পাগলের চরিত্র, বর্তমান সরকার ও এক নাগরিকের ভাবনা (শেষ কিস্তি)
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ০২ মে, ২০১৩, ০৯:৫৫:২২ রাত
পাগলের কোনো লজ্জা-শরম নেই। সে ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। পাগলের এই দু’টি বৈশিষ্ট্যের সাথে বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের হুবহু মিল রয়েছে। এই সরকারের কোনো লজ্জা নেই। কোন কাজটা ন্যায় আর কোন কাজটা অন্যায়, সেটা চিন্তা-ভাবনা না করেই তারা কাজটি সম্পাদন করে ফেলে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হওয়ার পর সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রী এই দুর্নীতিবাজের পক্ষ নিয়ে তাকে ‘দেশপ্রেমিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এছাড়া সম্প্রতি সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়লে অনেক মানুষ নিহত হন। আনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, এই বিষয়টি আমরা স্থানীয় জনগণের বর্ণনা এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়েছি। সাভারের বিভিন্ন এলাকায় রানার ছবি সম্বলিত ডিজিলটাল পোস্টারে আওয়ামী যুবলীগের নাম লেখা আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে বলেছেন, রানা যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত নন। রানার সাথে যুবলীগের সংশ্লিষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জাতির সাথে মিথ্যাচার করেছেন। আর জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে মিথ্যাচার করে আমাদের জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছেন তিনি। এরপরও কি আমরা বলব আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের লজ্জা আছে! ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য নির্ণয় করার মতো জ্ঞান বা চেতনা আছে!
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে চাই। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। গত ১৯ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এফ কেরি। যুক্তরাষ্ট্রের এই মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আইনের শাসনের দুর্বল প্রয়োগ বিদ্যমান। ফলে অব্যাহত নিপীড়ন-নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, অপহরণ, বিনাবিচারে দীর্ঘ দিন আটক রাখা ও ব্যাপক বৈষম্যের ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১২ সাল জুড়ে র্যাব ও সিআইডির মতো নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে এ বছরটিতে ২৪টি গুমের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, এই সংখ্যা ৫৬। একই বছরে (২০১২ সাল) জেলে মারা গেছেন ৫৮ জন বন্দী। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার ও আটক রাখার বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু এই বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেশটির সংবিধান দিয়েছে। কিন্তু অনেক সময়েই সরকার মুক্ত মত ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। আর হয়রানির কারণে কোনো কোনো সাংবাদিক সরকারের সমালোচনা নিজেরাই সেন্সর করে লেখেন (“উদ্বেগজনক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড”, ২০১৩)।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার ও অন্যান্য পর্যবেক্ষক সংস্থার পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে যে, “২০১২ সালে সহিংসতায় চারজন সাংবাদিক নিহত ও ১১৮ জন আহত হয়েছেন। ৫২ জনকে হুমকি দেয়া হয়েছে, ছয়জনের ওপর হামলা করা হয়েছে এবং ৪৩ জন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন ( “বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেছে”, ২০১৩ )।”
এবার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রেসে তালা এবং পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলব। পত্রিকাটি চালু হওয়ার পর থেকে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় চেতনা ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে শক্ত ভূমিকা পালন করে আসছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতনের শিকার মাহমুদুর রহমান সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর এই ভূমিকা আপসহীন দৃঢ়তা লাভ করেছে। আর এ কারণেই ফ্যাসিবাদী সরকার পত্রিকাটির সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ওপর অসন্তুষ্ট (“আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক”, ২০১৩)।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার মাধ্যমে সরকার একই সাথে কয়েকটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে। বার্তাগুলো হলো- ১. মত প্রকাশের স্বাধীনতা সরকারের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সরকারের নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে কেউ বাধা দিলে তাকে এমন ভাগ্যই বরণ করতে হবে। ২. সরকার আপসহীন, কঠোর এবং সব কিছু একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। ৩. সরকার শাহবাগ মঞ্চের প্রতি যতটা অনুরাগী ও দায়বদ্ধ, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের গণপ্লাবনের প্রতি ততটাই বেরী। ৪. শাহবাগ মঞ্চ, ধর্মদ্রোহী ও ধর্মবিদ্বেষীরা সরকারের কাছের লোক। আর পতিত বামদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণে সরকার আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান (মজুমদার, ২০১৩)।
সবশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট চলছে। এই সংকট অতলান্ত গভীরতায় পৌঁছেছে (উল্লাহ, ২০১৩)। আর সরকারের সার্বিক কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, “ ক্ষমতাসীন দল পুরনো রাজনৈতিক ধারায় ফিরে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়েছিল ১৯৪৫ সালে একদলীয় শাসন কায়েমের মাধ্যমে । এর পরিণতি হিসেবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ভয়াবহ খেসারত দিতে হয়েছিল। আবসান হয়েছিল রক্তাক্ত পরিণতির ম্যধ দিয়ে। ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা হচ্ছে, মানুষ ইহিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। আওয়ামী লীগ আবারো বিরোধী দলবিহীন একদলীয় বাকশালী কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জনমতের প্রতি ক্ষমতাসীনদের নূন্যতম কোনো খেয়াল নেই। গণমানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হয়তো কিছুদিন ক্ষমতা স্থায়ী করতে পারবে, কিন্তু এর শেষ পরিণতি হবে ভয়াবহ। আমরা আশা করব, সরকার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে ( “বিরোধী দলের শীর্ষ”, ২০১৩)”। (সমাপ্ত)
নোটিশ: লেখাটির প্রথম কিস্তি দেখুন এই লিংকে
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/4660/mamukha/13465#.UYKLdUr47hg
১. আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গ্রেফতার ফ্যাসিবাদের মরণ কামড়। (২০১৩, এপ্রিল ১১)। দৈনিক আমার দেশ (টেলিগ্রাফ), পৃষ্ঠা ২। ঢাকা: আলহাজ্ব মোঃ হাসমত আলী।
২ .উল্লাহ, ড. মাহ্বুব। (২০১৩, মার্চ ১৬)। দৈনিক আমার দেশ, পৃষ্ঠা ৬। ঢাকা: আলহাজ্ব মোঃ হাসমত আলী।
৩.উদ্বেগজনক বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ( ২০১৩, এপ্রিল ২২)। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা ৬। ঢাকা: শামসুল হুদা।
৪.বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা কারাগারে দেশ কি একদলীয় ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে?। (২০১৩, এপ্রিল ৯)। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা ৬। ঢাকা: শামসুল হুদা।
৫.মজুমদার, মাসুদ। (২০১৩, এপ্রিল ১২)। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা,৬। ঢাকা: শামসুল হুদা।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন