শূন্য থেকে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন যারা
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ১৭ মার্চ, ২০১৪, ০৪:০৩:৫৫ বিকাল
আজকে এমন সব বিলিয়নিয়ারদের গল্প বলবো, যারা এক সময় দরিদ্র ছিলেন বা খুবই সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তারা বিলিয়নিয়ারে পরিণত হলেন তা নিয়েই আজকের আমাদের এই আয়োজন।
কীভাবে তারা প্রত্যয়, সাহস, দৃঢ় সংকল্প, পরিশ্রম করে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছেন তা জেনে নেয়া যাক। শুধু টাকা উপার্জনই নয়, তাদেরকে সফল মানুষও বলতে হবে। তারা অনুপ্রেরণা যোগাতে পারেন বিশ্বের কোটি কোটি হতাশ যুব সমাজকে।
১. কেনি ট্রাউট: কেনি ট্রাউট নামের মার্কিন এই বিলিয়নিয়ারের বাবা ছিলেন বারের (মদের দোকানের) পরিবেশক। পড়াশোনা করেছেন সাউদার্ন ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ তাকে নিজেকেই যোগাতে হয়েছে। খরচ যোগাতে তিনি তার লাইফ ইন্সুরেন্স বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেই ট্রাউট এখন (সেপ্টেম্বর, ২০১৩ পর্যন্ত) ১.৭ বিলিয়ন (১৭০ কোটি) মার্কিন ডলারের মালিক। তিনি এক্সেল কমিউনিকেশন নামের একটি ফোন কোম্পানির মালিক। এটি তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কোম্পানিটি। আট বছরের নিরলস প্রচেষ্টার পর ১৯৯৬ সালে তিনি সফলতার মুখ দেখতে পান। আর পিছনে ফিরতে হয়নি তাকে।
২. হাওয়ার্ড স্কাল্টজ: আমেরিকায় খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন হাওয়ার্ড স্কাল্টজ। দরিদ্রদের জন্য সরকারের তৈরি করা আবাসন প্রকল্পেই বড় হয়েছেন। তিনি আজ ২০০ কোটি মাকিন ডলারের মালিক। কীভাবে এটা সম্ভব হলো? শুনুন তার মুখ থেকেই-
মিরর অনলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্কাল্টজ বলেন, "জন্মের পর থেকেই আমি মনে করতাম, আমি আমার চিন্তার বিপরীত পাশে অবস্থান করছি। আমি জানতামন অন্যপাশের লোকগুলো খুব ধনী, তাদের রয়েছে প্রচুর টাকা ও সুখী পরিবার। আমিও ভাবতাম, আমি কেন এরকম হলাম না! আমি স্বপ্ন দেখতাম, দুই পাশের মাঝখানে অবস্থান করা ওই দেয়ালটি আমি টপকে যাবো। আমার এখন একটি স্যুট আর টাই রয়েছে! কিন্তু আমি জানি আমি কোথা থেকে এসেছি এবং আমি কে ছিলাম!"
স্কাল্টজ ফুটবল খেলতেন ভালো। ভালো খেলায় স্কলারশিপ নিয়ে নর্দার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর জেরক্স কোম্পানিতে চাকির নেন। চাকরি নেয়ার কিছুদিন পরই স্টারবাকস নামের একটি কফি শপ দেন। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা তার ওই কফি শপের বিশ্বজুড়ে এখন কয়টা শাখা জানেন? মাত্র ১৬ হাজার!
৩. কেন ল্যানজোন: বিলিয়নিয়ার এই ব্যক্তির বাবা ছিলেন একজন পানির পাইপের একজন মিস্ত্রী, আর মা ছিলেন ক্যাফেটেরিয়ার শ্রমিক। তার সম্পত্তির পরিমাণ ২১০ কোটি মার্কিন ডলার। বাকনেল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার খরচ যোগাতে তাদের বাড়িটি বন্ধক দিতে হয়েছিল।
১৯৬৮ সালে তিনি রস পেরোটের সঙ্গে যৌথভাবে ইলেকট্রনিক ডাটা সিস্টেমস নিয়ে কাজ করেন। সফলতার দেখা পান ১৯৮১ সালে।
৪. অপরাহ উইনফ্রেহ: সবার চেনা এই মুখটি হলেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। তার বাবা-মা ছিলেন আফ্রিকা থেকে আগত দারিদ্রপীড়িত। স্কলারশিপ নিয়ে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। এবং তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান টেলিভিশন করেসপনডেন্ট হন। ১৯৮৩ সালে তিনি শিকাগো শহরে চলে যান এবং একটি টেলিভিশন শো শুরু করেন, এটিই আজকে 'দি অপরাহ উইনফ্রে শো' নামে বিখ্যাত হয়েছে। তার সম্পত্তির পরিমাণ ২৯০ কোটি ডলার।
৫. শহীদ খান: আমেরিকায় পাকিস্তানি অভিবাসী এই ব্যক্তিটি এক সময় থালা-বাটি ধোয়ার কাজ করতেন। এজন্য প্রতিনি ঘণ্টায় তাকে দেয়া হতো মাত্র ১.২ ডলার। তিনি এখন ৩৮০ কোটি ডলার সম্পত্তির মালিক। তিনি এখন বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি।
তিনি এখন ফ্লেক্স-এন-গেট নামের একটি বৃহৎ কোম্পানির মালিক। এ ছাড়া, এনএফএল-এর জ্যাকসনভিলে জাগুয়ার্স, ফুটবল ক্লাব ফুলহ্যামের মালিক।
৬. কার্ক কারকোরিয়ান: হতে চেয়েছিলেন একজন বক্সার। আর তা হতে গিয়ে স্কুলে গ্রেড এইটি পড়া অবস্থায় পড়াশোনা ছেড়ে দেন। পড়ে তিনি রাইফেল রাইট কারকোরিয়ান নাম নিয়ে বক্সার হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ রয়েল এয়ার ফোর্সের হয়ে কাজ করেন। এরপর আমেরিকায় অভিবাসন করেন। লাস ভেগাসে গড়ে তোলেন রিসোর্ট এবং হোটেল। তার সম্পত্তির পরিমাণ ৩৯০ কোটি ডলার।
৭. জন পল ডিজোরিয়া: তিনি বড় হয়েছেন অনাথালয়ে। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ক্রিস্টমাস কার্ড ও পত্রিকা বিক্রি করতেন। এরপর তিনি একটি ডাকাত দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তবে, অচিরেই তিনি ওই পথ থেকে ফিরে আসেন এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মাত্র ৭০০ ডলার ঋণ নিয়ে তিনি চুলের এক ধরনের শ্যাম্পু তৈরি করেন যার নাম দেন জন পল মিচেল সিস্টেমস। তিনি এটি বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করতেন। তখনও তার কোন বাড়ি ছিল না। এরপর তিনি প্যাট্রন টেকুইলা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে জড়ান। ধীরে ধীরে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানে তিনি বিনিয়োগ করতে থাকেন। এখন তিনি ৪০০ কোটি ডলারের মালিক।
৮. ডু উন চ্যাং: কোরিয়া থেকে যখন আমেরিকায় অভিবাসন করেন তখন চরম দুর্দিন চ্যাংয়ের। আমেরিকায় এসে প্রথমে তিনি দারোয়ানের কাজ করেন। এরপর কাজ করেছেন গ্যাস স্টেশনের অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে এবং কফি শপের কর্মী হিসেবে। তিনি এখন কত সম্পত্তির পরিমাণ জানেন? ৫০০ কোটি ডলার।
চ্যাং এবং তার স্ত্রী জিন সুক মিলে গড়ে তোলেন 'ফরএভার ২১' নামের একটি কাপড়ের স্টোর। সেটা ১৯৮৪ সালের কথা। তার 'ফরএভার-২১'র শাখা এখন বিশ্বজুড়ে ৪৮০টি। প্রতিবছর বিক্রি হয় প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের।
৯. রাল্ফ লরেন: ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারে। রাল্ফ তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন টাই তৈরির একটি দর্জির দোকানের কর্মচারী হিসেবে। দারিদ্রের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই একটি টাইয়ের দোকান দেন। প্রথম বছরেই বিক্রি করেন ৫ লাখ ডলারের টাই। কারণ তিনি চওড়া ও উজ্জ্বল ধরনের টাই তৈরি করতে পারতেন। পোলো ব্র্যান্ডের টাই তার হাতে তৈরি।
১০. ফ্রাঙ্কুইস পিনাল্ট: দারিদ্রের কারণে ১৯৭৪ সালে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন পিনাল্ট। শুধু তাই নয়, গরিব হওয়ার কারণে স্কুলে তাকে টিজ করা হতো। তিনি অত্যন্ত সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী একজন বিনিয়োগকারী। কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যখন মার খায়, তখন তিনি সেই ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প টাকায় কিনে নিতেন। তিনি বর্তমানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউজের মালিক। এগুলোর মধ্যে গুসি, স্টেলা ম্যাককার্টনি, আলেকজান্ডার ম্যাককুইন ও ইভেস সেইন্ট লরেন্ট উল্লেখযোগ্য। তার সম্পত্তির পরিমাণ দেড় হাজার কোটি ডলার। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার
- See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/7083#sthash.IUloA129.dpuf
বিষয়: বিবিধ
১৪১৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাহাহা যেদিন আপনি বিলিয়নার হবেন সেদিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন