“শান্তির ধর্ম ইসলামে বাড়াবাড়ির কোন সুযোগ নেই।”
লিখেছেন লিখেছেন সহিদুল ইসলাম ১৪ মার্চ, ২০১৩, ১১:২৩:৪৩ সকাল
“শান্তির ধর্ম ইসলামে বাড়াবাড়ির কোন সুযোগ নেই।”
ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্ব নিয়ন্তা কতৃক স্বীকৃত শান্তি প্রিয় ধর্ম ইসলাম। এরশাদ হচ্ছে-‘আল্লাহ্র নিকট মনোনীত ধর্ম ইসলাম’। আর তিনি ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ করতে বলেছেন। এরশাদ হচ্ছে ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। শান্তির ধর্ম ইসলামে বাড়াবাড়ির কোন সুযোগ নাই। আল্লাহ্ তাঁর মনোনীত ধর্ম পুরোপুরিভাবে মেনে চলার প্রতি বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সাথে সাথে ইসলাম বর্হিভূত সকল প্রকার ভ্রান্ত শয়তানি পথ পরিহার করার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। সর্বজন বিদিত সৃজনশীল ধর্ম ইসলামে কোন প্রকার জোরজবরদস্তির সামান্যতম সুযোগ নেই। পবিত্র কুরানের ঘোষণা ‘ধর্মের ব্যাপারে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি তথা জোর জবরদস্তি করা যাবে না’।
ঐতিহাসিক আমীর আলীর ভাষায়ঃ
Islam seized the sword in self deference and held it in self defense, as it will ever do. But Islam never in the fared with the dogmas of any moral faith never persecuted, never established an Inquisition it never invented the rack or the stake for stifling difference of opinion, or strangling the human conscience, or exterminating heresy:
অর্থাৎ ‘ইসলাম আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রধারণ করেছিল এবং ভবিষ্যতেও একই কারণে অস্ত্রধারণ করবে। কিন্তু ইসলাম কোন দিনই নৈতিক বিশ্বাস সংক্রান্ত মতবাদের সঙ্গে বিরোধিতায় লিপ্ত হয় নি; কখনো যুলুম করেনি, কখনো সরকারী তদন্ত স্থাপন করেনি। ইসলাম কখনো মতানৈক্যকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারার কোন উপায় উদ্ভাবন করেনি, মানুষের বিবেককেও গলাটিপে মারবার বা বিরুদ্ধ মতবাদকে নির্মূল করার কখনো কোন চেষ্টা করেনি’।
ইসলাম প্রিয় ভাইদেরকে আমার সত সহস্র সালাম জানিয়ে আমি বলতে চাচ্ছি__ গায়ের জোর দেখিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। বিশ্বের ইতিহাসে সফল রাষ্ট্রনায়ক আমাদের নবী করীম (সঃ) শান্তির জন্য সময়ে কিছু টেকনিক অবলম্বন করেছেন।
যেমন আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই মক্কার কুরাইশ বংশের সাথে হুদাইবিয়ার প্রান্তে যুদ্ধবিরতি/শান্তি চুক্তির কথা।
হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির ধারাসমুহ হচ্ছেঃ
১) চুক্তিতে বর্ণিত সময়ে দুই পক্ষ পরষ্পরের মধ্যে সকল প্রকার যুদ্ধ ও হানাহানি হতে বিরত থাকবে।
২) কুরাইশদের মধ্যে কেউ যদি অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মদীনায় আসে তবে রাসূল(স) তাকে মক্কায় তার অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন। পক্ষান্তরে, মুসলিমদের কেউ মক্কায় আসলে তাকে কুরাইশরা মদীনায় ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে না।
৩) আরব উপত্যকার কেউ মুহাম্মদ(স) এর সাথেও চুক্তি করতে চাইলে করতে পারবে,আবার কুরাইশদের সাথেও চাইলে চুক্তি করতে পারবে।
৪) মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মক্কা ত্যাগ করবে।পরের বছর তারা কা’বা তাওয়াফে আসতে পারবে শুধু তিনদিনের জন্য।সাথে অস্ত্র হিসেবে তারা শুধু কোষবদ্ধ তলোয়ার ছাড়া অন্য কিছু রাখতে পারবে না।
৫)চুক্তির মেয়াদকাল দশ বছর। তবে যেকোনো পক্ষ থেকে শর্ত ভঙ্গ ঘটলে এ চুক্তির সমাপ্তি ঘটবে।
আপেক্ষিক দৃষ্টিতে উপস্থিত সাহাবীদের কাছে ব্যাপারটি এক প্রকার মাথা নিচু করে তাদের সকল প্রস্তাব মেনে নেয়াই মনে হচ্ছিল।কিন্তু একটু গভীরভাবে খুঁটিয়ে দেখলে আমরা দেখব যে, এই সন্ধিচুক্তি মুসলমানদের পক্ষ থেকে কুরাইশদেরকে নির্বিষ করে দেয়ার একটি সূক্ষ্ণ চাল মাত্র। কিভাবে সেটা একটু চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন আশা করি।
১)সেই বছর মুসলমানদের হজ্জ্ব করা ব্যতীতই ফিরে যেতে হলো। কিন্তু এটাকে কি পরাজয় বলা যায়? হজ্জ্ব তো মুসলমানরা পরের বছরেই করতে পারবে। ব্যাপারটি ছিলো হজ্জ্ব করার উদ্দেশ্যে এসে কুরাইশদেরকে সন্ধিচুক্তি করাতে বাধ্য করানো,শুধু হজ্জ্ব করা নয়।
২)সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই চুক্তির ফলে কুরাইশদের সাথে তাদের মিত্র খাইবারের ইহুদীদের যুদ্ধচুক্তির সমাধি ঘটে (যখন সে যুদ্ধ মুসলমানদের বিরুদ্ধে হয়)। এর ফলে খাইবারের ইহুদীরা একা হয়ে পড়ে এবং প্রায় মাসখানিক পরেই খুব সহজেই মুসলিমরা খাইবার বিজয় করে।
৩) যেহেতু পুরো হুদাইবিয়া চুক্তির প্রারম্ভের পূর্বের মুহূর্তে মুসলিমদের আচার-আচরণ ছিল খুবই শিষ্ট এবং শান্তিপূর্ণ আর অন্যদিকে কুরাইশদের আচরণ ছিলো দাম্ভিকতাপূর্ণ ফলে, আরব উপত্যকার অধিকাংশ গোত্রের Public Opinion মুসলিমদের পক্ষে চলে যায় যা তাদের মনে ইসলামকে গ্রহণ করার একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
৪)এই চুক্তি এবং খাইবারের ইহুদীদের সাথে অভিযান শেষে মুসলিমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের দাওয়াত পৌছানোর কাজে আত্ননিয়োগ করতে পারে নির্বিঘ্নে। কারণ,আপাতত তাদের মাথা থেকে বড়সড় কোনো যুদ্ধের পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির তাগিদ ছিল না। পারস্য,রোম এবং মিশরের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পাঠানো ঐতিহাসিক চিঠিসমূহ এই সময়েই শুরু করা হয়।
৫)কোনো কুরাইশ মদীনায় আসলে সে ইসলাম নামক জীবন ব্যবস্থার বাস্তব জীবনে প্রতিফলনের স্বরূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করার সুবর্ণ সুযোগ পেত।পরবর্তীতে সে মক্কায় ফিরে গেলে সেখানেও সে ইসলামের বাণী এবং কোরআনের শাসনের সুফল বর্ণণা করে ইসলামের উপকার করতে পারত।
৬)কোনো মুসলমান মক্কায় গেলে সে সেখানে ইসলামের বাণী বহন করতে পারতো। এর ফলে, মক্কার লোকেরাও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবার সুযোগ পেল।
হুদাইবিয়ার পরেই আল্লাহ নাজিল করেনঃ
“আমি আপনাকে মহাবিজয় দান করলাম”[সূরা ফাতহ-০১]
ইসলামের জন্য যদি আমাদের নবী করীম (সঃ) চির শত্রু কুরাইশদের সাথে শান্তি ছুক্তি করতে পারে , আমরা কেন এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সাথে আলাপে না বসে ‘নাস্তিক ও ইসলামবিরোধী’, মুশরিক ইত্যাদি বলে তাদের শাস্তির মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করছি। এটা কি বাড়াবাড়ি নয়? এতে তো অমুসলমানরা ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারনা নিচ্ছে। আমি তো মনে করি এ কারণে কিছু মানুষ ইসলাম থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। তাই আসুন আমরা সকলে বাড়াবাড়ি না করে কীভাবে ইসলামের শান্তি বজায় রাখা যায় সে দিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে যাই।
মোহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম ( M.com_Mgt._N.U_BD_1998)
H/P_658402728
বিষয়: বিবিধ
১২৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন