‘ওহ দারুন’, কিন্তু......(প্রথম কিস্তি)
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ২১ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২৮:০৯ বিকাল
তিনটি ছেলে, ওদের বয়স চার বছর থেকে ছয় বছরের মধ্যে। গায়ের রং ধূসর। মাথার চুলগুলো আচড়ানো নয়, কিছুটা এলোমেলো। পরনে কম দামি প্যান্ট আর শার্ট। দেখেই বোঝা যায় ছেলেগুলো দরিদ্র কিংবা নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ওরা ক্রিকেট খেলছিল।
দিনটি ছিল ১৯ মার্চ, ২০১৩। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল খুব কম। আমার অফিস রাজধানী ঢাকার বিজয় নগরে অবস্থিত। অফিসের পাশে ছোট একটি রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটি মূলত মহল্লার লোকজন ব্যবহার করেন। এছাড়া পল্টন-কাকরাইলের মূল সড়কে ট্রাফিক জ্যাম থাকলে মূল সড়কের যানবাহনগুলো মাঝে-মধ্যে অফিসের পাশের রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করে। তবে ১৮ মার্চ হরতাল থাকায় এই রাস্তাটি একেবারেই ফাঁকা ছিল। যাহোক, আসরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ৪টা ৫৫ মিনিটে আমি অফিস থেকে নেমে মহল্লার ছোট রাস্তাটিতে এলাম। এমন সময় যা ঘটল তা হলো, আমার লেখার শুরুতে যে তিন জন ছেলের বর্ণনা দিয়েছি, ওদেরই একজন ব্যাটিং করার ফলে লাল কচটেপ পেচানো বলটি দ্রুত গতিতে আমার দিকে আসতে লাগল। বুঝলাম, বলটিকে যদি না থামাই তবে সেটা বেশ কিছুটা দূরে চলে যাবে। এতে ছেলেগুলোরও কষ্ট হবে। তাই আমি বলটি ফেরত পাঠালাম। এতে খুশি হয়ে ওদের একজন চিৎকার করে বলে উঠল ‘ওহ দারুন!’। তাৎক্ষণিক মনে মনে ভাবলাম, ছোট্ট এই ছেলেটির মতো যদি দেশের সব নাগরিক প্রশান্ত মন নিয়ে তৃপ্তির সাথে ‘ওহ দারুণ’ কথাটি উচ্চারণ করতে পারত!
কিন্তু সেটা সম্ভব না। প্রকৃত ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শাসনামলে (আপনি চাইলে ‘শোষণ আমল’ বলতে পারেন) দেশের সার্বিক পরিস্থিতির যে পরিমাণ অবনতি ঘটেছে; এতে করে কোন বিবেকবান মানুষ প্রশান্তির সাথে ‘ওহ দারুণ’ কথাটি বলতে পারেন না। তারা ( বিবেকবান মানুষ) শুধু কখানো প্রকাশ্যে কখনো গোপনে ক্ষোভ, আফসোস আর বুকভরা বেদনা নিয়ে বলতে পারেন ‘উহ্, ইস’! সব কিছু মিলিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা কি স্বাধীন দেশের নাগরিক ? আমরা কি স্বাধীনতা পেয়েছি?
আসলে “স্বাধীনতা একটি শব্দ মাত্র নয়। স্বাধীনতা একটি অমূল্য প্রত্যয়- একটি অতি সম্মানজনক অবস্থা এবং এক বিরাট আয়োজনের নাম স্বাধীনাতা ”(মকসুদ, ২০১৩, পৃষ্ঠা নং:০৬)। আর সেই স্বাধীনতা নিয়ে এক ধরনের বাণিজ্য করে আসছে আওয়ামী লীগ ও বামদলগুলো। আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর অপপ্রচার শুনলে মনে হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শুধুমাত্র ওরা (আওয়ামীলীগ ও বামদলগুলো) অবদান রেখেছে। আর অন্যদের অবদানের কথা বলা হয় খুবই আস্তে, দুর্বল কন্ঠে। তাও সব সময় বলা হয় না, মাঝে-মধ্যে বলা হয়।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, সারা বাংলায় যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, জনগণ অকাতারে জীবন দিচ্ছিল; তখন আওয়ামীলীগের কিছু কিছু নেতা কলকাতায় বসে আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত ছিলেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে,“পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল অন্য রকম জনযুদ্ধ। মুক্তিকামী জনগণ যারা যেখানে যেভাবে পেরেছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ...... সেদিন কোনো রকম কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বাধীনতাকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল। এমনই ঐক্যবদ্ধ ছিল, যা অতীতে কোনো দিন ছিল না ” (মকসুদ, পৃষ্ঠা নং:০৮)। (চলবে)
নোটিশ: লেখার বাকি অংশ পড়তে পারবেন সন্ধ্যার পর।
তথ্যসূত্র
১.মকসুদ, সৈয়দ আবুল। (২০১৩)। স্বাধীনতা ও মুক্তি: সংকল্পনা ও বাস্তবতা। পতাকা, ৫ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, মার্চ, ২০১৩, পৃষ্ঠা. ৬-৮। ঢাকা: স্বরবৃত্ত সাহিত্যঘর। অথবা ভিজিট করুন http://www.patakadu.com
বিষয়: বিবিধ
১২১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন