অন্ধ নাগরিক , অন্ধ সরকার ও কিছু কথা (প্রথম কিস্তি)

লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:০৬:২০ সন্ধ্যা

লোকটি পেশায় একজন ফেরিওয়ালা। তেলাপোকা, ইদুর মারার ঔষধসহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করেন। তাঁর বয়স আনুমানিক ৪৫-এর বেশি। শরীরের গড়ন হালকা, উচ্চতা ৫ ফুট ৪/৫ ইঞ্চি। চোখ দুটি আলোহীন অর্থাৎ অন্ধ, মুখে সামান্য কাঁচা-পাকা দাড়ি।

মালিবাগ মোড়ের পাশে শান্তিবাগ মহল্লা। মহল্লায় প্রবেশের জন্য নির্ধারিত রাস্তা দিয়ে একটু সামনে (৭/৮ গজ) এগিয়ে গেলে হাতের বাম পাশে রয়েছে একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোর। আমার লেখার শুরুতে আমি যে লোকটির বর্ণনা দিলাম, তিনি ডিপার্টমেন্ট স্টোরটির পাশে বসে বিকেল থেকে রাত দশটা বা সাড়ে দশটা পর্যন্ত তার পণ্য বিক্রি করেন।

অন্ধ কিংবা পঙ্গু লোকেরা ঘরের মধ্যে বসে থাকেন, অন্যের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকেন। সাধারণত কোন পেশায় যুক্ত থাকেন না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই চিত্রটিই আমি বেশিরভাগ সময় দেখেছি। কিন্তু এই অন্ধ ফেরিওয়ালার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। তিনি সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন। আর তাই কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে কয়েকদিন আগে অফিস থেকে ফেরার পথে আমি তাঁর সাথে কথা বললাম। আমার সাথে যেদিন লোকটির কথা হয় সেদিন তার পড়নে ছিল সাদা পাঞ্জাবি। লোকটির সাথে কথা বলার জন্য কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি একটি পণ্য বিক্রি করতে ব্যস্ত। পণ্যটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর আমি তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করলাম। কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁর নাম মনির হোসেন। গ্রামের বাড়ি সিলেট বিভাগে। বর্তমানে থাকেন বাসাবো এলাকায়। দিনের বেলা কমলাপুর রেল স্টেশনে পণ্য বিক্রি করনে আর বিকেলে বিক্রি করেন শান্তিবাগের ডিপার্টমেন্ট স্টোরটির পাশে।

যা হোক, লোকটির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে পুনরায় বাসার উদ্দেশে হাটতে শরু করলাম। হাটতে হাটতে ভাবলাম, চোখের ন্যায় মূল্যবান দুটি জিনিস লোকটির নেই। তারপরও বৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য সে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। তাঁর চামড়ার চোখ নষ্ট কিন্তু অন্তরের চোখ খোলা, সদা জাগ্রত। অন্তরের চোখ খোলা বলেই সে অর্থ উপার্জনের সম্মানজনক পন্থা আর অসম্মানজনক পন্থা চিহ্নিত করতে পেরেছে।

অন্যদিকে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর উপদেষ্টা, মন্ত্রী সভার সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ-বাম দলগুলোর নেতৃবৃন্দের কেউ অন্ধ বলে আমার জানা নেই। সবার চামড়ার চোখ সুস্থ। কিন্তু তাঁদের অন্তরের চোখ অন্ধ। তাই তারা অনেক বিষয় দেখতে পারছেন না। বাস্তবতা হলো,

যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন তপ্ত কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলের মতো। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল রীতিমতো মুখোমুখি অবস্থানে। সারা দেশ দুই ভাগে বিভক্ত।...... গণতন্ত্রের আলখেল্লায় আচ্ছাদিত বর্তমান শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ- আইন, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ এখন দেশে-বিদেশে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ। এসবে মাত্রাতিরিক্ত দলীয়করণে দেশের মানুষ আজ সুশাসনবঞ্চিত। একদলীয় শাসনের অবয়বে চলছে দেশ। বিরোধী দল, বিরুদ্ধমত শুধু দলনের শিকারই হচ্ছে না- ক্ষমতাসীনদের নির্মূল অভিযানের এক অব্যর্থ নিশানার শিকার (সাঈদ, ২০১৩, পৃষ্ঠা.৭)।

{লোকটিকে আমি সম্মান দিতে চাই। তাই 'তার ' বিশেষণটি লেখার সময় ঁ ব্যবহার করেছি}

(চলবে)

তথ্যসূত্র:

০১.সাঈদ, কাজী। (২০১৩, ৭ এপ্রিল)। ফ্যাসিবাদের নগ্ন থাবা। দৈনিক নয়াদিগন্ত, পৃষ্ঠা নং.০৭। ঢাকা: শামসুল হুদা।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File