপড়ের ব্যাগ বোচকার সাথে অতিরিক্ত আরো একটি ঢাউস ব্যাগ ভর্তি হয়ে যায় কিচেনের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিতে নিতেই । আবার এদিকে মেলবোর্নের আবহাওয়াও বৈচিত্রময় ! একদিনেই চারটি ঋতুর দেখা মেলে । বাচ্চাদের হালকা কাপড় থেকে শুরু করে গরম পুলওভার পর্যন্ত সবই সাথে করে নিয়ে নেই । কখন আবার কোনটার প্রয়োজন পড়ে যায় !
অবশেষে ঝকঝকে সুন্দর মিষ্টি এক সকালে পুরো পরিবার ' বিসমিল্লাহ ' বলে বেরিয়ে পড়লাম । ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌছালাম 'জীলং' এ । এর ' ওয়াটারফ্রন্ট ' নামের জায়গাটি খুবই সুন্দর ! একচিলতে বীচে সারিসারি ছোট ইয়ট ভেড়ানো , গোছানো পার্ক , মেঠোপথের মত একেবেকে যাওয়া পাথওয়ে ... এক কথায় অপূর্ব ! গাড়ি থামিয়ে বাচ্চাদেরকে নিয়ে একটু ঘুরব বলে বের হয়েছি , কিন্তু বাচ্চারা সেখানেই সেট হয়ে গেল ! তারা সেখানেই থাকবে, আর কোথাও যেতে রাজি নয় । সবুজ নরম ঘাসের উপর বল টল নামিয়ে অস্থির ! যতই বলছি , আমাদেরকে অনেক দূরে যেতে হবে , সে জায়গাটি আরো সুন্দর , কে শোনে কার কথা ! আমি মুখ গোঁজ করে ঘাসের উপরই বসে রইলাম । বাচ্চাদের আব্বু তাদের সঙ্গে খেলে টেলে যখন তারা তৃপ্ত হলো , তখন আবার আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম ।
( জীলং ওয়াটারফ্রন্টের কয়েকটি দৃশ্য )
জীলং থেকে এবার টোরকে যাবার পালা । এই পথটুকু দুপাশে ধুসর হয়ে আশা শস্য ক্ষেত আর নাম না জানা গাছ গাছালির সমাহার দেখেই কাটাচ্ছি । আজ দিনটি খুব ই সুন্দর । ঝকঝকে রোদের দিন, সাথে মানানসই দারুন আরামদায়ক আবহাওয়া । দূরে পাহাড়গুলি একটু দেখা দিয়েই আবার কোথায় যেন মিলিয়ে যাচ্ছে । আকাশে সাদা মেঘ পেঁজা তুলোর মত আলগোছে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে ! এত সুন্দর করে যিনি এই পৃথিবী , এই প্রকৃতিকে তৈরী করে রেখে দিয়েছেন আমাদের জন্য, আমরা যেন দুচোখ ভরে দেখি, চিন্তা করি, আর স্রষ্টার বিপুলত্ব স্বীকার করে নিয়ে সেই প্রভুর সান্নিধ্যে আরো বেশি করে নিজেকে সমর্পণ করি ! সুবহান আল্লাহ ! এসব ভাবতে ভাবতেই অজান্তেই একটি হামদে বারি তায়ালা গুনগুনিয়ে উঠলাম । 'ড্রাইভার সাহেব ' রিয়ার ভিউ দিয়ে চোখে চোখ রাখলেন ,' কি ব্যাপার , আজ সুর ভেতরেই গুমরে ফিরছে যে ! অন্যদিন তো ফ্রি ওয়েতে পড়ার অপেক্ষা টুকুই যা । আজ এতটা পথ এলাম , সুরের মৌমাছিগুলো মৌচাক ছেড়ে আজ বেরচ্ছেনা কেন ? নাকি অনুরোধের অপেক্ষা ? কিরে বাবা , আজ মায়ের হলো কি রে ! ' বলে পাশে বসা ছেলের দিকে তাকালেন । কিন্তু ছেলে কি আর ততক্ষণে গাড়ির এই গন্ডির ভেতরে আছে ? সে তো তখন কোনো এক দুর্গম পর্বতমালায় দু:সাহসিক এক কমান্ডো হয়ে এক কঠিন অপারেশন সাকসেসফুল করায় ব্যস্ত । যেমন ঝড়ের গতিতে চলছে তার মাথা, তেমনি চলছে তার আঙ্গুলগুলো । আমিও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাইরে তাকালাম । সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এই পৃথিবী ও আসমানের মালিকের প্রতি গেয়ে উঠলাম :
ওই পাহাড় আর গাছ গাছালি , নীল ঝরনার গান ;
জানিগো প্রভু, জানিযে শুধু সকলই তোমার দান ।।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন