ক্র্যাচের নাগরিক, আমার প্রেরণা এবং কিছু ভাবনা......
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ১৮ মার্চ, ২০১৩, ০৩:০৫:০৯ দুপুর
লোকটির গায়ের রং কালো, উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, বয়স ৪০-এর বেশি। মুখে দাড়ি, মাথার চুলগুলো কিছুটা লম্বা। গায়ে পরনে ছিল একটি নেইভি ব্লু রঙের ফুল হাতার শার্ট, একটি হালকা সাদা ও ধূসর রঙের লুঙ্গি। দেখেই বোঝা যায়, লুঙ্গি এবং শার্ট দু’টোই বেশ পুরোনো। আমি যে লোকটির বর্ণনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, সে মূলত পঙ্গু। তার ডান পায়ের হাটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অংশটুকু নেই। দুর্ঘটনা, রোগ কিংবা অন্য যে কোনো কারণে হাটুর নিচের এই অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এক জোড়া পুরোনো ক্র্যাচ রয়েছে। ক্র্যাচে ভর দিয়ে লোকটি চলাফেরা করে।
সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে খুব দ্রুত ঋতুর রাজা বসন্তের প্রথম অংশ অর্থাৎ ফাল্গুন মাস বিদায় নিল। আগমন ঘটল চৈত্রের। ক্যালিন্ডারের হিসেব অনুযায়ী দিনটি ছিল ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪, ৩ চৈত্র ১৪১৯, ১৭ মার্চ ২০১৩, রোজ রোববার। বিকেল বেলা। ঘড়িতে সময় ৪টা বেজে ৫৫ মিনিট। ঘুম থেকে উঠে আকশের দিকে চেয়ে দেখলাম প্রকৃতির মুখটা বেশ কালো, ভারী। ভাবলাম কিছুক্ষণ পরেই হয়ত ঝরঝর করে কেঁদে দিবে। তাই দেরী না করে তাড়াতাড়ি অযু করে ঘর থেকে বের হলাম। আমার বাসার অদূরেই একটি মসজিদ আছে। আমি অধিকাংশ সময় এ মসজিদেই নামাজ পড়ি। আমার সামনের সারিতে আসরের নামাজের সময় যে লোকটি দাড়িয়ে নামাজ পড়েছিল, লেখার শুরুতে আমি তার বর্ণনা দিয়েছি। লোকটির বিস্তারিত পরিচয় আমার জানা নেই। তবে মসজিদে গেলে নিয়মিত তাকে দেখি।
অবাক করার মতো বিষয় হল, লোকটি এক পায়ে ভর দিয়ে দাড়িয়ে নামাজ পড়ে। নামাজের সময় অহেতুক নাড়াচড়া করে না। স্বাভাবিক মানুষের মতো রুকু, সিজদা করে। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় সে খুবই মনযোগী থাকে। অপরিচিত এই মানুষটির নামাজ আদায়ের সার্বিক চিত্র আমার মনকে সত্যিই আন্দোলিত করেছে। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকার পরেও সে আল্লাহর সামনে খুবই সুন্দরভাবে দাড়ায়, নিজের আনুগত্য প্রকাশ করে। আমি তো একজন সুস্থ যুবক। তাহলে আমি কেন আরো সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করতে পারব না? আমি কেন বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারব না? ভাল কাজের প্রতি কেন মনযোগী হতে পারব না? আমাকে আরো ভালভাবে নামাজ পড়তে হবে, ভালো কাজ করতে হবে।
আরেকটা বিষয়। আমাদের চারপাশে অসংখ্য পঙ্গু লোক রয়েছে। সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই মানুষগুলোর জীবনকে আলোকিত করতে পারেনি। তাই তারা আজ ভিক্ষা করে। নানা অপমান, বঞ্চনাকে সাথে নিয়ে সমাজে জীবন-যাপন করে। সত্য কথা হল, অসহায় পঙ্গু মানুষের অধিকারের বিষয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাথে তর্ক করাটা আসলে বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ সরকার নিজেই তার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় লোকদের ব্যবহার করে রাষ্ট্রের নাগরিকদের পঙ্গু করে দিচ্ছে, হত্যা করছে। এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘাতে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণ ঝরে গেছে। ব্রিটিশ আমলে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর এত বিপুল সংখ্যক সাধারণ নাগরিককে এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রাণ দিতে হয়নি। আসলে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের চরম ফ্যাসিবাদী রূপটি ফুটে উঠেছে ( উল্লাহ, ২০১৩)। আসলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারাক্ষণ যেন ব্যস্ত রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন ও নির্মূল করার কাজে। এ কাজে সরকারপক্ষ প্রকাশ্যে যেসব পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে, তা কোনো মতেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব কর্মকা- আইনের শাসনকে রীতিমতো লঙ্ঘন করে। তবুও সরকারি দলের অগণতান্ত্রিক কর্মকা- থামছে না (মুনীর, ২০১৩)। সব শেষে বলা যায়, বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কার্যত দিন দিন জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর এ কারণেই তাদের পতন হবে, খুব দ্রুত।
তথ্যসূত্র
১.উল্লাহ, ড. মাহবুব। (২০১৩, মার্চ ১৬)। আমরা নিরাশ হতে চাই না। দৈনিক আমার দেশ, পৃষ্ঠা নং.৬।
২.মুনীর, গোলাপ। (২০১৩, ১৮ মার্চ)। সরকারকে হতে হয় জনমন পাঠক। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা নং.৭।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন