‘ওহ দারুন’, কিন্তু......(শেষ কিস্তি)

লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ২১ মার্চ, ২০১৩, ০৭:০৮:৩৩ সন্ধ্যা



আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পৃথিবীর কিছু দেশ আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছে, কিছু দেশ বিরোধীতা করেছে। আবার কিছু দেশ প্রত্যক্ষ সহযোগীতা করেছে। যে দেশগুলো আমাদের পক্ষে ছিল আমরা তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই, সর্বদা তাদের মঙ্গল কামনা করি। কিন্তু এই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বা মঙ্গল কমনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও তথা কথিত প্রগতিশীল (পড়ুন ‘প্রতিক্রিয়াশীল’) বামদলগুলো যে বাড়াবাড়ি করে, সেটা সমর্থনযোগ্য নয়। যেমন- ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যে ভূমিকা ছিল, সেটার কথা স্মরণ করে তারা বেশ আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তারা ‘প্রিয় দাদাদের’ জন্য অসংখ্য প্রশংসার মালা তৈরি করেন। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে

আসল কথা হলো, আমরা সেদিন একদিকে বিপদে এবং অন্যদিকে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম। আমাদের স্বার্থ আর জগতের আরও অনেকের স্বার্থ মিলে গিয়েছিল। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে, দেশটি স্বাধীন হলে এবং দুর্বল বুর্জোয়া নেতৃত্বে পরিচালিত হলে অনেকের লাভ। ভারতের লাভ, আমেরিকা-ব্রিটেন-কানাডা-অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমি পুঁজিবাদী বিশ্বের তো লাভের সীমা-পরিসীমা নেই। তারা জানত, তাদের কারিগরি ও আর্থিক সাহায্য ছাড়া জনবহুল দেশটি টিকে থাকতে পারবে না (মকসুদ, ২০১৩, পৃষ্ঠা নং:০৭)।

এবার বর্তমান নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে জনগণকে অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভাগুলোতে আকাশচুম্বী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু তার একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মাত্র। তিনি যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে আলোচিত প্রতিশ্রুতির কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

দশটাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। বিনামূল্যে কৃষককে সার দেবেন। বিরতীহীন বিদ্যুতে গোটা দেশ হাসবে। প্রতি পরিবারে অন্তুত একজনকে চাকরি দেবেন। প্রশাসনকে দলীয়করণ না করে যোগ্যতার ভিত্তিতে পরিচালনা করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেনÑ এমন অসংখ্য প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন।এমনকি কারওয়ান বাজারের এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন- আমাকে নির্বাচিত করুন, আপনারা যা যা চান, তার সব কিছুই দেওয়া হবে (সিদ্দিকী, ২০১৩, পৃষ্ঠা : ৭)।

আরো কথা আছে। নতুন করে ক্ষমতায় আসতে হলে রাজনৈতিক দলের সামনে দু’টি কৌশল থাকে। প্রথমত, সাধারণভাবে জনগণের সমর্থনকে জয় করা। দ্বিতীয়ত, বিরোধী পক্ষ মুক্ত মাঠ সৃষ্টি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, আওয়ামীলীগ দ্বিতীয় কৌশলটি বেছে নিবে। কারণ, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেলের দাম বাড়ানোর ফলে চার বছরে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল, হলমার্ক, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি খুন, গুম,ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি আওয়ামীলীগের জনসমর্থন ঘুণে খাওয়ার মতো খেয়ে ফেলেছে। এসব বিষয় যে হাইকমান্ডের অজানা ছিল তা নয়। কিন্তু হিসাবটা হলো জনসমর্থন যতই কমে যাক না কেন, বিরোধী পক্ষের যদি মাঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা না থাকে তা হলে আওয়ামীলীগের সামনে আবার ক্ষমাতায় আসার পথে কোনো বাধা আসবে না (মাসুম, ২০১৩)।

নোটিশ: লেখাটির প্রথম কিস্তি পড়তে পারবেন এই লিংকে http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/4660/mamukha/8363#.UUxXF_Igvs0

তথ্যসূত্র

১.মকসুদ, সৈয়দ আবুল। (২০১৩)। স্বাধীনতা ও মুক্তি: সংকল্পনা ও বাস্তবতা। পতাকা, ৫ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, মার্চ, ২০১৩, পৃষ্ঠা. ৭-৮। ঢাকা: স্বরবৃত্ত সাহিত্যঘর। অথবা ভিজিট করুন http://www.patakadu.com

২. মাসুম, আবুল ফারাহ। (২০১৩, ১০ফেব্রুয়ারি)। গুজবের ধূম্রজালে রাজনীতি। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা:০৭। ঢাকা : শামসুল হুদা।

৩. সিদ্দিকী, ড. রেজোয়ান। (২০১৩, ১০ফেব্রুয়ারি)। পদ্মার নিঃসঙ্গ ভেলায়Ñ। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা:০৭। ঢাকা : শামসুল হুদা।

বিষয়: বিবিধ

১১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File