ইসরাইলের কাছে আতঙ্কের নাম হামাসের সুড়ঙ্গ
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০২:৫৪:১০ দুপুর
ফিলিস্তিনের গাজা-মিশর সীমান্তে প্রায় ১৫ বছর আগে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ নির্মাণ করেছে হামাস। ইসরাইলের সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সুড়ঙ্গগুলোর সাহায্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং অস্ত্র আনা হয়।
দীর্ঘ দিন ধরে গাজার উপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরাইল। অবরোধের কারণে এই নগরের মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে হামাসের তৈরী সুড়ঙ্গগুলো গাজার জনসাধারণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দখলদার ইসরাইলি সেনার যখন গাজা থেকে অনেকাংশে সরে আসে, তখন কয়েক শত সুড়ঙ্গ তৈরী করে হামাস। ব্যবসায়ীরা এসব সুড়ঙ্গ দিয়ে যে পণ্য এনে থাকেন, সেগুলোর জন্য গাজার কর্তৃপক্ষকে কর দিয়ে থাকেন।
গত বছরের জুলাই মাসে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে দেশটির সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর মিশরের সরকার সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করে দেয়। গাজায় সম্প্রতি যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, সেটার জন্য সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি দায়ী।
বিস্মিত ইসরাইল
গাজা-ইসরাইল সীমান্তের নীচে একটি সুড়ঙ্গ আছে। ২০০৬ সালে এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে হামাস যোদ্ধারা অভিযান পরিচালনা করে। অভিনব এই অভিযানে বিস্মিত হয়ে যায় ইসরাইল।
শুধু তাই না, অভিযানে ২ ইসরাইলি সেনা নিহত ও ১ জন আহত হয়। এছাড়া গিলাদ শালিত নামে অপর এক ইসরাইলি সেনাকে আটক করে হামাস।
ইট-পাথরের সুড়ঙ্গ
হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ইট-পাথরের সাহায্যে অনেকগুলো পাকা সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু করে। এসব সুড়ঙ্গ বেশ জটিল। আবাসিক এলাকার নিচে নির্মিত সুড়ঙ্গগুলোর একাধিক প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার পথ আছে।
এছাড়া বেশ কিছু দিন নিরাপদে অবস্থান করার জন্য বিদ্যু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে সুড়ঙ্গগুলোতে। যুদ্ধের সময় হামাস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার করে।
মিশর থেকে পণ্য আনার কাজে যে সব সুড়ঙ্গ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো বেশ বড়। অন্যদিকে যুদ্ধের সময় অভিযান পরিচালনার জন্য নির্মিত সুড়ঙ্গগুলো ছোট। এগুলো দিয়ে একজন অস্ত্রধারী যোদ্ধা ভালোভাবে হাটতে পারে।
জটিল ফাঁদ
সুড়ঙ্গগুলো একটি অপরটির সাথে যুক্ত। একাধিক প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার পথ থাকায় হামাস যোদ্ধার দ্রুত অভিযান চালিয়ে নিরাপদে সরে যেতে পারেন।
মজার বিষয় হলো, সুড়ঙ্গের প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার পথগুলো ছদ্মবেশী। আবাসিক এলাকার বাড়ি, মসজিদ কিংবা বিভিন্ন স্কুলগুলোর কক্ষ ব্যবহৃত হয় সুড়ঙ্গের প্রবেশ পথ বা বহির্গমণ পথ হিসেবে। ফলে ইসরাইলের সেনারা সুড়ঙ্গের সঠিক অবস্থান জানতে পারে না।
হামাসের নির্মিত সুড়ঙ্গগুলো এতই জটিল যে, এগুলোর সঠিক অবস্থান সম্পর্কে ইসরাইলের সেনাবাহিনী নিশ্চিত নয়।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার জন্য ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে বেশি সংখ্যায় সুড়ঙ্গ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় হামাস। হামাসের এই সিদ্ধান্ত জানতে পারে ইসরাইল। এরপর তারা কয়েকটি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে। কিন্তু বাকিগুলো অক্ষত থেকে যায়।
যেভাবে নির্মিত হয় সড়ঙ্গ গুলো
মাটির ৬৩ ফিট নিচে সুড়ঙ্গ গুলো নির্মাণ করা হয়। সুড়ঙ্গ নির্মাণের সময় ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে মাটি খোড়া হয় না। ভারী যন্ত্র ব্যবহার করলে ইসরাইলের পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের প্রহরীরা সতর্ক হবে এবং সুড়ঙ্গ নির্মাণ করতে দিবে না।
এ কারণে কোদাল দিয়ে হাতে মাটি কেটে সুড়ঙ্গগুলো তৈরী করা হয়। আর এ জন্য কয়েক মাস সময় ব্যয় করেন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।
সনাক্ত করা কঠিন
সুড়ঙ্গগুলোর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন। এগুলোর প্রবেশপথ কিংবা বের হওয়ার পথ ধ্বংস করা গেলেও পুরো সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা যায় না। এছাড়া, কিছু কিছু সড়ঙ্গ একটি অপরটির সাথে যুক্ত। তাই ছদ্মবেশী সুড়ঙ্গগুলো ইসরাইলের কাছে আতঙ্কের নাম।
আরেকটি বিষয়, সুড়ঙ্গগুলোর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার উপযুক্ত কোনো প্রযু্ক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি দখলদার ইসরাইল। রাডার এবং অন্যান্য কিছু প্রযুক্তির সাহায্যে তারা সুড়ঙ্গগুলো আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যদি ইসরাইল সত্যি সত্যি সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতে চায় তবে সে ক্ষেত্রে তাকে ২টি উপায়ের যে কোনো একটি অবলম্বন করতে হবে। প্রথম উপায় হলো, ইসরাইলের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য ফিলিস্তিনের ভেতর ভালো গোয়েন্দা তৈরী করা। দ্বিতীয় উপায় হলো, ফিলিস্তিনের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালানো।
হামাসের তৈরী সুড়ঙ্গগুলো নিয়ে বিবিসি'তে 'গাজা: হাউ হামাস টানেল নেটওয়ার্ক গ্রিউ' শিরোনামে একটি ফিচার লিখেছেন ড. এডু হ্যাচ। লেখাটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ টাইম নিউজ বিডি'র পাঠকদের জন্য উপরে তুলে ধরা হয়েছে।
- See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/19423#sthash.KdOnUkPZ.dpuf
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দ্বিতীয় উপায় হলো, ফিলিস্তিনের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালানো
আল্লাহতায়ালা হামাসকে সাহায্য করুন, আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন