নতুন প্রেরণা, একজন উজ্জ্বল এবং কিছু ভাবনা.............. ...
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০২:৫৬:৪১ দুপুর
ঘড়িতে তখন সময় সন্ধ্যা পৌনে সাতটা। সারাদিন আলো ছড়িয়ে ক্লান্ত সূর্য মামা আধা ঘন্টা আগেই পশ্চিম আকাশের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। এবার আধারের পালা। প্রকৃতি তার আধারের চাদর দিয়ে আস্তে আস্তে সবাইকে ঢেকে দিচ্ছে। মাগরিবের নামজ পড়ে পুরান ঢাকার ওয়ারিতে মেইন রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছি। সায়দাবাদ-মোহাম্মদপুরগামী একটি বাস পয়ে সেটিতে উঠে পড়লাম। আমার গন্তব্যস্থল হলো বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেট, সেখান থেকে ১০ মিনিট পায়ে হেটে অফিসে পৌছা। বাসে উঠার সাথে সাথে একটি কচি কণ্ঠ বলে উঠল ‘ভাই পিছনে যান, পিছনে যান; জায়গা খালি আছে’। বাসের ভিতরে আলো স্বল্পতা। এরপরও আলো-আধারির মাধ্যে ভাল করে তাকিয়ে দেখি ৭/৮ বছরের একটি ছোট ছেলে। তার গায়ে একটি ময়লা সাদা টি শার্ট আর কাল রঙের প্যান্ট। হাতে বেশ কিছু টাকা। বুঝলাম এই ছোট ছেলেটিই বাসের কন্ট্র্যাকটর। তবে ঠিকঠাক মতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার ব্যাপারে সে বেশ সচেতন। বাস মতিঝিল পৌছার পর ভাড়া দিলাম। ছেলেটিকে দেখে কেমন যেন মায়া লাগল। জিজ্ঞেস করলাম ‘নাম কী?’। এক কথায় ছোট করে উত্তর দিল, উজ্জ্বল।
নাম উজ্জ্বল হলেও ছেলেটির জীবন চলার পথটি যে উজ্জ্বল না, সেটা ভাল করেই বুঝলাম। কারণ, যে বয়সে স্কুলে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, বিকেলের মিষ্টি রোদে বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলার কথা; সে বয়সে উজ্জ্বল দু’মুঠো ভাতের জন্য জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েছে। এমন হাজারো উজ্জ্বল শুধুমাত্র বেঁচের থাকার তাড়নায় বিভিন্ন পেশায় যোগ দিচ্ছে। স্বেচ্ছায় বরণ করে নিচ্ছে নানা কষ্টকে। মনে মনে ভাবলাম, উজ্জ্বলরা যদি কষ্ট করতে পারে, তবে আমি কেন মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে পারব না? আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার পরেও কেন হাজারো মানুষকে হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জনের পথের সন্ধান দিতে পারব না? আমাকে পারতেই হবে।
আকেরটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আন্তুর্জাতিক শ্রম আইন অনুসারে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব শিশু শ্রম বন্ধ করা, শিশুদের যাতে শ্রম বিক্রি করতে না হয় সে ব্যবস্থা করা। আসলে এ সরকারের সাথে আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে তর্ক করা বোকামি। আমি তর্ক করব না। কারণ, বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজট (আপনি ‘মহাজোট’ অথবা ‘সমস্যাজট’ বলতে পারেন ) সরকার গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়, নীতি, মানবাধিকার এগুলোর কোনটিকেই বিশ্বাস করে না। আর বিশ্বাস করে না বলেই উজ্জ্বলদের না খেয়ে থাকতে হয়, সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার যদি সত্যিকার অর্থেই ‘জনগণের সরকার’ হত তবে কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশের ১৫০ জনেরও বেশি সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে হত্যা করতে পারত না। এছাড়া হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি এসব বিষয়ে নিয়ে নতুন করে কী বলার আছে! সব শেষে বলব, নিজের চোখ-কান খোলা রাখুন। সমাজের তথাকথিত দর্পণ হিসেবে পরিচিত মিডিয়া, আওয়ামীলীগ-বাম নেতৃত্বাধীন সরকার কিংবা বিরোধীদল কারো কথা বিশ্বাস করবেন না। সব কিছু নিজের বিবেক দিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
বিষয়: রাজনীতি
১১৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন