প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের ২৫০,০০০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সৈন্যরা
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ০৯ মে, ২০১৪, ০৯:৩৫:৪০ রাত
দেশের প্রয়োজন তোমাকে
১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ৭০০,০০০ সৈন্য ও অফিসার ছিল। আর জার্মান সেনাবাহিনীতে ছিল ৩০ লাখ ৭০ হাজার সদস্য। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে নতুন সদস্য নিয়োগের ঘোষণা দেয় ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষ। সরকারি ঘোষণায় সাড়া দিয়েছিল ২৫০,০০০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে, যাদের বয়স ছিল ১৯ বছরের কম। অথচ, আইনে বলা আছে কম বয়সীরা দেশের বাইরে যুদ্ধ করতে পারবে না।
যুদ্ধের ময়দানে প্রাপ্ত বয়স্ক সৈনিকরা যেমন অভিজ্ঞাত লাভ করেছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক সৈনিকরাও একই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, যারা সামনের সারিতে যুদ্ধ করেছে তাদের প্রায় অর্ধেক সদস্য আহত হয়েছে, মারা গেছে অথবা বন্দী হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, এত বিশাল সংখ্যক ছেলে কেন তাদের বয়সের বিষয়ে মিথ্যা বলেছিল, অথবা (নিজেদের) মিথ্যা নাম বলে যুদ্ধে নেমেছিল? ব্রিটেন কীভাবে ২৫০,০০০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সৈন্যদের প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল?
আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল ছেলে এবং যুবকেরা
২৫০,০০০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সৈন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল। আর যোগদানের জন্য চেষ্টা করেছিল অনেকেই; কিন্তু নানা কারণে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই মানুষগুলো সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য কেন এত আগ্রহী ছিল? দেশ প্রেমের কারণে, নাকি তারা নিজেদের কঠিন অথবা বিষন্ন জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিল?
সরকারি নীতি
নতুন সৈন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হলে বয়স হতে হবে ১৮ বছর। আর দেশের বাইরে যুদ্ধে যেতে হলে বয়স হতে হবে ১৯ বছর। বাস্তবতা হলো, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অধিকাংশ মানুষের জন্মসনদ ছিল না। আর তাই নিজের বয়সের বিষয়ে মিথ্যা বলা সহজ ছিল।
নিয়োগদানকারী কর্মকর্তাবৃন্দ
একজন নতুন সৈন্য নিয়োগ দিতে সক্ষম হলে একজন অফিসার ২ শিলিং এবং ৬ পেন্স (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৬ পাউন্ড) পেতেন। আর এ কারণে অফিসারগণ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহীদের বয়সের বিষয়ে তেমন খেয়াল করতেন না। একই সাথে কিছু কিছু অফিসার মনে করতেন, সেনাবাহিনীর সতেজ বাতাস এবং ভালো খাবার অপুষ্টির শিকার ছেলেদের জন্য কল্যাণকর।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়োগের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো। বয়সের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত শারিরীক যোগ্যতার বিষয়টি। নূন্যতম উচ্চতা চাওয়া হতো ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, বুকের সাইজ ৩৪ ইঞ্চি। ফলে, ১৬ বছরের তরুণরা সহজেই সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পেত।
আসলে নিয়মটা ছিল, যদি কেউ স্বেচ্ছায় নিজ দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চায় এবং শারিরীক দিক থেকে সক্ষম হয় তবে তাকে কেন বাঁধা দেওয়া হবে?
শিক্ষক, পিতা-মাতা এবং অন্যান্যদের ভূমিকা
সেনাবাহিনীর অফিসারদের পাশাপাশি পিতামাতা, স্কুলের শিক্ষক এমপিরাও অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন।
সহজ কথায়, যুদ্ধে যোগদানের বিষয়ে এক ধরনের সাড়া পড়ে গিয়েছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একই সঙ্গে অধিকাংশ মানুষ (নিয়োগদানের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ও পিতা-মাতাসহ) মনে করেছিলেন, যারা যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক তারা বিদেশের মাটিতে যুদ্ধের মায়দানে যাওয়ার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।
বাড়িতে প্রত্যাবর্তন
১৯১৬ সালে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করল, যদি কোন অভিবাবক প্রমাণ করতে পারে যে, তার সন্তান অপ্রাপ্ত বয়স্ক তবে সেই সৈন্যকে ফেরত পাঠানো হবে। এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রত্যেক মাসে প্রতি ৫ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সৈন্যের মধ্যে ১ জন সৈন্য বাড়িতে ফেরত যাওয়ার অনুমতি পেত।সূত্র: বিবিসি
ঢাকা, ৯ মে(টাইমনিউজবিডি) // টিআই
- See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/12148#sthash.L9ygum9y.dpuf
বিষয়: বিবিধ
১০৪২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন