এক যুবকের ভাবনা ও রাষ্ট্রযন্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ২৬ আগস্ট, ২০১৩, ১১:৫৩:৫০ রাত
দুপুর একটা বেজে ত্রিশ মিনিট। প্রচ- গরম। বাসায় ফিরব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বাসে চড়লাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে সোয়া দুইটা। রাজধানী ঢাকার মালিবাগের পাশের একটি মহল্লায় আমরা বাসা। বাসায় পৌছে গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে গত কয়েকদিনের পুরাতন পত্রিকা পড়তে আরম্ভ করলাম। বিদ্যু ছিল না। দরদর করে শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল। বাস্তবতা হলো বিদ্যু না থাকাটা বর্তমান সরকারের আমলে বিশেষ কোনো ঘটনা নয়; স্বাভাবিক ব্যাপার। দেশের লাখো সাধরণ নাগরিকের মতো আমিও বিদ্যু না থাকলে কষ্ট করি। যাহোক, নিজের কথা অনেক বলেছি। এবার মূল আলোচনায় প্রবেশ করতে চাই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। ছোট চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো সব জায়গায়ই একই আলোচনা। সহজ ভাষায় গণতন্ত্রের পরিচয় দিতে চাইলে বলতে হয় “সর্বোচ্চ সহনশীলতার মাধ্যমে সহাবস্থানের নাম হলো গণতন্ত্র ( মজুমদার, ২০১৩)।” আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীরা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে সবচেয়ে বেশী প্রধান্য দেন। জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেন না। এমন পরিস্থিতিতে একটা ‘পরিবর্তন’ জরুরি। আর সেই পরিবর্তনটা কোন্ পদ্ধতিতে হবে সেটা মুখ্য ব্যাপার নয় (সালাম, ২০১৩)।
যদি গভীরভাবে চিন্তা করা হয় তবে দেখা যাবে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুব ভাল নেই। দিন দিন কুৎসিত, কদাকার হচ্ছে। একটু আলোচনা করলে পাঠক বিষয়টি সহজ বুঝতে পারবেন । আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাত হাজার একশত একটি মামলা সম্পূর্ণ বা আংাশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ‘রাজনৈতিক মামলার’ তকমা লাগিয়ে প্রত্যাহারকৃত এসব মামলা থেকে খুন, অগ্নিসংযোগ ও ডাকাতির মতো মারাত্মক অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও দলীয় বিবেচনায় মুক্তি পেয়েছেন। হত্যা মামলাসহ আরো ৭২টি মামলা সম্প্রতি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি (“রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার”, ২০১৩)। রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের নামে অপরাধীদের মুক্তি দেয়া আমার দৃষ্টিতে ‘গুরুতর অপরাধ’।
এবার দেশের রাজনীতির মাঠের বিষয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। মাঝে মধ্যেই শোনা যাচ্ছে যে, সরকার বিএনপিকে ভেঙ্গে নতুন বিএনপি তৈরি করতে চায়। সরকারের এই ধরনের তৎপরতা সফল হবে না। বরং এ ধরনের তৎপরতার ফলে হিংসা-প্রতিহিংসা, সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে। প্রকৃত ব্যাপার হলো বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের চিন্তাশীল মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামের সবাই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে ( সিরাজ, ২০১৩)। সম্প্রতি বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিক বান কি মুন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং সংকট নিরসনে সংলাপের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। বান কি মুনের সাথে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধানের আলোকে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। তার সরকার সংলাপের বিরুদ্ধে নয়। আর খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি সব সময় সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় বিশ্বাসী। তবে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না (“সংলাপে বসুন”, ২০১৩)।
যাহোক, একজন যুবক হিসেবে আমি আশাবাদী। আমি মনে করি বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার উদ্যোগ না নিলে আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার নিজেদেরকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন। কথা হবে অন্য কোনো দিন, এই প্লাটফর্মে।
তথ্যসূত্র
১.মজুমদার, এরশাদ। (২০১৩, আগস্ট২৪)। মিসরে গণতন্ত্রের অবস্থা ও বাংলাদেশের রাজনীতি। দৈনিক নয়াদিগন্ত ,পৃষ্ঠা নং ৬। ঢাকা: শামসুল হুদা।
২. সালাম, রেহানা। (২০১৩, আগস্ট২৫)। গণতন্ত্রহীন গণতন্ত্রÑগন্তব্য কোথায়?। দৈনিক নয়াদিগন্ত, পৃষ্ঠা নং ৬। ঢাকা: শামসুল হুদা।
৩. রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার একটি মন্দ সংস্কৃতির প্রচলন। ২০১৩, আগস্ট২৪। দৈনিক নয়াদিগন্ত ,পৃষ্ঠা নং ৬। ঢাকা: শামসুল হুদা।
৪. সিরাজ, কাজী। (২০১৩, আগস্ট২৫)। সংঘাত তাহলে অবধারিত। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, পৃষ্ঠা নং ৪। ঢাকা: ময়নাল হোসেন চৌধুরী।
৫. সংলাপে বসুন। (২০১৩, আগস্ট২৫)। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, পৃষ্ঠা নং ৪। ঢাকা: ময়নাল হোসেন চৌধুরী।
বিষয়: বিবিধ
১০০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন