একজন ফিলিস্তিনির যাত্রা
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:০৭:৩৩ সন্ধ্যা
"কল্পনা করুন, কেউ আপনার বাড়িতে আসে। বাড়ির ভিতর যা কিছু আছে সেসবের অধিকাংশই চুরি করে এবং আপনাকে ঘরের এক কোণায় রেখে দেয়। প্রত্যেকবার সে আপনার দিকে তাকায়। এরপর আপনাকে দেখলেই তার মনে হয়, সে নিজে একজন চোর। সে আপনার কাছ থেকে চুরি করল এবং আপনার পরিবারকে হত্যা করল।" কথাগুলো বলছিলেন ফিলিস্তিনি যুবক মুহাম্মদ (২৪)।
"আমি মনে করি এ কারণে সব সময় তারা (ইসরাইলিরা) আমাদের দেখে, তারা ঐভাবে (হত্যাকাণ্ড) প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইসরাইলিরা সব সময় আমাদের ভয় পায়, কারণ তারা জানে তারা কিছু ভুল করছে"।
যুবকের যাত্রা
জেরুজালেম থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে উম আল-ফাহিম শহরে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ। ইসরাইলের এই শহরটি আরব নাগরিক অধ্যুষিত চতুর্থ বৃহৎ শহর। এখানে ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন।
২০০৮ সালে ১৮ বছর বয়সে স্কলারশিপ পেয়ে ফার্মাসি বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পড়তে আসেন মুহাম্মদ। বর্তমানে তিনি শেষ বর্ষের ছাত্র। ক্যাপটাউনের উপশহর সুরি'তে একটি পরিবারের সাথে বসবাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি বাইরে যেতে চাইতেন। যাহোক, স্কলারশিপ পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের বাইরে আসেন। যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় আসলেন, তখন সবাই অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁর সাথে ভালো ব্যবহার করল।
মুহাম্মদের ভাষায়, "যখন (জনগণ) জানল আমি ফিলিস্তিন থেকে এসেছি, তারা আমাকে আলিঙ্গন করল। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করল। ফিলিস্তিনের জন্য এই ভালোবাসা আমাকে বিস্মিত করল।"
দুর্দশার শুরু
১৯৪৮ সালে মুহাম্মদের দাদাকে ইসরাইলি সৈন্যরা হত্যা করে। তখন তার দাদীর বয়স ছিল ৩০ এর কোটায়। ১১ সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলেন এই নারী। সবার ছোট সন্তানটির বয়স ছিল ৪ মাস।
ফিলিস্তিনি যুবক মুহাম্মদ বলেন, "আমার দাদী আমরা পথপ্রদর্শক। তিনি ফিলিস্তিনি নারীদের একটি উদাহরণ। তিনি খুবই শক্ত এবং কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও পরিবার নিয়ে দাড়িয়েছেন। নিজের দেশের জন্য তার অনেক ভালোবাসা রয়েছে।"
১৫ মে নাকবা বা 'বিপর্যয় দিবস' সম্পর্কে দাদীর কাছ থেকে প্রথম জেনেছিলেন মুহাম্মদ। ১৯৪৮ সালের এই দিনে (১৫ মে) ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাদের ভূমি কেড়ে নিয়ে ইসরাইলিদেরকে দেওয়া হয়।
খেলা নয়, রাজনীতি পছন্দ
ছোট বেলায় মুহাম্মদ খেলার চেয়ে রাজনীতির প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন। তার চিন্তার জগতের মোড় ঘুরে যায় ২০০০ সালে। সে সময় দ্বিতীয় ইনতিফাদা বা অভ্যুত্থান শুরু হলে তার শহরে ইসরাইলিদের গুলিতে ৬ ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত হয়।
মুহাম্মদের ভাষায়, দৈনন্দিন জীবন নির্ধারণ করে রাজনীতি। এটা তাকে দ্রুত বড় করেছে। রাজনীতির কথা চিন্তা করতে গিয়ে সে খেলার বিষয়ে চিন্তা করার সময় পেত না।
শুধুই বৈষম্য
মুহাম্মদ বলেন, তিনি সব সময় ইসরাইলিদের কাছ থেকে ভিন্ন আচরণ পেতেন। তাকে সব সময় নীল পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখতে হতো। চলার পথে প্রতিদিন পুলিশ তাকে থামাতো এবং জিজ্ঞেসাবাদ করতো।
এমনকি বড় কোনো মার্কেটে প্রবেশের সময় বৈষম্য আচরণ প্রকাশ পেত ইসরাইলিদের কাছ থেকে। মুহাম্মদের ভাষায়, " ইহুদিরা স্বাধীনভাবে প্রবেশ করতে পারে। যখন তারা দেখে তুমি একজন আরব, তারা ব্যাপকভাবে তোমাকে তল্লাশি করে।" এ ধরণের আচরণ ব্যক্তির মাঝে হীনমন্যতা তৈরী করে।
যুদ্ধ নয় গণহত্যা
মুহাম্মদের দৃষ্টিতে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া গাজার উপর ইসরাইলি আক্রমণ কোনো যুদ্ধ নয়, বরং "গাজার মানুষের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যা।"
তিনি আরো বলেন, "যারা গাজায় বাস করছেন তারা সবাই শরণার্থী। তারা সেই সব মানুষ যারা হাইফা অথবা জেরুজালেমে বাস করতেন। কিন্তু ১৯৪৮ সালে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন।"
হামাস সম্পর্কে মুহাম্মদের মূল্যায়ন হলো," পৃথিবীর চতুর্থ শক্তিশালী সামরিকবাহিনীকে মোকাবেলা করছে হামাস। ৮ বছর আগে গাজার উপর ইসরাইলি অবরোধ শুরুর পর থেকে কোনো সিমেন্ট অথবা ইট আনা যাচ্ছে না। হামাস যে রকেটগুলো ব্যবহার করছে, সেগুলো গাজার জনগণের হাতে স্বল্প সংখ্যক যা কিছু আছে- তা দিয়ে তৈরী।"
সমাধানের পথ
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্পর্কে মুহাম্মদ বলেন, "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সত্যের পক্ষে দাড়ানো এবং গাজার উপর আরোপিত অবরোধ ভাঙ্গার প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই।"
তিনি আরো বলেন, যদি ফিলিস্তিনে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হয় তবে সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পদায়কে ফিলিস্তিনিদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। আর তখনই ইসরাইলিরা শান্তি আলোচনার বিষয়ে গুরুত্ব দিবে। সূত্র: মিডিলিস্ট মনিটর
- See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/21617#sthash.5d70qLm5.dpuf
বিষয়: বিবিধ
১৩৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
আমার কাছে মনে হয়েছে বা বিশ্বাস করি - ফিলিস্থিনিরা আজকের পরিস্থিতির জন্য কিছুটা হলেও দায়ী।
তবে গণহত্যার জন্য নয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন