ছোলা ভক্ষণ, নাগরিক চেতনা ও কিছু কথা....( শেষ)

লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:১৩:১৬ দুপুর

পদ্মা সেতু নিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার যে মহাকেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই ঘটেছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও লজ্জার বিষয় হলো, মহাকেলেঙ্কারির ঘটনার পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রী সভার দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীর পক্ষে কঠোর অবস্থান গ্রহন করেন। কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো দুর্নীতিবাজের পক্ষে এমন কঠোর অবস্থান নিয়ে গোটা দেশের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন করে তুলতে পারেন, এমন উদাহরণ পৃথিবীতে শেখ হাসিনা ব্যতীত আর একটিও নেই। পদ্মা সেতুতে ঋণদানের প্রধান অংশীদার ছিল বিশ্বব্যাংক। আর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানি উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) (সিদ্দিকী, ২০১৩)।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি পাওয়ার পর বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়। “অর্থায়ন স্থগিত করার পর সরকার বিশ্বব্যাংককে একটি চিঠির মাধ্যমে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সরকারের ব্যাখ্যা গ্রহণ করে নি (হাসান, ২০১২, প্যারা.১০)।” সংস্থাটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, বৃহৎ এই প্রকল্পের দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

“বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগের তীর প্রথম ছুড়েছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সচিব, প্রকল্প পরিচালক এবং আবুল হোসেনের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'সাঁকো'র বিরুদ্ধে। 'সাঁকো'র লোকজনের মাধ্যমেই কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসনসি লাভালিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে। পরে অভিযুক্তের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের নামও আসে। সরকারি দুই কর্মকর্তা সেতু বিভাগের সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে 'ফায়ার' করে মন্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় বলে নানা মহল থেকে তখন সমালোচনা করা হয়েছিল। মন্ত্রীও (সাবেক) খুব বড় গলায় বলেছিলেন যে, তিনি 'ফুলের মতো পবিত্র'। গলায় তিনি এ জোর পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার সদস্যদের পক্ষ থেকে, এমন কথাও শোনা গেছে। প্রধানমন্ত্রী তো স্পষ্ট করেই বলেছেন, দুর্নীতি হয়নি। যা হয়নি, সে অভিযোগ তিনি স্বীকার করবেন না (সিরাজ, ২০১২, প্যারা. ০১)।”

বিশ্বব্যাংক শর্ত দিয়েছিল যে, সৈয়দ আবুল হোসেনকে দুর্নীতির দায়ে আইনের আওতায় আনতে হবে। এরপর তার বিচার করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এই শর্ত আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। তাই তিনি প্রচ- ক্ষুব্ধ হলেন। শুধু ক্ষুব্ধ হয়ে থেমে থাকেন নি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিশ্বব্যাংকের কঠোর সমালোচনা শুরু করে দিলেন। এক প্রকার কা-জ্ঞান হারিয়ে তিনি ঘোষণা দিলেন, বিশ্বব্যাংকই দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান। এক পর্যায়ে তিনি বিশ্বব্যাংককে অডিট রিপোর্ট তার কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দিলেন (সিদ্দিকী, ২০১৩)।

এমন পরিস্থিতিতে চারদিক থেকে যখন নানা চাপ আসল, তখন সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করলেন। তখন ঘটল আরেক হাস্যকর ঘটনা। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ আবুলের প্রশংসা করে বললেন,“আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক। তাই তিনি দেশের সম্মান রাখতে পদত্যাগ করেছেন। কোন মন্ত্রীর গাটস থাকে যে পদত্যাগ করে! এটা একমাত্র আওয়ামী লীগ আমলেই সম্ভব। আমাদের সেই সাহস আছে (“আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক”, ২০১২)।”

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির পক্ষেই নিজের অবস্থান ঘোষণা করলেন। সহজ কথায় বলা যায়, “শেখ হাসিনার রাজনৈতিক স্বপ্ন পদ্মায় ডুবেছে। এখন তিনি পদ্মায় কলাগাছের ভেলায় নিতান্তই একা। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবি সবাই সরে গেছে। তিনি ভেসে যাচ্ছেন একা (সিদ্দিকী, ২০১৩, পৃষ্ঠা.৭)।”

নোটিশ: লেখাটির প্রথম কিস্তি পাবেন নিচের লিংকে :http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/4660/mamukha/10596#.UWPOSnLUW1s

তথ্যসূত্র

০১. “আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক”। (২০১২, ২৬ জুলাই)। দৈনিক প্রথম আলো। http://www.prothom-alo.com/detail/news/277026

০২. সদ্দিকী, ড. রেজোয়ান। (২০১৩, ১০ফব্রেুয়ারি)। পদ্মার নিঃসঙ্গ ভলোয়। দৈনিক নয়া দগিন্ত। ঢাকা : শামসুল হুদা।

০৩. সদ্দিকী, ড. রেজোয়ান। (২০১৩, ১০ফব্রেুয়ারি)। পদ্মার নঃসিঙ্গ ভেলায়। দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা:০৭। ঢাকা : শামসুল হুদা।

০৪.সিরাজ, কাজী। (২০১২, ২ ডিসেম্বর)। পদ্মা সেতুর র্দুনীতি ও দুদকের অছয়িত। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন,প্যারা.০১। Retrieved from http://www.bd-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Recipe&pub_no=929&cat_id=2&menu_id=8&news_type_id=1&index=0&archiev=yes&arch_date=02-12-2012

০৫. হাসান, আসিফ। (২০১২)। পদ্মা সেতু: স্বপ্ন ও বাস্তবতা। মানচিত্র, ২৬ (৪৪) প্যারা ১০। Retrieved from http://www.weeklymanchitra.com/archive_details.php?id=2644&nid=8

বিষয়: বিবিধ

১২৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File